ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পদ্মা সেতুতে ভাগ্যের দুয়ার খুলছে আগামীকাল পাবনা সরেজমিন

শরীয়তপুরে উন্নয়নের মহাকর্মযজ্ঞ

প্রকাশিত: ২৩:০৮, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১

শরীয়তপুরে উন্নয়নের মহাকর্মযজ্ঞ

আবুল বাশার, শরীয়তপুর ॥ ভাগ্যের দুয়ার খুলছে পদ্মা সেতুতে। উন্নয়নের দিক দিয়ে এক সময়ের ৬৪তম নম্বরে থাকা অবহেলিত শরীয়তপুর জেলা হচ্ছে সোনালি সেতুর শ্যামল ভ‚মি। শরীয়তপুরে চলছে উন্নয়নের মহাকর্মযজ্ঞ। শরীয়তপুরসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার সমৃদ্ধি ও উন্নয়নের দুয়ার খুলে দিয়েছে পদ্মা সেতু। এ অঞ্চলের প্রায় ৭ কোটি মানুষের প্রাণের দাবি স্বপ্নের পদ্মা সেতু এখন পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়িত হয়েছে। শরীয়তপুরসহ দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে গোটা দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের নতুনমাত্রা যোগ হলো। পদ্মা সেতুর দুপাড়ে গড়ে উঠবে সিঙ্গাপুর ও হংকংয়ের আদলে বিশ্বমানের শহর। দেশী-বিদেশী পর্যটক আসবে বিশে^র অন্যতম সৌন্দর্যমণ্ডিত এই পদ্মা সেতু দেখার জন্য। পদ্মা পাড়ে শরীয়তপুরের জাজিরার নাওডোবার বিশাল মুক্ত চরাঞ্চলে গড়ে উঠবে বিশ^মানের রেস্টুরেন্ট, রিসোর্ট, হোটেল, মোটেলসহ বিলাশবহুল নানা প্রতিষ্ঠান। গড়ে ওঠার সম্ভাবনার তালিকায় রয়েছে বিমান বন্দরও। পদ্মা সেতুর ল্যান্ডিং পয়েন্ট জাজিরার নাওডোবাতে চলমান রয়েছে শেখ হাসিনা তাঁতপল্লী প্রতিষ্ঠার কাজ। বিভিন্ন শিল্প-কারখানায় ভরে যাবে এ এলাকা। শ্রমজীবী মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হবে। সর্বক্ষেত্রে ব্যবসা বাণিজ্যের ব্যাপক প্রসার ঘটবে বলে আশা প্রকাশ করছে পদ্মা পাড়ের মানুষ। ইতিহাস-ঐতিহ্যে ভরা শরীয়তপুর ॥ উত্তরে প্রমত্তা পদ্মা, পশ্চিমে কীর্তিনাশা ও পূর্বে মেঘনা নদী পরিবেষ্টিত সুরেশ্বরী পীর কামেল বাবা জান শরীফের পুণ্যভূমি হিসেবে পরিচিত শরীয়তপুর জেলা ইতিহাস বিখ্যাত ফরায়েজী আন্দোলনের প্রাণ পুরুষ হাজী শরীয়তুল্লাহর নাম অনুসারে নামাঙ্কিত। ১৯৮৪ সালের ১ মার্চ শরীয়তপুর জেলা হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। বর্তমানে শরীয়তপুর বাংলাদেশের একটি ঐতিহ্যবাহী জেলা। ৬টি উপজেলা, ৬টি পৌরসভা, ৭টি থানা, তিনটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনী এলাকার শরীয়তপুরে প্রায় ১৭ লাখ মানুষের বসবাস। এই জেলার নড়িয়া উপজেলার পোড়াগাছা গ্রামে ভাষা সৈনিক ডাঃ গোলাম মাওলা, শিরঙ্গল গ্রামে বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক, বিখ্যাত উপন্যাস ‘সূর্য দীঘল বাড়ি’র লেখক আবু ইসহাক, পঞ্চপল্লী গ্রামে ‘আ-মরি বাংলা ভাষা’র লেখক অতুল প্রসাদ সেন, সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী কালজয়ী নেতা আব্দুর রাজ্জাক, আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামি সাবেক ডেপুটি স্পীকার কর্নেল (অবঃ) শওকত আলী, উপমহাদেশের বিখ্যাত কণ্ঠশিল্পী অনুক ঘোষাল, সাধনা ঔষধালয়ের মালিক যোগেশ চন্দ্র ঘোষসহ বিখ্যাত ব্যক্তিদের জন্ম এই জেলায়। এ অঞ্চলে একসময় ইতিহাস বিখ্যাত ঈশা খাঁ, কেদার রায় ও চাঁদ রায় শাসন করত। নড়িয়ার ভোজেশ^রে উপমহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তর শিবলিঙ্গ, ফতেজঙ্গপুর গ্রামে ঈশা খাঁর দুর্গ, ভেদরগঞ্জের কার্ত্তিকপুর, ছয়গাঁও ও গোসাইরহাটের হাঁটুরিয়ায় বিখ্যাত জমিদার বাড়ি, কার্ত্তিকপুরে ঐতিহ্যবাহী মৃত শিল্প, রাম ঠাকুরের আশ্রম, মহিসারের দ্বিগম্বরী দীঘি, শরীয়তপুর সদরের বুড়িরহাটের ঐতিহাসিক মসজিদ, ধানুকার ৫শ’ বছরের পুরনো মনসাবাড়ি, রুদ্রকরের মঠ, পালংয়ের কাশা-পিতল, গোসাইরহাটের পালকী, ঐতিহ্যবাহী খেজুর রসের গুঁড়, পিঠা পায়েশ-এসবই তো শরীয়তপুরের ইতিহাস ঐতিহ্যকে সমুন্নত করেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষণে আওয়ামী লীগের ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত শরীয়তপুর জেলা মোহাম্মদ এরশাদ ও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে গত ২১ বছর ছিল একটি অনুন্নত অবহেলিত জনপদ। মাত্র অর্ধ কিলোমিটার পাকা রাস্তা নিয়ে যাত্র শুরু করা অনুন্নত জেলার তালিকায় ৬৪তম জেলা হিসেবে পরিচিত ছিল শরীয়তপুর জেলা। তিন দিকেই নদী বেষ্টিত এ জেলার মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম ছিল নৌকা ও লঞ্চ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই ধীরে ধীরে উন্নয়নের পথে হাঁটে শরীয়তপুর জেলা। জাতির পিতার ঘনিষ্ঠ সহচর সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাকের উদ্যোগে মাওয়া-কাঠালবাড়ি ফেরি সার্ভিস চালুর মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সরাসরি সড়ক পথে যোগযোগ, শরীয়তপুর-চাঁদপুর ফেরি সার্ভিস চালুর মাধ্যমে শরীয়তপুরের সঙ্গে বন্দরনগরী চট্টগামের সঙ্গে সড়ক পথে যোগাযোগ, শিক্ষা বিস্তারে শরীয়তপুর পলিটেকনিক কলেজসহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করা, রাস্তাঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণসহ গ্রামে গ্রামে বিদ্যুত সরবরাহ শরীয়তপুরের মানুষকে আলোকিত করেছে। এছাড়াও ন্যাশনাল ব্যাংক ও সিকদার গ্রæপের প্রয়াত চেয়ারম্যান মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক বীর মুক্তিযোদ্ধা জয়নুল হক সিকদার ভেদরগঞ্জ উপজেলার কার্ত্তিকপুরের মধুখালী গ্রামে নিজ উদ্যোগে প্রতিষ্ঠা করেছেন দৃষ্টিনন্দন জেড এইচ সিকদার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়। যেখানে শরীয়তপুরসহ আশপাশের জেলার হাজার হাজার শিক্ষার্থীর উচ্চ শিক্ষা গ্রহণে ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। উন্নয়নে নড়িয়া ও সখিপুর ॥ বর্তমানে জননেত্রী শেখ হাসিনার সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই উন্নয়নের মহাকর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে শরীয়তপুরে। বিশেষ করে পদ্মা সেতু ঘিরে দেশের উন্নয়নের মহাকর্মযজ্ঞের প্রভাব বিস্তার ঘটছে এখানে। নড়িয়া ও সখিপুর নিয়ে শরীয়তপুর-২ নির্বাচনী এলাকা। বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার শুরুতেই শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম নড়িয়া ও সখিপুরের উন্নয়নের লক্ষ্যে ৫০ বছরের নদী ভাঙ্গনরোধসহ উন্নয়নের মেঘা প্রকল্প গ্রহণ করেছেন। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে শরীয়তপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীমের উদ্যোগে নড়িয়া-জাজিরার পদ্মা নদীর ডান তীর রক্ষা প্রকল্প নামে একটি মেঘা প্রকল্পের কাজ দ্রæত গতিতে এগিয়ে চলছে নড়িয়ায়। ১ হাজার ৪শ’ ১৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই প্রকল্পে ব্যবহারের জন্য সিসি বøক নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে নদীর তীরবর্তী ১০টি স্থানে। প্রমত্তা পদ্মার ভাঙ্গা-গড়ার আতঙ্কের এলাকায় এখন ভাঙ্গনরোধ হয়ে সেখানে গড়ে উঠছে সুরম্য অট্টালিকা, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা প্রতিষ্ঠান। গত ৫০ বছর যাবত যেখানে পদ্মার ভাঙ্গাগড়ার সঙ্গে মানুষ লড়াই করে কোন রকম টিকে থাকার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছিল, সেখানে আজ ভাঙ্গনরোধ হওয়ায় মানুষ নিরাপদে বসবাস করছে। এ স্থায়ী প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশে কোন ধরনের নদী ভাঙ্গনের সমস্যা থাকবে না। আর শরীয়তপুরকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষায় প্রয়োজনীয় সকল ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান উপমন্ত্রী এনামুল হক শামীম। উন্নয়নে শরীয়তপুর সদর ও জাজিরা ॥ শরীয়তপুর সদর ও জাজিরাতেও চলছে উন্নয়নমূলক মহাকর্মযজ্ঞ। শরীয়তপুর সদর ও জাজিরা নিয়ে গঠিত শরীয়তপুর-১ নির্বাচনী এলাকা। এ নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য এক সময়ের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তুখোর ছাত্রনেতা ইকবাল হোসেন অপু এমপি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিদের্শে সার্বক্ষণিক নিজ এলাকায় অবস্থান করে উন্নয়নের কাজ করে যাচ্ছেন। করোনা মহামারীর মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সহযোগিতায় কর্মহীন ও অভাবগ্রস্ত ৬০ হাজার মানুষের কাছে খাদ্যসহ অন্যান্য সহযোগিতা পৌঁছে দিয়েছেন এলাকার জনপ্রিয় নেতা ইকবাল হোসেন অপু এমপি। সার্বক্ষণিক নিজ এলাকায় অবস্থান করে এলাকার উন্নয়নসহ জনগণের খেদমত করে যাচ্ছেন তিনি। বর্তমান সরকারের আমলে অবহেলিত জেলা শহরসহ জাজিরাতে লাগছে উন্নয়নের ছোঁয়া। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর সঙ্গে শরীয়তপুরবাসীর সড়ক পথে যোগাযোগের মাধ্যম হিসেবে ইতোমধ্যে ১ হাজার ৬শ’ কোটি ৬৪ লাখ টাকা ব্যয়ে শরীয়তপুর ফায়ার সার্ভিস হতে কাজিরহাট পর্যন্ত ফোরলেন সড়ক নির্মাণ, কাজিরহাট ব্রিজ ও কোটাপাড়া নদীর ওপর ব্রিজের কাজ চলমান রয়েছে। উন্নয়ন হচ্ছে স্বাস্থ্য খাতে। স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে শরীয়তপুর জেলা শহরে ২শ’ ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণকাজ চলমান আছে। শহরের প্রাণকেন্দ্র চৌরঙ্গীতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের দৃষ্টিনন্দন ম্যুরাল নির্মিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে ৭০ বছরের অবহেলিত শরীয়তপুরে পদ্মার মাঝে দুর্গম চরাঞ্চলে ১ হাজার পরিবার বিদ্যুতের আলো পেয়েছে। সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন অপুর উদ্যোগে পদ্মার বিচ্ছিন্ন চরাঞ্চল শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার পূর্ব নাওডোবা ইউনিয়নের পাইনপাড়া এলাকায় পদ্মার মাঝের চরে সহ¯্রাধিক পরিবারকে সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে বিদ্যুত-সংযোগ দেয়া হয়েছে। উন্নয়নে শরীয়তপুর-৩ নির্বাচনী এলাকা ॥ ডামুড্যা-ভেদরগঞ্জ-গোসাইরহাট নিয়ে শরীয়তপুর-৩ নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য নাহিম রাজ্জাক বরাবরই এলাকার উন্নয়নের জন্য নিবেদিত প্রাণ। তার নির্বাচনী এলাকায় একের পর এক উন্নয়নমূলক কাজ করে মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন তিনি। মুক্তিযুদ্ধের মহানায়ক জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহচর ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শীর্ষ সংগঠক জাতীয় বীর আলহাজ আব্দুর রাজ্জাকের অসমাপ্ত কাজগুলো স্বপ্নের মতো বাস্তবায়ন করে চলছেন শরীয়তপুর-৩ আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ নাহিম রাজ্জাক। নির্বাচনের ইশতেহারে জনগণের সম্মুখে যা তুলে ধরেছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে তার পুরোটাই বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ করছেন নাহিম রাজ্জাক এমপি। সড়ক পথে যোগযোগের ক্ষেত্রে মেগা প্রকল্প হিসেবে ৯শ’ ৬৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের আওতায় মাদারীপুর হতে সড়ক পথে শরীয়তপুরের মনোহরবাজার-আলুরবাজার ফেরিঘাট পর্যন্ত ফোরলেন রাস্তার কাজ চলমান রয়েছে। এই রাস্তার কাজ সমাপ্ত হলে বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ দেশের পূর্বাঞ্চলের জেলাগুলোর সঙ্গে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের জেলাগুলোর সড়ক পথে সহজ যোগাযোগের পথ উন্মোচিত হবে। ইতোমধ্যে প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ডামুড্যা উপজেলার প্রশাসনিক ভবন এবং ৮ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ১শ’ আসন বিশিষ্ট অডিটোরিয়ামের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। সমাপ্ত হয়েছে গোসাইরহাট উপজেলার প্রশাসনিক ভবন নির্মাণ ও ১শ’ আসন বিশিষ্ট অডিটোরিয়াম নির্মাণ কাজ। ২ কোটি ৫৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ডামুড্যা পৌরসভার ভবন নির্মাণ ও ১ম শ্রেণীতে উন্নীতকরণ, ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ভেদরগঞ্জ পৌরসভার ভবন নির্মাণ ও ২য় শ্রেণীতে উন্নীতকরণ করা হয়েছে। গোসাইরহাট পৌরসভা ভবনের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। প্রায় ৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১৪টি প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। প্রায় ২শ’ ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪শ’ ১৫ দশমিক ৮২ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ, প্রায় ৭৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১শ’ ৯৩ ব্রিজ ও কালভার্ট নির্মাণ এবং প্রায় ৩৭ কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘনা নদীর ওপর সাইক্ষ্যা ব্রিজ নির্মাণ কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৬০টি প্রকল্প বাস্তবায়ন ও ৩টি ৪তলা কাঁচা মার্কেট স্থাপন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। জেলা পরিষদের আওতায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ৯৫টি প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ সমাপ্ত হয়েছে। প্রায় ১শ’ কোটি টাকার প্রকল্প ডিপিপিভুক্ত হয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৩০ কোটি টাকা ব্যয়ে ভেদরগঞ্জ ও গোসাইরহাটে ৬০ কিলোমিটার রাস্তার ও ৯টি ব্রিজের কাজ চলমান রয়েছে। ১৪ কোটি ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ত্রাণের ৭৫টি ব্রিজ নির্মাণ ও ৩০টি ব্রিজ নির্মাণের কাজ চলমান আছে। শরীয়তপুরের সঙ্গে সরাসরি বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলীয় জেলাগুলোর সঙ্গে যোগাযোগের জন্য গোসাইরহাটে আব্দুর রাজ্জাক ফেরিঘাট স্থাপন করা হয়েছে। ডামুড্যা উপজেলায় আব্দুর রাজ্জাক নার্সিং কলেজ নির্মাণ কাজ চলমান আছে, ডামুড্যার ধানকাটি ইউনিয়ন ও গোসাইরহাটের কোদালপুরে ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল নির্মাণ এবং রোগীর চাপ বেশি থাকায় স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে গোসাইরহাট, ভেদরগঞ্জ ও ডামুড্যা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে ১০০ শয্যায় উন্নীতকরণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। প্রায় ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০টি কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ এবং ডামুড্যা, ভেদরগঞ্জ ও গোসাইরহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩টি এ্যাম্বুলেন্স প্রদান করা হয়েছে। ভেদরগঞ্জ উপজেলায় বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব টেকনিক্যাল স্কুল এ্যান্ড কলেজ এবং ডামুড্যা জাতীয় বীর আব্দুর রাজ্জাক টেকনিক্যাল স্কুল এ্যান্ড কলেজ নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। এ নির্বাচনী এলাকার প্রতিটি স্কুল ও মাদ্রাসায় ৪ তলা নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ কাজ সমাপ্তের পথে। উন্নয়নে জেলা পরিষদ ও পৌরসভা ॥ উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে পিছিয়ে নেই জেলা পরিষদ ও শরীয়তপুর পৌরসভা। শরীয়তপুর জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ছাবেদুর রহমান খোকা সিকদার বলেন, দেশী-বিদেশী সকল ষড়যন্ত্র উপেক্ষা করে মমতাময়ী সাহসী প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা নিজস্ব অর্থায়নে দেশের উন্নয়নের সবচেয়ে বড় মেগা প্রকল্প পদ্মা সেতুর কাজ বাস্তবায়িত করছেন। এজন্য প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে শরীয়তপুরের লাখ লাখ জনতার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। তিনি বলেন, স্বপ্নের পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন হওয়ায় শরীয়তপুরসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের ভাগ্যের উন্নয়নের পথ উন্মুক্ত হল। সেই সঙ্গে শরীয়তপুর হবে দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে অন্যতম উন্নত মডেল জেলা। তিনি বলেন, ইতোমধ্যে শরীয়তপুর জেলা পরিষদকে ঘুষ ও দুর্র্নীতিমুক্ত করা হয়েছে। জেলার উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় জেলা পরিষদের উদ্যোগে গোসাইরহাট শামসুর রহমান ডিগ্রী কলেজের অডিটোরিয়াম কাম ক্লাসরুম নির্মাণ, জাজিরা উপজেলায় অত্যাধুনিক অডিটোরিয়াম ও ডাকবাংলো নির্মাণ, নড়িয়া উপজেলায় স্বাধীনতা মঞ্চ নির্মাণ, বিভিন্ন স্থানে যাত্রীছাউনী নির্মাণ করা হয়েছে। সুরেশ^র ও আলুবাজারে যাত্রীছাউনী নির্মাণের প্রক্রিয়া হচ্ছে। সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ভেদরগঞ্জ উপজেলা অডিটোরিয়াম নির্মাণ হচ্ছে। নড়িয়াসহ অন্যান্য উপজেলাতেও অডিটোরিয়াম নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন আছে। ৩টি উপজেলায় অত্যাধুনিক ডাকবাংলো নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। প্রায় ৪শ’টি মসজিদ ও মন্দির নির্মাণ ও সংস্কার, ১শ’ ৫০ টি গণকবরস্থান ও ২০টি শ্মশান নির্মাণ ও সংস্কার, ৭৫টি স্কুল-কলেজ ও ৫০টি মাদ্রাসার নির্মাণ ও সংস্কার কাজে জেলা পরিষদ সরাসরি অর্থায়ন করেছে। জেলা পরিষদ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শামীম হোসেন বলেন, গ্রামীণ অবকাঠামো ও আর্থসামাজিক উন্নয়নে জেলা পরিষদ কাজ করে যাচ্ছে। মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা প্রণয়ন, নারী-পুরুষ সমানাধিকার নিশ্চিতকরণ, দূষণমুক্ত খাবার, পানি ও পয়োনিষ্কাশন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পোদ্যোক্তা তৈরি করা সহকারে একটি পরিবেশবান্ধব টেকসই সমাজ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে দিনরাত কাজ করছে জেলা পরিষদ। বৃক্ষরোপণ কর্মসূচী ও ছাদে ফলদ বাগান করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর উন্নত ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে প্রত্যয়, সে লক্ষ্যে শরীয়তপুর জেলা পরিষদের উদ্যোগে নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড চলমান রয়েছে। উন্নয়নে পিছিয়ে নেই শরীয়তপুর পৌরসভা। এ্যাডভোকেট পারভেজ রহমান জন শরীয়তপুর পৌরসভার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই নতুন নতুন রূপরেখায় এগিয়ে চলছে নানা উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড। পৌরবাসীকে ডেঙ্গুমুক্ত রাখতে মশা নিধন প্রক্রিয়া চলছে প্রতিদিন। এছাড়াও শরীয়তপুর পৌরসভাকে একটি আধুনিক ডিজিটাল উন্নত মডেল পৌরসভা হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হাতে নিয়েছেন তিনি। জলাবদ্ধতা নিরসন, রাস্তা প্রশস্তকরণ, পৌরশহর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রাখা, রাস্তাঘাট মেরামত, ব্রিজ-কালভার্ট নির্মাণ, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতকরণসহ নানা উন্নয়নমূলক কাজ চালাচ্ছে পৌরকর্তৃপক্ষ।
×