ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

১৬১ ইউপি ও ৯ পৌরসভা নির্বাচনে ভোটারদের ব্যাপক অংশগ্রহণ পুরুষের তুলনায় নারী ভোটারের উপস্থিতি বেশি বিক্ষিপ্ত সহিংসতায় নিহত ৩

স্বতঃস্ফ‚র্ত ভোট

প্রকাশিত: ২৩:০০, ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১

স্বতঃস্ফ‚র্ত ভোট

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সোমবার ১৬১ ইউনিয়ন পরিষদ ও নয়টি পৌরসভায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। দু’একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচনের পরিবেশ ছিল শান্তিপূর্ণ। নির্বাচনে ভোটারদের স্বতঃস্ফূর্ত উপস্থিতি দেখা গেছে। বৃষ্টি ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে উপস্থিত হন। দলে দলে কেন্দ্রে আসেন ভোটার। তাদের মধ্যে দেখা গেছে উৎসব আমেজ। বিভিন্ন কেন্দ্রে পুরুষ ভোটারের তুলনায় নারী ভোটারের উপস্থিতি ছিল বেশি। তারা দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেন। তবে কয়েকটি কেন্দ্রে বিশৃঙ্খলার অভিযোগে ভোট স্থগিত করা হয়। খুলনায় বৃষ্টির মধ্যে ছাতা মাথায় ভোটকেন্দ্রে হাজির হন ভোটাররা। এদিকে ভোট চলাকালে কক্সবাজারের মহেশখালীর কুতুবজোম ও কুতুবদিয়ায় সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ দুজন নিহত হয়েছেন। এছাড়া বাগেরহাটের মোংলায় সহিংসতায় একজন নিহত এবং ২৫ জন আহত হয়েছেন। খুলনায় ভোটকেন্দ্রের বাইরে ককটেল হামলায় চারজন আহত হন। সাতক্ষীরার কলারোয়ায় দুটি উপজেলার বিভিন্ন কেন্দ্রের মধ্যে মাত্র একটি কেন্দ্রে ভোট স্থগিত হয়। নোয়াখালীতে নৌকার প্রার্থীসহ চার প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতা ও সংবাদদাতাদের। খুলনায় উৎসবমুখর পরিবেশে ইউপি নির্বাচনের ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। খুলনায় রাতভর বৃষ্টি হয়েছে, সকাল থেকেও বৃষ্টি ছিল। পথেঘাটে পানি কাদা জমে যায়। অনেক ভোট কেন্দ্রের মাঠেও পানি জমে। প্রাকৃতিক এই দুর্যোগ উপেক্ষা করে সোমবার সকাল থেকে ছাতা মাথায় ভোট দিতে খুলনার বিভিন্ন ইউনিয়নের কেন্দ্রে আসেন ভোটাররা। কোন কোন কেন্দ্রে নারী ভোটারদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। বৃষ্টি উপেক্ষা করেও উচ্ছ¡াস ও আনন্দের সঙ্গে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসেন তারা। জীবনের প্রথম ভোটার হওয়া থেকে বৃদ্ধ বৃদ্ধা সকলেই এই ভোট উৎসবে শামিল হয়েছেন। দুপুর ১টা পর্যন্ত কোথাও কোন অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি। খুলনার পাইকগাছা উপজেলা গদাইপুর ইউনিয়ন পরিষদের মানিকতলা সেন্টার মাঠে জলাবদ্ধতার মধ্যে ভোটারদের দাঁড়িয়ে থেকে ভোট দিতে দেখা যায়। সেখানে দায়িত্বরত আনসার সদস্যরা পানিতে নেমে লাইন ঠিক করে ভোটারদের ভোটদানে সহযোগিতা করেন। এদিকে বৃষ্টির কারণে অনেক কেন্দ্রে ভোটগ্রহণে বিভিন্ন সমস্যায় পড়তে হয় বলে অভিযোগ উঠেছে। পাইকগাছার চেচুয়া ফজিলাতুন নেছা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে দেখা যায় ছয়টি বুথের স্থলে পাঁচটি বুথে নেয়া হয়। ওই কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার শাওন আহমেদ বলেন, বৃষ্টির কারণে টিনের চাল দিয়ে পানি পড়ছে। এর ফলে ভোটগ্রহণ কঠিন হচ্ছে। সুষ্ঠু কার্যক্রমের জন্য পাঁচটি বুথ দিয়ে ভোটগ্রহণ চলছে বলে জানান তিনি। বটিয়াঘাটার অমিরপুর ইউনিয়নে খারাবাদ সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোটারদের ব্যাপক উপস্থিতি দেখা যায়। বিশেষ করে নারী ভোটারদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। গাদাগাদি করে দাঁড়িয়ে থাকেন ভোট দেয়ার জন্য। স্বাস্থ্যবিধি ছিল উপেক্ষিত। এলাকাবাসী জানায়, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সব সময় উৎসবমুখর হয়। এবার বৃষ্টি কারণে কিছুটা বিঘœ সৃষ্টি হলেও ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে এসে ভোট দেন। একটি ইউনিয়নে চেয়ারম্যান, মেম্বার ও মহিলা মেম্বার পদে অনেক প্রার্থী রয়েছেন। তাদের সমর্থকও আছেন। তাই ভোটাররাও পছন্দের প্রার্থীর উৎসাহে ভোট দিতে কেন্দ্রে আসেন। ভোটকেন্দ্রের বাইরে ককটেল হামলা, আহত চার ॥ দীঘলিয়ার বারাকপুর ইউনিয়নে ভোট কেন্দ্রের বাইরে ককটেল হামলায় চারজন আহত হয়েছেন। সোমবার দুপুর ১২টার দিকে ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের উত্তরপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের বাইরে এ ঘটনা ঘটে। আহতদের খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া বারাকপুর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী শেখ আনসারের এক সমর্থককে দুর্বৃত্তরা পিটিয়ে জখম করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দীঘলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আহসান উল্লাহ চৌধুরী জানান, কেন্দ্রের বাইরে ককটেল হামলায় চারজন আহত হয়। তাদের খুলনা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। খুলনার পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাহবুব হাসান বলেন, ঘটনাটি কেন্দ্র থেকে দূরে ঘটেছে। ৫টি ককটেল উদ্ধার করা হয়েছে। অপরাধীদের ধরতে ও এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুলিশী ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। মোংলায় বৃষ্টি উপেক্ষা ॥ বৃষ্টিসহ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্য দিয়ে সোমবার বাগেরহাটের মোংলার ৬টি ইউনিয়নের ৫৪টি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণ করা হয়েছে। সোনাইলতলা ও বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়নে ভোট হয়েছে ইভিএম পদ্ধতিতে। তবে এ পদ্ধতিতে ভোট দিতে ভোটারদের বেগ পাওয়ার পাশাপাশি সময়ও লেগেছে বেশি। এদিকে কেন্দ্রগুলোতে পুরুষের তুলনায় নারীদের উপস্থিতি ছিল বেশি। বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় আগে থেকেই চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নির্বাচিত হয়ে যাওয়ায় ভোট হয় শুধু মেম্বার পদে। ছয়টি ইউনিয়নে ২৮০ জন মেম্বার প্রার্থী প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেন। এদিকে নির্বাচন কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় সোমবার অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। সোমবার দুপুরে সোনাইলতলা ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ডে ও সুন্দরবন ইউনিয়নের ছয় নম্বর ওয়ার্ডে মেম্বার প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে উভয় পক্ষেরই ২৫ জন আহত হন। আহতদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। এদিকে নির্বাচন ঘিরে চাঁদপাই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডে প্রতিপক্ষ মেম্বর প্রার্থী শফিকুল শেখের সমর্থকদের হামলায় রবিবার রাতে র্বুমান মেম্বার ও মেম্বর প্রার্থী মতিয়ার রহমান মোড়লের এক নারী সমর্থক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হন মতি মেম্বারসহ চারজন। মোংলা থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মনিরুল ইসলাম বলেন, রবিবার রাতের নির্বাচনী সহিংসতার ঘটনায় দুজনকে পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সাতক্ষীরায় শান্তিপূর্ণ নির্বাচন ॥ তালা ও কলারোয়ার ২১টি ইউনিয়ন পরিষদ নিবাচন শান্তিপূর্ণভাবে শেষ হয়েছে। কলারোয়ার একটি কেন্দ্রে ভোর রাতে ব্যালটে সিল মারার অভিযোগে কেড়াগাছি ইউনিয়নের একটি ভোট কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করা হয়েছে। সোমবার ভোরে ইউনিয়নের কেড়াগাছি উত্তর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভোট কেন্দ্রে ঢুকে নৌকা প্রতীকে সিল মারে নৌকা প্রতীকের সমর্থকরা। পরর্বুীতে স্থ’ানীয়রাসহ স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জেলা নির্বাচন অফিসারকে অবগত করলে নির্বাচন অফিসার নাজমুল কবির এসে ওই ভোট কেন্দ্রের নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেন। এদিকে কলারোয়ার কয়লা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী মোঃ রফিক মোল্লা অনিয়মের অভিযোগ এনে ভোট বর্জন করেছেন। সোমবার ভোট শুরুর আগেই ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন তিনি। নোয়াখালীতে চার প্রার্থীর ভোট বর্জন ॥ নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও হাতিয়ার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদে (ইউপি) শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোট গ্রহণ হয়েছে। তবে হাতিয়া নৌকার দুই প্রার্থীসহ চারজন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এছাড়া নোয়াখালীর কবিরহাট পৌরসভায়ও মেয়র পদে আওয়ামী লীগ প্রার্থী জহিরুল হক রায়হান বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হওয়ায় কবিরহাট পৌরসভায় শুধুমাত্র কাউন্সিলর পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। হাতিয়ার জাহাজমারা ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী এটিএম সিরাজ উল্লা, বুড়িরচর ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী জিয়া আলী মোবারক কল্লোল, সোনাদিয়া ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল ইসলাম ওরফে মালয়েশিয়া ও চর ঈশ্বর ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী আবদুল হালিম আজাদ নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো বুড়িরচর ইউনিয়নের নৌকার প্রার্থী জিয়া আলী মোবারক কল্লোল গণমাধ্যম কর্মীদের কাছে অভিযোগ করেন, ভোট গ্রহণের আগে রবিবার রাতে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাবেক এমপি মোহাম্মদ আলীর সমর্থিত স্বতন্ত্র প্রার্থী ফখরুল ইসলামের অনুসারীরা ভোটকেন্দ্রের আশপাশে অবস্থান নেন। এরপর সকালে তারা কেন্দ্রে এজেন্টদের প্রবেশে বাধা দিয়ে ভোটকেন্দ্র দখলে নেন। এই পরিস্থিতিতে তিনি বাধ্য হয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন। কবিরহাটে দুই কাউন্সিলর প্রার্থীর ভোট বর্জন ॥ কবিরহাট পৌরসভা নির্বাচনের আগে হামলার অভিযোগ তুলে দুই কাউন্সিলর প্রার্থী ভোট বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। তারা হলেন ৬ নম্বর ওয়ার্ডের মোঃ হানিফ (পাঞ্জাবী) ও ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ (ডালিম)। রবিবার সন্ধ্যার পর ও রাতে পৃথক সংবাদ সম্মেলন করে তারা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। কক্সবাজারে সহিংসতায় নিহত ২ ॥ কক্সবাজারের দুইটি পৌরসভা ও ১৪টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোটাররা তাদের পছন্দের প্রার্থীর প্রতীকে ভোট দিয়েছেন। ভোট চলাকালে মহেশখালীর কুতুবজোম ও কুতুবদিয়ায় সহিংসতায় গুলিবিদ্ধ হয়ে দুজন নিহত হয়েছেন। টেকনাফে ভোটের ব্যালট ছিনিয়ে নিয়ে গেছে প্রার্থীর সমর্থকরা। এছাড়াও পেকুয়া এবং চকরিয়ায় বিচ্ছিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয়। নিহত ব্যক্তিদ্বয় হচ্ছেন- কুতুবদিয়ায় আবদুল হালিম (৪০) ও মহেশখালীতে আবুল কালাম (৩৫)। সূত্র জানায়, সোমবার সকাল থেকে সুষ্ঠুভাবে ভোটগ্রহণ চলে। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্যদিয়ে প্রতিটি কেন্দ্রে ভোটারগণ ভোট প্রদান করে। সকাল সাড়ে ৯টায় একদল উচ্ছৃঙ্খল যুবক মহেশখালীর কুতুবজোম কেন্দ্রে এসে গুলি চালায়। এ ঘটনায় দুটি কেন্দ্রের ভোটগ্রহণ সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। কুতুবদিয়া বড়ঘোপ ইউনিয়নের পিলটকাটা কেন্দ্রে গুলিতে নিহত আবদুল হালিম নৌকা প্রতীকের এজেন্ট ছিলেন বলে জানা গেছে। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে দুই চেয়ারম্যান প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধলে পুলিশ তাদের ওপর লাঠিচার্জ করে। পরে কে বা কারা গুলি ছুড়েছে সেটা দেখা যায়নি। বিলটকাটা কেন্দ্রের প্রিসাইডিং অফিসার আলী আকবর বলেন, পরিস্থিতি খুব খারাপ তাই ভোটগ্রহণ সাময়িক বন্ধ রাখা হয়। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মোঃ হাসানুজ্জামান বলেন, মহেশখালী, কুতুবদিয়া, টেকনাফসহ বিভিন্ন স্থানে কিছু ঘটনার কথা শুনেছি। কয়েকটি কেন্দ্র বাদে বাকি সব কেন্দ্রের পরিস্থিতি ভাল, সেখানে মানুষ উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিয়েছে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বড়ঘোপ ইউনিয়নে নৌকা প্রার্থীর সমর্থকরা হৈ হুল্লোড় করে কেন্দ্র দখল করতে গেলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ গুলি চালায়। কুতুবদিয়া থানার ওসি ওমর হায়দার বলেন, কেন্দ্র দখলের ঘটনায় উভয়পক্ষের গোলাগুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। মহেশখালীতে ১ পৌরসভা ও ৩টি ইউপি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। বৃষ্টি উপেক্ষা করেও ভোটারদের উপস্থিত চোখে পড়ার মতো। সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কুতুবজোম ইউনিয়নে চেয়ারম্যান প্রার্থী নৌকা ও চশমার প্রতীকের সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলির ঘটনায় একজন নিহত হয়েছে। এসময় আহত হয়েছে আরও ৫ জন। মহেশখালীর কুতুবজোমে নৌকার প্রার্থী শেখ কামাল ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোশারফ হোসেন খোকনের সমর্থকদের মধ্যে গোলাগুলিতে নিহত আবুল কালাম খোকনের সমর্থক বলে দাবি করা হয়েছে। কুতুবদিয়ায়, সোমবার ইউপি নির্বাচনে বড়ঘোপ ৭নং ওয়ার্ড পিলটকাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ব্যালট ছিনতাইয়ের ঘটনায় পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছে স্থানীয় মুহাম্মদ হোছাইনের পুত্র আবদুল হালিম। গুলিবিদ্ধ আহত হয়েছে তিনজন। এরা হলেন হাছান আলীর পুত্র নাজমুল হাসান ইমু, মাস্টার মনির ও মুন্না। সকাল সাড়ে ১০টায় একদল দুর্বৃত্ত পিলটকাটা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রের এক্সটেনশন ভবনের ৩নং বুথে ঢুকে ব্যালট পেপারে সিল মারতে থাকলে ওই মূল ভবন থেকে ওই কক্ষে পুলিশ গুলি চালায়। এতে জানালা দিয়ে আসা গুলিতে হালিম নিহত ও অপর ৩ জন আহত হন বলে প্রত্যক্ষদর্শী ভোটার বিলকিছ বেগমসহ অনেকে জানিয়েছেন। ওই কেন্দ্রের ভোট স্থগিত করেছে প্রশাসন। এ ছাড়া কুতুবদিয়া কলেজ, কাজী হেলাল উদ্দিন সরকারী প্রাইমারী স্কুল, আলী আকবর ডেইলের তাবালেরচর সরকারী প্রাইমারী স্কুল, সতরুদ্দীন হাইস্কুলসহ বিভিন্ন ভোট কেন্দ্রে সংঘর্ষে অন্তত ৩২ জন আহত হয়েছে বলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে। ৪৩ ইউপিতে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় বিজয়ী ॥ এদিকে ১৬১ ইউপি নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত ৪৩ জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী। বিএনপি ইউপি নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়ায় এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়া এলাকাগুলোর মধ্যে বাগেরহাট, চট্টগ্রাম ও খুলনায় ৪৩টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের চেয়ারম্যান প্রার্থী রয়েছেন। এর মধ্যে বাগেরহাটের ৬৬টি ইউপির মধ্যে ৩৮টিতে আওয়ামী লীগের কোন প্রতিদ্ব›দ্বী প্রার্থী ছিলেন না। বাগেরহাটের বাইরে চট্টগ্রামের স›দ্বীপে ৪টি এবং খুলনার ১টি ইউনিয়নে আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্ব›িদ্বতায় নির্বাচিত হয়েছেন। দুজনের প্রাণহানি ছাড়া নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে- ইসি সচিব ॥ মহেশখালী ও কুতুবদিয়ার দুটি কেন্দ্রকে ঘিরে দুজনের প্রাণহানির ঘটনা ছাড়া অন্যত্র নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে বলে দাবি করেছেন নির্বাচন কমিশন। সোমবার ভোট শেষে আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সংবাদ ব্রিফিংয়ে ইসি সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার এ দাবি করেন। সচিব বলেন, যেসব তথ্য পেয়েছি- আমরা মনে করি নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। কিছু প্রার্থী ও সমর্থক খুবই ইমোশনাল হয়ে যান, তাদের কারণে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। দুই গ্রæপের মধ্যে মহেশখালীতে সহিংসতা ঘটেছে ও কুতুবদিয়ায় দুষ্কৃতকারীরা ব্যালট ছিনতাই করতে গিয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রিসাইডিং অফিসারের নির্দেশে ব্যবস্থা নিয়েছে। ভোট চলাকালে সহিংসতায় কুতুবদিয়ায় ও মহেশখালীতে দুজন নিহতের ঘটনাকে দুঃখজনক উল্লেখ করে ইসি সচিব বলেন, এটা খুবই বেদনাদায়ক। নির্বাচনী সহিংসতায় মহেশখালী ও কুতুবদিয়ায় ২ জনের প্রাণহানি হয়েছে, আরও কয়েক জায়গায় প্রার্থীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় সংঘর্ষে আহত অনেকে হয়েছে। এছাড়া বাকি সব জায়গায় নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। তিনি জানান, কুতুবদিয়ায় একদল সন্ত্রাসী সংশ্লিষ্ট কেন্দ্রে প্রবেশ করে প্রিসাইডিং অফিসারের কাছ থেকে ব্যালট পেপার নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে এবং কর্মকর্তাকে হুমকি দেয়। তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গুলি করে, সর্বোচ্চ ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অনিয়মের কারণে ৫টি কেন্দ্রে ভোট বন্ধ করতে হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। এ নির্বাচনে ভোট পড়ার হার নিয়ে প্রাথমিক পাওয়া তথ্যও তুলে ধরেন সচিব হুমায়ুন কবীর খোন্দকার। তিনি জানান, ইভিএমে ইউপিতে অন্তত ৫০ শতাংশ ভোট পড়েছে। পৌরসভায় ৫৫ শতাংশের বেশি ভোট পড়েছে। ব্যালটের মাধ্যমে যেসব জায়গায় ভোট পড়েছে তাতে ৬৫ শতাংশের বেশি ভোট হবে। নির্বাচনে সহিংসতার প্রশ্নে সচিব জানান, ইউপিতে ঘরে ঘরে নির্বাচনী আমেজ থাকে। প্রার্থী যারা রয়েছেন তারা এত বেশি ইমোশনাল হয়ে যান, নিজেরাই দ্ব›েদ্ব জড়িয়ে পড়ে। এতে অকস্মাৎ নিজেদের মধ্যে এ ধরনের ঘটনা ঘটেছে ও ঘটে যেতে পারে।
×