ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পারটেক্সের হাসেমের স্ত্রীর বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল

৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন

প্রকাশিত: ২০:৩০, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২১

৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ পাঁচ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পারটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ও সাবেক সংসদ সদস্য প্রয়াত এম এ হাসেমের স্ত্রী মিসেস সুলতানা হাসেমের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সোমবার তদন্তকারী কর্মকর্তা সহকারী পরিচালক মোঃ শফি উল্লাহ বিশেষ জজ আদালতে সম্পূরক চার্জশিট দাখিল করেন। দুদকের সূত্র থেকে এ তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, তদন্ত প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়, মিসেস সুলতানা হাসেম পারটেক্স গ্রুপের পরিচালক। তিনি ১৯৮৫-৮৬ করবর্ষ থেকে আয়কর দিয়ে আসছেন। তদন্তকালে মিসেস সুলতানা হাসেমের নামে ২ কোটি ৫৩ লাখ ২৭ হাজার ৩৮০ টাকার স্থাবর সম্পদ ও ১৪ কোটি ২১ লাখ ৯৬ হাজার ৮২৮ টাকার অস্থাবর সম্পদসহ ১৬ কোটি ৭৫ লাখ ২৪ হাজার ২০৮ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি সরকারের আমলে অবৈধভাবে উপার্জিত অর্থকেই আয়কর অধ্যাদেশের ও আইনের সুযোগ নিয়ে বৈধ আয়কর নথি অনুযায়ী মিসেস সুলতানা হাসেমের মোট আয় ১২ কোটি ৪ লাখ ৮৮ হাজার ৪৫০ টাকা এবং মোট ব্যয় ৩৬ লাখ ৬৫ হাজার ৯৪১ টাকা দেখানো হয়েছে বলে চার্জশিটে উল্লেখ করেন তদন্ত কর্মকর্তা। যেখানে ব্যয় বাদ দিলে মোট সঞ্চয় ১১ কোটি ৬৮ লাখ ২২ হাজার ৫০৯ টাকা পাওয়া যায়। কিন্তু তদন্তকালে তার ১৬ কোটি ৭৫ লাখ ২৪ হাজার ২০৮ টাকার স্থাবর-অস্থাবর সম্পদের তথ্য প্রমাণ পাওয়া গেছে। ফলে দুদকের তদন্তে মিসেস সুলতানা হাসেমের ৫ কোটি ৭ লাখ ১ হাজার ৬৯৯ টাকার জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদ অর্জনের প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাই অবৈধভাবে অর্জিত জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ অর্জন তদন্তকালে প্রাথমিকভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছেন তদন্ত কর্মকর্তা। তার বিরুদ্ধে দুদক আইন ২০০৪ এর ২৭ (১) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। সম্পদের মধ্যে মিসেস সুলতানা হাসেমের নামে চট্টগ্রামের খুলশী হাউজিং সোসাইটি ২ নং রোডের ১২-২ নম্বর ডুপ্লেক্স বাড়ি, গুলশান-২ এর ৫৫ নং রোডের ৯ নম্বর বাড়ি এবং একই এলাকার ৫৯ নং রোডের গ্র্যান্ড প্রেসিডেন্ট পার্ক কনকর্ড এ্যাপার্টমেন্টের একটি ফ্ল্যাটের তথ্য উল্লেখযোগ্য। ২০০৭ সালের ৫ ডিসেম্বর এম এ হাসেম ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে তৎকালীন দুদকের উপপরিচালক মনজুর আহম্মদ বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন। তদন্ত শেষে এম এ হাসেমের বিরুদ্ধে চার্জশিট আদালত গ্রহন করেন। তবে সুলতানা হাসেমের বিরুদ্ধে সমজাতীয় মামলা বিচারাধীন থাকায় উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় অবৈধ সম্পদের মামলাটি স্থগিত রাখা হয়। ২০১৯ সালের ১৯ এপ্রিল এ বিষয়ে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলে পুনরায় তদন্ত শুরু হয়। সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানান, করোনায় আক্রান্ত হয়ে ২০২০ সালের ২৫ ডিসেম্বর পারটেক্স গ্রুপের চেয়ারম্যান এম এ হাসেম মৃত্যুবরন করেন । অবৈধ সম্পদসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে তাকে ২০১৯ সালের ১২ নবেম্বর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। ২০০১ সালে অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তিনি বিএনপিতে যোগ দেন। নোয়াখালী-২ (বেগমগঞ্জ-সোনাইমুড়ী) আসনের সাংসদ নির্বাচিত হন। ওই সরকারের মেয়াদ শেষে রাজনৈতিক পালাবদলের মধ্যে রাষ্ট্রক্ষমতা চলে যায় সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে। আরও অনেক ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদের মত হাসেমও গ্রেফতার হন। পরের বছর জামিনে মুক্তির পর বিএনপি থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছিলেন ওই ব্যবসায়ী।
×