ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

চার লেন মহাসড়কে সাড়ে তিন ঘণ্টায় পৌঁছা যাবে ঢাকা

উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বগুড়া

প্রকাশিত: ২২:২৬, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১

উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় বগুড়া

সমুদ্র হক/মাহমুদুল আলম নয়ন, বগুড়া ॥ বগুড়া থেকে রাজধানী ঢাকা যোগাযোগে অন্তত দুই ঘণ্টা সময় কমবে। সাড়ে তিন ঘণ্টায় ঢাকা পৌঁছার চার লেন মহাসড়কের কাজ শুরু হয়েছে। বগুড়ার ওপর দিয়ে যাওয়া এই মহাসড়ক উত্তরবঙ্গ থেকে চতুর্দেশীয় সড়ক যোগাযোগে ছয় লেনের (চার লেনের দুই ধারে ছোট যান চলাচলে দুই লেন) নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) প্রকল্প-২ এর আওতায় এই সড়কের দৈর্ঘ্য টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল ও বগুড়া হয়ে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ দশমিক ৪ কিলোমিটার। এদিকে বগুড়াকে কেন্দ্র করে যমুনার তীরে সারিয়াকান্দিতে একটি নৌবন্দর স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আপাতত সারিয়াকান্দি থেকে জামালপুরের জামথল পর্যন্ত নৌ রুটে সিট্রাক চালু হয়েছে। বগুড়ার যমুনা তীরের সারিয়াকান্দি এলাকায় নিভৃত চরের মধ্যে বিদ্যুত পৌঁছেছে। পাকা সড়ক হয়েছে। সোলার প্ল্যান্টে সেচ কার্যক্রম ও সুপেয় খাবার পানি সরবরাহ হচ্ছে। সারিয়াকান্দি নৌবন্দর স্থাপন এবং চর উন্নয়নকেন্দ্রিক গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের ফাইলওয়ার্ক চলছে। এই বিষয়ে বগুড়া-১ আসনের আওয়ামী লীগ দলীয় সংসদ সদস্য সাহাদারা মান্নান জানান, প্রয়াত সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান শুধু সারিয়াকান্দি নয় বগুড়ার যে উন্নয়নের কাজ শুরু করেছিলেন তারই ধারবাহিকতায় তিনি কাজ করছেন। এদিকে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার গ্রামে দেশে এই প্রথম সমবায়ী ভিত্তিতে জমির আইল উঠিয়ে পরিকল্পিতভাবে আবাদ হয়েছে। কৃষক অধিক আবাদ পেয়েছে। বগুড়া হাল্কা প্রকৌশল শিল্প আলোর পথ দেখিয়েছে। বর্তমানে দেশের কৃষি যন্ত্রাংশের ৮০ শতাংশ পূরণ করে বগুড়ার হাল্কা ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প। বন্ধ হয়ে যাওয়া আদমজী জুট মিলের যন্ত্রাংশ বগুড়ার শিল্প উদ্যোক্তারা মিনি জুট মিল স্থাপন করেছে। বগুড়ার উন্নয়নের একটি অংশ ব্যক্তি উদ্যোগের। সরকারী প্রকল্পের উন্নয়নগুলোর কিছু কাজ শুরু হয়েছে। বগুড়ার বিমানবন্দর ॥ বগুড়া বিমানবন্দরের পরিকল্পনায় আছে, বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকা বগুড়া বিমানবন্দরে প্রশিক্ষণ বিমানের পাশাপশি বগুড়া-ঢাকা-বগুড়া রুটে উড়োজাহাজ ওঠানামা করবে। এ জন্য বর্তমানের রানওয়েকে বাড়িয়ে ৭ হাজার ফুটে উন্নীত করা হবে। সিভিল এভিয়েশনের (বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ) মাধ্যমে বগুড়ায় যাত্রীবাহী ফ্লাইট পরিচালনায় বিমানবহিনীর কোন আপত্তি নেই। বছর তিনেক আগে বগুড়া বিমানবন্দরের রানওয়ে সম্প্রসারণের জন্য ভূমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব ওপর মহলে পাঠানো হয়। ভৌগলিক ও বাণিজ্যিক অবস্থান বিবেচনায় বগুড়া বিমানবন্দর নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয় ১৯৮৭ সালে। ৯০’র দশকের শুরুতে সদর উপজেলার এরুলিয়া মৌজায় ১শ’ ১০ একর ভূমির ওপর ৬শ’ ফুট চওড়া ও সাড়ে তিন হাজার ফুট রানওয়ের পাশপাশি টার্মিনাল অফিস, আবাসিক ভবন নির্মিত হয়। এক পর্যায়ে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পুনরায় নির্মাণ কাজ শুরু হয়ে অনেকটা অগ্রগতি হয়। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এসে বিমানবন্দরটি বিমানবাহিনীর কাছে ন্যস্ত করে। বিমানবাহিনী সেখানে রাডার স্টেশন স্থাপন করে সামরিক বিমান প্রশিক্ষণ কেন্দ্র চালু করে। বগুড়া-সিরাজগঞ্জ রেলপথ ॥ বগুড়া-সিরাজগঞ্জ ডুয়েল গেজ রেললাইন নির্মাণ কাজ দ্রুত শুরু হচ্ছে। ২০১৮ সালের ২৯ অক্টোবর জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্পটি অনুমোদিত হয়েছে। ব্যয়ের প্রাক্কলন ৫ হাজার ৫শ’ ৮০ কোটি টাকা। ভারতীয় লেটার অব ক্রেডিটের (এলওসি) আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার কথা। সর্বশেষ খবর শীঘ্রই এই রেলপথ নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগ করা হবে। পরামর্শক নিয়োগের পর নতুন রেলপথ নির্মিত হলে উত্তরবঙ্গ থেকে খুব কম সময়ে রাজধানী পৌঁছা যাবে। বর্তমানে উত্তরঙ্গের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা যোগাযোগের আন্তঃনগর ট্রেনগুলো সান্তাহার, নাটোর, ঈশ্বরদী হয়ে চলাচল করে প্রায় দেড় শ’ কিলোমিটারই ঘুরপথ। বগুড়া-সিরাজগঞ্জ নতুন রেলপথে দূরত্ব ও সময় প্রায় অর্ধেকে নেমে আসবে। সূত্র জানায়, একনেক অনুমোদিত ৮৬ দশমিক ৫১ কিলোমিটার সরাসরি এবং ১৬ কিলোমিটার লুপসহ মোট ১শ’ ২ দশমিক ৮১ কিলোমিটার মিশ্র গেজ (ডুয়েল গেজ) রেলপথ নির্মিত হবে। মূল রেললাইন হবে বিদ্যমান বগুড়া রেল স্টেশনের পশ্চিমে ছোট বেলাইল থেকে সিরাজগঞ্জের এম মনসুর আলী রেল স্টেশন পর্যন্ত ৮৬ দশমিক ৫১ কিলোমিটার। এই পথে বগুড়া, নওগাঁ, রংপুর, লালমনিরহাট জেলার যাত্রীরা আন্তঃনগর ট্রেনে ঢাকা পৌঁছবে। তার সঙ্গে বগুড়ার কাহালু রেল স্টেশন থেকে রানীরহাট পর্যন্ত ১৬ দশমিক ৩০ কিলোমিটার কানেকটিভিটি লুপ রেলপথ হবে। লুপ লাইনের যৌক্তিকতা হলো সান্তাহার থেকে ঢাকাগামী এবং ঢাকা থেকে ছেড়ে যাওয়া সান্তাহার ও পার্বতীপুর হয়ে দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, চিলহাটিগামী আন্তঃনগর ট্রেনগুলো বগুড়া স্টেশন এড়িয়ে সরাসরি চলাচল করবে। এই দুই রেলপথ মিলিত হওয়ার কারণে বগুড়া নগরী থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে রানীরহাটে রেল জংশন স্থাপিত হবে। চার লেনের জাতীয় মহাসড়ক ॥ উত্তরবঙ্গ থেকে চতুর্দেশীয় সড়ক যোগাযোগে ছয় লেনের (চার লেনের দুই ধারে ছোট যান চলাচলে দুই লেন) জাতীয় মহাসড়ক নির্মাণ কাজ এগিয়ে চলছে। সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) প্রকল্প-২ এর আওতায় এই সড়কের দৈর্ঘ্য টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে সিরাজগঞ্জের হাটিকুমরুল ও বগুড়া হয়ে রংপুর পর্যন্ত ১৯০ দশমিক ৪ কিলোমিটার। এই সড়ক ঢাকা থেকে বগুড়া হয়ে রংপুর পর্যন্ত দ্রুত এবং নিরাপদ যাত্রার পথ সুগম হবে। সাসেক-২ প্রকল্পের উত্তরবঙ্গ মহাসড়কের মধ্যে যে ব্রিজগুলো পড়েছে এগুলোও ছয় লেনের উপযোগী করে নির্মিত হচ্ছে। এই ব্রিজগুলো নির্মাণ করছে ওয়েস্টার্ন বাংলাদেশ ব্রিজ ইমপ্রুভমেন্ট প্রজেক্ট (ডব্লিউবিবিআইপি)। সাসেক প্রকল্পের উর্ধতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০২২ সালের মধ্যে এলেঙ্গা থেকে রংপুর পর্যন্ত কাজ শেষ হওয়ার কথা। নির্মাণ সম্পন্ন সাপেক্ষে বগুড়ার মানুষ খুব কম সময়ে সড়ক পথে রাজধানী পৌঁছতে পারবে। বিদ্যুত ॥ বগুড়া অঞ্চলে বেসরকারী খাতে প্রতিটির ১১৩ মেগাওয়াটের দুটি বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মিত হয়েছে। কনফিডেন্ট পাওয়ার লিমিটেডের এই বিদ্যুত সরকারী গ্রিড লাইনে যুক্ত হচ্ছে। নর্দার্ন ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) মাধ্যমে বিদ্যুত বিতরণ হচ্ছে। বগুড়ার প্রতিটি উপজেলার গ্রামে বিদ্যুত বিতরণ করছে পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের পল্লী বিদ্যুত সমিতি। এদিকে বগুড়া শহরের প্রতিটি বাড়িতে প্রিপেইড মিটার বসানোর সকল আয়োজন সম্পন্ন হয়ে আছে। শীঘ্রই কাজ শুরু হবে। এমনটি জানিয়েছে নেসকো কর্তৃপক্ষ। বগুড়ায় দেশের একমাত্র মসলা গবেষণা কেন্দ্র ॥ এই কেন্দ্রের অধীনে ৩টি আঞ্চলিক ও ৪টি উপ আঞ্চলিক গবেষণা কেন্দ্র মসলার বহুমুখী উদ্ভাবনে সফলতা এনেছে। তবে সরাসরি কৃষকের কাছে যেতে পারছে না। কেন্দ্রগুলোর উদ্ভাবিত জাত মাঠ পর্যায়ে পৌঁছানোর দায়িত্ব কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের। বগুড়া নগরী থেকে প্রায় ১৭ কিলোমিটার উত্তরে শিবগঞ্জ উপজেলায় ৭০ একর ভূমিতে মসলা গবেষণা কেন্দ্র স্থাপিত হয় প্রায় দুই যুগ আগে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বারি) নজরদারিতে এই গবেষণা কেন্দ্র পরিচালিত। যেখানে ১৫টি মসলা ফসলের উফশী ৪২টি জাত উদ্ভাবিত হয়েছে। এদিকে এই মসলা গবেষণা কেন্দ্র গুঁড়া পেঁয়াজ উৎপাদনে সফলতা এনেছে। যা পেঁয়াজের বিকল্প হিসাবে ব্যবহার করা যাবে। হাল্কা প্রকৌশল শিল্প ॥ কৃষি যন্ত্রাংশে ও সেচ পাম্পে দেশের মোট চাহিদার ৮০ শতাংশই পূরণ হয় বগুড়ার উৎপাদিত পণ্য দিয়ে। অনেক পণ্য ভারতসহ কয়েকটি দেশে রফতানিও হয়। ষাটের দশক থেকে বগুড়া যান্ত্রিক কৃষির পথে চলতে শুরু করেছে। দিনে দিনে সম্প্রসারিত হয়ে বর্তমান সময়ে শহরের গোহাইল রোড, স্টেশন রোড, রেলওয়ে মার্কেট, বিসিক এস্টেট হাল্কা ও মাঝারি প্রকৌশল শিল্পের এলাকায় পরিণত। বিদেশ থেকে ভারি গ্রান্ডিং মেশিন, অটোমেটিক ফাউন্ড্রি মেশিন আমদানি হয়ে শিল্প চালু হয়। কৃষির এমন কোন যন্ত্র নেই যা বগুড়ায় তৈরি হয় না। বগুড়ার কৃষি যন্ত্রাংশ ও পাম্প রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলায় সরবরাহ হয়ে বগুড়া আধুনিক যন্ত্র কৃষি পণ্যের বড় বাজারে পরিণত। পাওয়ার টিলার, থ্রেসার মেশিন (মাড়াই কল), বীজ রোপণ মেশিন, অনেক জমি দ্রুত চাষের ট্রাক্টর, ম্যানুয়াল হারভেস্টর ও কম্বাইন্ড হারভেস্টরসহ আধুনিক কৃষির বড় বাজার গড়ে উঠেছে। এসব যন্ত্র মেরামতের প্রয়োজনে বাইরে যেতে হয় না। বর্তমানে ৬০টি ছোট বড় ফাউন্ড্রি শিল্পে প্রতিদিন কৃষির বিভিন্ন যন্ত্র ও যন্ত্রাংশের কাঠামো তৈরি হচ্ছে। কৃষি যন্ত্র ছাড়াও মোটর গাড়ির কিছু যন্ত্র, রেল ইঞ্জিনের ব্রেক, গার্মেন্ট শিল্পের যন্ত্রাংশ, গভীর, অগভীর ও হাতে চালিত নলকূপের যন্ত্রাংশ গ্রান্ডিং মেশিনের যন্ত্রাংশ বানানো হচ্ছে। বগুড়ার দক্ষ শ্রমিকদের কাজ দেখে বিদেশী প্রতিষ্ঠান তাদের দেশে নিয়ে যায়। শিল্প পার্ক ॥ এদিকে হাল্কা প্রকৌশল (লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং) শিল্পে এগিয়ে থাকা বগুড়ায় বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কর্পোরেশনের (বিসিক) ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক (শিল্প পার্ক) স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিসিক বগুড়ার শিল্প নগরী কর্মকর্তা জানান, এই ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক বিসিকের চেয়ে কয়েকগুণ লাভজনক হবে। বগুড়া চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান মিলন বলেন, অনেক শিল্প উদ্যোক্তা বিসিকে স্থান না পাওয়ায় বিচ্ছিন্নভাবে এবং আবাসিক এলাকায় হাল্কা শিল্প স্থাপন করছে। ইন্ডস্ট্রিয়াল পার্ক স্থাপনে হারানো শিল্প নগরী বগুড়ার ঐতিহ্য ফিরে আসবে। এদিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০২০ সালকে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং বর্ষ পণ্য হিসেবে ঘোষণা করেছিলেন। বিসিক ২০১৯ সালের ২০ মে বগুড়ায় একটি ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক স্থাপনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে প্রধান কার্যালয়ে পাঠায়। সেখান থেকে ডেভেলপমেন্ট প্ল্যান ডকুমেন্ট (ডিপিডি) তৈরি করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ওই বছর ১৭ জুলাই শিল্প মন্ত্রণালয়ের কাছে পাঠানো হয়। এরপর মন্ত্রণালয়ের যাচাই-বাছাই কমিটির সভায় বাস্তবায়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হিসেবে বিবেচিত হয়। ২০১৯ সালের ১৭ ডিসেম্বর বগুড়ায় বিসিক ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক স্থাপনে নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়। বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ ॥ ভৌগলিক অবস্থানগত কারণে (উত্তবঙ্গের মধ্য শহর) বগুড়ায় বাইপাস সড়কের ধারে ছিলিমপুরে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিক্যাল কলেজ (শজিমেক) ও হাসপাতালের আধুনিক ভবন চালু হয় ২০০৫ সালে। এর আগে বগুড়া মেডিক্যাল কলেজ ছিল শেরপুরে রোডের ধারে। বর্তমান সরকার বগুড়া শজিমেক হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ৫শ’ থেকে বাড়িয়ে ১২শ’ উন্নীত করার ঘোষণা দেয়। কাজের ধীরগতিতে এখনও সাত তলা নির্মাণ সম্পূর্ণ শেষ হয়নি। এই হাসপাতাল পুরোটাই কেন্দ্রীয় অক্সিজেনের আওতায় নেই। শুধু করোনা ও আইসিইউতে অক্সিজেন সরবরাহ হচ্ছে। এই বিষয়ে মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডাঃ রেজাউল আলম জুয়েল জানান, সার্বিক সেবাদানে এই হাসপাতাল ভাল ভূমিকা রেখেছে। সেন্ট্রালি অক্সিজেন ব্যবস্থা ও সাত তলা নির্মাণ কাজ দ্রুত শেষ করে ১২শ’ বেড স্থাপিত হলে সেবার মান আরও বাড়ানো যাবে। মেডিক্যাল কলেজের একাডেমিক ভবনের তিন তলায় কয়েকটি কক্ষে রিভার্স ট্রান্সক্রিপটেড পলিমারাইজ চেন রিএ্যাকশন (আরটি পিসিআর) ল্যাব স্থাপিত হয়েছে। মিনি জুট মিল ॥ আদমজী পাটকলের পরিত্যক্ত তাঁত ও যন্ত্রাংশ এবং স্থানীয় ফাউন্ড্রির তৈরি যন্ত্রপাতি দিয়েই বগুড়ায় গড়ে উঠেছে বেসরকারী খাতের ১৭টি মিনি পাটকল। উৎপাদিত পাটজাত পণ্য বিশেষ করে বস্তা, চট রফতানি হচ্ছে বিশ্বের কয়েকটি দেশে। পাটকল কর্তৃপক্ষ বলছেন, প্রাকৃতিক গ্যাস সংযোগ না পাওয়ায় এই পাটকলগুলো চলছে ধীর গতিতে। বগুড়ার কয়েকজন শিল্প উদ্যোক্তা আদমজীর পরিত্যক্ত তাঁত ও যন্ত্রপাতি কিনে পাটকল স্থাপনের পর উৎপাদন শুরু করে। পরে আরও তাঁত ও যন্ত্রপাতি সংযোজন করা হয়। কিছু যন্ত্র আমদানি করা হয় ভারত ও চীন থেকে। বগুড়ার উন্নত ফাউন্ড্রি শিল্প থেকেও আদমজীর যন্ত্রপাতির মতো যন্ত্র তৈরি করে নেয়া হয়। কাহালুর বগুড়া ভান্ডার পাটকল কর্তৃপক্ষ জানালেন, তাদের পাটকলে নারী ও পুরুষ মিলে ৮শ’ শ্রমিক কাজ করছে। বগুড়ার পাটকলগুলোতে গড়ে ১০ টন করে সুতলি, চট ও বস্তা উৎপাদিত হচ্ছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর বলছে, পাটকল স্থাপিত হওয়ায় পাটের আবাদ বেড়েছে। বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল ॥ এলাকা নির্ধারিত হয়েছে। অধিগ্রহণের ভূমি ঠিক হয়েছে। এরিয়াল ভিউ (ম্যাপ) নেয়া হয়েছে। একদার শিল্পনগরী বগুড়ার ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে বগুড়া ইকোনমি জোন (বিইজেড) প্রতিষ্ঠার সিদ্ধান্ত হয়। বগুড়া শহর থেকে প্রায় সাত কিলোমিটার দক্ষিণে শাজাহানপুর উপজেলার জোড়া, চকজোড়া, পারটেকুর, বীরগাঁও, চকভ্যালি মৌজায় ২শ’ ৫১ দশমিক ৪৩ একর ভূমির অধিগ্রহণের কাজ শেষে অর্থের প্রাক্কলন করা হয়। বাংলাদেশ ইকোনমিক জোন অথরিটি (বেজা) বগুড়া অর্থনৈতিক অঞ্চল-১ প্রকল্প বাস্তবায়নের সার্বিক কাজ সম্পন্ন করে। স্থানীয় সরকার সহযোগিতা প্রকল্প (এলজিএসপি) ॥ বগুড়ার কার্যক্রম সফলতার শতভাগ অর্জন নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। বগুড়ার স্থানীয় সরকার বিভাগ জানায়, এই প্রকল্প বাস্তবায়নে মাঠ পর্যায়ে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে। ইউনিয়নের আয়তন ও জনসংখ্যার ভিত্তিতে বরাদ্দ মেলে। প্রতিটি স্কিম গ্রহণ করা হয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে ওয়ার্ড সভায় জনগণের মতামতের ভিত্তিতে। প্রকল্প প্রস্তাবগুলো উপজেলা পরিষদের সভায় অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সর্বসম্মতিক্রমে পাস করা হয়। প্রকল্পের ৩০ শতাংশ কাজ বাস্তবায়নে নারীর সরাসরি ভূমিকা থাকে। প্রকল্পের বৈঠকে নারীর মতামত না থাকলে সেই প্রকল্প বাস্তবায়িত হয় না। এভাবে নারীর ক্ষমতায়নে এলজিএসপি বড় ভূমিকা রেখে এসডিজির পঞ্চম অভীষ্ট পূরণে সহযোগী হয়েছে। এই অভীষ্টে জাতিসংঘ সদস্য দেশগুলোকে ২০৩০ সালের মধ্যে নারী-পুরুষের সমতা শতভাগ অর্জন করতে বলা হয়েছে। সমবায়ভিত্তিক আবাদ ॥ দেশে এই প্রথম বগুড়ার গ্রামে আইল তুলে জমির আয়তন বাড়িয়ে ধানের অধিক ফলনে সফলতা এসেছে। যা যন্ত্র কৃষির সমবায় আবাদে নতুন পথ দেখিয়েছে। আইল তোলা জমির ফসল মাড়াই কাটাই হচ্ছে কম্বাইন্ড হারভেস্টারে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান বগুড়া পল্লী উন্নয়ন একাডেমি (আরডিএ) জানিয়েছে, ফসল উৎপাদনে খরচ অনেক কমে কৃষকের মাথাপিছু আয় বেড়েছে। মডেল প্রকল্পটি সারাদেশে ছড়িয়ে দেয়া হবে। দলিত জনগোষ্ঠী ॥ হিজড়া, বেদে ও হরিজনসহ দেশের দলিত জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়ন ও মানব সম্পদে পরিণত করতে সরকারীভাবে বহুমুখী কর্মসূচী নিয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে শিক্ষিত করে তোলার লক্ষ্যে উপবৃত্তি প্রদান। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর দক্ষতা বাড়িয়ে আয়বর্ধনমূলক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করে সমাজের মূল স্রোতে নিয়ে আসা। পরিবার ও সমাজে তাদের মর্যাদা বাড়িয়ে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সামাজিক সুরক্ষা প্রদান। বগুড়া সমাজসেবা অধিদফতর জানায়, দেশে এই প্রথমবারের মতো হিজড়া জনগোষ্ঠীর জীবন মান উন্নয়নে আবাসনের মাধ্যমেও পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রথম পর্যায়ে পাইলট স্কিমের আওতায় বগুড়াসহ দশ জেলায় হিজড়াদের আবাসনের ব্যবস্থা করছে। পর্যটন ও প্রত্নতত্ত্ব ॥ দেশে এই প্রথম বগুড়ার মহাস্থানগড়সহ চারটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানে পর্যটন ও অবকাশ কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়েছে। সাউথ এশিয়া ট্যুরিজম ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় পর্যটন শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের সহযোগিতায় দেশের প্রাচীন ইতিহাসখ্যাত স্থানগুলোকে পর্যটক বান্ধব কার্যক্রমের আওতায় আনা হয়। প্রথম পর্যায়ে বগুড়ার মহাস্থানগড়, নওগাঁর পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, দিনাজপুরের কান্তজীর মন্দির ও বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ মসজিদ এলাকায় পর্যটকদের জন্য অবকাশ কেন্দ্র হোটেল বাংলো কটেজ রেস্তরাঁ রাস্তাঘাট নির্মাণ করা হয়। ব্যয় ১৫ মিলিয়ন ডলার। এশিয়া উন্নয়ন ব্যাংক ১২ মিলিয়ন ডলার ঋণ দিয়েছে। বাকি ৩ মিলিয়ন ডলার সরকারের। পরিকল্পনাটি বাস্তবায়িত হয়ে পর্যটন শিল্পের উন্নয়নের সঙ্গে এলাকার উন্নয়ন হয়ে নবযুগের সূচনা করেছে। যেখানে প্রত্নসম্পদ প্রদর্শনের নানা ব্যবস্থা আছে। প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতর রাজশাহী ও রংপুর বিভাগীয় আঞ্চলিক পরিচালক নাহিদ সুলতানা জানিয়েছেন, মহাস্থানগড়সহ দেশের ৭টি স্থানকে ইউনেস্কোর ওয়ার্ল্ড হেরিটেজে অন্তর্ভুক্তির প্রস্তাব করা হয়েছে। নদীর নাব্য ফেরাতে মেগা প্রকল্প ॥ নদীর নাব্য ও গভীরতা প্রমত্তায় ফিরিয়ে এনে ভাঙ্গন দূর করে ভিটেমাটি রক্ষা এবং বন্যা নিয়ন্ত্রণে মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত হচ্ছে উত্তরাঞ্চলের বগুড়ায়। বাঙালী-করতোয়া-ফুলজোড়-হুরাসাগর নদী সিস্টেম ড্রেজিং পুনর্খনন ও তীর সংরক্ষণ নামের এই প্রকল্পে ব্যয়ের প্রাক্কলন ২ হাজার ২শ’ ৩৫ কোটি টাকা। পানি সম্পদ মন্ত্রণালয় এই মেগা প্রকল্প বাস্তবায়িত করছে। বর্তমানে বগুড়ার ধুনট এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ড্রেজিং (নদী খনন) ও তীর সংরক্ষণের কাজ করছে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) ও সেনাবাহিনী কোন কাজগুলো করবে তা নির্ধারণ করা হয়েছে। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেগা প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন। পাউবো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, প্রকল্প ঠিকঠাক মতো সম্পন্ন হওয়ার পর উত্তরাঞ্চলের বড় নদীর গভীরতা বেড়ে বন্যা নিয়ন্ত্রিত হবে। নিত্য বছর বন্যার পানি বেড়ে যাওয়া ও কমে যাওয়ার সময় বসত ভিটা জমি জিরাত যমুনার ভাঙ্গনের তোপের মুখে পড়ে হাজারো মানুষ নিঃস্ব হবে না। ছোট নদীগুলো হারানো নাব্য ফিরে পেয়ে পূর্বের স্রোত রেখায় বয়ে যাবে। নদীর এই প্রবাহ উত্তরাঞ্চলের গ্রামীণ জীবনের অর্থনীতির গতি বাড়িয়ে দেবে। সুষম উন্নয়নে দেশের উত্তরাঞ্চল কয়েকধাপ এগিয়ে যাবে। শস্যচিত্রে বঙ্গবন্ধু ॥ বগুড়ার শেরপুরের ভবানীপুর ইউনিয়নের বালেন্দা গ্রামে ১২০ বিঘা জমির মধ্যে দেশে প্রথম ধানের চারা রোপণ করে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি অঙ্কিত হয়েছে। যা বিশ্বে সমাদৃত হয়ে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ডে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে।
×