নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল ॥ বিএনপিকে উদ্দেশ করে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক এমপি বলেছেন, আন্দোলন-সংগ্রামের নামে গাড়িতে, বাড়িতে, রাস্তায় নিরপরাধ মানুষকে পুড়িয়ে মারার আগুনসন্ত্রাস ও নৈরাজ্যমূলক কর্মকান্ড থেকে বিরত থাকুন। আগামী ২০২৩ সালের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিন, নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন। দেশের জনগণ আপনাদের ভোটে বিজয়ী করলে আমরা আপনাদের স্বাগত জানাব। কিন্তু আন্দোলন-সংগ্রামের নামে সন্ত্রাস-নৈরাজ্যমূলক কর্মকান্ডের মাধ্যমে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটানো যাবে না। সে শক্তি বিএনপির নেই। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকুক আর না থাকুক, এই দলটি অত্যন্ত শক্তিশালী। আমরা ক্ষমতায় থাকলেও শক্তিশালী, ক্ষমতায় না থাকলেও জাতীয় যে কোন ইস্যুতে যে কোন বিষয়ে আওয়ামী লীগ ভূমিকা রাখে। আওয়ামী লীগ জাতীয় স্বার্থে কখনও কোনদিন নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করে না। স্বাধীনতার পরাজিত শক্তি ও বিএনপি-জামায়াতের দেশবিরোধী সকল ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সব সবসময় ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পরিচালিত বর্তমান সরকারের সময়ে দেশে যেসব উন্নয়ন কাজ হয়েছে তা জনগণকে জানাতে হবে। বৃহস্পতিবার দুপুরে মধুপুর উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে উপজেলা আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভায় প্রধান অতিথির বক্তৃতায় মন্ত্রী এসব কথা বলেন।
কৃষিমন্ত্রী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হচ্ছেন মানবতার মা। এ কারণেই তিনি অসহায় রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আশ্রয় দিয়ে মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি এখন থেকেই নিতে হবে দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের। দেশের চলমান উন্নয়নের ধারাকে অব্যাহত রাখতে আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও আওয়ামী লীগকে বিজয়ী করতে হবে। আওয়ামী লীগ প্রতিষ্ঠার পর থেকেই গণতান্ত্রিক বাঙালী জাতীয়তাবাদের ভিত্তিতে একটি সাম্যের ও সমতার ভিত্তিতে সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে। আমরা লক্ষ্য করছি, যারা মুক্তিযুদ্ধে পাক-হানাদার বাহিনীকে সহযোগিতা করেছে, আমাদের বাড়িঘরে আগুন দিয়েছে, মাবোনদের পাকবাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে। তারাই আবারও ক্ষমতায় আসার পাঁয়তারা করছে। কালকেই যদি কোন অপশক্তি, অসাংবিধানিক শক্তি ক্ষমতায় আসে, ক্ষমতা কেড়ে নেয়, আমাদের আক্রমণ করে। তাদের মোকাবেলা করার শক্তি অর্জন করতে হবে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, ’৭৫-এ আমরা কেন পারি নাই বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রতিবাদ করতে, কেন সেটাকে আমরা প্রতিহত করতে পারি নাই, সেদিন কেন বাংলাদেশে আমরা প্রতিরোধ করতে পারি নাই। এটি আমাদের জন্য দুঃখ্যের ও লজ্জার। বঙ্গবন্ধুকন্যা বাংলাদেশে এসে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন, সংগ্রাম করেছেন। গণতন্ত্রকে পুনরুদ্ধার করেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার করেছেন। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করেছেন এবং এর সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশকে তিনি উন্নয়নের মহাসড়কে তুলেছেন। এই উন্নয়নের মহাসড়ককে আরও গতিশীল করতে হবে। আরও ত্বরান্বিত করতে হবে। আরও বেগবান করতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছি।
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক আরও বলেন, সামনে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন। এ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীরা যাতে বিজয়ী হতে পারে সেলক্ষ্যে সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। সবাইকে দলের শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। যারা আওয়ামী লীগ করেও নৌকার প্রার্থীদের হারানোর চেষ্টায় বিদ্রোহী প্রার্থী হবেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। দীর্ঘ দেড় বছর ধরে চলা করোনার প্রকোপের কারণে আওয়ামী লীগের অনেক জেলা, উপজেলা, পৌর, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড সম্মেলন শেষ করা যায়নি। অনেক কমিটিই মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে গেছে। এই মুহূর্তে করোনার সংক্রমণ অনেকটা কমে এসেছে। তাই এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে কাজ শুরু করতে হবে। কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠন করে দলকে গোছানো ও আরও সুসংগঠিত করতে হবে। একই সঙ্গে ছাত্রলীগ, যুবলীগ, কৃষকলীগসহ দলের সহযোগী সংগঠনকেও আরও সুসংগঠিত করতে হবে। কমিটিতে তৃণমূলের পরীক্ষিত, নিবেদিত ও দঃসময়ে যারা পাশে ছিল, সেসব কর্মীদের দলে জায়গা দিতে হবে। অসৎ, সুযোগসন্ধানী ও সুদিনের মৌমাছির মতো যারা দলে ভিড়েছে, তাদের কোনমতেই কমিটিতে স্থান দেয়া হবে না। এ সময়ে উপজেলার ইউনিয়ন, ওয়ার্ড সম্মেলন ও কমিটি গঠনের কার্যক্রম অতিদ্রুত করা হবে।
মধুপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি খন্দকার শফিউদ্দিনের সভাপতিত্বে বর্ধিত সভায় সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খান আবু, পৌরসভার মেয়র সিদ্দিক হোসেন খান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
