ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

রাকিবুল রকি

নজরুলের রঙ্গ-রসিকতা

প্রকাশিত: ২১:২৩, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

নজরুলের রঙ্গ-রসিকতা

কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যাকাশের ধ্রুবতারা। মাত্র তেইশ বছরের সাহিত্যজীবন। অথচ তিনি আজও আমাদের কাছে বিস্ময়। ‘বিদ্রোহী’ কবিতার প্রথম স্তবকেই যে লিখেছিলেন, ‘উঠিয়াছি চির-বিস্ময় আমি বিশ্ব-বিধাত্রীর।’ সত্যি তিনি ‘চির-বিস্ময়’ হয়েই আমাদের কাছে রয়ে গেলেন। শোষণ-নিপীড়ন থেকে মুক্তি, অসম্প্রদায়িক চেতনার বিস্তার, নারী-পুরুষের সমঅধিকার, প্রেম, আত্মশক্তি অর্জন- মোটাদাগে বলা যায় এগুলোই নজরুল সাহিত্যের মূল সুর। নজরুলকে নিয়ে কিংবা তাঁর সাহিত্য নিয়ে আলোচনা করতে গেলে এই বিষয়গুলোই বার বার উঠে আসে। এর বাইরে নজরুলের সাহিত্যে যে হাস্যরস, রঙ্গব্যঙ্গ কিংবা ব্যক্তি জীবনেও তিনি ছিলেন প্রাণপ্রাচুর্যে ভরপুর, হাসি-গানে মাতিয়ে রাখতে তাঁর চারিপাশ, কী সুখে- কী দুঃখে তাঁর মুখের হাসি যে কখনও বিলীন হতো না- তা প্রায় অনালোচিতই থেকে যায়। তিনি ছিলেন ‘চির-শিশু, চির-কিশোর’। তাকে নিয়ে যারাই স্মৃতিচারণ করেছেন, স্বাভাবিকভাবেই তাদের স্মৃতিচারণে নজরুলের প্রাণখোলা স্বভাব, উদ্দাম হাসির কথা উঠে এসেছেই। বুদ্ধদেব বসু লিখেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের সিংহ দ্বারে এক মুসলমান অধ্যাপকের বাসা, সেখান থেকে নজরুলকে ছিনিয়ে নিয়ে আমরা কয়েকটি উৎসাহী যুবক চলেছি আমাদের ‘প্রগতি’র আড্ডায়। বিকেলের ঝকঝকে রোদ্দুরে সবুজ রমনা জ্বলছে। হেঁটেই চলেছি আমরা, কেউ- কেউ বাইসাইকেলটাকে ধরে ঠেলে নিয়ে চলেছে, জনবিরল সুন্দর পথ আমাদের কলরবে মুখর, নজরুল একাই একশো। চওড়া মজবুত, জোরালো তাঁর শরীর, লাল-ছিটে-লাগা বড় বড় মদির তাঁর চোখ, মনোহর মুখশ্রী, লম্বা ঝাঁকড়া চুল তাঁর প্রাণের ফূর্তির মতোই অবাধ্য। গায়ে হলদে কিংবা কমলা রঙের পাঞ্জাবি এবং তার উপর কমলা কিংবা হলদে রঙের চাদর- দুটোই খদ্দরের। ‘রঙিন জামা পরেন কেন?’ ‘সভায় অনেক লোকের মধ্যে চট করে চোখে পড়ে, তাই।’ বলে ভাঙা ভাঙা গলায় হো-হো করে হেসে উঠলেন। আমাদের টিনের ঘরে নিয়ে এলাম তাঁকে, তারপর হারমোনিয়াম, চা, পান, গান, গল্প হাসি। আড্ডা জমলো প্রাণমন খোলা, সময়ের হিসাব-ভোলা- নজরুল যে-ঘরে ঢুকতেন সে-ঘরে কেউ ঘড়ির দিকে তাকাত না। আমাদের ‘প্রগতি’র আড্ডায় বারকয়েক এসেছেন তিনি, প্রতিবারেই আনন্দের বন্যা বইয়ে দিয়েছেন। প্রাণশক্তির এমন অসংবৃত উচ্ছ্বাস, এমন উচ্ছৃঙ্খল অপচয় অন্য কোন বয়স্ক মানুষের মধ্যে আমি দেখিনি।’ কথাসাহিত্যিক প্রতিভা বসু নজরুলকে প্রথম দেখার বর্ণনায় বলেছেন, ‘...এক বিষণ্ণ বিকেলে মন খারাপ করে দোতলার ঝোলানো বারান্দায় দাঁড়িয়েছিলাম। একটি ফিটন এসে আমাদের দরজায় এসে থামল। যাক, কেউ এসেছে। নির্জন বিকেলের দারুণ কষ্ট এবার কিছুটা উপশম হবে। খুশি হয়ে উঠলাম। তাড়াতাড়ি দৌড়ে সিঁড়ি দিয়ে নেমে এসে দরজা খুলে দেখলাম, বাঙালীর তুলনায় একটু বেশিই স্বাস্থ্যবান এবং সুশ্রী এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে আছেন দরজায়, এক মুখ হেসে গায়ের গেরুয়া চাদর সামলাতে সামলাতে আমাকে ঠেলেই প্রায় ঢুকে এলেন ঘরে। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বললেন, ‘তুমিই নিশ্চয় রানু? বলো ঠিক ধরেছি কি না? তুমিই মন্টুর ছাত্রী তো?’ মন্টু মানে দিলীপদা। দিলীপদার ডাক-নাম মন্টু। আমার বুকটা ধড়াস করে কেঁপে উঠল। মনে মনে বললাম, ‘তবে কি ইনিই তিনি?’ আমি নজরুল ইসলামকে কখনও দেখিনি। তাঁর কথা শুনেছি অনেক কিন্তু চেহারার বর্ণনা কেউ দেয়নি। তবু খুব আশ্চর্যভাবেই মনে হলো এঁর নামই নজরুল ইসলাম। আমি রোমাঞ্চিত বিস্ময়ে তাকিয়ে থেকে বললাম, ‘আপনি- আপনি কি-’ ‘আমি নজরুল ইসলাম।’ খোলা গলায় হাসলেন নজরুল ইসলামের বয়স তখন বত্রিশ-তেত্রিশ অথবা কিছু বেশি। যৌবন তার চোখে-মুখে, সারাক্ষণ হাসিতে সমস্ত শরীরে নদীর স্রোতের মতো বহমান, বেগবান। সেই বয়সে যাঁরা তাঁকে দেখেছেন শুধু তাঁদেরই বোঝানো যাবে কী দু’কূলপ্লাবী আনন্দধারা দিয়ে গড়া তাঁর চরিত্র।’ কাজী নজরুল ইসলাম গোমরা মুখে থাকতে পারতেন না। সবসময় হাসি আনন্দে থাকতে চাইতেন। নূরজাহান বেগম এক সাক্ষাতকারে বলেছেন, ‘সওগাত সাহিত্য মজলিশ’-এর আড্ডা বসত বিকেলে। নজরুল আড্ডায় বিকেলবেলা এসেই বলতেন, ‘তোমরা কেন মুখ গোমরা করে আছ?’ খুব রসিকতা করতেন নজরুল। সবাই হাসিতে ফেটে পড়ত। নজরুল নিজেও হা হা করে হাসতেন। হাসতে হাসতে দম বন্ধ হয়ে যেত তাঁর।’ কাজী নজরুল ইসলাম যেখানে যেত, সেখানেই বইয়ে দিত এই আনন্দধারা। রঙ্গ-রসিকতাতেও মাতিয়ে রাখতেন চারপাশ। তেমনই কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরছি। ১. ‘বিদ্রোহী’ কবিতা প্রথম প্রকাশিত হয় ‘বিজলী’ পত্রিকায়। কাজী নজরুল ইসলাম পত্রিকার কপি নিয়ে হাজির হলে জোড়াসাঁকোর ঠাকুর বাড়ির সামনে। বাড়ির সামনে গিয়ে তারস্বরে চিৎকার করতে লাগলেন। ‘গুরুজি আপনাকে হত্যা করব, গুরুজি, গুরুজি।’ কাজী নজরুল ইসলামের ডাকাডাকিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বেরিয়ে এলেন। উপর থেকে বললেন, ‘কী হয়েছে? ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছ কেন? এসো, উপরে এসে বসো?’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সামনে বসিয়ে বিচিত্র ভঙ্গিমায় ‘বিদ্রোহী’ কবিতা আবৃত্তি করলেন নজরুল। নজরুলের মুখে ‘বিদ্রোহী’ শোনার পর স্তব্ধ হয়ে তাঁর দিকে তাকিয়ে রইলেন রবীন্দ্রনাথ। তারপর ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ালেন। দু’হাত বাড়িয়ে বুকে টেনে নিলেন। বললেন, ‘হ্যাঁ কাজী, তুমি আমাকে সত্যিই হত্যা করবে। আমি মুগ্ধ হয়েছি তোমার কবিতা শুনে। তুমি যে বিশ্ববিখ্যাত কবি হবে তাতে কোন সন্দেহ নেই। তোমার কবি প্রতিভায় জগত আলোকিত হোক, ভগবানের কাছে এই প্রার্থনা করি।’ তবে অনেক নজরুল-গবেষক এই ঘটনা অস্বীকার করেছেন। তাদের মতে, নজরুলের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পরিচয় আরও পরে হয়েছে। তবে বয়সের ব্যবধান সত্ত্বেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সঙ্গে কাজী নজরুল ইসলামের ছিল মধুর সম্পর্ক। মাঝেমধ্যে কবিগুরুর অদ্ভুতকান্ডও ঘটিয়ে বসতেন তিনি। জেলে থাকার সময় কাজী নজরুল ইসলাম অন্যান্য বন্দীদের সঙ্গে আড্ডায় তেমনই এক ঘটনা বলেছিলেন- ‘একবার শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলুম আর ছিলুমও দিন কয়েক। একদিন দুপুরের পরে কবি বসেছিলেন একা তাঁর ‘দেহলী’র বারান্দায়। বেতের একখানা পিঠ-উঁচু চেয়ারে। পায়ের কাছে বসে তাঁর একখানা পা আমি টেনে নিয়েছিলাম কোলের উপর। ইচ্ছে ছিল, একটু টিপে দেব। তারস্বরে কবি চেঁচিয়ে উঠলেন: ‘ওরে, ছাড় ছাড় হাড়গোড় আমার ভেঙে গেল।’ ‘অপ্রস্তুতের একশেষ। সরে বসেছিলুম। আমার দিকে ফিরে চেয়েছিলেন কবি। চোখের তারা পিটপিট করছিল। মুখে মৃদু হাসি। বলেছিলেন, - ‘কটা গান লিখলে আজ? নাকি খালি চ্যাঁচালেই?’ ‘মুখ ভাড় করে, মাথা নিচু করে আমি বলেছিলুম, -‘মাঝে মাঝে কী মনে হয়, জানেন?’ ‘কী?’ ‘একটা লাঠির বাড়ি মাথায় মেরে আপনাকে শেষ করে দিই?’ ‘কেন? কেন?’ ‘তাহলে আপনার পাশাপাশি চিরকাল লোকে আমারও নাম করবে। আর আমার ছবিও আপনার ছবির পাশেই ছাপা হবে!’ ‘কী সর্বনাশ! ওরে কে আছিস, শিগগিরিই আয়। এ পাগলের অসাধ্য কিছু নেই।’ ‘কবির কণ্ঠ একটু উঁচুই বা হয়েছিল! কয়েকজন এসেও পড়েছিল। তাদেরকে সবিস্তারে কবি আমার কথার ফিরিস্তি শুনিয়ে দিলেন।’ ২. কাজী আবদুল ওদুদ গ্যেটে অনুবাদ করেছিলেন। কোন সাহিত্যিক তাঁর বাসায় গেলে তাকে অনুবাদ পড়িয়ে শোনাতেন। নজরুল তখন ঢাকায়। একদিন গেলেন কাজী আবদুল ওদুদের বাড়ি। কাজী আবদুল ওদুদ নজরুলকেও অনুবাদ পড়ে শুনিয়েছিলেন। অনুবাদ শোনার পর কাজী নজরুল ইসলাম হাসতে হাসতে ঠাট্টা করে বললেন, ‘ গ্যেটে-গ্যেটে করে আপনি গেটেই রয়ে গেলেন, ভেতরে যেতে পারলেন না।’ ৩. ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহকে নজরুল খুব শ্রদ্ধা করতেন। তাঁর সম্পাদিত পত্রিকাতেই নজরুলের প্রথম কবিতা ‘মুক্তি’ প্রকাশিত হয়। কাজী নজরুল ইসলাম ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহর বড় ছেলে মুহম্মদ সফিয়্যুল্লাহকে ঠাট্টা করে বলতেন, ‘তোর বাবা ডাক্তার হয়েছে কিন্তু আমিও কবিরাজ। বুঝলি?’ ৪. সুফিয়া কামাল কবিকে ‘দাদু-ভাই’ বলে সম্বোধন করতেন। নজরুল যেদিন প্রথম সুফিয়া কামালদের বাসায় গেলেন, সুফিয়া কামাল নজরুলকে কদমবুসি করলেন। কবি তো সুফিয়া কামালকে দেখে অবাক। চিৎকার করে বলতে লাগলেন, ‘তোমাকে আগে দেখিনি- তুমি এতটুকু! তোমাকে আমি লুফব।’ ঘরের সবাই নজরুলেন কথায় হেসে উঠলেন। নজরুল বলেই চলেছেন, ‘এতটুকু কেন, বেগম সাহেবা- আরে মিসেস-টিসেস হয়েছ, একটু ওজনে তো ভারী হবে, আগে জানলে একটা দোলনা আনতাম!’ এই হলো নজরুল। এরপর তিনি প্রায়ই যেতেন সুফিয়া কামালদের বাসায়। এই রোজ যাওয়াটা পুলিশের চোখে পড়ল। একদিন নজরুল বসে আছেন, এক ভদ্রলোক এসে বসলেন। নজরুল ওই বাড়িতে গেলে পাড়ার অনেকেই দেখতে যেত। কিন্তু ওই ভদ্রলোককে দেখেই নজরুল বলে উঠলেন, ‘তুমি টিকটিকি জানি ঠিকঠিকই।’ লোকটি মুখ লাল করে চলে গেল। সুফিয়া কামাল জিজ্ঞেস করলেন, ‘কী করে তুমি চিনলে দাদু?’ নজরুল হেসে বললেন, ‘গায়ের গন্ধে। বড়ো কুটুম্ব যে।’ ৫. নজরুল গিয়েছেন সিরাজগঞ্জে নিখিলবঙ্গ মুসলিম যুব সম্মেলনে। একদিন সবাই খেতে বসেছেন। আসাদ্উদ্দৌলা সাহেব ও গিয়াসউদ্দীন সাহেব পরিবেশন করছেন। তাঁরা সবার পাতে ইলিশভাজা দিয়ে চলেছেন। কবি দেখতে দেখতে বড় দু’টুকরো ভাজামাছ খেয়ে ফেলেছেন। এমন সময় একজন পরিবেশক এসে নজরুলের থালায় আরও ভাজামাছ দিতে যাচ্ছিলেন। নজরুল বাধা দিলেন। বললেন, ‘আরে করছো কী? শেষকালে আমাকে বিড়ালে বিড়ালে কামড়াবে যে!’ অনেকেই কবি সাহেবের কথা বুঝতে পারলেন না। গিয়াসউদ্দীন সাহেব তখন বললেন, ‘মানে!’ কবি হা হা করে হেসে উঠলেন। বললেন, ‘ও বুঝতে পাচ্ছেন না! ইল্শে মাছ- যে মাছের গন্ধ মুখে লালা ঝরায়, বিড়ালকে মাতাল করে তোলে। বেশি খেলে কি আর রক্ষে আছে!’ সবাই হেসে উঠল। খাওয়া শেষ হয়েছে। শিরাজী কবির পাতে দই ঢেলে দিলেন। একটু দই মুখে দিয়েই কবি অদ্ভুত ভঙ্গি করে শিরাজীকে উদ্দেশ করে বললেন, ‘কি হে! তুমি কি এই দই তেঁতুল গাছ থেকে পেরে নিয়ে এলে নাকি?’ উপস্থিত সবাই আরেক দফা হো হো করে হেসে উঠল। বলাবাহুল্য দই ছিল ভীষণ টক। ৬. নজরুলের এই উইটের পরিচয় তাঁর অনেক লেখাতেও আছে। তারই একটু নমুনা দিয়ে এই লেখা শেষ করব। ‘জিনের বাদ্শা’ গল্পের নায়ক আল্লা-রাখাকে তার মা-বাবা বিলাসিতা করার টাকা একদিন বন্ধ করে দিলেন। উপরন্তু বাবার কাছ থেকে কিছু উত্তম-মাধ্যম জুটল। সেদিন রাতেই তাদের বাড়িতে আগুন লেগে গেল। ‘আল্লা-রাখা সেই আগুনে সিগারেট ধরিয়ে নিশ্চিন্ত মনে ধূম্র উদ্গীরণ করতে করতে যা বলে উঠল, তার মানে- আজ দিয়াশলাই কিনার পয়সা ছিল না। ভাগ্যিস ঘরে তাদের আগুন লেগেছিল তাই সিগারেটটা ধরানো গেল। তার বাবা যখন আল্লা-রাখাকে ধরে দুর্মুশ-পেটা করে পিটোতে লাগল, সে তখন স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে মার খেতে খেতে বলতে লাগল, যে, সকালে মার খেয়ে বডডো পিঠব্যথা করাতেই ত সে পিঠে সেঁক দেয়ার জন্য ঘরে আগুন লাগিয়েছে! আজ আবার যদি পিঠ বোশ ব্যথা করে, পাড়ার কারুর ঘরে আগুন লাগিয়ে ও ব্যথায় সেঁক দিতে হবে। এই কবুল জবাব শুনে ওর বাবার যেটুকু মারার হাত ছিল, তাও গেল ফুরিয়ে! সে ছেলের পায়ে মাথা কুট্তে কুটতে বলতে লাগল, ‘তোর পায়ে পড়ি পেড়াকপাল্যা, হালার পো, ও কম্মডা আর করিস না, হক্কলেরে জেলে যাইবার অইবো!’ যাক, সেদিন গ্রামের লোকের মধ্যস্থাতায় সন্ধি হয়ে গেল যে, অন্তত: গ্রামের কল্যাণের জন্য ওর বাবা ওর বাবুয়ানার খরচটা চালাবে! আল্লা-রাখা গম্ভীর হয়ে সেদিন বলেছিল, ‘আমি বাপকা বেটা, যা কইবাম, তা না কইর‌্যা ছারতাম না!’ সকলে হেসে উঠল এবং যে বাপের বেটা সে সেই বাপ তখন ক্রোধে দুঃখে কেঁদে ফেলে ছেলেকে এক লাথিতে ভূমিসাৎ করে চিৎকার করে উঠল- ‘হুন্ছনি হালার পোর কতা! হালার পো কয়, বাপকা বেডা! তোর বাপের মুহে মুতি!’ এবার আল্লা-রাখাও হেসে ফেললে!’
×