ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

বিমানবন্দরে পিসিআর ল্যাব

প্রকাশিত: ২০:৫৪, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

বিমানবন্দরে পিসিআর ল্যাব

করোনাভাইরাস এসে জীবনযাপনের ধারা যেমন বদলে দিয়েছে, তেমনি কিছু বাধ্যবাধকতার ভেতরেও পড়ে গেছে মানুষ। এখন বিদেশে যেতে হলে করোনা পরীক্ষায় নেগেটিভ সনদ অত্যাবশ্যক। করোনায় সংক্রমিত কোন ব্যক্তি উড়োজাহাজে উঠতেই পারবেন না। ফলে কর্মসূত্রে কিংবা জরুরী প্রয়োজনে যাদের বিদেশে যেতে হচ্ছে, তাদের ক্ষেত্রে দ্রুত এই পরীক্ষা করানো বাধ্যতামূলক। অনেক সময় বিদেশগামী যাত্রীর হাতে চব্বিশ ঘণ্টাও থাকে না। বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাব প্রতিষ্ঠা তাই একান্ত জরুরী। এই জরুরী কাজটি সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল জরুরী ভিত্তিতেই। এতে কিছুটা যে বিলম্ব হয়েছে, সেটি মেনে নিয়েও বলতে হবে সরকার একসঙ্গে সাতটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দিয়েছে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার জন্য পিসিআর ল্যাব স্থাপনের। এটি স্বস্তিজনক। তবে কাজ শুরু হতে সময় লাগবে কয়েক দিন। আগে বিমানবন্দরে করোনার র‌্যাপিড পরীক্ষার সুযোগ না থাকায় কর্মস্থলে ফিরতে প্রতিকূলতার মুখে পড়েছেন প্রবাসীরা। স্বীকার করতে হবে যে, কয়েকদিন আগেও দ্রুত করোনা পরীক্ষা করতে ব্যর্থ বিদেশগামীরা আন্দোলন করেছেন। এমনকি আমিরাত প্রবাসীরা অনশনও করেন। প্রবাসীকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সামনে তাদের বিক্ষোভের পরিপ্রেক্ষিতে প্রবাসীকল্যাণমন্ত্রী মঙ্গলবার অনশনকারীদের আশ্বস্ত করেন, দু-একদিনের মধ্যে বিমানবন্দরে র‌্যাপিড পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হবে। উল্লেখ্য, আমিরাতের শর্তানুযায়ী যাত্রার ৪৮ ঘণ্টা আগে পিসিআর টেস্ট করতে হবে এবং বিমানে চড়তে হবে করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে। প্রতিবেশী দেশগুলো, যেমন-নেপাল, শ্রীলঙ্কা ও ভারতের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনার র‌্যাপিড পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। ফলে সেসব দেশের প্রবাসীদের বিদেশে যেতে কোন বিড়ম্বনা পোহাতে হয় না। ফ্লাইট মিস করাসহ কোন ধরনেরই ঝুঁকির মুখে তাদের পড়তে হয় না তাদের। গত জুন থেকে আমিরাত প্রবাসীরা শাহজালাল বিমানবন্দরে এই সুবিধা পাওয়ার দাবি জানিয়ে আসছিলেন। অবশেষে প্রবাসীদের সম্মান লাঘবের ব্যবস্থা হচ্ছে। তবে একসঙ্গে টেস্টের ব্যয়ের প্রসঙ্গটিও উঠবে। স্বাভাবিকভাবেই বেসরকারী বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের ব্যয় বেশি হওয়ার কথা। বিদেশগামী কর্মীদের করোনা পরীক্ষার জন্য বিমানবন্দরে স্বল্প সময়ের মধ্যেই আরটিপিসিআর ল্যাব স্থাপনের সক্ষমতা আছে সরকারী প্রতিষ্ঠানেরই। তবু কেন জানি সেটি হতে দেখা গেল না। বরং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের সন্ধানেই অনেকটা সময়ক্ষেপণ হয়ে গেল। যা প্রত্যাশিত ছিল না। শেষ পর্যন্ত সাতটি প্রতিষ্ঠান ল্যাব স্থাপনের অনুমোদন পাওয়ায় জরুরী করোনা পরীক্ষার কাজে গতি আসবে। প্রবাসী কর্মী তথা আমাদের ‘রেমিটেন্স যোদ্ধা’রা এতে উপকৃত হবেন। তবে একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হলো, শতভাগ সঠিক ফলের প্রাপ্যতা নিশ্চিত করা। আমাদের স্মরণে আছে একবার দেশ থেকে করোনা নেগেটিভ সনদ নিয়ে বিদেশে গিয়ে পজিটিভ হওয়ায় দক্ষিণ কোরিয়া বাংলাদেশীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করেছিল। তাই অনেকেরই সেই প্রবাদের কথা মনে পড়ে যাবে- ঘরপোড়া গরু সিঁদুরে মেঘ দেখলে ডরায়! বিদেশগামীদের ভুয়া সনদ দেয়ায় যে চার প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সাময়িক বন্ধ করেছিল স্বাস্থ্য অধিদফতর, তার দুটি বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার কাজ পেয়েছে বলে জাতীয় একটি সংবাদপত্রের অনলাইনে সংবাদ এসেছে। কর্তৃপক্ষ এটি যদি ভুলবশত করে থাকে তবে ভুল শোধরানোর সুযোগ রয়েছে। আর যদি ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের পরবর্তী কার্যক্রমে স্বাস্থ্য অধিদফতর সন্তুষ্ট হয়েই অনুমোদন দিয়ে থাকে, তাহলেও দেশবাসীর সামনে সেটি স্পষ্ট করা দরকার। তা না হলে ওই দুটি প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে বিদেশগামীরা আস্থা পাবেন কী করে! আরেকটি কথা, যে সাতটি প্রতিষ্ঠান অনুমোদন পেয়েছে তাদের একেকজনের টেস্ট ফি একেক অঙ্কের? স্বাস্থ্য অধিদফতর সর্বক্ষেত্রেই কি অভিন্ন ফি নির্ধারণ করে দিতে পারে না?
×