ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নদীর সীমানা থেকে কল কারখানা না সরালে পরিস্থিতি হবে কঠিন

প্রকাশিত: ২২:০১, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

নদীর সীমানা থেকে কল কারখানা না সরালে পরিস্থিতি হবে কঠিন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ নদীর সীমানায় গড়ে ওঠা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো সরিয়ে নিতে সরকারের দেয়া সুযোগ সঠিকভাবে মূল্যায়িত না হলে আগামীদিনে অনেক কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হতে পারে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, রাজনীতিতে পরাজিত হয়ে এবং রাজনীতির পরিবেশ ধ্বংস করে কিছু মতলববাজ নদীর পরিবেশ রক্ষায় নেমেছে। বুধবার সচিবালয়ে গণমাধ্যম কেন্দ্রে ‘বিএসআরএফ সংলাপ’ অনুষ্ঠানে প্রতিমন্ত্রী নদীর সীমানায় গড়ে তোলা শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহের মালিকদের প্রতি এ ইঙ্গিত করেন। বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) এ সংলাপের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বিএসআরএফ সভাপতি তপন বিশ্বাস এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মাসউদুল হক। এ সময় বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরাম (বিএসআরএফ) সংশ্লিষ্ট অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন। নদী দখলকারীরা অনেক ক্ষমতাশালী, এসব দখলদার উচ্ছেদে কোন প্রতিবন্ধকতার সম্মুখীন হচ্ছেন কি না, এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যারা নদী দখল করেন তারা সবাই রাঘব বোয়াল নয়, সাধারণ মানুষও আছেন। সাধারণ মানুষ জায়গা না থাকায় একটা ঘর বেঁধে ফেলে, সে তো জানে না যে এতে নদী দখলে হয়ে গেলো। এক্ষেত্রে অসাবধানতাও কাজ করে। তিনি বলেন, আগে ছিল জোর যার মুলুক তার। কাজেই সে অবস্থা এখন নেই। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন আবেদন করলে আমরা পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করছি। শিল্প প্রতিষ্ঠানে প্রণোদনা দেয়ার সুযোগ নেই। শিল্প গড়ে তোলার ক্ষেত্রে যেসব নিয়ম মানা দরকার, তা তারা মানেনি। বরং তারা জরিমানার আওতায় আসার কথা। আমরা তাদের (নদীর সীমানা থেকে শিল্প প্রতিষ্ঠান অপসারণের) সুযোগ দিয়েছি। এ সুযোগের যদি সঠিক মূল্যায়ন না করা হয়, তবে অনেক কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হতে পারে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, নদীতীরে গড়ে ওঠা শিল্প প্রতিষ্ঠানকে আমরা কিছুটা সময় দিতে চাই। কারণ, এতে শিল্প মালিকদের অনেক বিনিয়োগ রয়েছে। বাংলাদেশে কেউ কখনও ভাবেইনি- নদীরও নিজস্ব জায়গা আছে। এ ভাবনাটা তৈরি করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের, দীর্ঘদিন রাষ্ট্র সেটা করেনি। তিনি বলেন, আমরা সীমানা পিলার দিয়েছি। দখলকারী জেনে গেছে, তার স্থাপনা নদীর সীমানায় পড়েছে। তাকে এ নিয়ে বার্তাও দেয়া হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী বলেন, ঢাকার চারপাশের নদীগুলোর দখলদার উচ্ছেদের কাজ পুরোপুরি বা শতভাগ সম্পন্ন করতে পারিনি। কিছু মামলা-মোকদ্দমা আছে। সেগুলোর ব্যাপারে আমাদের আইনজীবী প্যানেল কাজ করছে। আমরা বলতে পারি, এগুলোতে আমরা সফলতা দেখাতে পারব। নদীর সীমানা পিলার স্থাপন ও অবৈধ দখল উচ্ছেদ করার ক্ষেত্রে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি হয়েছে জানিয়ে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, সেগুলোর বিষয়ে আমরা হেয়ারিং নিচ্ছি। অনেক বিষয় আমরা সমাধান করেছি। তিনি আরও বলেন, আমরা সারা দেশে ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ তৈরি করতে চাই। এটা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের অংশ ছিল। সে লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ করছি। এরই মধ্যে প্রায় ৩ হাজার কিলোমিটারের মতো নতুন ও পুরনো নৌপথ তৈরি করতে পেরেছি। আমরা এর সুফল পেতে শুরু করেছি। এবার অতিবৃষ্টি এবং উজান থেকে পানি এলেও তা বন্যায় রূপ নেয়নি। এর অন্যতম কারণ, নদীগুলোর ধারাবাহিক ড্রেজিং করা। রাজনীতিতে পরাজিত মতলববাজরা নদীর পরিবেশ রক্ষায় নেমেছে ॥ রাজনীতিতে পরাজিত হয়ে এবং রাজনীতির পরিবেশ ধ্বংস করে মতলববাজরা নদীর পরিবেশ রক্ষায় নেমেছে বলে জানিয়েছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এসময় প্রতিমন্ত্রী বলেন, শুধু নদীর জায়গায় অবৈধ দখল নয়, যে কোন অবৈধ কর্মকা-ের বিরুদ্ধে এ সরকার ব্যবস্থা নিতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। এগুলোর প্রতিফলন কিছু কিছু পাওয়া গেছে। দেশে তো বিশৃঙ্খলা তৈরি করা যাবে না। আমরা যে আলোচনা করছি এটা একদিনে হয়নি। এ দেশে তো একটা লুটেরা অর্থনীতি আছে। দেশবিরোধী লোকজন তো আছে। তিনি বলেন, অনেককে দেখেছি, রাজনীতিতে পরাজিত হয়ে নদীর পাড়ে গিয়ে দাঁড়িয়ে গেছে। বলে, পরিবেশ বাঁচাও। রাজনীতির পরিবেশ ধ্বংস করে এখন নদীর পরিবেশ রক্ষা করতে চায়, এদেরকেও চিহ্নিত করতে হবে। তিনি আরও বলেন, রাজনীতির ময়দানে পরাজিত হয়ে এখন এ ধরনের সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলে আরেক ধরনের মতলববাজি কাজকর্ম করছেন কিনা, সেগুলো নজরে আনতে হবে। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, আমরা যখন নদীর অবৈধ দখল উদ্ধার করলাম, তখন এ ধরনের মতলববাজ সংগঠনের একজন বলল- আগে বেসরকারী দখলে ছিল এখন সরকারের দখলে চলে যাচ্ছে। মানে দখলদার ঠিকই আছে। এতে কিন্তু জনগণ বিভ্রান্ত হয়। নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী বলেন, নদী রক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের ছিল, রাষ্ট্র সেই দায়িত্ব সেভাবে পালন করেনি বলে একটা বিরাট বোঝা হয়ে পড়েছে। আমরা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টি না করে ধারাবাহিকভাবে এ বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছি। এ কাজগুলো করতে গিয়ে আমরা কোন আপোস করিনি। চোখের আড়ালে অনেক ঘটনা ঘটছে। কিন্তু প্রকাশ্যে কেউ এখন আর এভাবে (নদী দখলে) সাহস পাচ্ছে না। এ সরকার পুরোপুরি জিরো টলারেন্সে আছে। যমুনা অর্থনৈতিক করিডর ॥ যমুনা নদীকে সঠিক ব্যবস্থাপনায় আনতে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে একটি পরামর্শ চলছে জানিয়ে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, যেটির নাম দেয়া হয়েছে ‘যমুনা অর্থনৈতিক করিডর’। এটার সমীক্ষার কার্যক্রম শুরু হবে। সমীক্ষায় সফলতা আসে, কাজটি যদি বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে এখানে লাখ লাখ হেক্টর জমি শুধু সংগ্রহ করতেই পারব না, যমুনার ভাঙ্গনের একটি সমাধানও দিতে পারব। সংগ্রহ করা জমিতে স্যাটেলাইট সিটি গড়ে তোলা হবে। অর্থনৈতিক করিডর-১ ও অর্থনৈতিক করিডর-২ এ দুটি ফেজে কাজটি হবে। এটি দীর্ঘমেয়াদী কাজ। এ কাজ সফলভাবে সম্পন্ন হলে বন্যা ও নদীভাঙ্গনে মানুষ এতটা ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। তিস্তা নদী নিয়েও একটি কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে, সেগুলো নিয়েও কার্যক্রম চলছে। কেনা হচ্ছে তিনটি প্রমোদ তরী ॥ নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন তিনটি ক্রুজ ভেসেল সংগ্রহ করা হচ্ছে। এর মধ্যে হ্যালিপ্যাডসহ সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা থাকবে। ২০২৩ সালের শেষদিকে এগুলো সংগ্রহ করা সম্ভব হবে। বিআইডব্লিউটিসি (বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্পোরেশন) এ ক্রুজ ভেসেল সংগ্রহ করবে। যমুনায় টানেল নির্মাণের চিন্তা ॥ উত্তরাঞ্চলের বালাসীঘাট ফের চালু করা কিংবা সেখানে সেতু করার কোন চিন্তা সরকারের আছে কিনা জানতে চাইলে নৌ প্রতিমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু সেতুর বিকল্প একটি সেতুর প্রয়োজন আছে। দ্বিতীয় একটি টানেলের সমীক্ষা কার্যক্রম চলছে। সেটার যদি সঠিক ফলাফল আসে তাহলে ভবিষ্যতে সেখানে একটি টানেল নির্মাণ করা হবে। এ ধরনের একটি চিন্তা-ভাবনার কথা আমরা জেনেছি। এটি বাস্তবায়িত হলে কর্ণফুলীর পর দেশে দ্বিতীয় টানেল হবে যমুনায়। পদ্মা সেতুর স্প্যানে ফেরির ধাক্কা লাগেনি ॥ মাওয়া ঘাটে কবে থেকে ফেরি চালু হবে এবং পদ্মা সেতুতে ফেরির ধাক্কা বিষয়ে তদন্ত কমিটি কী তথ্য পেলো, এ বিষয়ে পৃথক প্রশ্নে প্রতিমন্ত্রী বলেন, আজ ৪ নটিকেল মাইলের নিচে পানির স্রোত আসছে কিনা, সেটা আমি জানি না। তিনি বলেন, পদ্মা সেতুতে সর্বশেষ (ধাক্কা দেয়ার) যে ঘটনাটা ঘটে গেলো, সেখানে সেতু কর্তৃপক্ষ বলেছে ‘ধাক্কা লাগে নাই’। সিগন্যাল লাইট যখন নামিয়ে দেয়া হয় তখন ভিডিওটা ধারণ করা হয়েছে। খালিদ মাহমুদ চৌধুরী আরও বলেন, রিপোর্টারকে (একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলের সংবাদকর্মী) আরও সতর্ক হওয়া দরকার ছিল। দ্রুত নিউজটা ছেড়ে দিয়ে সমগ্র দেশবাসীকে একটা আতঙ্কের মধ্যে রাখা ঠিক হয়নি। আরেকটু বিশ্লেষণ করলে বুঝতে পারত ‘ধাক্কা লাগেনি’, আসলে নামিয়ে দেয়া হয়েছে। কয়েক ঘণ্টা পর যখন সেতু কর্তৃপক্ষ ও মন্ত্রী ঘটনাস্থলে গেলেন, দেখলেন সেখানে কোন ধাক্কা লাগেনি। আমি সাংবাদিকদের বলেছিলাম, ধাক্কা লাগলে ভেঙ্গে যাবে বা দাগ লাগবে। কিন্তু লাইটেও ক্ষতি হয়নি, সেতুতে কোন দাগও লাগেনি। এ বিষয়ে দেশবাসী আতঙ্কগ্রস্ত হওয়ায় আমরা বিব্রত।
×