ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মনিরুল হক রনি

পারস্পরিক দায়িত্ব

প্রকাশিত: ২১:১৮, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

পারস্পরিক দায়িত্ব

দীর্ঘ দেড় বছর, দিনের হিসেবে যা ৫৪৩ দিন পর শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কপাট খুলেছে। এ যেন এক মহাখুশির দিন। কেমন যেন ঈদ-ঈদ ভাব। ছাত্র-শিক্ষক-অভিভাবকদের দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসানের পর যেন এক মহোৎসবের দিন। এই দেড় বছর ছিল- দুর্ভাগ্যক্রমে এখনও যা চলমান- এক অভূতপূর্ব অদৃষ্টপূর্ব বিপর্যয়ের ফল। এই অনাকাক্সিক্ষত অথচ দুর্লঙ্ঘ্য মহামারী আমাদের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে যে বিরাট ক্ষতি সাধন করেছে, তার প্রত্যক্ষ প্রভাব লক্ষ্য করা যায় শিক্ষাক্ষেত্রেও। জাতি গড়ার এই খাতে অতিমারী করোনা যে আঘাত হেনেছে, তা পুষিয়ে ওঠা সত্যিই কষ্টসাধ্য ও সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। তবে আশার কথা এটাই যে দীর্ঘ সময় পরে হলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার মতো অবস্থায় আসা গেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেয়া আমাদের জন্য যেমন অপরিহার্য ছিল, তেমনি এর ঝুঁকিও কম নয়। আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা এতদিন আবদ্ধ জীবনের পরে মুক্ত হয়ে তাদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেতে পারবে, এ জন্য তাদের মধ্যে কিছুটা উৎসাহ-উদ্দীপনা থাকবে। তারা বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে প্রাণ খুলে হাসবে, খেলবে, মেলামেশা করবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই হাসা, খেলা, মেলামেশার মধ্যে যদি কোন শারীরিক দূরত্ব না থাকে, যদি যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মানা না হয়, তবে বিপত্তি দেখা দিতে পারে। করোনা নিয়ন্ত্রণে আসার কারণেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার মতো সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হয়েছে। কিন্তু একটু অসতর্কতা, অসচেতনতা বা অবহেলার কারণে তা আবার বেড়ে যেতে পারে। যেহেতু শহর কিংবা গ্রামের অধিকাংশ পরিবারেই এক বা একাধিক শিক্ষার্থী আছে, তাই শিক্ষার্থীদের কেউ আক্রান্ত হলে, আক্রান্ত হবে তার পুরো পরিবার। এভাবে করোনার উল্লম্ফন হতে পারে আবারও। এ জন্য স্কুল খোলার আনন্দের আতিশয্য যাতে ভয়াবহ রূপ না নেয়, সে জন্য স্বাস্থ্যবিধি মানার বিকল্প নেই। তবে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়টি একপাক্ষিক বিষয় নয়। এটি অংশীদারিত্বমূলক বা পারস্পরিক বিষয়। এখানে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ, ছাত্রছাত্রী, তাদের অভিভাবক, প্রশাসন প্রভৃতি সকলের সমান দায়িত্ব ও কর্তব্য রয়েছে। এক্ষেত্রে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব যে অপেক্ষাকৃত বেশি তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রবেশের পূর্বে সাবান দিয়ে ভালভাবে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা, শরীরের তাপমাত্রা পরিমাপসহ মাস্ক পরতে বাধ্য করতে হবে। প্রয়োজনে ফ্রি মাস্ক বিতরণের ব্যবস্থা করতে হবে। ছেলেমেয়েরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এসে সাধারণত হৈহুল্লোড়, খেলাধুলা, লাফালাফি করে। কিন্তু এগুলো যাতে করতে না পারে সে জন্য ‘পর্যবেক্ষক টিম’ দ্বারা সর্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান করতে হবে। প্রত্যেক অভিভাবকের উচিত সন্তান যাতে মাস্ক পরিধান করে ও সামাজিক দূরত্ব মেনে চলে সে ব্যাপারে প্রশিক্ষণ দেয়া। কোভিড-১৯ যেহেতু পারস্পরিক সংস্পর্শের মাধ্যমে ছড়ায়, এ জন্য শুধু কারও একার পক্ষে এটি নির্মূল করা সম্ভব নয়; এ জন্য দরকার সকলের পারস্পরিক দায়িত্ববোধের। আরেকটি বিষয় স্মরণীয় যে, বর্তমান করোনার পাশাপাশি ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়ে চলেছে। যেহেতু শিক্ষপ্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন অব্যবহার্য ছিল, এ জন্য সেগুলো ভাল করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের আঙিনায় যাতে কোন ধরনের পানি জমে না থাকে, সেটি নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা আমাদের ভবিষ্যত। তাই তাদের বয়সোচিত নাজুক মনের কথা মাথায় রেখে এ কাজে সাবধানতা, সংবেদনশীলতা ও নিরাপত্তা প্রদান করা অতি জরুরী। সাভার, ঢাকা থেকে
×