ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

গৌতম পান্ডে

নোলানের সিনেমায় পারমাণবিক বোমার গল্প

প্রকাশিত: ২১:০২, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

নোলানের সিনেমায় পারমাণবিক বোমার গল্প

হলিউড ইন্ডাস্ট্রিকে বলা হয় চলচ্চিত্রের কেন্দ্রবিন্দু। ফ্যান্টাসি কিংবা যৌনতানির্ভর ছবির আধিক্য থাকলেও বিভিন্ন ঘরানার চলচ্চিত্র এখানেই নির্মিত হয় সবচেয়ে বেশি। বলা যায় পৃথিবীর চলচ্চিত্র শিল্পকে যুগ যুগ ধরে শাসন করে আসছে হলিউড। এখানে অতীতের ধারা থেকে বেরিয়ে এসে ভিন্ন আঙ্গিকের চলচ্চিত্র নির্মাণ করছেন অনেকে। বর্তমান সময়ে হলিউডি সিনেমায় ভিন্নসুরের এক নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলান। তার জন্ম ইংল্যান্ডে। বাবা ইংলিশ আর মা ছিলেন আমেরিকান। ফলে দুই দেশেই তার বসবাস। তার সিনেমা এক সময় বিশ্ব কাঁপিয়ে দেবে ভাবেননি কখনও। কারণ সিনেমা বানানোর কোন পরিকল্পনা ছিল না তার। উদ্ভিদবিদ্যার প্রতি তার ছিল দারুণ টান। একদিন বাবার ক্যামেরা হাতে পেয়ে সব উলট-পালট হয়ে যায়। ক্যামেরায় দৃশ্যধারণ করে রাখার অদ্ভুত ক্ষমতায় বিস্মিত হন তিনি। দিনরাত পড়ে থাকেন ক্যামেরা নিয়ে। ক্যামেরার কারিকুরি করতে করতে একসময় সেই ছোট্ট বয়সেই নিজের খেলনাগুলো দিয়ে শর্টফিল্ম বানিয়ে ফেলেন ক্রিস্টোফার নোলান। যদিও এই কাণ্ডে পরবর্তীতে এসে নিজের কাছেই হাস্যকর ঠেকে। হাস্যকর লাগলেও ছোট বেলার এই প্রবল আগ্রহই যে আজকের পৃথিবীখ্যাত নির্মাতা বানাতে সাহায্য করেছে এই বিষয়ে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। শুধু নির্মাতা হিসেবে নয়, চিত্রনাট্যকার হিসেবেও ক্রিস্টোফার নোলান সমাদৃত। তার সিনেমা মানেই বিশেষ কিছু, কী নির্মাণে, কী গল্পে কিংবা সিনেমাটোগ্রাফিতে! বহুকাল ধরে কল্পকাহিনী নিয়ে সিনেমা বানানো নোলান এক সময়ে উৎসাহী হলেন বাস্তব ঘটনা অবলম্বনে সিনেমা বানাতে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনা নিয়ে তৈরি এই সিনেমার নাম ‘ডানকার্ক’। অস্ত্রের ঝনঝনানি আর রক্তের হলি খেলাকে এড়িয়ে নোলান সিনেমাটিকভাবে দেখালেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট মানব বিপর্যয়ের করুণ দিক। ইতিহাসের অন্যতম রক্তক্ষয়ী এই যুদ্ধে ডানকার্কে নয় দিনের লড়াইয়ে নাৎসী বাহিনী আর মিত্রবাহিনীর যুদ্ধে কয়েক হাজার সৈন্যের মৃত্যুর বিষয়টি আশ্চর্য মুন্সিয়ানায় তুলে ধরেন নোলান। ২০১৭ সালে মুক্তি পেয়েছিল ‘ডানকার্ক’। এবার নোলানের সিনেমায় পারমাণবিক বোমার গল্প। নোলানের সিনেমা মানেই ভিন্ন স্বাদ। তাই দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে অনেক সিনেমা নির্মাণ হলেও এই সিনেমার খবরে উচ্ছ্বসিত ভক্তরা। কারণ নোলান মানেই তো বাড়তি কিছু। এছাড়া এর আগে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে তার ‘ডানকার্ক’ দর্শক মহলে যে ব্যাপক সাড়া ফেলে, সেদিক থেকে ভিন্ন কিছুই আশা করছে দর্শক। জানা গেছে, নোলানের নতুন সিনেমার গল্প পরমাণু বোমার জনক জে রবার্ট ওপেনহেইমারকে নিয়ে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ম্যানহাটন প্রকল্পে প্রথম পারমাণবিক বোমা আবিষ্কার করেছিলেন তিনি। তাকে বলা হয় ‘ফাদার অব দ্য এ্যাটমিক বোম্ব’। যদিও এটি এই পদার্থবিজ্ঞানীর বায়োপিক হবে না। এতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে আইরিশ অভিনেতা সিলিয়ান মারফিকে দেখা যাবে বলে গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। এদিকে নোলানের সিনেমাটি কারা প্রযোজনা করবে এটি নিয়ে চলছে জল্পনা-কল্পনা। এর আগে এই নির্মাতার প্রায় সব সিনেমা প্রযোজনা করেছে ওয়ার্নার ব্রাদার্স। তবে এবার এতে পরিবর্তন ঘটতে পারে। ২০২১ সালের সমস্ত সিনেমার সত্তা নিয়ে এইচবিও ম্যাক্সের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে এই প্রযোজনা সংস্থা। তাদের এই সিদ্ধান্ত পছন্দ হয়নি নোলানের। তাই এবার নতুন প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে হয়তো দেখা যেতে পারে তাকে। ইতোমধ্যে কয়েকটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনাও করেছেন তিনি। শোনা যাচ্ছে এই ছবির বাজেট ধরা হয়েছে দশ কোটি মার্কিন ডলার। জেনে অবাক হতে হয় নির্মাতা ক্রিস্টোফার নোলানের ব্যক্তিগত কোন সেলফোন নেই এমনকি নেই কোন ই-মেইল। কাজের ক্ষেত্রে শতভাগ আপোসহীন নোলান বাজেটের মধ্যে কড়া গন্ডায় উসুল করে নেন কাজ। যেন বাজেটের চেয়ে বাড়তি এক টাকাও না খরচ হয়। এছাড়া ভীষণ গোপনীয়তার সঙ্গে কাজ করতে পছন্দ করেন তিনি। একজন পরিচালক যখন সিনেমা বানান তখন তিনি সচরাচর মাথায় রাখেন দর্শকের রুচির কথা। কিন্তু নোলান যেন তা নিয়ে মোটেও ভাবতে রাজি নন। তিনি নিজস্ব আইডিয়া দর্শককে দেখান নিজস্ব ঢং এ। অত্যন্ত কৌশলে যত্ন করে বানানো নোলানের সিনেমার প্রতিটা দৃশ্য দেখতেও তাই দর্শক যেন সদা সতর্ক। ক্ষণিকের জন্য অন্যমনষ্ক হলেই যেন সিনেমা বলে বসে, ‘আর ইউ ওয়াচিং ক্লোজলি’! নোলানের সর্বশেষ সিনেমা ছিল ‘টেনেট’। আন্তর্জাতিকভাবে ক্রিস্টোফার প্রথম নির্মাণ করেন একটি শর্টফিল্ম। ১৯৯৭ সালে বানানো সে শর্টফিল্মটির নাম ছিল ‘ডুডলিবাগ’। ঠিক পরের বছরেই তিনি ফিচার ফিল্ম বানিয়ে হলিউড অঙ্গনে ঝড় তোলেন। তার বানানো প্রথম সিনেমার নাম ‘ফলোয়িং’। এক সিনেমার মধ্য দিয়েই নির্মাতা হিসেবে ব্যাপক সুখ্যাতি অর্জন করেন নোলান। ৬৯ মিনিটের ছবিটি বানাতে নোলানের খরচ পড়ে মাত্র ৬ হাজার ডলার। ছবিটি পরিচালনা ছাড়াও চিত্রনাট্য ও ক্যামেরাম্যানের দায়িত্বও পালন করেছিলেন ক্রিস্টোফার নোলান নিজেই। মুক্তির একমাসের মধ্যেই দেখা যায় ফলোয়িং প্রায় ৫০ হাজার ডলার আয় করে। ভিন্ন ধাঁচের ছবি করেও যে বাণিজ্য করা যায়, তা দেখিয়ে দেন তিনি। যা সিনেমার প্রতি আরও আগ্রহ বাড়িয়ে দেয় তার। এর ঠিক পরের বছরেই ক্রিস্টোফার নোলান নির্মাণ করেন তার অসাধারণ সিনেমা ‘মেমেন্তো’। একজন সিরিয়াল কিলারের গল্পকে কেন্দ্র করে এ ছবিটিরও চিত্রনাট্য লিখেন নোলান। ছবিটি ২০০১ সালে ২৫ মে মুক্তি পায়। ‘মেমেন্তো’র জনপ্রিয়তা এতটাই চারদিকে ছড়িয়ে পড়েছিল যে বিভিন্ন ভাষাতেও ছবিটি নির্মাণ করতে দেখা যায়। বলিউডেও ‘গজিনি’ নামে ছবিটিতে আমির খানকে অভিনয় করতে দেখা যায়। তারপর নোলান একে একে নির্মাণ করেন ইনসোমনিয়া, ব্যাটম্যান বিগিনস, দ্য প্রেস্টিজ, দ্য ডার্কনাইট, ইনসেপশন, ইন্টারেস্টেলার, ডানকার্ক, টেনেটের মতো দর্শকপ্রিয়তা পাওয়া অসাধারণ সিনেমাগুলো।
×