ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

নবদিগন্তের প্রত্যাশা

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২১

নবদিগন্তের প্রত্যাশা

শিক্ষা ব্যবস্থায় দীর্ঘ দিনের একটি প্রত্যাশা পূরণ হতে যাচ্ছে। নতুন আঙ্গিকে আধুনিক ব্যবস্থাপনায় সাজানো হচ্ছে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষাক্রম। থাকবে না পাবলিক পরীক্ষার চাপ। বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষায় শিক্ষার্থীরা পারবে তাদের ভবিষ্যত সাজাতে। পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন হবে এই পরিকল্পনা। আগামী ২০২৫ সাল থেকে শুরু হচ্ছে পুরোপুরি নতুন শিক্ষাক্রম। গত সোমবার প্রধানমন্ত্রী নতুন এই শিক্ষাক্রমের খসড়া অনুমোদন করেছেন। এ সময় তিনি বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষা ব্যবস্থা সময়োপযোগী করতে সংশ্লিষ্টদের পরামর্শ দিয়েছেন। নতুন শিক্ষা কার্যক্রমে তৃতীয় শ্রেণী পর্যন্ত শিক্ষার্থীদের কোন পরীক্ষা থাকবে না। দশম শ্রেণী পর্যন্ত থাকবে না কোন পাবলিক পরীক্ষা। উঠে যাবে জেএসসি, পিএসসি এবং সমমানের সকল পরীক্ষা। দশম শ্রেণীর পাঠ্যক্রম অনুযায়ী এসএসসি পরীক্ষা হবে। একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীতে দুটি পরীক্ষা নিয়ে সেই দুই পরীক্ষার ফলের ভিত্তিতে দেয়া হবে এইচএসসির ফল। অন্য শ্রেণীগুলোতে হবে সমাপনী পরীক্ষা। সমাপনীতে ধারাবাহিক মূল্যায়নের সঙ্গে করা হবে সামষ্টিক মূল্যায়ন। প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত থাকবে একই পাঠ্যক্রম। একাদশ শ্রেণীতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান, মানবিক কিংবা বাণিজ্যের মতো কোন বিভাগে পড়বে সেই সিদ্ধান্ত নিতে পারবে। বর্তমানে পরীক্ষা ও বইয়ের চাপে শিশুরা তাদের স্বাভাবিক বিকাশ হারাতে বসেছে। ক্লাসের পরীক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের বসতে হচ্ছে পাবলিক পরীক্ষায়। এক গাদা বইয়ের বোঝা বইতে বইতে তাদের শারীরিক বিকাশও হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত। অভিভাবকদের পক্ষে এই প্রতিযোগিতা থেকে সরে আসার সুযোগ ছিল না। দিনের পর দিন শিশুদের এই ক্লান্তিকর পড়ালেখার চাপ সহ্য করতে হয়েছে ও হচ্ছে। পরীক্ষার চাপ কমিয়ে শিক্ষার্থীদের আনন্দঘন ও সৃজনশীল শিক্ষা নিশ্চিত করার দাবি দীর্ঘ দিনের। শুধু অভিভাবক নয়, বিশেষজ্ঞরাও এই পরামর্শ দিচ্ছেন অনেক দিন ধরে। শিশুদের এই চাপ থেকে মুক্তি দেয়ার জন্য প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার পরামর্শ দিয়েছেন। দীর্ঘদিন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর নতুন এই শিক্ষাক্রমের খসড়া প্রণীত হয়েছে। নতুন এই শিক্ষাক্রম সম্পর্কে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, শিক্ষার্থীদের জন্য আনন্দঘন শিক্ষা নিশ্চিত করতে এই উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা শ্রেণীকক্ষেই যেন অধিকাংশ পাঠ গ্রহণ করতে পারে, সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। বিষয়বস্তু ও পাঠ্যপুস্তকের বোঝা ও চাপ কমাবে। গুরুত্ব দেয়া হবে গভীর শিখনে। মুখস্থ নির্ভরতার বদলে অভিজ্ঞতা ও কার্যক্রমভিত্তিক শেখাকে অগ্রাধিকার দেয়া হবে। শিক্ষার্থীর দৈহিক ও মানসিক বিকাশে গুরুত্ব দেয়া হবে খেলাখুলা ও অন্যান্য কার্যক্রমে। শিশুদের ওপর থেকে পরীক্ষার চাপ কমানোর এই উদ্যোগ প্রশংসনীয়। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পরীক্ষা নেয়া হয় না। এখন শিশুরা নির্ভার পড়াশোনার প্রতি মনোযোগী হতে পারবে। খসড়া শিক্ষাক্রমে স্থান পেয়েছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষা। অদূর ভবিষ্যতে প্রণয়ন করা হবে উচ্চশিক্ষার কার্যক্রম। উন্নত বিশ্বে উচ্চশিক্ষার পাশাপাশি কারিগরি শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়। দ্বাদশ শ্রেণীর পর অধিকাংশ শিক্ষার্থী চলে যায় কারিগরি শিক্ষার দিকে। এই ব্যবস্থায় একদিকে যেমন দক্ষা জনশক্তি গড়ে ওঠে, অন্যদিকে হ্রাস পায় বেকারত্ব। প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শ অনুযায়ী বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভবিষ্যতে কারিগরি শিক্ষার বিষয়টি মাথায় রেখেই উচ্চ শিক্ষাক্রম প্রণীত হবে বলে সবার প্রত্যাশা।
×