ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

আলোচিত সেই মিনুর দুই অনাথ শিশুর দায়িত্ব নিচ্ছে কেএসআরএম

প্রকাশিত: ১১:৩৪, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

আলোচিত সেই মিনুর দুই অনাথ শিশুর দায়িত্ব নিচ্ছে কেএসআরএম

অনলাইন ডেস্ক ॥ খুনের মামলার আসামি না হয়েও অন্যের হয়ে প্রায় তিন বছর সাজা ভোগ করে বেরিয়ে রহস্যজনক মৃত্যু হওয়া আলোচিত সেই মিনু আক্তারের দুই সন্তান ইয়াসিন (১২) ও গোলাপের (৯) দায়িত্ব নিচ্ছে দেশের অন্যতম ইস্পাত নির্মাণ শিল্প প্রতিষ্ঠান কেএসআরএম। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পর প্রতিষ্ঠানের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাত অনাথ দুই সন্তানের দায়িত্ব নেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেন। বিষয়টি নিশ্চিত করে কেএসআরএমের মিডিয়া অ্যাডভাইজার মিজানুল ইসলাম বলেন, কোম্পানির উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহরিয়ার জাহান রাহাতের আগ্রহের কথা এরই মধ্যে জেলা প্রশাসককে জানানো হয়েছে। মূলত জেলা প্রশাসকের নির্দেশনা অনুযায়ী কেএসআরএম করণীয় নির্ধারণ করবে। কেএসআরএম চায় হতভাগ্য মিনু আক্তারের অনাথ দুই সন্তান যেন সমাজের নিষ্ঠুরতার বলি না হয়। তারা যেন পৃথিবীর আলো বাতাসে আর দশটা শিশুর মতো হেসে খেলে বড় হতে পারে। পৃথিবী ও জীবনের প্রতি যেন তাদের বিরূপ মনোভাব সৃষ্টি না হয়। জানা গেছে, স্বামী ছেড়ে যাওয়ার পর হতভাগ্য মিনু তার তিন সন্তানের ভরণপোষণের আশ্বাসে কুলসুমী নামে এক নারীর হয়ে কারাগারে যান। কথা ছিল কয়েকদিনের মধ্যে মুক্তি পাবেন। কিন্তু প্রায় তিন বছর অতিবাহিত হলে বিষয়টি জানাজানি হয়। এরপর কয়েকজন আইনজীবীর মানবিক প্রচেষ্টায় আইনি প্রক্রিয়া শেষে ১৬ জুন মিনু কারাগার থেকে মুক্তি পান। এরই মধ্যে আবার অনটনে মারা যায় মিনুর কন্যাসন্তান জান্নাত। এদিকে কারামুক্তির পর ২৮ জুন দিবাগত রাতে রহস্যজনক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান মিনু। একদিন পর (২৯ জুন) অজ্ঞাত হিসেবে তার মরদেহ দাফন করে আঞ্জুমান মফিদুল ইসলাম। পরে ৪ জুলাই বায়েজিদ বোস্তামী থানা নিশ্চিত হয় যে, অজ্ঞাত হিসেবে দাফন করা মরদেহটি মিনুর। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মিনুর বড় ছেলে অর্থাভাবে চাকরি নেয় ষোলশহর চায়ের দোকানে। মিনুর মৃত্যুর পর রহস্যজনকভাবে নিখোঁজ হয় বড় ছেলে ইয়াসিন। বিভিন্ন গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশ হয়। এতে টনক নড়ে প্রশাসনের। পুলিশের তৎপরতায় খোঁজ মেলে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ শিশু-কিশোর সংশোধনাগারে। ছোট ছেলে গোলাপ আছেন দিনমজুর মামার আশ্রয়ে। বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর এগিয়ে আসে শিল্পপ্রতিষ্ঠান কেএসআরএম। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেন, মিনু আক্তারের অনাথ দুই সন্তানের সার্বিক দায়িত্ব নিতে চাই শিল্পগ্রুপ কেএসআরএম। এরই মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে আমার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হয়েছে। তাদের আমরা কিছু করণীয় নির্ধারণ করে দেবো। সেই অনুযায়ী সন্তান দুটির ভরণপোষণের দায়িত্ব নেবে প্রতিষ্ঠানটি। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে আমরা তাদের সার্বক্ষণিক খোঁজ-খবর রাখবো বলে জানান তিনি। মিনু আক্তারের আইনজীবী অ্যাডভোকেট গোলাম মওলা মুরাদ বলেন, কেএসআরএমের এমন উদারতা নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবিদার। এর মাধ্যমে মিনুর দুই এতিম ছেলে বেঁচে থাকার নিরাপদ অবলম্বন খুঁজে পেলো। এর চেয়ে খুশির খবর আর কিছু হতে পারে না। অতীতেও কেএসআরএম এমন অনেক মহানুভব কাজের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। আমরা আশা করছি, আগামীতে তাদের এমন মহানুভব কর্মতৎপরতা অব্যাহত থাকবে। যা পিছিয়ে পড়া সমাজ ব্যবস্থায় আলোকবর্তিকা হিসেবে কাজ করবে। আদালত সূত্রে জানা গেছে, নগরের কোতোয়ালি থানার রহমতগঞ্জে একটি বাসায় ২০০৬ সালের মে মাসে মোবাইলে কথা বলার ঘটনাকে কেন্দ্র করে গৃহকর্মী কোহিনুর আক্তারকে গলা টিপে হত্যা করা হয়। এরপর মরদেহ একটি গাছের সঙ্গে ঝুলিয়ে রাখা হয়। কোহিনুর আত্মহত্যা করেছেন বলে দাবি করেন পোশাককর্মী কুলসুম আক্তার কুলসুমী। এরপর থানায় অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করা হয়। কিন্তু মামলার তদন্তে এটি হত্যাকাণ্ড বলে প্রাথমিকভাবে প্রতীয়মান হলে একই বছরের জুলাই মাসে কোতোয়ালি থানায় একটি হত্যা মামলা রুজু হয়। সেই মামলায় দুই বছর তদন্ত শেষে কোহিনুরকে হত্যা করা হয়েছে মর্মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে পুলিশ। এর মধ্যে এক বছর চার মাস জেল খেটে জামিনে মুক্তি পান কুলসুমী। মামলার বিচার শেষে ২০১৭ সালের নবেম্বরে তৎকালীন অতিরিক্ত চতুর্থ মহানগর দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. নুরুল ইসলাম ওই হত্যা মামলায় আসামি কুলসুম আক্তার কুলসুমীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডসহ ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন। ওই সাজার পরোয়ানামূলে ২০১৮ সালের ১২ জুন কুলসুম আক্তার কুলসুমীর বদলি হয়ে কারাগারে যান মিনু।
×