ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আবাসিক হোটেলে যৌনকর্মী হত্যা, তিনদিনের মধ্যে ঘাতক গ্রেফতার

প্রকাশিত: ২২:৪২, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

আবাসিক হোটেলে যৌনকর্মী হত্যা, তিনদিনের মধ্যে ঘাতক গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার ॥ ভাসমান এক যৌনকর্মীকে আবাসিক হোটেলে নিয়ে যায় মোঃ খোকন ভূঁইয়া (২৮) নামের এক যুবক। অতিরিক্ত অর্থ দাবি করায় ওই যৌনকর্মীকে শ্বাসরোধে হত্যা করে পালিয়ে যায় খোকন। এরপর নিজের মোবাইল বন্ধ করে আত্মগোপনে যায় সে। তার ধারণা ছিল, কোনভাবেই তাকে শনাক্ত করতে পারবে না আইন প্রয়োগকারী সংস্থা। তবে শেষ রক্ষা হয়নি। তিনদিনের মাথায় রবিবার খুনী খোকনকে ক্যান্টনমেন্ট এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। পেশায় শেফ গ্রেফতারকৃত খোকন সোমবার বিকেলে আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিয়েছে। মঙ্গলবার ডিবির তেজগাঁও জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) শাহাদত হোসেন সুমা এসব তথ্য জানান। গত ৮ সেপ্টেম্বর রাত সাড়ে ১২টার দিকে রাজধানীর শ্যামলীর দুই নম্বর সড়কের রাজ ইন্টারন্যাশনাল আবাসিক হোটেল থেকে এক তরুণীর লাশ উদ্ধার হয়। এ ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা হয়। থানা পুলিশের পাশাপাশি ডিবির পক্ষ থেকে ছায়া তদন্ত করা হয়। ঘটনার তিন দিনের মাথায় খুনীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যার মোটিভ ও অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিষয় উল্লেখ করে দ্রুত এই মামলার চার্জশীট দিয়ে দেয়া হবে। মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গত ৭ সেপ্টেম্বর শেওড়াপাড়ার বাসা থেকে ওই যৌনকর্মী ফার্মগেটের উদ্দেশে বের হয়। কথা ছিল সকালে তার স্বামী তাকে বাসায় নিয়ে যাবেন। কিন্তু সকাল থেকেই যৌনকর্মীর মোবাইল বন্ধ ছিল। ফোন বন্ধ পেয়ে তার স্বামী সহযোগী যৌনকর্মীদের কাছে খোঁজ নেন। সারাদিন খোঁজ না পেয়ে বাসায় ফিরে যান তিনি। পরদিন ৯ সেপ্টেম্বর আবারও ফার্মগেট গিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন আগের রাতে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে এক তরুণীর লাশ রাখা আছে। পরে সহযোগীদের সঙ্গে নিয়ে সেখানে গিয়ে স্ত্রীর লাশ শনাক্তের পর নিজে বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে শেরেবাংলা নগর থানায় একটি মামলা (নং ১৯) দায়ের করেন তিনি। ওই যৌনকর্মীর স্বামী জানান, এক বছর আগে বিয়ে হয় তাদের। তার স্ত্রীর আগেও একবার বিয়ে হয়েছিল। সেই ঘরে একটি সন্তান রয়েছে। পেশাদার যৌনকর্মী জেনেও তিনি বিয়ে করেছিলেন। তিনি তাকে ‘সুপথে’ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছিলেন। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের কর্মকর্তারা জানান, হত্যাকা-টি একটি ক্লুলেস ঘটনা ছিল। কারণ হোটেল রেজিস্ট্রারেও অভিযুক্ত তরুণ নিজের অসম্পূর্ণ ঠিকানা ও যোগাযোগের নম্বর দিয়েছিল। কিন্তু প্রযুক্তির সহায়তায় একটি বিশেষ সূত্রের মাধ্যমে খুনীকে শনাক্ত করা হয়। পরে হোটেলে থাকা সিসিটিভি ফুটেজের সঙ্গে মিলিয়ে নিশ্চিত হওয়ার পর রবিবার সন্ধ্যায় ক্যান্টনমেন্টের মাটিকাটা এলাকা থেকে খোকন নামে ওই তরুণকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃত খোকন পুলিশকে জানায়, তার বাবার নাম আব্দুল বারেক ভূঁইয়া। গ্রামের বাড়ি কুমিল্লার চান্দিনার কৃষ্ণপুরে। দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিল সে। দেশে ফিরে দুই বছর আগে বিয়ে হয়। স্ত্রীকে নিয়ে বাড্ডার লিংক রোড এলাকায় থাকতো সে। ক্যান্টনমেন্ট এলাকার ক্যাফে হুইলস-এ কারিগর হিসেবে কাজ করতো খোকন। তদন্তসংশ্লিষ্টরা জানান, ভাসমান যৌনকর্মীদের কেউ কেউ খদ্দেরের সঙ্গে সময় কাটাবার পর অতিরিক্ত অর্থের জন্য ব্ল্যাকমেল করে থাকে। বিভিন্ন সময়ে এরকম অভিযোগও তারা পেয়েছেন। তাই বলে কোনভাবেই আইন নিজের হাতে না তুলে নেয়া যাবে না। একপর্যায়ে হত্যায় জড়িত খোকনকে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনা হয়।
×