ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পুরুষের পাশাপাশি নারীদের কাজ করা ঠিক নয় ॥ তালেবান

প্রকাশিত: ১৩:০৩, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

পুরুষের পাশাপাশি নারীদের কাজ করা ঠিক নয় ॥ তালেবান

অনলাইন ডেস্ক ॥ বিদেশি রাষ্ট্রগুলো যখন নারীর অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানাচ্ছে, তালেবান তখন তাদের পুরনো নিয়মই আবার আফগানিস্তানের ওপর চাপিয়ে দেওয়ার ইংগিত দিচ্ছে। কট্টর এই ইসলামিক গোষ্ঠীর জ্যেষ্ঠ নেতা ওয়াহেদউদ্দিন হাশিমি বলেছেন, আফগান নারীদের পুরুষের পাশাপাশি কাজ করার অনুমতি দেওয়া ‘উচিত হবে না’। রয়টার্স লিখেছে, আনুষ্ঠানিকভাবে এই নিয়ম চালু করা হলে সরকারি অফিস, ব্যাংক কিংবা মিডিয়া কোম্পানিসহ অনেক ক্ষেত্রেই আফগান নারীদের কাজের সুযোগ বন্ধ হয়ে যাবে। ওয়াহেদউদ্দিন হাশিমি রয়টার্সকে বলেছেন,তারা আফগানিস্তানে ‘শরিয়া আইন’ পুরোপুরি বাস্তবায়ন করতে চান। যদিও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বলে আসছে, আফগান নারীরা যদি চায়, চাকরি করার অধিকার তাদের আছে, এবং সেই অধিকার তাদের দিতে হবে। ১৯৯৬ থেকে ২০০১ পর্যন্ত তালেবান শাসনামলে পুরুষের লিখিত অনুমতি ছাড়া নারীদের ঘরের বাইরে যাওয়া ছিল নিষিদ্ধ। সেই অনুমতি থাকলেও তাদের বের হতে হত সর্বাঙ্গ ঢাকা বোরখা পরে। বয়ঃপ্রাপ্ত হলেই মেয়েদের স্কুলে যাওয়া ছিল নিষিদ্ধ, নারীদের চাকরি করারও সুযোগ ছিল না। তালেবান আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকেই তাদের অধীনে নারীদের ভবিষ্যত নিয়ে তৈরি হয় উদ্বেগ, আতঙ্ক। দেশটির নারী রাজনীতিবিদদের অনেকে দেশ ছেড়েছেন। নারী ক্রীড়াবিদ, অভিনয় শিল্পী, সাংবাদিক, অধিকারকর্মীদের অনেকেই আছেন আত্মগোপনে। এমনকি আগের সরকারের সময় বিচারকের ভূমিকায় থাকা নারীদেরও এখন পালিয়ে থাকার খবর আসছে, কারণ যাদের তারা শাস্তি দিয়েছিলেন, তারা এখন সেই বিচারকদের খুঁজছে। দুই দশক পর আবারও আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তালেবান বলেছে, তাদের শাসনে নারীরা অধিকার পাবে ‘শরিয়া আইন অনুযায়ী’। নারীরা কীভাবে শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবে, সে বিষয়ে সম্প্রতি নতুন নিয়ম জারি করেছে তারা। তালেবানের উচ্চ শিক্ষামন্ত্রী আবদুল বাকি হাক্কানি বলেছেন, নারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে পারবেন; তবে পুরুষদের থেকে আলাদা হয়ে তাদেরকে ক্লাস করতে হবে। নারীদের জন্য একটি নতুন ইসলামিক পোশাকও চালু করা হবে। সেইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে যেসব বিষয় পড়ানো হচ্ছে সেগুলো পর্যালোচনা করা হবে। তালেবানের শাসনে থাকা আফগানিস্তান আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে কতটা সহযোগিতা পাবে তা এখন নির্ভর করবে নারীদের সঙ্গে তারা কেমন আচরণ করছে, মানবাধিকার পরিস্থিতি কেমন থাকছে তার ওপর। ওয়াহেদউদ্দিন হাশিমি রয়টার্সকে বলেন, “আফগানিস্তানে শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠায় প্রায় ৪০ বছর ধরে আমরা লড়াই করে চলেছি। আর পরিবারের বাইরে নারী পুরুষ একসাথে থাকা, এক ছাদের নিচে বসা, এসব তো শরিয়তে নেই। “নারী আর পুরুষ একসঙ্গে কাজ করতে পারে না, এটা স্পষ্ট। তারা আমাদের অফিসগুলোতে আসতে পারবে না, আমাদের মন্ত্রণালয়গুলোতে কাজ করতে পারবে না।” রয়টার্স লিখেছে, হাশিমির ওই বক্তব্যের প্রতিফলন তালেবান সরকারের নীতিতে কতটা কীভাবে দেখা যাবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। তবে তালেবানের অন্য অনেক কর্মকর্তা প্রকাশ্যেই যেসব কথা বলছেন, তাতে আরও বেশি কিছু থাকছে। তালেবান কাবুল দখলের পর এ বাহিনীর মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ সাংবাদিকদের বলেছিলেন, নারীরা হবে আফগান সমাজের ‘গুরুত্বপূর্ণ অংশ’। তারা ‘বিভিন্ন ক্ষেত্রে’ কাজ করারও সুযোগ পাবেন। কিন্তু ৭ সেপ্টেম্বর যখন তালেবানের মন্ত্রিসভার ঘোষণা এল, সেখানে কোনো নারী থাকলেন না। এমনকি এমন অনেক খবরও এল যে বিভিন্ন অফিস থেকে নারীদের সরাসরি বলে দেওয়া হচ্ছে, তারা যেন আর কাজে না যান। যুক্তরাষ্ট্র নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনীর অভিযানে ২০০১ সালে তালেবান শাসনের অবসানের পর গণমাধ্যমের কাজের ক্ষেত্রে নারীর উপস্থিতি ক্রমশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছিল। হাশিমি বলছেন, তাদের নিয়মে মেয়েরা মিডিয়াতেও কাজ করতে পারবে না। তার ভাষায়, বাড়ির বাইরে কেবল কিছু ক্ষেত্রেই পুরুষ আর নারীর সাক্ষাতের অনুমতি দেওয়া যায়, যেমন কোনো নারী চিকিৎসার প্রয়োজনে হয়ত পুরুষ ডাক্তারের কাছে যেতে পারেন। নারীরা লেখাপড়া করতে পারবে এবং শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতে চাকরিও করতে পারবে, তবে পুরুষদের থেকে আলাদা থাকার ব্যবস্থা রাখতে হবে সেখানে। “নারীদের আমাদের অবশ্যই দরকার, যেমন শিক্ষায়, স্বাস্থ্য খাতে। তাদের জন্য আমরা আলাদা প্রতিষ্ঠান করব। আলাদা হাসপাতাল, আলাদা বিশ্ববিদ্যালয়, আলাদা স্কুল, আলাদা মাদ্রাসা হতে পারে।” তালেবানের সরকার গঠনের দিন থেকেই আফগানিস্তানের নারীরা প্রকাশ্যে বিক্ষোভের চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। গত ২০ বছরে যে অধিকার তারা পেয়েছেন, যে অগ্রগতি আফগান নারীদের জীবনে এসেছে, তা নষ্ট না করার দাবি জানাচ্ছেন তারা। নারীদের কোনো কোনো জমায়েত ফাঁকা গুলি ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে তালেবান অস্ত্রধারীরা। বিশ্ব ব্যাংকের হিসাবে ২০২০ সালে আফগানিস্তানের কর্মক্ষেত্রে নারীর অংশগ্রহণ বেড়ে হয়েছিল ২৩ শতাংশ, যেখানে ২০ বছর আগে তালেবান শাসনে তা ছিল শূন্য।
×