ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

অজয় দাশগুপ্ত

সিডনির মুক্তমঞ্চ

প্রকাশিত: ১৯:৫৪, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

সিডনির মুক্তমঞ্চ

বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে এখন নতুন কিছু লেখা বা নতুন কিছু বলা কঠিন। বাঙালীর জীবন ও জগতে এতবড় কোন রাজনীতিবিদ এর আগে আসেননি। তাঁকে যোগ্য মর্যাদা বা যোগ্য আসন দিতে সাধারণ মানুষের কোন দ্বিধা-দ্বন্দ্ব নেই। তারা সব সময় তাঁকে জাতির পিতার জায়গা দিয়েছে। সমস্যা সৃষ্টি করেছে বাংলাদেশবিরোধী রাজনীতি। যে রাজনীতি এখন নানা রূপে-নানা পরিচয়ে তার চেহারা দেখাতে ব্যস্ত। বিএনপি-এরশাদ-তারেক জিয়া অতি ডান অতি বাম সবাই আসলে একজোট। একটি বিষয়ে তারা এক সেটি হলো ছলে বলে কৌশলে শেখ হাসিনার সরকারের পতন। এই গোষ্ঠী মিডিয়া প্রচার মাধ্যমসহ সবকিছু যেন দখলে নিয়ে নিয়েছে। এখনও সরকার ও প্রশাসনে শেখ হাসিনার নেতৃত্ব সবল থাকার কারণে সুবিধা করতে পারছে না তারা। সময় পেলেই এরা মরণ আঘাত হানবে। এরা বুঝে গেছে তাদের রাজনীতি অচল। এরা জেনে গেছে মানুষকে যেনতেন প্রকারে বোঝানোর সময় শেষ। এরা জানে শেখ হাসিনার আমলে উন্নয়ন ও বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার গতি পেয়ে গেছে দেশ। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক বিষয়ে এসেছে পরিবর্তন। সে পরিবর্তন মূলত অকেজো করে দিয়েছে বিএনপির রাজনীতি। তারা ভর করে ছিল ভারত বিরোধিতার পুরনো ভূতের ওপর। কিন্তু তাদের সে ভূত মরা। ঠিক তখনই উঠে এলো হেফাজত। জামায়াতের প্রেতাত্মা বিএনপির নেপথ্যের ভরসা এই হেফাজত। এরা মাঠে নিয়ে এসেছে সাম্প্রদায়িকতার পুরনো রাজনীতি। এই পাপ এই অন্ধ বিশ্বাস এখন দেশ ও সমাজে প্রগতির বিশাল অন্তরায়। তা হলে কি হবে দেশের? কি হবে বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক দেশ ও সমাজ নির্মাণের স্বপ্নের? এমন কঠিন মুহূর্তে সিডনির তুমুল জনপ্রিয় মাসিক পত্রিকা মুক্তমঞ্চ নিয়ে এসেছিল এক অসাধারণ ভার্চুয়াল আলোচনা। করোনাকালে অন্য কিছুর মতো এই মিডিয়াও ছাপার ব্যাপারে থমকে দাঁড়াতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু তার অনলাইন বা ডিজিটাল কর্মপ্রবাহ থেমে নেই। মাঝে মাঝে তার ঝলক দেখা যায়। এবারের আয়োজনটির পোশাকি নাম যাই হোক মূলত তার সারমর্ম ছিল, বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষাপটে বঙ্গবন্ধুর অসাম্প্রদায়িক দেশ ও সমাজের বাস্তবায়ন। নিঃসন্দেহে জরুরী বিষয়। মুক্তমঞ্চের সম্পাদক আল নোমান শামীম সিডনির উজ্জ্বল সংগঠক। তার বিচক্ষণতা ইতোমধ্যে প্রশংসিত। সে চাইলেই বহু বিষয়ে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে। এই আলোচনা সভাটি ছিল এর একটি। এতে যুক্ত হয়েছিলেন কেন্দ্রীয় বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি এস এ মালেক। বর্ষীয়ান এই মানুষটি অভিজ্ঞতা ও মেধায় পরিপুষ্ট। ৮৭ বছরের এই তরুণ যিনি বঙ্গবন্ধুর স্নেহধন্য, যিনি তাজউদ্দীন আহমদের সঙ্গে কাজ করেছেন তাঁর আলোচনা ছিল প্রাণবন্ত ও দিকনির্দেশনামূলক। তিনিও আমাদের ভবিষ্যত নিয়ে সংশয় প্রকাশ করলেন। বললেন, কিভাবে আগামী প্রজন্ম বাঁচবে তা বলা মুশকিল। এস এ মালেক শেখ হাসিনার ওপর চড়াও হওয়ার জন্য সবুর করা সব দল উপদল বাম অতি বাম ডানদের কথা বলতেও ভুল করেননি। হেফাজতের তা-ব আর ষড়যন্ত্র নিয়ে এমন সোজাসাপটা আলোচনা সমালোচনা আত্মশুদ্ধির কথা আওয়ামী লীগের নেতারাও বলেন না। তিনি বঙ্গবন্ধু পরিষদ অর্থাৎ বুদ্ধিবৃত্তিক পরিষদের সভাপতি, তাই তিনি বলতে পেরেছেন। আলোচনা সভায় যুক্ত ছিলেন সৈয়দ মোদাচ্ছের আলী। স্বনামখ্যাত এই নেতাও তার কথা বলেছেন অকপটে। দুর্দিনের অজানা আশঙ্কা আর ভয়াবহ বাস্তবতা তাকেও দেখলাম বিচলিত করে রেখেছে। এ জায়গাটা ভয়াবহ। তারা আওয়ামী রাজনীতির পুরনো মানুষ। তাদের অভিজ্ঞতা আর মেধা সর্বজনস্বীকৃত। পাওয়ার বলয়ের মানুষ। তারপরও তাদেই যদি এমন শঙ্কা থাকে, তো আমরা নিরাপদ বোধ করব কিভাবে? সেদিনের ভার্চুয়াল আলোচনায় সিডনি থেকে যুক্ত ছিলাম অধ্যাপক আবুল হাসনাত মিলটন, ডাঃ লাভলী রহমান ও আমি। আলোচনা সভা বা টকশোর বাইরে আর কি করতে পারে? কিন্তু যেটা করতে পেরেছে বা পারে তা হলো মনের জানালা খুলে দেয়া। খুলে দেয়া অন্ধ চোখের পাতা। আওয়ামী লীগের সামনে যে বিপদ তা কি নেতারা জানেন না? নিশ্চয়ই জানেন। কিন্তু তাদের বেশিরভাগই আছেন আপন কাজে। যা কিছু ভাল বা উন্নয়ন তার সিংহভাগ শেখ হাসিনার অবদান। এটাই স্বাভাবিক। এখানে মন্ত্রী-মিনিস্টার বা নেতাদের দোষ দেয়ারও কিছু নেই। আমরা বলছি তাদের অনুভব ও প্রজ্ঞার কথা। এক সময় এই দলের নেতারা ছিলেন সিংহের মতো। যখন আওয়ামী লীগ বিরোধী দলে যখন তাদের সামনে বিএনপি-এরশাদ-জামায়াত কিংবা সরকার ও প্রশাসন তখন তারাই ছিলেন ভরসা। তারা সামনে এসে দাঁড়ালে কর্মীরা ভরসা পেত। ত্যাগী নেতাদের জন্য জীবন বিসর্জন দিতেও দেরি করত না কর্মীরা। কিন্তু সরকারে আসার পর আওয়ামী লীগের নেতারা আস্তে আস্তে রাজপথ ছেড়ে দিয়েছেন। সরকারের বড় দুর্বলতা দলের ভেতরে ঘাপটি মেরে থাকা প্রতিক্রিয়াশীল ও দালালের দল। এদের বিরুদ্ধে আত্মশুদ্ধি ও সমালোচনার কথা বঙ্গবন্ধু বলে গেলেও দল এখনও তা কার্যকর করতে পারেনি। ক’দিন আগেই প্রধানমন্ত্রী নিজে বলেছেন তাঁর করে দেয়া বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবর্ষের বাড়িগুলো কারা ভেঙ্গে ছিল সেই তালিকা তাঁর হাতে আছে। ধন্যবাদ তাঁকে। একটাই প্রশ্ন, সে সব নেতারা কোথায় ধাকে? তারা কি জেগে ঘুমান? তারা কি বি’বাড়িয়া থেকে সুনামগঞ্জের শাল্লায় বসবাস করে? এসব প্রশ্নের উত্তর ছাড়া দেশ যেমন ভাল থাকবে না, তেমনি আওয়ামী লীগের মতো দলও সুবিধা করতে পারবে না। যে দল একাত্তরে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছে যাদের কল্যাণে বাংলাদেশ তাদের এই আত্মসমর্পণ মানায় না। সিডনির মুক্তমঞ্চ ও নোমান শামীমকে ধন্যবাদ চমৎকার একটি জরুরী বিষয় তুলে আনার জন্য। এ ভাবনা এখন জাতির জন্য দেশে-বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশীদের জন্যও জরুরী। এর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের অসাম্প্রদায়িকতার ভবিষ্যত। লেখক : সিডনি প্রবাসী [email protected]
×