ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

আলমগীর সাত্তার

বাংলাদেশের খুলনা ভুক্তিতে র‌্যাডক্লিফের অবদান

প্রকাশিত: ১৯:৫৩, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১

বাংলাদেশের খুলনা ভুক্তিতে র‌্যাডক্লিফের অবদান

এই লেখাটি বলতে হবে, ৩০ জুন ২০২১ তারিখে জনকণ্ঠ পত্রিকায় প্রকাশিত আমার লেখা ‘বিচিত্র চরিত্রের মানুষ মহাম্মদ আলী জিন্নাহ’-এর অনেকটাই বর্ধিত অংশ। আমার নিজস্ব মতামত : বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে জিন্নাহ সাহেবের কিছুটা হলেও অবদান ছিল। ১৯৪৮ সালে তিনি যখন পূর্ব পাকিস্তান আসেন, তখন যক্ষ্মা রোগে ভুগছিলেন। কোন সোফায় বসলে আপন শক্তিতে উঠে দাঁড়াতে পারতেন না। কারও সাহায্য নিতে হতো। ওই অবস্থায় তিনি ঘোষণা করলেন, উর্দুই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা। এরই প্রতিবাদে শুরু হয় আমাদের ভাষা আন্দোলন।। জিন্নাহ সাহেব অমন নির্বোধের মতো ঘোষণা না দিলে আমাদের ভাষা আন্দোলন শুরু হতো না। ভাষা আন্দোলন থেকেই ধাপে ধাপে উন্নীত হয় ছয় দফার আন্দোলন, ঊনসত্তরের গণআন্দোলন। পূর্ণতা পায় গিয়ে মুক্তিযুদ্ধে। বলতে হবে মৃত্যুর আগে জিন্নাহ সাহেব আমাদের স্বাধীনতার বীজ বপন করে গিয়েছিলেন। এবারে আজকের প্রবন্ধের মূল কথায় আসা যাক : জিন্নাহ সাহেব এবং ভল্লব ভাই প্যাটেলের কারণে সিদ্ধান্ত হয়ে গিয়েছিল ভারতবর্ষ স্বাধীন হলে, বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল হিন্দু প্রধান হলে- ওই অঞ্চল ভারতের সঙ্গে যুক্ত হবে। মুসলমান সংখ্যাগরিষ্ঠ হলে যুক্ত হবে- পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ বর্তমানের বাংলাদেশের সঙ্গে। পাঞ্জাব বিভক্তির ব্যাপারেও একই নিয়ম পালিত হবে। পার্থক্য ছিল, ওখানে হিন্দু এবং শিখদের একসঙ্গে গণনা করে সংখ্যাগরিষ্ঠতা নির্ণয় করা হয়েছিল। তখন পাঞ্জাবে মুসলমানদের সংখ্যা ছিল পনেরো মিলিয়ন। হিন্দু এবং শিখদের মিলিত সংখ্যা ছিল ষোলো মিলিয়ন। বাংলা যাতে খন্ডিত না হয়, সে জন্য লর্ড মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে সাক্ষাত করেন হোসেন শহীদ সোহ্্রাওয়ার্দী। কংগ্রেসের বিরোধিতার কারণে বাংলাকে খন্ডন করা থেকে বিরত রাখা সম্ভব হয়নি। এরপর কলকাতা শহর এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার ওপর ভারত এবং পূর্ববঙ্গের লোকদের সমান অধিকার থাকবে এমন প্রস্তাব নিয়ে সোহরাওয়ার্দী সাহেব দ্বিতীয়বার মাউন্টব্যাটেনের সঙ্গে দেখা করেন। এবারেও কংগ্রেস নেতারা বাঁধা হয়ে দাঁড়ান। ভারত এবং পাকিস্তানের সীমানা নির্ধারণে ইংরেজ অফিসারদের নিরপেক্ষতার বিষয়ে মাউন্টব্যাটেন সন্দিহান ছিলেন। তাই তিনি এ কাজের জন্য ইংল্যান্ড থেকে খুব বিচক্ষণ কোন ব্যক্তিকে ভারতে পাঠানোর জন্য ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করেন। এমন অনুরোধের প্রেক্ষিতে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী, স্যার র‌্যাডক্লিফকে উপযুক্ত ব্যক্তি বিবেচনা করে ভারতে পাঠালেন। স্যার র‌্যাডক্লিফ ছিলেন একজন ব্যারিস্টার এবং জাস্টিস। বিচক্ষণতার জন্যও তাঁর প্রভুত সুনাম ছিল। তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার ডিগ্রীও অর্জন করেছিলেন। একজন মেধাবী ছাত্র হিসেবেও তাঁর সুখ্যাতি ছিল। ১৯৪৭ সালের ২৭ জুন ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী লর্ড এ্যাটলি ভারতবর্ষে গিয়ে ভারত-পাকিস্তানের সীমানা নির্ধারণের গুরুদায়িত্ব পালন করার জন্য স্যার র‌্যাডক্লিফকে নিয়োগপত্র দান করেন। স্যার র‌্যাডক্লিফ লন্ডনে অবস্থানকালেই বুঝতে পারছিলেন, ভারত-পাকিস্তানের সীমানা নির্ধারণ খুব জটিল ব্যাপার। নতুবা ভাইসরয় মাউন্টব্যাটেন কেন লন্ডন থেকে কাউকে ভারতে পাঠানের অনুরোধ জানাবেন? তিনি জানতেন সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ হওয়া কতটা কঠিন। নিরপেক্ষ ব্যক্তি কারও সমর্থন লাভ করতে পারেন না। র‌্যাডক্লিফের ছিল অগাধ বিদ্যা। তবু তিনি ভারতবর্ষ সম্পর্কে খুব কমই জানতেন। ভারতের সব অঞ্চল সম্পর্কে বিস্তারিত জানেন এমন চারজন আইসিএস (সবাই এই উপমহাদেশের লোক) অফিসারকে র‌্যাডক্লিফকে সহায়তা করার জন্য নিযুক্ত করা হলো। র‌্যাডক্লিফ ১৯৪৭ সালের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে ভারতে এসে পৌঁছলেন। মাউন্টব্যাটেন র‌্যাডক্লিফকে বললেন- এই চারজন অফিসারের কাছ থেকে এই উপমহাদেশ সম্পর্কে আপনি সব তথ্য জেনে নেবেন। তারপর ভারত-পাকিস্তানের বর্ডার লাইন চিহ্নিত করার দায়িত্ব কিন্তু আপনার একার। আপনি ছাড়া অন্য কেউ যেন কিছু জানতে না পারে। আগস্ট মাসের বারো তারিখের মধ্যে চিহ্নিত করা মানচিত্র আমার হাতে তুলে দেবেন। তবে সেটা তেরো তারিখের চেয়ে কিছুতেই দেরিতে হলে চলবে না। ষোলোই আগস্টের পূর্বে সীমানা সম্পর্কিত কোন কিছু প্রকাশ করা হবে না। স্যার র‌্যাডক্লিফ প্রশ্ন করলেন, এত অল্প সময়ে আমি সঠিকভাবে সীমানা রেখা নির্ধারণ করব কীভাবে? মাউন্টব্যাটেন বললেন, ‘ইউজ থাম্বরুল’ (use thumbrule)। স্যার র‌্যাডক্লিফ সমস্যায় পড়লেন, কলকাতা শহর এবং পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলা নিয়ে। কলকাতা শহর যে ভারতের অংশ হবে, সেটা তো আগেই নির্ধারিত হয়ে গিয়েছিল। সেটা তো তিনি আর পরিবর্তন করতে পারবেন না। উপলব্ধি করলেন, বিষয়টা সঠিক হয়নি। ফোর্ট উইলিয়াম এবং পার্শ্ববর্তী এলাকা ছাড়া কলকাতা শহরটা তৈরি করা হয়েছে জলাভূমির ওপর। অমন সুন্দর এবং বিশাল শহরটা নির্মাণ করতে কতটা অর্থ ব্যয় করতে হয়েছিল, সেই অর্থের পরিমাণ বর্তমানের মুদ্রায় কত হবে, সে সব কল্পনা করাও কঠিন। পূর্ববাংলার লোকদের সেই অর্থায়নে সম্ভবত বাংলার পশ্চিমাঞ্চলের লোকদের চেয়ে বেশি ছাড়া কম ছিল না। তাই র‌্যাডক্লিফ পূর্ববাংলার লোকদের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। কলকাতা হারানোর ক্ষতিটা পুষিয়ে দিতে তাই সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক হিন্দু হওয়ার পরেও তিনি খুলনা জেলাকে পূর্ববাংলার সঙ্গে সংযুক্ত করে বর্ডার লাইন চিহ্নিত করেছিলেন। চৌদ্দই আগস্ট খুলনা জেলায় ভারতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়েছিল। ষোলোই আগস্ট ভারত-পাকিস্তানের সীমানা চিহ্নিত করা মানচিত্র যখন প্রকাশ করা হলো, তখন দেখা গেল খুলনা জেলা পাকিস্তানের অংশ। পার্বত্য চট্টগ্রামের সবটাই যে পূর্ববাংলার সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছিল সেটাও ধর্মভিত্তিক লোক সংখ্যার বিচারে নয়। পার্বত্য চট্টগ্রামের মোট জনসংখ্যার মাত্র তিন শতাংশ ছিল মুসলমান এবং নৃগোষ্ঠীর লোকরা ছিল বৌদ্ধধর্মাবলম্বী। এই জেলায় কোন নদী বা সামুদ্রিক বন্দর নেই। চট্টগ্রাম সামুদ্রিক বন্দরের সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল ভাল। এসব কথা চিন্তা করেই র‌্যাডক্লিফ সাহেব ওই জেলাকে পূর্ব পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত করে দেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলা আয়তনে বেশ বড়। লোক সংখ্যাও কম। এখন তো ওই জেলা আমাদের জন্য যেন সোনার খনি। পর্যটন কেন্দ্র, প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, যথেষ্ট ফল-ফলাদির উৎপাদন- এসব বিবেচনা করলে পার্বত্য চট্টগ্রামের গুরুত্ব বোঝা যাবে। খুলনা জেলার পূর্ববঙ্গের সঙ্গে সংযুক্তি আমাদের জন্য পাওয়াটা যে কত বড় সৌভাগ্যের তা প্রকাশ করাও কঠিন ব্যাপার। কারও একটা লেখায় বহুদিন আগে পড়েছিলাম, যশোর জেলার সঙ্গে খুলনা জেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল ছিল বলেই খুলনা জেলাকে পূর্ববঙ্গের সঙ্গে যুক্ত করে দেয়া হয়েছিল। ওই লেখক এমন তথ্য কোথায় পেয়েছিলেন, সেটা তিনিই জানেন। ‘reedom at Midnight’ বইখানা পুরোটা পড়ে দেখলাম, এমন কথা তো কোথাও লেখা নেই। খুলনা জেলার সঙ্গে পশ্চিম বঙ্গেরও যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ ভাল। খুলনার সঙ্গে যশোর এবং উত্তরবঙ্গের রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা যেমন আছে, তেমন কলকাতার সঙ্গে ভাল রেল যোগাযোগ ব্যবস্থাও বেশ উন্নতই ছিল। সাতক্ষীরা তখন খুলনা জেলার অন্তর্ভুক্ত ছিল। একটি অপ্রশস্ত নদী পেরোলেই পশ্চিমবঙ্গ। আমি মনে করি স্যার র‌্যাডক্লিফের বিচক্ষনতার জন্যই খুলনা জেলা পূর্ববঙ্গের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছিল। লর্ড মাউন্টব্যাটেনের মতো দূরদৃষ্টিসম্পন্ন বিচক্ষণ মানুষ খুব কমই জন্মগ্রহণ করেন। তিনি এবং কংগ্রেস নেতা রাজা গোপাল আচারিয়া একমত ছিলেন যে পাকিস্তানের পশ্চিমাংশ এবং পূর্ববঙ্গ পঁচিশ বছরের বেশি একত্রিত থাকতে পারবে না। সে ভবিষ্যদ্বাণী সত্য হয়েছিল। স্যার র‌্যাডক্লিফও বোধ হয় তাই মনে করতেন। তিনি পাকিস্তানের পশ্চিমাংশ এবং পূর্ববঙ্গকে প্রায় দুটি আলাদা রাষ্ট্র হিসেবেই বিবেচনা করেছিলেন। লর্ড মাউন্টব্যাটেনের মতো সম্ভবত তাঁরও একই হিসাব ছিল। স্যার র‌্যাডক্লিফ তাঁকে সহায়তাকারী আইসিএস অফিসারদের মাধ্যমে জানতে পারলেন, প্রস্তাবিত পূর্ববঙ্গ হলো হাওড়, বিল এবং জলাভূমির দেশ। এই অঞ্চলে খাদ্যশস্যের চাষ হয় কম। পাট চাষ করা হয় প্রচুর। সব পাটকল পড়েছে ভারতীয় বাংলায়। এসব তথ্য ও র‌্যাডক্লিফকে প্রস্তাবিত পূর্ববঙ্গের প্রতি সহানুভূতিশীল করে তুলেছিল। পাঞ্জাবের ক্ষেত্রে তাঁর সহানুভূতি ছিল ভারতের প্রতি। যেমন পাঞ্জাবের গুরুদাসপুর জেলা পাকিস্তানের অংশ হওয়ার উপযুক্ত কারণ ছিল। গুরুদাসপুর জেলার সংখ্যাগরিষ্ঠ লোক ছিল মুসলমান। ওই জেলার উত্তরে-জম্মু ছিল হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ। গুরুদাসপুর পাকিস্তানের সঙ্গে যুক্ত হলে ভারতীয়দের জম্মু-কাশ্মীর যাওয়ার পথ রুদ্ধ হয়ে যেত। গুরুদাসপুরের পশ্চিমে যে রাস্তা জম্মু-কাশ্মীর পর্যন্ত গিয়েছে, সেই রাস্তা যুক্তিসঙ্গতভাবেই পাকিস্তানে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কথা ছিল। সেটাও ভারতের সীমানায় অন্তর্ভুক্ত করে দেয়া হয়েছিল। আসলে র‌্যাডক্লিফ জানতেন, নিরপেক্ষতার চেয়েও গুরুত্বপূর্ণগুলো বিচক্ষণতা। বিচক্ষণতা ব্যতীত নিরপেক্ষতা হলো নির্বুদ্ধিতা। ভারত-পাকিস্তানের সীমানা রেখা কিভাবে চিহ্নিত করা হবে লর্ড মাউন্টব্যাটেন তা জানতেন। সম্ভবত আরও একজন কিছুটা জানতেন। অবশ্য বইপুস্তকে এ বিষয়ে আমি কোন তথ্য পাইনি। ওই সময়ের ইতিহাস পড়লে এমনই ধারণা মনে দেখা দেয়। এই ব্যক্তির নাম ছিল ভি কে মেনন (V K Menon)। তাঁর জীবন কাহিনী খুবই চিত্তাকর্ষক। মাউন্টব্যাটেনের কর্মচারীদের মধ্যে তিনজন মেনন ছিলেন। উনাদের মধ্যে একজন কৃষ্ণ মেনন, দ্বিতীয় জন রায় বাহাদুর মেনন, শেষোক্তজন ভি কে মেনন। বারো ভাই-বোনের মধ্যে ভি কে মেনন ছিলেন সবচেয়ে বড়। তেরো বছর বয়স পর্যন্ত তিনি স্কুলে পড়াশোনা করেছেন। এরপর অর্থাভাবে আর পড়াশোনা চালিয়ে যেতে পারেননি। মাঠে ও শিল্প-কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করেছেন। দুই হাতের আঙ্গুল ব্যবহার করে তিনি টাইপ করার কাজ শিখে তিনি চাকুরীর আশায় সিমলা শহরের পথে যাত্রা করেন। সিমলা যাওয়ার জন্য বাস স্টপেজে পৌঁছে দেখলেন তাঁর পকেটের সব টাকা পকেটমার হয় গেছে। তিনি এক শিখ ভদ্রলোককে সবকিছু বললেন এবং কয়েকটি টাকা ধার চাইলেন। শিখ ভদ্রলোক তাঁকে পনেরোটি টাকা দিয়ে বললেন, ‘এ টাকা পরিশোধ করতে হবে না। তবে যদি আর্থিক সমস্যায় পড়ে কেউ তোমার কাছে অর্থ সাহায্য চায়-তবে এ টাকা সেই সমস্যা জর্জরিত ব্যক্তিকে দিও।’ ভি কে মেমন, এই অর্থ সমস্যাগ্রস্ত এক ব্যক্তিকে দিয়েছিলেন। ১৯২৯ সালে ভি কে মেনন সিমলায় গিয়ে ভাইসরয়ের অফিসে কেরানী পদের চাকরিতে যোগদান করেন। ১৯৪৭ সালে নিজের মেধাবলে ভাইসরয় মাউন্টব্যাটেনের অন্যতম সেক্রেটারি হিসেবে পদোন্নতি লাভ করেন। মাউন্টব্যাটেনের মানুষ চেনার ক্ষমতা ছিল অসাধারণ। তিনি বুঝতে পারলেন ভি কে মেনন প্রখর বুদ্ধিসম্পন্ন এবং একই সঙ্গে বিশ্বস্ত। মাউন্টব্যাটেন অনেক বিষয়েই অন্যদের সঙ্গে আলোচনা না করে ভি কে মেননের সঙ্গে করতেন। রাজা ভল্লব ভাই প্যাটেলের সঙ্গে ভি কে মেননের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল। ভল্লব ভাই প্যাটেল ছিলেন একটু শক্ত চরিত্রের মানুষ। তিনি যেটা ভাল বুঝতেন, সে ব্যাপারে তাঁর মত পরিবর্তন করা ছিল কঠিন। আলোচনার সময় ভল্লব ভাইকে প্রভাবিত করতে মাউন্টব্যাটেন নিযুক্ত করেন ভি কে মেননকে। ভল্লব ভাই যে সব কথা বলতেন তা যে মাউন্টব্যাটেনেরই শেখানো তা ভল্লব ভাই জানতেন না। জম্মু এবং কাশ্মীরের ভারতে যোগদানের ব্যাপারে মহারাজা হরি সিংয়ের সম্মতি আদায়ের ব্যাপারে ভি কে মেননের অবদান ছিল অনেক। খুলনা জেলাকে পূর্ববঙ্গের সঙ্গে যুক্ত করার ক্ষেত্রেও তাঁর কিছুটা জানা ছিল। উপমহাদেশের রাজনীতিতে মেনন বলতে আমরা কৃষ্ণ মেননকেই বুঝি। তিনি ছিলেন পন্ডিত নেহরুর ঘনিষ্ঠজন। নেহরু তাঁকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পদে বসিয়েছিলেন। ১৯৬২ সালে চীনের সঙ্গে বিপর্যকর যুদ্ধে ভারতের অপমানজনক পরাজয়ের জন্য অনেকে মেননকেই অনেকটা দায়ী করেন। কারণ ভারতের তেমন কোন যুদ্ধ-প্রস্তুতিই ছিল না। বুদ্ধির প্রখরাচৌর্জে তিনি ভি কে মেননের অবশ্যই সমতুল্য ছিলেন না। সব দেশে সব কালে দেখা গেছে মধ্যম মানের বুদ্ধি নিয়ে অনেক মানুষ খ্যাতিমান হয়েছেন। কৃষ্ণ মেনন ছিলেন তেমনই এক ব্যক্তি। আর ভি কে মেননের জীবনচরিত লেখা হলে তা উপন্যাসকেও হার মানাবে। লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি নির্বোধ খ্যাতিমানদের বলতেন, চড়সঢ়ঁং ঋড়ড়ষ. নির্বোধ খ্যাতিমানদের সংখ্যা বাংলাদেশেও রয়েছে। তার পরও বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং আরও দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে। বাংলাদেশ কেন দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাবে সে বিষয়ে আমি পরে লিখব। একই সঙ্গ আমি বলতে চাই, বাংলাদেশে অনেক গুণী মানুষও আছেন। তাঁরা অনেকটাই ভি কে মেননের মতো প্রখর বুদ্ধির অধিকারী। লেখক : বীর প্রতীক এবং সাবেক বৈমানিক
×