ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

শিক্ষকদের ভাবনায় অনলাইন পরীক্ষা

প্রকাশিত: ২১:৩৮, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

শিক্ষকদের ভাবনায় অনলাইন পরীক্ষা

ভবিষ্যতে মিশ্র পদ্ধতিতে শিক্ষা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা উচিত ইউজিসির নির্দেশমতে অনলাইন পরীক্ষা পদ্ধতিতে লিখিত অংশে কম এবং মৌখিক পরীক্ষায় বেশি নম্বর রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা যত প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছে, সেই অংশ থেকেই অধিকাংশ মৌখিক পরীক্ষার প্রশ্ন করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা কি শিখছে, উত্তর নিজে বুঝে লিখছে কিনা? শিখনের বাস্তব প্রয়োগ ইত্যাদি সরাসরি অনলাইনে যাচাই করা যাচ্ছে। এ দিক থেকে বিবেচনা করলে অনলাইন পরীক্ষা খুবই ইন্টারেক্টিভ। তবে দীর্ঘসময় ধরে মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী উভয়ের ধৈর্য ধারণ করতে হয় এবং তা মানসিক চাপ সৃষ্টি করে। তার ওপর আছে বিদ্যুত বিভ্রাট এবং ইন্টারনেটের গতি ও ডিভাইস সমস্যা। এসব সমস্যা সমাধানে রাষ্ট্রীয়ভাবে সকল শিক্ষার্থীদের জন্য বিনামূল্যে দ্রæতগতির ইন্টারনেট এবং স্মাটফোন ও ল্যাপটপ সরবারহ করা প্রয়োজন। অনলাইন পরীক্ষা বা ক্লাস পদ্ধতি কখনোই প্রচলিত সরাসরি পাঠদানের বিকল্প হতে পারে না। তবে এ পদ্ধতি থেকে অর্জিত জ্ঞান দ্বারা ভবিষ্যতে মিশ্র পদ্ধতিতে (সশরীর + অনলাইন) শিক্ষা কর্মসূচী বাস্তবায়ন করা উচিত। অনলাইন উপযোগী ডিজিটাল কন্টেন্ট তৈরি করে করার জাতীয় উদ্যোগ নিতে হবে এবং শ্রেণীকক্ষগুলোকে ইন্টারেক্টিভ ডিজিটাল ডিজিটাল ডিভাইসে রূপান্তর করতে হবে। অধ্যাপক ড. এম মেসবাহ উদ্দিন পরিচালক, আইআইটি সদস্য, অনলাইন পরীক্ষা পদ্ধতি প্রণয়ন কমিটি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। অনলাইন পরীক্ষায় বড় চ্যালেঞ্জ উচ্চগতির ইন্টারনেট ও ডিভাইস সহজলভ্যতা বিগত এক বছরের বেশি সময় ধরে নিয়মিত অনলাইনে ক্লাস এবং ক্লাস টেস্ট নেয়ার পরও কিন্তু আমরা শিক্ষার্থীদের ফাইনাল পরীক্ষা নিতে পারছিলাম না। সেক্ষেত্রে অনলাইনে ফাইনাল পরীক্ষা শুরু করাটা ছিল সময়ের দাবি এবং সেজন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি। যদিও অনলাইনে পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর আমার মনে প্রশ্ন জাগছে আমরা এই পদ্ধতিতে কেন এক বছর আগে পরীক্ষা শুরু করলাম না! অনলাইনে পরীক্ষা নেয়ার ক্ষেত্রে আমার কাছে বেশকিছু বিষয় চ্যালেঞ্জিং মনে হয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হলো ইন্টারনেট এবং উপযোগী ডিভাইসের সহজলভ্যতা, প্রশ্নপত্র তৈরি করা এবং উত্তর প্রদানের দক্ষতা; নিরাপত্তা এবং সমন্বয়। আমি বেশ কয়েকটি পরীক্ষা নিয়েছি তাতে মনে হয়েছে ইন্টারনেটের গতি ও ডিভাইস জনিত সমস্যা প্রকট। এটি শিক্ষক হিসেবে আমাদের যেমন সমস্যা হচ্ছে ঠিক একইভাবে ছাত্র-ছাত্রীদের জন্যও সমস্যা হচ্ছে। তবে আমরা প্রথমবারের মতো অনলাইনে পরীক্ষা নিচ্ছি এক্ষেত্রে পদ্ধতিটির বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে আমরা জানতে পারছি। যেগুলোকে ভবিষ্যতে সমাধান করা সম্ভব হবে। এখন যে পদ্ধতিতে আমরা পরীক্ষা নিচ্ছি এই পদ্ধতিতে অনেক আগে থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাস-পরীক্ষা নিচ্ছে সুতরাং আমার মনে হয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিয়মিত ক্লাস-পরীক্ষা শুরু হলে আমাদের অনলাইনে ক্লাস পরীক্ষা সম্পর্কিত বিষয়গুলোর ওপর আরও বেশি জোর দিতে হবে। ড. মোঃ আবদুল কাইয়ুম মাসুদ সহযোগী অধ্যাপক ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগ নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। চ‚ড়ান্ত মূল্যায়নের থেকে ধারাবাহিক মূল্যায়নের প্রতি বেশি গুরুত্ব আরোপ করা যেতে পারে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনলাইন পরীক্ষা পদ্ধতিতে প্রতিটি কোর্সের চ‚ড়ান্ত মূল্যায়নের জন্য লিখিত ও মৌখিক উভয় পরীক্ষাই নেয়া হচ্ছে। মৌখিক পরীক্ষা হওয়ার দরুন কোর্স শিক্ষক প্রত্যেক শিক্ষার্থীর পঠনলব্ধ জ্ঞানের পরিসীমা ও বিষয়বস্তুর প্রতি আগ্রহ ও অনাগ্রহের কারণ খুব সহজেই নিরূপণ করতে সক্ষম হচ্ছেন যা পরবর্তী সময়ে পাঠদানে উক্ত কোর্স শিক্ষকের জন্য সহায়ক হবে। অনলাইন পরীক্ষার লিখিত অংশটুকু নিয়ে কিছুটা চিন্তার বিষয় রয়েছে। এই পদ্ধতিতে ছাত্রদেরকে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অনলাইন প্লাটফর্মে প্রদত্ত প্রশ্নের লিখিত পরীক্ষার সমাধানটি জমা দিতে হয়। উক্ত পদ্ধতিতে, একদিকে যেমন সঠিক মূল্যায়নের বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে অন্যদিকে উক্ত সময়ের মধ্যে উত্তরপত্র জমাদানে শিক্ষার্থীদের অপারগতার বিষয়টিও পরিলক্ষিত হয়েছে। প্রথমত, এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য অনলাইন পরীক্ষা পদ্ধতিতে চূড়ান্ত মূল্যায়নের থেকে ধারাবাহিক মূলায়নের প্রতি বেশি গুরুত্ব আরোপ করা যেতে পারে। চ‚ড়ান্ত মূল্যায়নের লিখিত পরীক্ষার অংশটুকু বাদ দিয়ে তা ধারাবাহিক মূলায়নের (কুইজ, প্রেজেন্টেশন, এসাইনমেন্ট, ক্লাস এটেনশন) সঙ্গে সংযুক্ত করা যেতে পারে এবং শুধু মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে চূড়ান্ত মূল্যায়নটি সম্পন্ন করা যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, যদি লিখিত পরীক্ষার বিষয়টি আমরা বিদ্যমান রাখতে চাই, একদিকে যেমন ক্রিয়েটিভ প্রশ্নের মান নিশ্চিত করতে হবে অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের ওয়েভক্যাম চালু রেখে পরীক্ষা পদ্ধতিতে অভ্যস্ত করতে হবে। যার জন্য ইন্টারনেটের গতি বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে দেশের সর্বত্র এর বিদ্যমান নিশ্চিত করতে হবে। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য মোবাইল কোম্পানিগুলো শিক্ষার্থীদের জন্য সহজলভ্য ইন্টারনেট প্যাক চালু করতে পারে এবং বেসরকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য সরকারের পাশে দাঁড়াতে পারে। শফিউল হোসাইন সহকারী অধ্যাপক, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এ্যান্ড পলিমার সায়েন্স; শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
×