ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নারায়ণগঞ্জের ৮ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিকের টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা

প্রকাশিত: ১৮:৪৫, ৫ আগস্ট ২০২১

নারায়ণগঞ্জের ৮ লাখ গার্মেন্ট শ্রমিকের টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নারায়ণগঞ্জে ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় সাতশ গার্মেন্টে কর্মরত আছেন প্রায় আট লাখ শ্রমিক। চলমান করোনা মহামারী থেকে গার্মেন্ট শিল্পকে রক্ষায় সরকার ইতিমধ্যেই এই শিল্পের সঙ্গে যুক্ত ৪০ লাশ শ্রমিককে টিকার আওতায় আনার ঘোষণা দিয়েছেন। সরকারের এই ঘোষণার পর গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠনগুলো থেকে দাবি উঠেছে টিকা গুলো যেন তাদের কাছে দিয়ে দেওয়া হয়। সরকারের ঘোষণা এবং গার্মেন্ট মালিকদের দাবির পরেও নারায়ণগঞ্জে গার্মেন্ট সেক্টরে কর্মরত ৮ লাখ শ্রমিকের টিকা পাওয়া নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছেন। কবে, কিভাবে এই টিকা নারায়ণগঞ্জের গার্মেন্ট শ্রমিকরা পাবেন সে বিষয়টি এখনও নিশ্চিত করতে পারেননি কোন পক্ষই। নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ এবং গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সহ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের সঙ্গে কথা বলে এমন চিত্রই উঠে এসেছে শ্রমিকদের টিকার ব্যাপারে। গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র সহ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নারাযণগঞ্জে বিকেএমইএ, বিজিএমইএ’র সদস্য ভুক্ত এবং এর বাইরেসহ মোট সাতশ’র মতো ছোট-বড় গার্মেন্ট রয়েছে। এরমধ্যে কাজ আছে অর্থ্যাৎ রানিং গার্মেন্টের সংখ্যা চারশ থেকে সাড়ে চারশ। যেসব ছোট গার্মেন্ট সাব কন্ট্রাক্টে কাজ করে তাদের শ্রমিকদেরও টিকা আওতায় আনতে হবে। সব মিলিয়ে নারায়ণগঞ্জে প্রায় ৮ লাখ শ্রমিক গার্মেন্ট শিল্পের সঙ্গে যুক্ত। তিনি টিকার বিষয়ে বলেন, সরকারের সঙ্গে আমাদের যখন কথা হয়েছে তখন আমাদের দাবি ছিল টিকা গুলো যেন আমাদের কাছে দিয়ে দেওয়া হয়। আমরা গার্মেন্ট গুলোতে শ্রমিক অনুযায়ী টিকা দিয়ে দেবো। সে মতো নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক আমাদের কাছে শ্রমিকদের তালিকা চেয়েছেন। আমরা তালিকা করছি। তবে গার্মেন্ট শ্রমিকদের টিকা প্রদানের তারিখ এখনও নির্ধারণ হয়নি। গার্মেন্ট মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ’র মাধ্যমে কিভাবে টিকা দেওয়া হবে এবং টিকা সংরক্ষনে সংগঠনের পক্ষ থেকে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে হাতেম বলেন, যখন শ্রমিকদের টিকা দেওয়ার বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যাবে তখন টিকা প্রদানের জন্য বিকেএমইএ’র পক্ষ থেকে ১০ জন চিকিৎসক ও ১০ জন নার্স নিয়োগ দেওয়া হবে। তাদের সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের মাধ্যমে টিকা প্রদানের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এরপর টিকা প্রদান শুরু হবে। আর টিকাগুলো সিভিল সার্জনের তত্বাবধানেই রাখা হবে। যখন যে গার্মেন্টে টিকা প্রদানের জন্য যাওয়া হবে তখন ওই গার্মেন্টের শ্রমিক সংখ্যা অনুযায়ী টিকা সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হবে। জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ বলেন, গার্মেন্ট শ্রমিকদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে এখনও সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোন কিছু জানানো হয়নি। তবে আমাদের পক্ষ থেকে আমরা সরকারের কাছে নারায়ণগঞ্জের গার্মেন্ট শ্রমিকদের টিকা দেওয়ার বিষয়টি অবহিত করেছি। সরকার বিষয়টি বিবেচনা করছে। কিভাবে শ্রমিকদের টিকা দেওয়া হবে সে বিষয়ে এখনও জানানো হয়নি। জেলা প্রশাসক আরও বলেন, নারায়ণগঞ্জের যেসব গার্মেন্টে হেলথ কেয়ার সেন্টার রয়েছে আমরা বিকেএমইএ’র কাছে এমন গার্মেন্টের তালিকা এবং শ্রমিকের সংখ্যা জানতে চেয়েছি। অর্থ্যাৎ যেসব গার্মেন্টে হেলথ কেয়ার সেন্টার এবং ডাক্তার ও নার্স রয়েছে ওইসব গার্মেন্টের তালিকাই চাওয়া হয়েছে। যাদের হেলথ কেয়ার সেন্টার ডাক্তার এবং নার্স রয়েছে তাদের ডাক্তার ও নার্সদের টিকা প্রদানের জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। তাদের ডাক্তার এবং নার্সরাই শ্রমিকদের টিকা দেবেন। তবে এখনও পর্যন্ত গার্মেন্ট শ্রমিকদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে সরকারের কাছ থেকে এখনো নির্দেশনা পাইনি। বর্তমানে চলমান টিকা কার্যক্রম শেষ হলে সরকার এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে বলে তাদের জানানো হয়েছে। জেলা প্রশাসকের বক্তব্য অনুযায়ী নারায়ণগঞ্জে কয়টি গার্মেন্টে হেলথ কেয়ার সেন্টার রয়েছে জানতে চাইলে বিকেএমইএ’র সহ সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, এ ধরণের সুবিধা রয়েছে মাত্র একশ’র মতো গার্মেন্টে। কিন্তু‘ তা দিয়ে তো আর সব গার্মেন্ট বিচার করলে চলবে না। যাদের এ ধরণের সুবিধা নেই, ওইসব গার্মেন্টের শ্রমিকদের টিকা দেওয়ার জন্যই বিকেএমইএ থেকে ১০ জন চিকিৎসক ও ১০ জন নার্স নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এতদিনে এসব নিয়োগ হয়েও যেতো। কিন্তু‘ সরকারের পক্ষ থেকে শ্রমিকদের টিকার বিষয়টি নিশ্চিত না হওয়ায় জেলা প্রশাসক এখনই ডাক্তার ও নার্স নিয়োগ দিতে নিষেধ করেছেন। এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন মো. ইমতিয়াজ বলেন, পোশাক শ্রমিকদের টিকা দেয়া বিষয়ে সরকারের তরফ থেকে এখনো আমরা অফিসিয়াল কোন নির্দেশনা পাইনি। পেলে আমরা জানিয়ে দিবো।
×