ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

৭ আগস্ট নয়, গণটিকা কার্যক্রম শুরু ১৪ আগস্ট

প্রকাশিত: ১২:০৮, ৫ আগস্ট ২০২১

৭ আগস্ট নয়, গণটিকা কার্যক্রম শুরু ১৪ আগস্ট

অনলাইন ডেস্ক ॥ করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সারাদেশে গণহারে টিকা কার্যক্রম পরিচালনা ৭ আগস্ট নয়, ১৪ আগস্ট থেকে শুরু হবে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ৭ আগস্ট থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত দেশব্যাপী ৬ দিনের ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও হঠাৎ করেই পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। ৬ দিনের পরিবর্তে এখন মাত্র একদিন করা হবে এই ক্যাস্পেইন। এরপর ১৪ আগস্ট থেকে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হবে। আজ বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) সকালে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. খুরশীদ আলম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ক্যাম্পেইনের আওতায় আপাতত একদিন (৭ আগস্ট) ভ্যাকসিন দেওয়া হবে। তারপর সাতদিন বন্ধ থাকার পর আবার ক্যাম্পেইন চালু হবে। তবে চলমান টিকাদান কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে। ডা. খুরশীদ আলম বলেন, আমাদের বাকি সব পরিকল্পনা ঠিক আছে। লকডাউনের কারণে পরিবহনে সমস্যা। তাই ৭ তারিখ রান টেস্ট, আর ১৪ তারিখ থেকে গণহারে টিকা কার্যক্রম শুরু। করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধে সারাদেশে গণহারে টিকা কার্যক্রম পরিচালনায় ৭ আগস্ট থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত দেশব্যাপী ৬ দিনের ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও হঠাৎ করেই পরিকল্পনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। ৬ দিনের পরিবর্তে এখন মাত্র একদিন করা হবে এই ক্যাস্পেইন। এরপর ১৪ আগস্ট থেকে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হবে। করোনাভাইরাসের টিকাদান কার্যক্রমে হঠাৎ পরিবর্তন আনা হয়েছে। ফলে ৭ আগস্ট থেকে ইউনিয়ন পর্যায়ে ব্যাপকহারে গণটিকা কার্যক্রম শুরু হচ্ছে না। টিকা স্বল্পতার কারণে ৭ দিনের পরিবর্তে আপাতত একদিন এ কর্মসূচি চলবে। শুধু ৭ আগস্ট দেশের ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের ১৫ হাজার ২৮৭টি ওয়ার্ডে এক সেশনে দেওয়া হবে প্রথম ডোজ। প্রতি ওয়ার্ডে ৩শ করে ৪৫ লাখ ৮৬ হাজার ১০০ টিকা দেওয়া হবে। এসব কেন্দ্রের বিপরীতে আগাম রেজিস্ট্রেশনের ভিত্তিতে বয়োবৃদ্ধ, অসুস্থ, নারী, প্রতিবন্ধীরা সুযোগ পাবেন। ১৪ আগস্ট থেকে প্রাপ্তিসাপেক্ষে দেশব্যপী ৭ দিনের গণটিকা কর্মসূচি ফের শুরুর সম্ভাবনা আছে। বুধবার (০৪ আগস্ট) সরকারের উচ্চপর্যায়ের এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। শনিবার ৭ আগস্ট থেকে ১২ আগস্ট পর্যন্ত সারা দেশে গণটিকা কর্মসূচির আওতায় এক কোটি ডোজ টিকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সে অনুযায়ী প্রস্তুতিও চূড়ান্ত করেছিল তারা। জানা গেছে, সরকারের কাছে বর্তমানে টিকার মজুত আছে ৮৯ লাখ ডোজ। এখান থেকেই ৭ আগস্ট প্রথম ডোজ হিসাবে প্রায় ৪৬ লাখ দেওয়া হবে। বাকি টিকাগুলো বর্তমানে যেভাবে ও যেসব স্থানে দেওয়া হচ্ছে সেখানে ব্যবহার করা হবে। এরপর নতুন করে টিকা আসলে কর্মসূচির পরিধি আবার বাড়ানো হবে। এ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, সবকিছুই নির্ভর করছে সময়মতো টিকা পাওয়ার ওপর। তিনি বলেন, শনিবার টিকা দেওয়া হবে। এতে জনপ্রশাসন, স্বরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয় সংযুক্ত থাকবে। কর্মসূচির মূল লক্ষ্য বয়স্কদের টিকার আওতায় আনা। কারণ তাদের মধ্যে টিকা নেওয়ার প্রবণতা কম এবং করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুও বেশি। তবে বয়স্কদের পাশাপাশি অন্যরাও টিকা পাবেন। তিনি বলেন, এখনই ১৮-ঊর্ধ্ব সবাইকে টিকা দেওয়া সম্ভব হবে না। বর্তমানে ১৮ বছর বা তার বেশি বয়সি শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া হচ্ছে। এছাড়া ফন্টলাইনার হিসাবে যারা কর্মরত তাদের পরিবারের সদস্যরা টিকা পাবেন। এ ক্ষেত্রে ন্যূনতম বয়স ২৫ বছর। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, চায়না, ভারত, কোভ্যাক্স এবং রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের টিকার ব্যাপারে চুক্তি হয়েছে। এ মাসেই আরও টিকা আসবে। বর্তমানে চায়না এবং কোভ্যাক্স থেকে আমরা নিয়মিত পাচ্ছি। এ মাসে সেরাম থেকে টিকা পাঠানোর ইঙ্গিত রয়েছে। আশা করছি, টিকা প্রাপ্তিতে আর সমস্যা হবে না। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের মতো কোনো বিপত্তি ঘটলে সেক্ষেত্রে কিছুই করার থাকে না। জাহিদ মালেক বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে, কোনো দেশে টিকাদানের মাধ্যমে হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করতে হলে অবশ্যই ৮০ শতাংশ মানুষকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। দেশে ৮০ ভাগ মানুষকে টিকার আওতায় আনার পরিকল্পনা আমাদের রয়েছে। জানা গেছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে ৪ দিন এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ৬ দিন ধরে এ কর্মসূচি চলার কথা ছিল। এজন্য ৫০ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নেওয়া হয়েছে। ইপিআই কর্মীরা টিকা দেবেন সে প্রস্তুতিও প্রায় চূড়ান্ত, তাদের প্রশিক্ষণও শেষ দিকে। এমন সময় কর্মসূচিটি সীমিত করে শুধু শনিবার একদিন চালানোর সিদ্ধান্ত হয়। এতে ইউনিয়ন পর্যায়ে ১৩ হাজার ৮০০ ওয়ার্ডে ৪ দিনে ৫৫ হাজার ২০০ সেশনে ২০০ ডোজ করে ১ কোটি ১০ লাখ ৪০ হাজার টিকা দেওয়ার কথা ছিল তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না। পৌরসভাগুলোর ১০৫৪টি ওয়ার্ডে ৪ দিনে ৪২১৬টি সেশনে ২০০ ডোজ করে ৮ লাখ ৪৩ হাজার ২০০ ডোজ এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় ৪৩৩টি ওয়ার্ডে ৬ দিনে ৭৭৯৪ সেশনে ২০০ ডোজ করে ১৫ লাখ ৫৮ হাজার ৮০০ ডোজ দেওয়ার পরিকল্পনাও একইভাবে পিছিয়ে গেল। হঠাৎ সিদ্ধান্ত বদল করায় এখন অর্ধেকেরও কম টিকা দেওয়া হবে। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, দেশে ১১ কোটি ৭৮ লাখ ৫৬ হাজার মানুষকে টিকার আওতায় আনার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট জনগোষ্ঠীর ৮০ শতাংশ। এ পর্যন্ত নিবন্ধনের আওতায় এসেছেন ১৪ শতাংশ বা এক কোটি ৬৫ লাখ ২৩ হাজার ২৭০ জন। প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৯৩ লাখ ৯৮ হাজার ৭৭৩ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪৩ লাখ ৬৫ হাজার ৩৮৯ জন। অর্থাৎ প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৮ শতাংশ এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন মাত্র ৪ শতাংশ। টিকা গ্রহীতার হার প্রথম ডোজপ্রতি ১০০ জনে ৫ দশমিক ৪৪ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ ২ দশমিক ৫২ জন। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনেকার ফর্মুলায় ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের তৈরি কোভিশিল্ড, চীনের তৈরি সিনোফার্মা, ফাইজার এবং মডার্নার টিকা এখন পর্যন্ত দেওয়া হচ্ছে। মঙ্গলবার স্বাস্থ্য অধিদফতর সারা দেশে ৩ লাখ ২২ হাজার ৪৪৩ ডোজ টিকা দিয়েছে। এদিন অ্যাস্ট্রাজেনেকার দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১১ হাজার ৮৯৮ জন। এখন পর্যন্ত অ্যাস্ট্রাজেনেকার প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৫৮ লাখ ২০ হাজার ৫৩ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪৩ লাখ ১৮ হাজার ৭৮৫ জন। ফাইজারের প্রথম ডোজ দেওয়া হয়েছে প্রায় ৫৩ হাজার। দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন এক হাজার ২৬ জন। সব মিলে ফাইজার দেওয়া হয়েছে ৫৪ হাজার ৪৪৯ ডোজ। মডার্নার টিকা এখন পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে ৯ লাখ ২৬ হাজার ২৬৩ ডোজ, শুধু মঙ্গলবার দেওয়া হয়েছে ৮২ হাজার ৫৪ ডোজ।
×