ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

বিপ্লব সাহা মুন্না

করোনার বলি মানবিকতা!

প্রকাশিত: ২০:৪০, ৫ আগস্ট ২০২১

করোনার বলি মানবিকতা!

প্রতিদিন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি মৃতের সংখ্যাও বেড়েই চলছে। করোনাকালে মানুষ হারিয়ে ফেলছে মানবিকতা, সহমর্মিতা, জীবনের সৌন্দর্য। কারও মধ্যে সামান্যতম উপসর্গ দেখা দিলেই ধারের কাছে আসছে না স্বজনেরা। যাদের সঙ্গে জীবনের অনেকটা সময় ব্যয় করেছিলেন তারাও স্বার্থপরের মতো আচরণ করছেন। মানুষের মাঝে এই মনুষ্যত্ব হারানোর মূল কারণ করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ও মৃত্যু আতঙ্ক। তাই করোনায় ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে আমরা মনুষ্যত্বই হারাতে বসেছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় কী, তা সুস্পষ্টভাবে বলতে গেলে মনুষ্যত্বকেই জাগাতে হবে আগে। আমরা মানুষ, সৃষ্টির সেরা জীব এই কথাটাই আমাদের সব সময় মনে রাখতে হবে। মানুষ হিসেবে মানুষের দুঃখে, কষ্টে ,সঙ্কটে মানুষের পাশে দাঁড়ানো, সেবা করা মানুষের পরম ধর্ম। প্রতিটি ধর্মেই মানব সেবার কথা বলা আছে। মানব সেবার মাধ্যমেই সৃষ্টিকর্তার আনুক‚ল্য পাওয়া যায়। স্রষ্টার সৃষ্টিকে আবহেলা করে স্রষ্টাকে তুষ্ট করা যায় না। তবে মানবসেবা কেবল তাঁরাই করতে পারে যাঁরা আত্মস¦ার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে হাসি মুখে মহাবিপদ এমনকি মৃত্যুকে বরণ করে নিতে পারে। যাঁর মধ্যে সামান্যতম পরিমাণ সঙ্কীর্ণতা আছে, অহংকার বা ঘৃণা আছে সে কখনও মানব সেবা করতে পারে না। এ কাজ যাঁরা করেন তাঁরা সত্যিই মহান। তাদের তুলনা হয় না। পৃথিবীতে কেউই বিপদ মুক্ত নন। আজ আমার পাড়া প্রতিবেশী বা স্বজনদের কেউ করোনায় আক্রান্ত হয়েছে, কাল আমি বা আমার পরিবারের কেউ যে আক্রান্ত হবে না এমন গ্যারান্টি আছে? ভাইরাস প্রতিরোধে শুধু শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখার কথা বলা হয়েছে, মানসিক দূরত্বের কথা বলা হয়নি। সামাজিক দূরত্ব মানে সম্পর্কের দূরত্ব নয়, বন্ধনের দূরত্ব নয়। দায়িত্ব বা ভালবাসার দায় থেকে সরে দাঁড়ানো নয়। মোবাইল ফোনে কিংবা সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের পাড়া প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন, সহকর্মী, বন্ধুবান্ধবদের খোঁজ খবর নিই। কোন কিছুর প্রয়োজন আছে কি না জানতে চাই। যতটুকু সম্ভব বিপদে অন্যের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়াই, সাহস যোগাই। আমাদের সবার মনে রাখা প্রয়োজন, যতই খারাপ সময়ের মধ্যে আমরা যাই না কেন, জীবনে কোন কিছুই চিরস্থায়ী না, এই খারাপ সময়ও একদিন না এক দিন শেষ হবে। ইতিহাস সাক্ষী অতীতে অনেকবার মহামারী এসেছে, আবার চলেও গিয়েছে। কোন মহামারী চিরস্থায়ী হয়নি। আশা করছি এবারকার মহামারী করোনাভাইরাসও স্থায়ী হবে না। বোয়ালমারী, ফরিদপুর থেকে
×