ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ইনজামুল সাফিন

ওদের উপেক্ষা নয়

প্রকাশিত: ২০:৩৮, ৫ আগস্ট ২০২১

ওদের উপেক্ষা নয়

আমাদের সমাজে একশ্রেণীর লোকের জন্ম যেন আজন্ম পাপ, শিশু বয়সেই যদের অধিকাংশকেই পারিবার থেকে বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়, তারা মূলত রাস্তা-ঘাটে, হাটে-বাজারে জনসাধারনের থেকে সাহায্য তুলে এবং বিবাহ-শিশুর জন্ম-পূজা ইত্যাদি অনুষ্ঠানে চাঁদা নির্বাহ করেন। হিজড়াদের অপর একটি অংশ ‘কোতি’ নামে পরিচিত। তারা হিজড়াদের ঐতিহ্যগত বৃত্তিতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন না। তারা শত প্রতিক‚লতা ও অসহযোগিতাপূর্ণ পরিবেশের মধ্যেও আত্মনির্ভরশীল হতে জীবন সংগ্রাম করে চলছেন। এদের বেশিরভাগই পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়া সত্তে¡ও বিভিন্ন এনজিওতে কাজ, বিভিন্ন অনুষ্ঠানে নাচ-গান, যৌন ব্যবসা ইত্যাদি পেশার সঙ্গে জড়িত। সমাজসেবা অধিদফতরের জরিপ মতে, দেশে হিজড়ার সংখ্যা প্রায় দশ হাজার। তবে হিজড়া নেতৃবৃন্দের মতে, বাংলাদেশে মোট হিজড়া দেড় লাখেরও বেশি। এই বিপুল সংখ্যক লোককে আবহেলা ও মূল স্রোতের বাইরে রাখা সত্যিই দুঃখজনক। ২০২০ সালের নবেম্বরে মন্ত্রিপরিষদ বৈঠকে হিজড়া জনগোষ্ঠীর সম্পত্তির অধিকার নিশ্চিত করতে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। হিজড়া বা তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ যেন বাবা-মায়ের সম্পত্তির ভাগ পান, সেজন্য আইন মন্ত্রণালয় মুসলিম শরিয়া আইন এবং সংবিধানের আলোকের একটা উপায় বের করার চেষ্টা চালিয়েছে যদিও এখন পর্যন্ত এর কাক্সিক্ষত অগ্রগতি নেই। করোনা পরিস্থিতিতে বিবাহ-শিশুর জন্ম-ধর্মীয় ও সামাজিক অনুষ্ঠানের চাঁদা তোলা সম্পূর্ণ বন্ধ। হিজড়াদের যে অংশটি যৌনকর্মে জড়িত করোনা পরিস্থিতিতে তাদেরও উপার্জন নেই। লকডাউনের কারণে রাস্তাঘাটে ভিক্ষারও সুযোগ নেই। করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি পর্যায় থেকে প্রদত্ত ত্রাণ সহায়তা হিজড়া খুব একটা পান না। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের যে সামান্য সহায়তা হিজড়াদের অনেকেই তা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। হিজড়াদের কেউ কেউ পরিবারে ঠাঁই না পাওয়া সত্তে¡ও পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি হিসেবে পরিবারের ব্যয় নির্বাহ করেন। করোনাকালে তাদের পরিবার কিভাবে জীবনযাপন করছে, এর খোঁজ খবর নেয়া জরুরী। হিজড়া শিশুদের অনেকেই স্কুলে পড়ালেখা করে। তারা করোনা পরিস্থিতির কারণে তারা যেন স্কুল থেকে ঝরে না পড়ে সেদিকেও নজর দিতে হবে। হিজড়াদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে কেউ যেন তাদের অপকর্মে লিপ্ত করতে না পারে সেজন্য তাদের পাশে থাকা উচিত। সংবিধান অনুযায়ী, জনগণই রাষ্ট্রের মালিক। তৃতীয় লিঙ্গের স্বীকৃতি দেয়া হলেও হিজড়াদের ক্ষমতায়ন ও সমাজের মূল স্রোতে নিয়ে যেতে সরকারের আরও গুরুত্ব প্রত্যাশা করছি। করোনা মহামারী পরিস্থিতিতে হিজড়া জনগোষ্ঠীর পাশে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। ওদের উপেক্ষা নয়। বাংলাবাজার, বরিশাল থেকে
×