ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শুধু জুলাই মাসেই করোনায় মৃত্যু ৬১৮২ জনের

প্রকাশিত: ২১:৫২, ৩ আগস্ট ২০২১

শুধু জুলাই মাসেই করোনায় মৃত্যু ৬১৮২ জনের

অপূর্ব কুমার ॥ করোনার ইতিহাসে জুলাই মাসে সবচেয়ে কঠিন সময় পার করেছে দেশ। ডেল্টা ধরনের আঘাতে বিধ্বস্ত হয়েছে দেশ। করোনা শনাক্ত হওয়ার পর থেকে মোট মৃত্যুর প্রায় ৩০ শতাংশই ঘটেছে মাসটিতে। একই সময়ে মোট রোগীর ২৬ দশমিক ৯০ শতাংশই শনাক্ত হয়েছেন। এক মাসে গত ছয় মাসের বেশি করোনায় মৃত্যু ও নতুন সংক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। চলতি মাসেও জ্যামিতিক হারে এগিয়ে চলছে সংক্রমণ। ২০২০ সালের ৮ মার্চের পর থেকে ১৬ মাসের মধ্যে কেবল এই জুলাই মাসেই মৃত্যু ও শনাক্ত হয়েছে সবচাইতে বেশি। ২০২১ সালের শুধু জুলাই মাসেই মৃত্যুর সংখ্যা এ বছরের জানুয়ারি থেকে জুন এই ছয় মাসের প্রায় সমান। স্বাস্থ্য অধিদফতরের করোনা বিষয়ক দৈনিক বুলেটিনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এতে দেখা গেছে এই বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত হয়ে ৬ হাজার ৯৪৪ জন মারা গেছেন। আর শুধু জুলাই মাসেই মারা গেছেন ৬ হাজার ১৮২ জন। শনাক্তের ক্ষেত্রেও একই রকম চিত্র ছিল জুলাই মাসে। গত ছয় মাসে মোট ৩ লাখ ৯৯ হাজার ৭৭৮ জন শনাক্ত হয়েছেন। কিন্তু শুধু জুলাই মাসেই শনাক্ত হয়েছেন ৩ লাখ ৩৬ হাজার ২২৬ নতুন রোগী। স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, স্বাস্থ্যবিধি না মানা এবং গাদাগাদি করে চলাচল করায় করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। গার্মেন্টস খুলে দেয়ায় করোনা সংক্রমণ আরও বাড়বে। করোনা সংক্রমণ না কমাতে পারলে হাসপাতালে রোগীকে শয্যা দেয়া যাবে না। কারণ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা দেয়ারও একটি সীমাবদ্ধতা রয়েছে। চাইলে রাতারাতি এটির পরিবর্তন আনা যায় না। তাই করোনার সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে টিকা নেয়া এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা জরুরী। স্বাস্থ্য অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, গত জুলাই মাসে সারাদেশে করোনায় মোট ৬ হাজার ১৮২ জন মারা গেছেন। ৩১ জুলাই পর্যন্ত সারাদেশে মোট ২০ হাজার ৬৮৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। যার মধ্যে এক মাসে ২৯ দশমিক ৮৮ শতাংশ রোগীর মৃত্যু ঘটেছে। এর মধ্যে গত ২৭ জুলাই সর্বোচ্চ ২৫৮ জনের মৃত্যু ঘটেছে। আর কোনদিনই একশ’র নিচে রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেনি। এর মধ্যে গত ২ জুলাই এক মাসে সর্বনিম্ন ১৩২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া এক মাসে সংক্রমণ ঘটেছে ৩ লাখ ৩৬ হাজার ১৮৬ জনের। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মানদন্ড অনুযায়ী, কোন দেশে টানা দুই সপ্তাহের বেশি সময় পরীক্ষার বিপরীতে রোগী শনাক্তের হার ৫ শতাংশের নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে বলে ধরা যায়। কিন্তু জুলাই মাসে নমুনা সংগ্রহের বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার ৩২ শতাংশের ওপরেও অবস্থান করেছে। গত মাসে নমুনার বিপরীতে করোনা শনাক্তের হার বিবেচনা করলে দেখা গেছে, জুলাইয়ের আগে একদিনে করোনা শনাক্তের হার একদিনে ছিল সর্বোচ্চ ২৩ শতাংশ। গত জুলাইয়ে প্রতিদিনই নমুনার বিপরীতে করোনা শনাক্ত হয়েছে অনেক বেশি। ১ জুলাই শনাক্তের হার ছিল ২৫.৯ শতাংশ, ২ জুলাই ২৮ দশমিক ২৭ শতাংশ, ৩ জুলাই ২৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ, ৪ জুলাই ২৮ দশমিক ৯৯, ৫ জুলাই ২৯ দশমিক ৩০, ৬ জুলাই ৩১ দশমিক ৪৬, ৭ জুলাই ৩১ দশমিক ৩২, ৮ জুলাই ৩১ দশমিক ৬২, ৯ জুলাই ৩০.৯৫, ১০ জুলাই ৩১.৪৬, ১১ জুলাই ২৯.৬৭ শতাংশ, ১২ জুলাই ৩১.২৪ শতাংশ, ১৩ জুলাই ২৯.২১, ১৪ জুলাই ২৯.১৪, ১৫ জুলাই ২৭.২৩, ১৬ জুলাই ২৮.৯৬, ১৭ জুলাই ২৯.০৬ শতাংশ, ১৮ জুলাই ২৯.০৯. ১৯ জুলাই ২৯.৫৯, ২০ জুলাই ২৯.০১, ২১ জুলাই ৩০.৪৮, ২২ জুলাই ৩২.১৯, ২৩ জুলাই ৩১.০৫, ২৪ জুলাই ৩২.৫৫, ২৫ জুলাই ৩০.০৪, ২৬ জুলাই ২৯.৮২, ২৭ জুলাই ২৮.৪৪, ২৮ জুলাই ৩০.১২ শতাংশ, ২৯ জুলাই ২৯.১১, ৩০ জুলাই ৩০.৭৭ শতাংশ ও ৩১ জুলাইয়ে নমুনার বিপরীতে শনাক্তের হার দাঁড়িয়েছে ৩০.২৪ শতাংশ। অর্থাৎ মাসটিতে কোনদিনই ২৫ শতাংশের নিচে নামেনি। এককথায় বলা যায়, করোনা নিয়ন্ত্রণে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার হিসেব অনুযায়ী নমুনার বিপরীতে শনাক্তের হারের প্রায় গুণের বেশি। পরিস্থিতি কতটা ভয়াবহ এই শনাক্তের হার বিবেচনা করলেই বোঝা যায়। ২০২০ সালের জুলাই মাসেই সংক্রমণ ও মৃত্যু সবচাইতে বেশি ছিল। কিন্তু এবছরের জুলাই মাসে গত জুলাইয়ের তুলনায় মৃত্যু চার গুণ আর শনাক্ত তিন গুণ বেশি। ঈদের পর থেকে দৈনিক মৃত্যুর সংখ্যা প্রায় প্রতিদিনই ২০০’র ঘরেই থাকছে।
×