ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

মায়ের নিখোঁজ সংবাদ শুনে ১৪ ঘন্টা সাইকেল চালিয়ে বাড়িতে পৌছাঁল যুবক

প্রকাশিত: ২০:৪৭, ২ আগস্ট ২০২১

মায়ের নিখোঁজ সংবাদ শুনে ১৪ ঘন্টা সাইকেল চালিয়ে বাড়িতে পৌছাঁল যুবক

নিজস্ব সংবাদদাতা, মৌলভীবাজার ॥ মায়ের নিখোঁজ সংবাদ শুনে লকডাইনের সময় কোন যানবাহন না পেয়ে ২৩০ কিঃমিঃ পথ বাইসাইকেল চালিয়ে ঢাকা থেকে নিজ বাড়িতে আসেন সোহেল আহমেদ (২৮) নামে এক যুবক। বিরামহীনভাবে প্রায় ১৪ ঘন্টা সাইকেল চালিয়ে মাতৃভক্তি এক অনন্ত দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার লঙ্গুরপাড় গ্রামের মানিক মিয়ার ছেলে সোহেল আহমেদ। জানা যায়, কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের লঙ্গুরপাড় গ্রামের মানিক মিয়ার স্ত্রী ও মাধবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. আসিদ আলির ছোট বোন হাজেরা বিবি অরপে কুঠিল (৪৮) গত বুধবার রাতে একই গ্রামে অবস্থিত বড় ভাই আসিদ আলির বাড়ি থেকে রাতের খাবার খেয়ে হাজেরা বিবি প্রতিবেশি রকিব মিয়ার বাড়িতে রাত্রি যাপন করেন। বৃহস্পতিবার ভোরে ঘুম থেকে উঠে রকিব মিয়ার স্ত্রীকে চা বানানোর কথা বলে ঘর থেকে বেড়িয়ে যান। রকিব মিয়ার স্ত্রী চা তৈরী করলেও হাজেরা বিবি আর আসেননি। এদিকে সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়িয়ে গেলে ও হাজেরা বিবি বাড়িতে না ফেরায় হাজেরার ছেলের ঘরের নাতিন শাম্মী (১০) বাড়ির পাশেই দাদা আসিদ আলির বাড়িতে গিয়ে দাদীর খোঁজ করে। আসিদ আলি বলেন, নাতিনের মুখে দাদী বাড়ি ফিরেননি শুনে নাতিনকে সাথে নিয়ে বোনের বাড়িতে গিয়ে দেখি দরজা তালাবদ্ধ, বাহিরের বাতি জ্বলছে। অন্য ঘরে গাভীগুলোও ডাকাডাকি করছে। তখন তিনি আশপাশ এলাকার বাড়ি-ঘরগুলোতে খোঁজাখুঁজির এক পর্যায়ে প্রতিবেশী রকিব মিয়ার স্ত্রী তাকে জানান, রাতে হাজেরা বিবি তাদের বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন, ভোরে চা বানিয়ে রাখতে বলে ঘর থেকে বের হয়ে আর ফিরে আসেনি। পরে সম্ভাব্য সব আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে খোঁজ নিয়েও কোন সন্ধান না পেয়ে গত শুক্রবার বিকালে কমলগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি নং ১৩৬৮) করেন আসিদ আলি। শনিবার মুঠোফোনে ঘটনাটি ঢাকায় অবস্থানকারী আসিদ আলী তার ভাগিনা (হাজেরার ছেলে) সোহেল আহমেদকে জানান। সোহেল মায়ের নিখোঁজ হওয়ার খবর শুনে লকডাউনের কারণে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় নিজেই বাইসাইকেল চালিয়ে ঢাকা থেকে রওয়ানা দিয়ে ১৪ ঘন্টা পর কমলগঞ্জের লংগুরপাড়স্থ গ্রামের বাড়িতে আসে। সোহেল বাড়ি পৌঁছেই লোকজন নিয়ে রোববার সারাদিন বাড়ির আশপাশের প্রায় ৫ কিঃমিঃ এলাকার ঝোঁপঝাড়, খাল, ডোবা, পুকুরসহ সব আতœীয় স্বজনের বাড়ি সমুহ তন্নতন্ন করে খোঁজ করেও মা হাজেরা বিবির কোন সন্ধান পাননি। সোহেলের খালাতো ভাই ভানুগাছ চৌমুহনীস্থ সিএনজি অটোচালক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম মিয়া জানান, প্রায় ২০/২৫ বছর আগেও একইভাবে তার খালু সোহেলের পিতা মানিক মিয়াও নিখোঁজ হয়েছিলেন। যার সন্ধান এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি। কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। নিখোঁজ হওয়া গৃহবধুকে খোঁজে বের করার চেষ্টা চলমান রয়েছে।
×