ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

বাকশাল জেলা সম্পাদক মনোনয়ন

প্রকাশিত: ২০:১৩, ৩ আগস্ট ২০২১

বাকশাল জেলা সম্পাদক মনোনয়ন

বঙ্গবন্ধু তাঁর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার অংশ হিসেবে সংবিধানের ৪র্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ১৯৭৫ সালের ৭ জুন সর্বদলীয় জাতীয় রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর ১১৭-ক অনুচ্ছেদে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে একটি নতুন জাতীয় দল গঠন করার দায়িত্ব অর্পণ করা হয়। সাংবিধানিক দায়িত্ব পেয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একটি জাতীয় দল গঠন করে এর নাম দেন ‘বাংলাদেশ কৃষক-শ্রমিক আওয়ামী লীগ’ বা ‘বাকশাল’। বাকশালের বিভিন্ন দিক, কার্যক্ষেত্র এবং সম্ভাবনা সবিস্তারে বর্ণনা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তাঁর এই উদ্যোগকে দ্বিতীয় বিপ্লব হিসেবে আখ্যায়িত করেন। প্রথম বিপ্লব ছিল মুক্তিযুদ্ধ। যার বিনিময়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা। সেটা ছিল বাঙালীর রাজনৈতিক মুক্তি। আর বাকশাল কর্মসূচী দিয়ে বঙ্গবন্ধু বাঙালীর অর্থনৈতিক মুক্তির সূচনা করতে চেয়েছিলেন। এ অর্থনৈতিক শৃঙ্খলটা বাধা ছিল বিভিন্ন পরাশক্তি আর দাতা দেশের কাছে। স্বাধীনতার পর তিনটি বছর বঙ্গবন্ধু সবার দরজায় গেছেন। হাত পেতেছেন। কিন্তু সবার একটাই শর্ত। আমার দালালি কর। আমেরিকা, রাশিয়া, সৌদি আরব, চীন সবার একই শর্ত। বিশ্বব্যাংকের ঋণ, দাতা দেশগুলোর ঋণের শর্তও বেশ জটিল। একদিকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ অপরদিকে প্রকৃতির বৈরী আচরণ। হয় খরা, নয় বন্যা। দুটোরই অবশ্যম্ভাবী প্রতিক্রিয়া দুর্ভিক্ষ। অন্যদিকে বিশ্বজুড়ে ভয়াবহ আর্থিক মন্দায় টালমাটাল পুরো বিশ্ব। তার ওপর দেশে চলছিল বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের নামে অরাজকতা। জনগণের মুক্তি, সর্বহারার মুক্তির জন্য চীনপন্থী কমিউনিস্টরা চালাচ্ছিল তাদের ধারার বৈপ্লবিক কর্মসূচী। কর্মসূচীর মধ্যে প্রধান ছিল পাটের গুদামে আগুন দেয়া, ব্যাংক লুট করা, প্রান্তিক অঞ্চলের পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করে অস্ত্র লুট করা। স্বাধীনতার পর তিন বছরে তখনকার অর্থমানে দুইশ’ কোটি টাকার পাট পোড়ানো হয়েছে। এই পাট ছিল বাংলাদেশের একমাত্র অর্থকরী পণ্য, যা রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করত বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধু ঠিক করলেন এভাবে চলতে পারে না। ন্যামের সদস্য কিউবার কাছে পাট বিক্রি করেছেন। সেটা যুক্তরাষ্ট্র বেয়াদবি হিসেবে নিয়েছে। কারণ, তাদের চোখে কিউবা কমিউনিস্ট দেশ। অতএব দুই জাহাজ বোঝাই চাল ও খাদ্যশস্য তারা ফিরিয়ে নিয়ে সাগরে ঢেলে দিল। বঙ্গবন্ধু বুঝলেন স্বনির্ভর হওয়ার বিকল্প নেই। দেশকে স্বনির্ভর ও আত্মমর্যাদশীল জাতি হিসেবে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে বাকশাল নামে দ্বিতীয় বিপ্লবের ডাক দিলেন। দ্বিতীয় বিপ্লব হলো সেই বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্র, যার মূল উপাদান গণতন্ত্রের মোড়কে অর্থনৈতিক সমাজতন্ত্র। অর্থাৎ সমবায় পদ্ধতিতে ফসল উৎপাদন হবে। কৃষকরা মিলিতভাবে জমি চাষ করে ফসল ফলাবেন। তাদের ন্যায্য দাম দিয়ে সেই ফসল দেশজুড়ে বিপণন করা হবে। বাংলাদেশ বিশ্বদরবারে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে। দেশ স্বনির্ভর হবে। ষড়যন্ত্রকারীরা উন্মাদ হয়ে গেল। তারা নীরবে বঙ্গবন্ধুকে সরিয়ে দেয়ার যাবতীয় নীলনক্সা চূড়ান্ত করে সুযোগের অপেক্ষায় রইল। ১৯৭৫ সাল। ৩ আগস্ট। দিনটি ছিল রবিবার। বাংলাদেশের ভাইস প্রেসিডেন্ট সৈয়দ নজরুল ইসলাম ময়মনসিংহ, জামালপুরে ১৩২ কেভি বিদ্যুত সঞ্চালন লাইন উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বিদ্যুতমন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত, জেলা গবর্নর রফিক উদ্দিন ভুঁইয়া, যুগোস্লাভিয়ার রাষ্ট্রদূত উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে উপ-রাষ্ট্রপতি বলেন, পরবর্তী পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনায় দেশে বিদ্যুত উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫১ মেগাওয়াট। সঞ্চালন লাইনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৬৩ মাইল। এ ছাড়াও ১৮৮৮ মাইল ৩৩ কেভি লাইন এবং ১০০০০ মাইল ১১ কেভি লাইন টানা হবে। তিনি বলেন খুলনায় ৫০ মেগাওয়াট, সিদ্ধিরগঞ্জে ৫০ মেগাওয়াট এবং আশুগঞ্জে ১২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্র বছরের শেষ নাগাদ চালু হবে। তিনি বলেন এ সময়ে ১০০০ গ্রাম বিদ্যুতায়িত করা হবে। সৈয়দ নজরুল ইসলাম পিজি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন মন্ত্রী ফণীভূষণ মজুমদার, রেয়াজ উদ্দিন এবং বাকশাল নেতা হাজী দানেশকে দেখতে যান। বঙ্গবন্ধুর ২য় বিপ্লবের কর্মসূচী বাস্তবায়নের জন্য বাকশাল জেলা সম্পাদক এবং যুগ্ম সম্পাদকের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। জাতীয় যুবলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভায় দলের সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ বলেন শীঘ্রই জাতীয় যুবলীগের কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। মাদারীপুর জেলায় বাকশাল গবর্নর নিযুক্ত হওয়ায় ঢাকাস্থ পূর্ব মাদারীপুরবাসী আবদুর রেজা খানকে এবং বাকশাল সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাককে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটে সংবর্ধনা দিয়েছে। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন আজিজুর রহমান মল্লিক। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী কোরবান আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাকশাল সম্পাদক আব্দুর রাজ্জাক। আরও বক্তব্য রাখেন- বিক্রমপুর জেলার গবর্নর শামসুল হক, আমিনুল ইসলাম দানেশ, অধ্যক্ষ তমিজ উদ্দিন, আনোয়ার হোসেন মিন্টু। বাংলাদেশ পরিষদ মিলনায়তনে জালালাবাদ এ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় সিলেটের ৪ জেলার ৪ গবর্নর এবং সিলেট নিবাসী ৪ গবর্নরসহ ৮ গবর্নরের সংবর্ধনা দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুস সামাদ আজাদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী দেওয়ান ফরিদ গাজী। এম এ হক সভায় সভাপতিত্ব করেন। সভায় বক্তব্য রাখেন এ্যাসোসিয়েশন সভাপতি এম এ হক, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা আল্লামা। রমনা রেস্তরাঁয় ঢাকার নীলফামারী সমিতি নীলফামারীর গবর্নর আব্দুর রউফকে সংবর্ধনা দিয়েছে। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন শ্রমমন্ত্রী এবং জাতীয় শ্রমিক লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ইউসুফ আলী। উত্তর কোরিয়ান দূত ইয়ং হিউন সপ সাভার স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। জাতীয় ছাত্রলীগ সভাপতি শেখ শহিদুল ইসলাম বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। লেখক : শিক্ষাবিদ ও গবেষক [email protected]
×