ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

পাহাড়ে মিশ্র ফসলে আইয়ূব আলী লাভবান

প্রকাশিত: ১৭:৪১, ২ আগস্ট ২০২১

পাহাড়ে মিশ্র ফসলে আইয়ূব আলী লাভবান

নিজস্ব সংবাদদাতা, হবিগঞ্জ ॥ মোঃ আইয়ূব আলী, পেশায় কৃষক। তিনি হবিগঞ্জ জেলার বাহুবল উপজেলার খোজারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা। কয়েক বছর হলো উপজেলার কালিগজিয়া পাহাড়ে মিশ্র ফসল চাষ করে সফল। চলতি মৌসুমে এ পাহাড়ের পতিত প্রায় ২০ একর জমিতে ফল ও সবজি চাষ করেন। তার ফল বাগানে রয়েছে প্রায় ৩ হাজার লেবু গাছ, ১৫ হাজার আনারস ও ২০০টি কাঁঠাল গাছ ও ১ হাজার কলা গাছ। সবজির মধ্যে প্রায় ৪৫০টি পেঁপে গাছ, ১২০০ নাগা মরিচের গাছ, দেড় শতাধিক ঢেঁড়স, বেগুন, কুমড়া, বাঙ্গি গাছ রয়েছে। এরমধ্যে লেবু গাছের ফাঁকে ফাঁকে পেঁপে, কুমড়া, কলা, নাগা মরিচ, বেগুন, ঢেঁড়স চাষ করছেন। আর বিলাতি জাতের আনারস বাগানের মধ্যেও লেবু গাছ রোপণ করা হয়েছে। এ জাতের আনারস খুবই রসালো এবং খেতে সুস্বাদু। লেবুসহ অন্যান্য গাছ থেকে প্রায় বারোমাস ফসল উৎপাদন হলেও জ্যৈষ্ঠ মাসে পাকে আনারস। এসব ফসল চাষে সার ও অধিক পরিমাণে গোবর ব্যবহার করছেন জানিয়ে কৃষক আইয়ূব আলী বলেন, পতিতই পড়ে ছিল এই পাহাড়ি জমিগুলো। আবাদ করে প্রথমে রোপণ করি লেবু গাছ। রোপণের বছর যেতেই গাছে লেবু আসে। শুধু লেবুর আয়ে পোষাচ্ছিল না। তাই লেবুর সঙ্গে পেঁপে, কুমড়া, কলা, নাগা মরিচ, বাঙ্গি, ঢেঁড়স, বেগুন চাষ চাষ শুরু করি। উন্নত জাতের চারা সংগ্রহ করে লেবু গাছের ফাঁকে ফাঁকে ওইসব চারাগুলো রোপণ করি। একসময় গাছে গাছে ধরা পড়ে ফসল। লেবুর সাথি ফসলের ভালো ফলন দেখে উৎসাহ বেড়ে যায়। পরে বাকি জমিতে ১৫ হাজার আনারসের চারা রোপণ করি। কৃষক আইয়ূব আলী শ্রমিক নিয়ে নিয়মিত শ্রম দিচ্ছেন। পুরো দিনই ফল ও সবজি গাছ পরিচর্যায় ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে তাকে। এসব চাষে তিনি কোনো বিষ প্রয়োগ করছেন না। কিছু পরিমাণে সার ও অধিক পরিমাণে গোবর ব্যবহার করছেন। তাতেই ভালো ফলন আসছে। তার চাষ দেখে অন্য চাষিরাও আনারস, লেবুসহ অন্যান্য সাথি ফসল চাষে মনযোগী হয়েছেন। পতিত পড়ে থাকা বিরান টিলা এখন ফসলে ভরপুর, যা দেখে চোখ জুড়িয়ে যায়। আইয়ূব আলী বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে পরামর্শ পাচ্ছি। পরিশ্রম করলেই ভালো ফল আশা করা যায়। তাই শ্রম দিয়ে যাচ্ছি। ফলও পাচ্ছি। এসব ফসল পাইকারি বাজারে বিক্রি করছি। কালিগজিয়া থেকে শহরে যেতে রাস্তায় বিরাট সমস্যা। রাস্তার সুবিধা থাকলে সহজে পরিবহনে করে গন্তব্যে নিয়ে যেতে পারতাম। এদিকে ভালো সড়ক পেলে এখানের বাসিন্দাদেরও চলাচলে কষ্ট কমে যেতো। পাইকারি ক্রেতা সিরাজ মিয়া বলেন, পাহাড়ি আনারস, লেবু, পেঁপে, কলাসহ অন্যান্য ফসল বিষমুক্ত চাষ হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে চাহিদা বাড়ছে। এসব পাহাড়ি এলাকায় বারোমাস লেবুসহ বিভিন্ন ফসল চাষ হচ্ছে। ভালো দাম পাওয়ায় পাহাড়িদের ফসল চাষে দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা শামীমুল হক শামীম ও উপ-সহকারী কৃষি অফিসার প্রণব মজুমদার বলেন, আমরা কৃষকদের পরামর্শ দিচ্ছি। আমাদের পরামর্শ নিয়ে এখানের চাষাবাদে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। এ পাহাড়ে অন্য চাষিরাও লেবু, আনারস, পেঁপে, কলাসহ অন্যান্য ফসল চাষ করে লাভবান। বাহুবল উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আবদুল আউয়াল বলেন, পাহাড়ি এলাকায় এখন ব্যাপকভাবে লেবু আনারসসহ নানা ফসলের চাষ হচ্ছে। চাষাবাদকে এগিয়ে নিতে আমরা কৃষকদের নানাভাবে উৎসাহিত করছি। অনেক সময় প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এখানে আমাদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে আইয়ূব আলী আনারস ও লেবু গাছের ফাঁকে ফাঁকে সাথি ফসল চাষ করে লাভবান।
×