ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বাগেরহাটে ৪ দিনের অতিবর্ষণে সাড়ে ৫ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি

প্রকাশিত: ১৪:০৪, ২ আগস্ট ২০২১

বাগেরহাটে ৪ দিনের অতিবর্ষণে সাড়ে ৫ কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি

স্টাফ রিপোর্টার, বাগেরহাট ॥ বাগেরহাটে টানা চারদিনের অতি বৃষ্টিতে আমন বীজতলা, আউশ ধান ও ফসলি জমি, সবজি ক্ষেত ও পান-সহ কৃষি ক্ষেত্রে কমপক্ষে সাড়ে ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। সোমবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত জেলার শরণখোলা, রামপাল, মোংলা ও সদর উপজেলার অসংখ্য সবজি ক্ষেত, ফসলি জমি ও আমনের বীজতলা পানিতে ঢুবে রয়েছে। এ ক্ষতিতে কৃষকেরা হাপিত্যেশ করছেন। সোমবার সকালে বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ শফিকুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, টানা চার দিনের অতি বৃষ্টিতে জেলায় কমপক্ষে কমপক্ষে পাঁচ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ৮ হাজার টাকার ফসলের ক্ষতি হয়েছে। বেশকিছু আমনের বীজতলা, পানের বরজ, আউশধান, আমন ধান ও সবজি ক্ষেত এখনও তলিয়ে আছে। দ্রুত পানি না নামলে ক্ষতি আরও বেশী হতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন। বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২৭-৩০ তারিখ পর্যন্ত ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে জেলায় এক হাজার ৫৮৮ হেক্টর রোপা আমনের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। ৯৬০ হেক্টর জমির আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রীষ্মকালীন সবজির ক্ষতি হয়েছে ৩৭৯ হেক্টর জমির। সাড়ে ১০ হেক্টর জমির পান বরাজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ২০ হাজার ২০৩ জন কৃষকের পাঁচ কোটি ৬৫ লাখ তিন হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। শরণখোলা উপজেলার উত্তর তাফালবাড়ী এলাকার নাছির উদ্দিন পাহলান বলেন, ২০ বিঘা জমিতে আমন ধান লাগানোর জন্য ১০০ কেজি দরে কিনে পাত দিয়েছিলাম। আজ ৬ দিন ধরে এই বীজতলাগুলো পানির নিচে থাকায় প্রায় সব চারাগুলো পঁচে গেছে। শিকড়ও পচে গেছে। কবে নাগাদ এই পানি নামবে, তা বলতে পারিনা। শুধু যে আমনের বীজতলা নয়, গরু-ছাগলের খাদ্যও নষ্ট হয়ে গেছে।’ প্রায় একই কথা জানান, খলিল তরফদার, কায়েস হাওলাদার ও গনি মিয়াসহ এ উপজেলার অধিকাংশ কৃষক। কচুয়া উপজেলার গজালিয়া গ্রামের শসাচাষি মুঞ্জুর ফকির বলেন, কয়েকদিন হল শসা বিক্রি শুরু করেছি। এবার শসার ফলনও ভাল হয়েছিল। কিন্তু আজ ৬ দিন ধরে গাছের গোড়ায় পানি। এই পানিতে শিকর পচে গেছে। পানি কমার দুই একদিনের মধ্যে শসাগাছগুলো ঢলে পড়েছে। খুব ক্ষতি হয়ে গেল আমাদের। একই উপজেলার টেংরাখালী গ্রামের আমির হোসেন বলেন, ধানের বীজতলা পানির নিচে। পানিতে বেগুন ও পেঁপেসহ অনেক সবজির ক্ষতি হয়েছে আমাদের। বাগেরহাট সদর উপজেলার সিএনবি বাজার এলাকার রাজিব সমাদ্দার বলেন, আমাদের এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষ সবজি ক্ষেত করেন। কিন্তু বৃষ্টিতে এতবেশি পানি হয়েছে যে বেশিরভাগ মানুষের সবজি ক্ষেত পানির নিচে। লাউ, করলা, শসা, মিষ্টি কুমড়াসহ সবজি গাছের গোড়ায় পানি উঠলে শিকরগুলো পচে যায়। যার ফলে এই পানি টানার পরে বেশিরভাগ গাছ ঢলে পড়বে। শরণখোলা উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আছাদুজ্জামান মিলন বলেন, টানা বৃষ্টিতে এই উপজেলার শতভাগ মৎস্য ঘের ও পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। আমনের বীজতলা এখনও পানির নিচে রয়েছে। রবিশস্য ও গ্রীষ্মকালীন সবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সাধারণ মানুষের দাবি অনুযায়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া বেড়িবাঁধে পর্যাপ্ত স্লুইজ গেট না থাকায় সহজে পানি নামতে না পারায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে।
×