ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কঠোর বিধিনিষেধ উধাও

গার্মেন্টস খোলায় আগের রূপে ঢাকা

প্রকাশিত: ২২:২২, ২ আগস্ট ২০২১

গার্মেন্টস খোলায় আগের রূপে ঢাকা

আজাদ সুলায়মান ॥ গার্মেন্টস খোলার আকস্মিক ঘোষণায় সারাদেশ থেকেই আসছেন শ্রমিকরা। মাত্র বারোদিন বন্ধ থাকার পর রবিবার খুলেছে রাজধানী ও আশপাশের শত শত গার্মেন্টস ও অন্যান্য শিল্প কারখানা। শনিবার রাত থেকেই মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য গণপরিবহন চালু করা হলেও ভোগান্তি কমেনি শ্রমিকদের। এদিকে হঠাৎ শুধু গার্মেন্টস শ্রমিকদের জন্য পরিবহন চালু করা হলেও বিপুলসংখ্যক অন্যান্য যাত্রীও এ সুযোগ নেন। তাদের মাঝে ছিল না স্বাস্থ্যবিধির বালাই। যাত্রীদের মাস্ক ও দূরত্ব ছাড়াই গাদাগাদি করে আসতে দেখা গেছে বাস, ফেরি ও লঞ্চে। ফলে কঠোর বিধিনিষেধের দশম দিন রবিবার রাজধানীর পরিস্থিতি ছিল আগের মতোই কর্মব্্যস্ত। এদিন মনে হয়েছে হঠাৎ উধাও কঠোর বিধিনিষেধ। একদিকে গার্মেন্টস ও কলকারখানার শ্রমিক, কর্মচারীদের কোলাহল, অন্যদিকে সড়ক-মহাসড়কে যানজটের দরুন গোটা পরিস্থিতিই ছিল চিরচেনারূপে। বিকেলে লঞ্চ ও ফেরিঘাটে দেখা গেছে হাজার হাজার শ্রমিকের ভিড়। শ্রমিকদের অভিযোগ, গণপরিবহন চালু করা হলেও সেটা পর্যাপ্ত ছিল না। এদিন সকাল থেকেই ঢাকার অনেকস্থানেই বাস বন্ধ করে দেয়া হয়। মালিক-শ্রমিকরা মাত্র কয়েক ঘণ্টার জন্য বাস চালাতে ছিলেন অনাগ্রাহী। ফলে বাসের অভাবে অনেকেই ঢাকায় আসতে পারেননি। যদিও গার্মেন্টস সংগঠনগুলো জানিয়েছে রবিবার পর্যন্ত ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ শ্রমিক ঢাকায় এসে গেছেন। বাকি সব শ্রমিক আসতে আরও অন্তত দু’তিন দিন লাগবে। কারখানা শ্রমিকদের কর্মস্থলে ফেরার বিড়ম্বনা কমাতে কঠোর বিধিনিষেধের মাঝেও শনিবার রাত থেকে বাস চলার অনুমতি দেয়া হয়। এতে যাত্রীদের মধ্যে সাময়িক স্বস্তি ফিরলেও পথে পথে ছিল ভোগান্তি। একদিকে যাত্রীরা বলছেন- বাসের দেখা মিললেও স্বাস্থ্যবিধির অজুহাতে ওঠা যায়নি। আবার ওঠার সুযোগ পেলেও বাসের ভেতরে দেখা যায়নি স্বাস্থ্যবিধি। অন্যদিকে বাস চালকদের অভিযোগ, রাস্তায় চলাচলের অনুমতি পেলেও মেলেনি কাক্সিক্ষত পরিমাণ যাত্রী। রবিবার দুপুর পর্যন্ত লঞ্চ ও বাস চলাচলের অনুমতি দিয়েছিল সরকার। স্বল্প সময়ের জন্য বাস চলাচলের অনুমতি দেয়া হলেও অনেক বাস মালিকই সড়কে পরিবহন নামাননি।সকালে এয়ারপোর্ট, কুড়িল, রামপুরা ও মালিবাগ এলাকায় তুরাগ, রাইদা ও ভিক্টর ক্লাসিক পরিবহনের চালক ও হেলপারের সঙ্গে আলাপ করে এসব তথ্য জানা যায়। ভিক্টর ক্লাসিক বাসের চালক মিরাজ বলেন, সকাল থেকে রাস্তায় গাড়ি বের করে নির্দিষ্ট রুটে বাস চালাচ্ছি। স্বাস্থ্যবিধি মেনে বাসে যাত্রী তোলা হচ্ছে। তবে সিটি সার্ভিসে প্রত্যাশা অনুযায়ী যাত্রী মেলেনি। এ সময় রামপুরা বাজারের কাছে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা যাত্রী মালেক খান বলেন, রাস্তায় বাস দেখা গেলেও প্রায় আধাঘণ্টা দাঁড়িয়েও বাসে উঠতে পারিনি। বাসের সংখ্যা খুব কম। অধিকাংশ বাসে গেট বন্ধ করা ছিল। সরজমিনে দেখা গেছে- রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় রবিবার ভোর থেকে খুব সীমিত সংখ্যক বাস ও সিএনজি চালতি অটোরিলমহা চলাচল করেছিল। নির্ধারিত সময়ের পর আর কোন বাস চলাচল করতে দেখা যায়নি। বেশ কিছু সিএনজিও চলাচল করে। এছাড়া কাজের বাইরে বের হওয়া সাধারণ মানুষের বেশিরভাগ রিক্সায় ও বাকি অংশ হেঁটে কাক্সিক্ষত গন্তব্যে চলাচল করতে দেখা গেছে। স্বল্প সময়ের জন্য বাস চলাচলের অনুমতি দেয়ায় অনেক বাস মালিক স্বল্প সময়ের জন্য বাস সড়কে নামাননি। এ সম্পর্কে তুরাগ পরিবহনের চালক মাসুদ বলেন, কয়েক ঘণ্টার জন্য বাস চলাচলের অনুমতি পেয়ে আমাদের নির্দিষ্ট রুটে দুই ট্রিপ চলাচল করেছি। কিন্তু বেশিরভাগ বাস অল্প সময়ের জন্য সড়কে নামেনি। কারণ রাস্তায় নামলেই খরচ। কিন্তু অল্প সময় গাড়ি চালিয়ে লাভ হবে না- তাই অন্যরা গাড়ি নামায়নি। দুপুর ১২টার পর আমরা গাড়ি পার্কিং করে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছি। কিন্তু এভাবে আর কতদিন। আমাদেরও তো পরিবার আছে, গাড়ি চালালে আয়, না চললে বেকার থাকলে আমরা খাব কী। একই মতামত ব্যক্ত করেন নতুন বাজার এলাকার হাসান। তিনি বলেন, সকালে মালিবাগ থেকে নতুন বাজার আসার সময় বাস চলছিল, যদিও ভাড়া বেশি নিয়েছে। দুপুর থেকে ফের বাস বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আবার মালিবাগ ফিরছি। বাস বন্ধ হলেও তো যেতে হবে। এখন রিক্সায় যাওয়া ছাড়া কোন উপায় নেই। যেহেতু অনেক অফিসই খোলা, তাই সাধারণ মানুষের কথা বিবেচনা করে বাস চলাচল করতে দেয়া উচিত। নইলে বেতনের টাকা রিক্সা ভাড়া দিতেই চলে যাচ্ছে।
×