ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা ও বেসরকারী খাতে অন্তর্ভুক্তি

পর্যটনেই সম্ভব কোটি মানুষের কাক্সিক্ষত কর্মসংস্থান

প্রকাশিত: ২১:৫৫, ২ আগস্ট ২০২১

পর্যটনেই সম্ভব কোটি মানুষের কাক্সিক্ষত কর্মসংস্থান

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ শুধু পর্যটনের ওপর দাঁড়িয়ে আছে পৃথিবীর অনেক দেশের অর্থনীতি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যরে দিক থেকে কোন অংশেই কম নয় বাংলাদেশ। অনুকূল এত সুযোগ সুবিধা থাকার পরও পর্যটন এখনও শিল্পরূপ পায়নি। এমন অবহেলিত অবস্থায় থেকেও মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) চার শতাংশের বেশি অবদান রাখছে এই পর্যটন। প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে কর্মসংস্থান প্রায় ৪০ লাখ মানুষের। সঠিক পরিকল্পনায় এগোতে পারলে অল্প সময়ের মধ্যে এই খাতে অন্তত কোটি মানুষের কর্মসংস্থান সম্ভব, এমনই মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা। পর্যটন সম্ভাবনার বাংলাদেশের অবহেলিত পর্যটন। বিশ্বের দীর্ঘতম বালুকাময় সমুদ্র সৈকত, দীর্ঘতম মেরিন ড্রাইভ, সুউচ্চ পাহাড়, লেক, নদী, ঝর্ণাধারা- সবই আছে। কিন্তু নেই এসব তুলে ধরার যথাযথ প্রয়াস। দর্শনীয় অনেক গন্তব্য থাকলেও গমনের পথ দুর্গম। অনাবিষ্কৃত প্রচুর সৌন্দর্য্য এখনও রয়ে গেছে দৃষ্টির আড়ালে। তরুণ প্রজন্ম বেশ কষ্ট করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এসব স্থানে গিয়ে নিজেদের ছবিসহ তুলে ধরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। এতেই যত প্রচার ও প্রসার। সরকার কতটা করছে, সেই প্রশ্ন অনেকের। ভারত, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কাসহ প্রতিবেশী দেশগুলোতে রয়েছে পর্যটনমন্ত্রী। কিন্তু বাংলাদেশে বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। অর্থাৎ পর্যটন খাত এদেশে যুক্ত হয়ে আছে অন্য একটি মন্ত্রণালয়ে লেজুড় হিসেবে। এতেই বোঝা যায় অপার সম্ভাবনার এই খাতটি কতটা অবহেলিত। অর্থবছরের বাজেটে মন্ত্রণালয়ের জন্য যেটুকু বরাদ্দ হয় তার বেশিরভাগই ব্যয় হয়ে যায় সিভিল এভিয়েশন খাতে। পর্যটনের জন্য পৃথক বরাদ্দ উল্লেখ করার মতো নয়। একদা রেলওয়ে ছিল যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংযুক্ত। আওয়ামী লীগ সরকার রেলকে গুরুত্ব দিয়ে পৃথক মন্ত্রণালয় গড়ে এগিয়ে নিচ্ছে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের মধ্য দিয়ে। একইভাবে জনবহুল এই দেশে পর্যটনকেও বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এগিয়ে নেয়া প্রয়োজন, এমনই মনে করছেন পর্যটনসংশ্লিষ্টরা। কেননা, এই খাতে প্রচুর কর্মসংস্থানের সুযোগ রয়েছে। পর্যটনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে হোটেল, মোটেল, রেস্তরাঁ, পরিবহন, ছোটখাটো দোকানপাটসহ বেশ কিছু ব্যবসা বাণিজ্য, যা কর্মসংস্থানের সহায়ক। বর্তমানে সরাসরি ১৫ লাখের বেশি মানুষ নিয়োজিত রয়েছে পর্যটনে। পরোক্ষভাবে রয়েছে আরও অন্তত ২৫ লাখ মানুষের সম্পৃক্ততা। সব মিলে এখনই অন্তত ৪০ লাখ মানুষের জীবিকা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে পর্যটনের সঙ্গে জড়িয়ে আছে। যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই কর্মসংস্থান খুব সহজেই কোটিতে নিয়ে যাওয়া সম্ভব। দেশের বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষক প্রফেসর ড. মইনুল ইসলাম এই প্রসঙ্গে বলেন, বাংলাদেশের পর্যটন সম্ভাবনা বিশাল। এই খাতকে আরও এগিয়ে নিতে সরকারের বেশি অর্থ ব্যয় করার প্রয়োজন নেই। কারণ পৃথিবীর দেশে দেশে পর্যটন বিকশিত হয়েছে বেসরকারী খাতে। সরকার শুধু যোগাযোগ অবকাঠামো, নিরাপত্তাসহ কিছু ক্ষেত্র গড়ে দেবে। বাকিটা করবে প্রাইভেট সেক্টর। তিনি বলেন, পর্যটনে আমরা খুব তাড়াতাড়ি ভারত, নেপাল বা শ্রীলঙ্কা পর্যায়ে পৌঁছাতে পারব, এমন নয়। কারণ আমাদের দেশে কিছু সামাজিক বিষয়ও রয়েছে। কিন্তু শুধু বিদেশী পর্যটকই এই শিল্পকে সমৃদ্ধ করবে, তা নয়। বরং বাংলাদেশে যে বিপুল জনসংখ্যা রয়েছে, তাতেই পর্যটন খাতকে অনেক এগিয়ে নেয়া সম্ভব। দেশের মানুষের আয় বাড়ছে। উপার্জন বাড়লে বেড়াবার আর্থিক সামর্থ্য বৃদ্ধি পায়। সরকারের উচিত এখন পর্যটনের দিকে নজর দেয়া। প্রসঙ্গক্রমে তিনি চট্টগ্রামের পতেঙ্গা সমুদ্রসৈকত, আনোয়ারার পারকি বিচ ও কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতসহ কয়েকটি স্পটের বিষয়ে উল্লেখ করে বলেন, শুধু সাগরের ঢেউ দেখে তো বেশি সময় কাটে না। চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড হয়ে যাওয়ায় পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত এখন অনেক আকর্ষণীয়। কিন্তু সেখানে কোন হোটেল বা থিম পার্ক আমরা এখনও গড়ে তুলতে পারিনি। আগামী বছরের মধ্যে চালু হয়ে যাবে কর্ণফুলীর তলদেশে বঙ্গবন্ধু টানেল। তখন আনোয়ারায় অবস্থিত পারকি সমুদ্র সৈকতে যাওয়ার পথ সুগম হয়ে যাবে। কর্ণফুলী টানেল চালু হওয়ার পাশাপাশি পারকিকেও সেভাবে গড়ে তোলা প্রয়োজন। কিন্তু সেই উদ্যোগ এখনও মাঠ পর্যায়ে দৃশ্যমান নয়। পর্যটনের জন্য সরকার সবকিছু করে দেবে না। তবে স্থানগুলোতে যাওয়ার পথ, পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং যথাযথ পরিকল্পনা দিলে বেসরকারী খাত এগিয়ে আসবে।
×