ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সামাজিক মাধ্যমে অপরাধ দমন

প্রকাশিত: ১৯:৪৮, ১ আগস্ট ২০২১

সামাজিক মাধ্যমে অপরাধ দমন

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে সাইবার প্যাট্রোলিং টিম গঠন করে নজরদারি করার সরকারী নির্দেশনা দেশবাসীর জন্য স্বস্তিদায়ক সংবাদ। শুক্রবার জনকণ্ঠে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিশদ তথ্য। সারাদেশের জেলা ও মেট্রোপলিটন ইউনিটে সাইবার টিম গঠনসহ মনিটরিং করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। করোনায় ইউটিউব, টিকটক, লাইকি, ফেসবুক গ্রুপ, ফেসবুক পেজসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরাধ বাড়ছে। দেশের মাঠ পর্যায়ের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে ১০ দফা নির্দেশনা পাঠিয়েছে পুলিশ সদর দফতর। এসব নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটরিং করতে প্রতিটি জেলা ও মেট্রোপলিটন ইউনিটে সাইবার প্যাট্রোলিং টিম গঠন করতে হবে। জেলায় একজন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ও তথ্য প্রযুক্তিতে দক্ষ বিভিন্ন পদের প্রয়োজনীয় সংখ্যক কর্মকর্তা ও পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে এই টিম করা হবে। ব্যবহারকারীর মানসিকতা ও অভিপ্রায় অনুযায়ী প্রযুক্তির ব্যবহার কিংবা অপব্যবহার ঘটে থাকে। দুঃখজনক হলো দেশে প্রাযুক্তিক উন্নয়নের পাশাপাশি সাইবার ক্রাইমও বেড়ে চলেছে। পর্নোগ্রাফি, অনলাইন প্রতারণা ও অনলাইন ব্যাংক জালিয়াতি তো আছেই। সাইবার বিশ্বে বাংলাদেশ নতুন। এর সম্ভাবনা ও সঙ্কট সম্পর্কে সরকার সম্যক অবগত। সরকার ইতোমধ্যে ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর সায়েন্স এ্যান্ড টেকনোলজি (এনসিএসটি) গঠন করেছে। স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন কোর্স চালু করা দরকার, যাতে করে আমাদের নতুন প্রজন্ম সাইবার নিরাপত্তা এবং ইনফরমেশন সিকিউরিটি বিষয়ে জ্ঞান অর্জন করে দেশের আইসিটি অবকাঠামো গড়ে তুলতে সাহায্য করতে পারে। দেশে অনলাইন ব্যবহারকারীর সংখ্যা যেমন বাড়ছে, তেমনি জ্যামিতিক হারে বাড়ছে সাইবার অপরাধ। তাই সাইবার অপরাধ দমন একটি চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। কোন থানার অধীনস্থ এলাকায় খুনের মতো অপরাধ সঙ্ঘটিত হলে পুলিশ অপরাধের আলামত সংগ্রহের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তেমনটি সাইবার অপরাধের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য। সেসব ব্যাপারে আমাদের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এখনও শতভাগ সক্ষম ও সচেতন নয়। উন্নত বিশ্ব সাইবার অপরাধ নিয়ে যথেষ্ট সচেতন। এ ব্যাপারে আমাদের ঘাটতি স্বীকার করে নিয়েই জনস্বার্থে সামনের দিকে এগোনো জরুরী। সাম্প্রতিককালে সাইবার অপরাধীদের ভয়ঙ্কর অস্ত্র হয়ে উঠেছে ফেসবুক। ভুয়া এ্যাকাউন্টস বা আইডি খুলে অপরাধ সঙ্ঘটিত করে চলেছে সাইবার অপরাধীরা। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের (সিটিটিসি) অনুসন্ধানে উঠে এসেছে উদ্বেগজনক চিত্র। রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক বিরোধ, প্রেমের ফাঁদে ফেলা, প্রেম নিবেদন, প্রেম প্রত্যাখ্যান, পূর্ব শত্রুতার জের ধরে ফেসবুকে অপপ্রচারের শিকার হচ্ছেন ব্যবসায়ী থেকে শুরু“করে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও নারী-কিশোরীরা। সহিংস উগ্রবাদ, গুজব, রাজনৈতিক অপপ্রচার, মিথ্যা সংবাদ, গ্যাং কালচার, পর্নোগ্রাফি, সাইবার বুলিং, জালিয়াতি, চাঁদাবাজি, পাইরেসি, আসক্তি এর সবই হচ্ছে প্রযুক্তির মাধ্যমে, যার প্রধান ও অন্যতম বাহন ফেসবুক। বিপজ্জনক জঙ্গী সংগঠনগুলো তাদের কর্মকান্ড পরিচালনা ও নিজেদের সংগঠিত করার কাজে ব্যাপকভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে থাকে। আইএস তাদের সন্ত্রাসী কর্মকান্ড পরিচালনা ও তরুণদের সংগঠনে রিক্রুট করার কাজে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সাহায্য নিচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপরাধ নিয়ন্ত্রণে শক্তিশালী সাইবার প্যাট্রোলিং টিম আগামী দিনগুলোয় আন্তরিকভাবে সক্রিয় থাকলে অনলাইনের অপরাধীদের আইনের আওতায় আনার কাজে গতি আসবে, এমনটাই প্রত্যাশা।
×