ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ঘাটাইলের সাগরদিঘীতে সড়কের বেহাল অবস্থা ॥ জনদুর্ভোগ চরমে

প্রকাশিত: ১৬:৫৬, ৩১ জুলাই ২০২১

ঘাটাইলের সাগরদিঘীতে সড়কের বেহাল অবস্থা ॥ জনদুর্ভোগ চরমে

নিজস্ব সংবাদদাতা, টাঙ্গাইল ॥ টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার সবজির রাজধানী খ্যাত সাগরদিঘী বাজারের চৌরাস্তায় সিসি ঢালাইয়ের কাজ না করায় চারটি পৃথক সড়কে চলাচলে ব্যাপক জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যানবাহন চলাচল করতে না পারায় পাহাড়ি অঞ্চলের বিস্তীর্ণ এলাকার মৌসুমী ফল ও সবজি কৃষকের ক্ষেতেই বিনষ্ট হচ্ছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, ঘাটাইল উপজেলার সাগরদিঘী বাজারের চৌরাস্তা থেকে পশ্চিমে ঘাটাইল বাসস্ট্যান্ড, উত্তরে মধুপুর বাসস্ট্যান্ড, দক্ষিণে সখীপুর বাসস্ট্যান্ড ও পূর্ব দিকে ময়মনসিংহের ভালুকা বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত পাকা সড়ক রয়েছে। পাকা সড়কগুলোর সংযোগস্থল সাগরদিঘী চৌরাস্তা মোড়ে ২৫০মিটার বর্গাকার এলাকা পাহাড়ি ঢল ও ভারি যানবাহন চলাচল করায় সড়কের বিটুমিন ও ইটের খোয়ার অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় সড়কে ছোট-বড় অসংখ্য গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। এতে বর্ষা মৌসুমে সামান্য বৃষ্টিতে কর্দমাক্ত হওয়ায় পায়ে হেটে চলারও অযোগ্য হয়ে পড়েছে। এছাড়া কোন কোন সময় বৃষ্টির পানি জমে গর্তগুলো ভরাট হয়ে চলাচলকারীদের এক প্রকার ফাঁদে পরিণত হয়। বৃষ্টির পর ওই এলাকা দিয়ে ট্রাক ও লরিসহ ভারি যানবাহন সড়কের পাকা অংশ পর্যন্ত এসে পানি সরে যাওয়ার জন্য অপেক্ষা করে। এতে প্রায়ই গাড়ির দীর্ঘ লাইনে দিনব্যাপী যানজটের সৃষ্টি হয়। সড়কের গর্ত সম্পর্কে না জানা চালকরা যাতায়াত করতে গিয়ে প্রায়শই দুর্ঘটনার শিকার হয়ে থাকে। টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২৫ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ঘাটাইল-সাগরদিঘী সড়কে কামালপুর থেকে সাগরদিঘী হয়ে গুপ্তবৃন্দাবন পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়কে উন্নয়ন কাজ চলছে। কাজটি বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স নিয়াজ ট্রেডার্স। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি শুস্ক মৌসুমে কাজ শুরু করে ইতোমধ্যে সড়কে উন্নয়নের কাজ প্রায় শেষ করেছে। সাগরদিঘী চৌরাস্তা মোড়ে ৬৬৮ মিটার সড়কে সিসি ঢালাইয়ের কাজের অনুমোদন না হওয়ায় তারা কাজ করতে পারছেনা। বর্ষা মৌসুম এসে পড়ায় বর্তমানে মাঝে মাঝেই বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টিতে পানি জমে ওই এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পানি সরে গিয়ে মাটি না শুকালে সিসি ঢালাইয়ের অনুমোদন পেলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানটি ঢালাইয়ের কাজ করতে পারবে না বলে জানিয়েছে। স্থানীয় হাসেম আলী বলেন, আমরা গরীব মানুষ, বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষ করে খাই। রাস্তা ভালো না থাকায় গাড়ি চলতে পারে না। ক্ষেতের সবজি হাট-বাজারে সবজি নিতে পারি না। আমরা অতি দ্রুতই রাস্তা সংস্কার চাই। সাগরদিঘী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হেকমত সিকদার জানান, পাহাড়ি অঞ্চলটি সবজির রাজধানী নামে খ্যাত। এ অঞ্চলে কলা, পেঁপে, লেবু, বেগুন, কাঁচা মরিচ, ঢেঁড়স, লাউ, শসা, কুমড়া, পটল, বিভিন্ন ধরণের শাক, আনারস, কাঁঠাল, আম, জাম ইত্যাদি সবজি ও ফল প্রচুর পরিমাণে উৎপাদন হয়ে থাকে। এখানকার সবজি ও ফল রাজধানী হয়ে বিদেশেও রপ্তানী হয়। যানবাহন চলাচল করতে না পাড়ায় কৃষকের কষ্টের ফসল ক্ষেতেই পঁচে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। দীর্ঘ দিন ধরে এলাকাবাসী চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। সরকারের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে বার বার ধরণা দিয়েও কোন কাজ হয়নি। ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, সাগরদিঘীতে সামান্য কাজের জন্য ঘাটাইল, কালিহাতী, সখীপুর, মধুপুর, ময়মনসিংহের ভালুকা ও ফুলবাড়িয়া উপজেলার অভ্যন্তরীন যান চলাচল ও যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। স্থানীয়দের উৎপাদিত সবজি বিপণন করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি তিনি জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় উত্থাপন করেছেন এবং সভা থেকে টাঙ্গাইলের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীকে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আলিউল হোসেন জানান, সাগরদিঘী বাজারের চার রাস্তা মোড়ের কাজ দরপত্র মোতাবেক পিঁচঢালা করলে টিকবে না। যেহেতু বাজার এলাকা তাই কাজটি সিসি ঢালাইয়ের মাধ্যমে করতে হবে। কিন্তু দরপত্রে সিসি ঢালাই ধরা নেই। নতুন করে ৬৬৮ মিটার সড়কে সিসি ঢালাইয়ের মাধ্যমে কাজ করার প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করা হবে।
×