ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

একপায়ে স্কিপিং রোপে বিশ্ব রেকর্ড করেছে ঠাকুরগাঁওয়ের রাসেল

প্রকাশিত: ১৬:৫৪, ৩১ জুলাই ২০২১

একপায়ে স্কিপিং রোপে বিশ্ব রেকর্ড করেছে ঠাকুরগাঁওয়ের রাসেল

নিজস্ব সংবাদদাতা, ঠাকুরগাঁও ॥ ছেলেবেলায় স্কিপিং বা দড়ি লাফ খেলা খেলেননি এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর সেই স্কিপিং বা দড়ি লাফে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম উঠালো ঠাকুরগাঁওয়ের নিভৃতপল্লীর সন্তান রাসেল ইসলাম। মাত্র ২১ বছর বয়সেই স্কিপিং রোপে (দড়ি লাফে) বিশ্ব রেকর্ড করেছে সে। তার এ সাফল্য বিশ্ববাসীর কাছে জেলার নাম উজ্জল করেছে বলে মনে করে জেলার সুশীল সমাজ। তাকে এক নজর দেখতে বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন এসে তার এ সাফল্যের প্রশংসা করছে। রাসেল ইসলাম ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের সিরজাপাড়া গ্রামের বজলুর রহমানের ছেলে। সে শিবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে এইচএসসিতে অধ্যায়নরত। জানা যায়, স্কুলজীবন থেকেই রাসেলের ইচ্ছা ছিল স্কিপিং রোপে বিশ্ব রেকর্ড করার। সেই চিন্তা নিয়েই ২০১৭ সাল থেকে সে স্কিপিং রোপের চর্চা শুরু করে। বাসার আশপাশে বিভিন্ন সড়কের ধারে যখন যেখানে সময় পেয়েছে সেখানেই প্রতিনিয়ত স্কিপিং রোপের চর্চা করে গেছে। অবশেষে নিজেকে এই খেলায় পরিপূর্ণ মনে হলে ২০১৯ সালে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে চ্যালেঞ্জ করে আবেদন করে রাসেল। স্কিপিং রোপের ওপর দুটি বিষয়ে সে চ্যালেঞ্জ করেছিলো। একটি ৩০ সেকেন্ডের অন্যটি ১ মিনিটের ওপর। এক পায়ে ৩০ সেকেন্ড স্কিপিং রোপে ১৪৪ বার লাফানোর বিশ্ব রেকর্ড থাকলেও রাসেল করেছেন ১৪৫ বার। আর ১ মিনিটে এক পায়ে ২৫৬ বার লাফানোর বিশ্ব রেকর্ড থাকলেও রাসেল পেড়েছেন ২৫৮ বার। এর মাধ্যমে তিনি নতুন বিশ্ব রেকর্ড গড়ে তুলেছেন। গত বৃহস্পতিবার রাসেল গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের সনদপত্র হাতে পায়। স্থানীয় বাসিন্দা উজ্জল হোসেনসহ বেশ কয়েকজন বলেন, আজ এই রাসেলের কারণে দেশবাসী আমাদের গ্রামের নাম জানতে পারছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে অনেকেই আসছে তার বাসায়। রাস্তাঘাটে অনেকেই বলছেন-বিশ্ব রেকর্ড করেছে রাসেল, তার বাসা কোনটা ? এটা শুনতেই অনেক ভালো লাগছে। আমাদের গ্রামের সন্তান আজ আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। রাসেলের বাবা বজলুর রহমান বলেন, ছোটবেলা থেকেই আমার ছেলে একটি দড়ি নিয়ে লাফাতো। তাকে বলেছিলাম এসব করে কী হবে বাবা। সে আমাকে বলতো আব্বা আমি একদিন এই খেলা দিয়েই তোমাদের মুখ উজ্জ্বল করব। আজ সত্যিই সে আমাদের মুখ উজ্জ্বল করেছে। তিনি বলেন, বাবা হয়ে আমি আমার সন্তানকে তেমন কোনো কিছু দিতে পারিনি। তবে সে আমাদের দিয়েছে। আজ সকলের মুখে আমার ছেলের নাম। আমি শুধু আমার ছেলেকে সাহস দিয়েছিলাম। এই সাহস নিয়েই এগিয়ে গেছে আমার ছেলে। স্কিপিং রোপে বিশ্ব রেকর্ড করা রাসেল ইসলাম জানায়, স্কিপিং রোপ আমার ছোটবেলার স্বপ্ন ছিল। ইন্টারনেটে স্কিপিং রোপের ওপর ভিডিও দেখতাম। স্কিপিং রোপে কতবারে বিশ্ব রেকর্ড হয়েছে তা নজরে রাখতাম। ওই বিশ্ব রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড করার স্বপ্ন দেখতাম। স্বপ্ন পুরণে আমি প্রতিনিয়ত চর্চা করে যাই। পড়াশোনার পাশাপাশি যখন যেখানে সময় পেতাম সেখানেই চর্চা করে যেতাম। রাসেল আরও জানায়, দীর্ঘদিন চর্চার পরে যখন দেখলাম আমি এখন সেই রেকর্ড ভেঙে নতুন রেকর্ড করতে পারব তখন গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে চ্যালেঞ্জিং আবেদন করি। এরপর সেখান থেকে আমাকে তিন মাস পরে কিছু গাইডলাইনসহ একটি রিপ্লাই দেওয়া হয়। সেখানে তারা তাদের নিয়ম মতো কিছু ভিডিও চায় আমার কাছে। সেই সঙ্গে কীভাবে সেগুলো করতে হবে তারও বিস্তারিত দেওয়া হয়। এরপর আমি কিছুদিন আরও মনোযোগ দিয়ে সেই কাজগুলো করে তাদের কাছে পাঠিয়ে দেই। অবশেষে আমি বিশ্ব রেকর্ড ভেঙে একটি নতুন রেকর্ড করি। যার জন্য আমাকে দুটি সনদপত্র দেওয়া হয়। আমি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানাই। তারা আমার মেধাকে গুরুত্ব দিয়েছে। এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসক মাহবুবুর রহমান বলেন, রাসেল এর পৃষ্ঠপোষকতা করার জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ হতে সহযোগীতা করা হবে। এছাড়াও পরবর্তিতে রাসেল যে কোন স্থানে এই খেলায় অংশগ্রহন করতে চাইলে আমারা তাকে সর্বাত্তক সহযোগীতা করবো। এদিকে ঠাকুরগাঁওয়ে স্কিপিং বা দড়ি লাফে গিনেজ বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম উঠানোয় শনিবার ঠাকুরগাঁও শহীদ মোহাম্মদ আলী ষ্টেডিয়ামে রাসেলকে শুভেচ্ছা প্রদান করেছে জেলা ক্রীড়া সংস্থা । জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন, সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান বাবু, সদস্য সাজিদ আহমেদ রানা, জেলা ফুটবল এসোসিয়েশনের সভাপতি প্রবীর কুমার গুপ্ত বুয়া, রাসেলের স্কুল শিক্ষক মোতাহার হোসেন প্রমুখ। এ সময় আরো শুভেচ্ছা জানান, স্বনামধন্য ফুটবলার মনোয়ার হোসেন লেবিন, মানস রায়সহ জেলার বিভিন্ন ইভেন্টের নারী খেলোয়াড়বৃন্দ। পরবর্তিতে রাসেলকে জেলা ক্রীড়া সংস্থার পক্ষ থেকে বড় পরিসরে সংবর্ধনা প্রদান করা হবে বলে জানান ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক মাসুদুর রহমান বাবু।
×