ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

আফগানিস্তানে জাতিসংঘের মূল স্থাপনায় হামলা

প্রকাশিত: ১২:২৮, ৩১ জুলাই ২০২১

আফগানিস্তানে জাতিসংঘের মূল স্থাপনায় হামলা

অনলাইন ডেস্ক ॥ আফগানিস্তানে জাতিসংঘের মূল স্থাপনায় ‘সরকারবিরোধীদের’হামলায় একজন নিরাপত্তারক্ষী নিহত হয়েছে। দেশটির হেরাত প্রদেশে এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। দেশটিতে জাতিসংঘের সহকারী আবাসিক প্রধানের বরাতে রয়টার্স জানায়, শুক্রবার রকেটচালিত গ্রেনেড হামলা ও গুলি চালানো হয় হেরাতের জাতিসংঘ কম্পাউন্ডে। তালেবান যোদ্ধারা হেরাত শহরের অনেকখানি ভেতরে প্রবেশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে এই আক্রমণ করা হয়। অবশ্য জাতিসংঘের কোনো কর্মকর্তা এতে হতাহত হননি। কর্মকর্তারা জানান, জাতিসংঘের ওই প্রাদেশিক সদর দপ্তরের কাছে আফগান সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তালেবানদের তীব্র লড়াই চলছিল ওই সময়। হামলার পর এক বিবৃতিতে জাতিসংঘ জানিয়েছে, এই হামলার একটি পূর্ণ চিত্র দ্রুত পাওয়ার চেষ্টা করছে তারা এবং সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে যোগাযোগও করা হচ্ছে। কারা এই হামলা চালিয়েছে তা স্পষ্ট নয়, তবে একজন পশ্চিমা নিরাপত্তাকর্মী রয়টার্সকে জানিয়েছেন, শহরের কূটনৈতিক স্থাপনাগুলোকে উচ্চ সতর্কতার মধ্যে রাখা হয়েছে। এক বিবৃতিতে হোয়াইট হাউজের উপদেষ্টা জেইক সুলিভান বলেন, “হেরাতে জাতিসংঘ কম্পাউন্ডে এই হামলার কড়া নিন্দা জানাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।” আফগানিস্তানে সহিংসতা কমানোর আহ্বানও পুনর্ব্যক্ত করা হয়েছে বিবৃতিতে। আফগানিস্তানে জাতিসংঘের দূত জানিয়েছেন, ওই কম্পাউন্ডের প্রবেশপথের কাছ থেকে আক্রমণ করা হয়েছে, যেখান থেকে স্পষ্টভাবে দেখা যায় যে এটা জাতিসংঘের স্থাপনা। জাতিসংঘ মহাসচিবের আফগানিস্তান বিষয়ক বিশেষ প্রতিনিধি ডেবোরাহ লিওনস বলেন, “এই আক্রমণ দুখঃজনক এবং অত্যন্ত কড়া ভাষায় আমরা এর নিন্দা জানাচ্ছি।” তালেবানের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সম্ভবত ‘ক্রসফায়ারের’ কারণে এই ঘটনা ঘটেছে। তাদের মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ টুইটারে বলেন, ওই কার্যালয়ের খুব কাছেই লড়াই চলতে থাকায় সম্ভবত নিরাপত্তারক্ষী আঘাতপ্রাপ্ত হয়েছে। তালেবান যোদ্ধারা ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল এবং জাতিসংঘের কম্পাউন্ড কোনো হুমকির মুখে নেই। তালেবান বাহিনী শহরে প্রবেশের আগেই ইরান সীমান্তবর্তী হেরাত প্রদেশের চর্তুদিক ঘিরে ফেলেছে। উচ্চপদস্থ একজন নিরাপত্তা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সীমান্তে ইরানি সীমান্তরক্ষীরা সতর্কতায় রয়েছে। তাদের আশঙ্কা আসন্ন দিনগুলোতে অনেকেই পালিয়ে ইরানে আশ্রয় নিতে পারে। লস্করগড়ে লড়াই : গত ২৪ ঘণ্টায় তালেবান যোদ্ধারা প্রবেশ করেছে এমন দ্বিতীয় প্রাদেশিক রাজধানী শহর হচ্ছে হেরাত। একদিন আগে তারা দক্ষিণের হেলমান্দ প্রদেশের রাজধানী লস্করগড়ে প্রবেশ করে এবং সেখানে সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তাদের লড়াই চলছে। শহরের বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ের আশায় শহর ছেড়ে পালাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র সেদেশ থেকে পুরোপুরি সেনা প্রত্যাহার শুরুর পর গত দুই মাসে তালেবান বাহিনী আফগানিস্তানের প্রায় অর্ধেকের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, তবে তারা এখনও কোনো প্রাদেশিক রাজধানীর দখল নিতে পারেনি। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন সরকারি কর্মকর্তা বলেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে তালেবান যোদ্ধারা লস্করগড় শহরের বিভিন্ন দিক থেকে হামলা শুরু করে। সরকারি বাহিনী বিমান হামলার সহায়তায় তালেবান বাহিনীকে ঠেকিয়ে রাখতে পারলেও, বেসামরিক নাগরিকদের উপস্থিতি অভিযান ব্যাহত করছে। কান্দাহারে যুদ্ধ : দক্ষিণের কান্দাহার শহরের পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছে জাতিসংঘের আফগানিস্থানের সহকারী আবাসিক দূত। শুক্রবার তিনি সতর্ক করেন, এই লড়াইয়ের কারণে সাধারণ নাগরিকদের করুন পরিণতি ভোগ করতে হবে। জাতিসংঘ কার্যালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয় কমপক্ষে ২৩০ জন সাধারণ নাগরিক আহত হয়েছে এবং গত দুই সপ্তাহে সেখানে অনেক লোক মারা গেছে বলে খবর আসছে। কান্দাহারের একজন জ্যেষ্ঠ সরকারি কর্মকর্তা জানান, সরকারি বাহিনী ও তালেবানের মধ্যে লড়াই শহরের কেন্দ্রস্থলে পৌঁছেছে এবং বাসিন্দাদের অনেকেরই আশঙ্কা তালেবান শহরের দখল নিয়ে নিতে পারে। তালেবানের জন্মভূমি হিসেবে পরিচিত কান্দাহার শহরে সরকারি বাহিনীর সরবরাহ লাইন উন্মুক্ত রাখতে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে বিমান হামলা চালানো হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ আঞ্চলিক সামরিক কমান্ডার জানিয়েছেন তারা আফগান সরকারি বাহিনীকে সমর্থন যোগাতে বিমান হামলা বাড়িয়েছে। তবে ৩১ অগাস্টের তা অব্যাহত রাখা হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাব দেননি তিনি। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব সেনা সরিয়ে নেওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়েছে ৩১ অগাস্ট।
×