ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মুন্সীগঞ্জে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙ্গন ॥ কয়েক মিনিটে ৮ বসত ঘর বিলীন

প্রকাশিত: ২০:৫৮, ৩০ জুলাই ২০২১

মুন্সীগঞ্জে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙ্গন ॥ কয়েক মিনিটে ৮ বসত ঘর বিলীন

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ মুন্সীগঞ্জে টঙ্গীবাড়িতে পদ্মার ভয়াবহ ভাঙ্গণ দেখা দিয়েছে। শুক্রবার আকস্মিক ভাঙনে কয়েক মিনিটে পূর্ব হাসাইল গ্রামের ৮ বাড়ি বিলীন হয়ে যায়। এখন একেরপর জনপদ বিলীন হচ্ছে। আতঙ্কগ্রস্ত গ্রামবাসী অবিলম্বে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানান। পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, মন্ত্রণালয়ে আবেদন পাঠানো হচ্ছে। বর্ষায় পদ্মা এই রুদ্ররূপে এলাকাটিতে এক ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে। ভাঙনের কবলে বাড়িঘর নদীগর্ভে চলে যাওয়ার আগে শেষ সম্বলটুকু বাঁচাতে মরিয়া মানুষগুলো। ভাঙনরোধে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার দাবি তাদের। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রণেন্দ্র শংকর চক্রবর্তী আপৎকালীন ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য মন্ত্রণালয়কে অবহিত করার কথা জানায় পানি উন্নয়ন বোর্ড। তিনদশক ধরে ভাঙনের কবলে পড়ে আসা এ জনপদের অনেক এলাকা ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে। বেলা ১১টার দিকে এই ভয়াবহ ভাঙ্গন শুরু হয়ে একের পর এক বিলীন হচ্ছে জনপদ। এরমধ্যেই নদী সংলগ্ন কয়েকশ মিটার এলাকার ও ৮টি বসতঘর নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন হুমকিতে পরেছে শতশত পরিবারের বসতভিটা, মসজিদ, কবরস্থান, প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ নানা সরকারি-বেসরকারি সম্পদ। একে একে বিলিন হয়ে যায় স্থানীয় চার পরিবারের আট বসত ঘর। ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে স্থানীয় আলম শেখের তিনটি জিয়াসমিন বেগমের একটি, মোঃ খোরশেদের দুইটি ও নুর মোহাম্মদ দেওয়ানের দুইটি ঘর ভেঙে নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যায়। ভাঙনের মুখে হুমকিতে পরেছে ভাঙন কবলিত এলাকার পূর্ব হাসাইল জামে মসজিদ, কবরস্থান, ধাতারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ শতশত বসতবাড়ি। ক্ষতিগ্রস্ত আলম শেখ বলেন, হঠাৎ কইরা ভাঙন শুরু হইলো আমার তিনটা বসতঘর একবারে একবারে নদীতে তলিয়েগেছে। কয়েকটি ঘরের অংশ কোন রকমে উঠানো হয়েছে। দ্রুত ভাঙন রক্ষায় আমরা ব্যবস্থা চাই। নয়তো আসেপাশের সব ভেঙে নিয়ে যাবে নদী। জিয়াসমিন বেগম জানান, ঢাকায় কাজ করি স্বামী নেই। চার সন্তান নিয়ে একটা ঘরে থাকতাম। এখন যামু কই। আরেক নারী জানান, ঘরের মধ্যে ছিলাম, হঠাৎ ভাতিজা আইসা বলে চাচাি নদী ভাঙতাছে। যদি তখন না বাইর হইতাম মা-মেয়ে ঘরের লগে মা মেয়ে সবাই তলাই জাইতাম। আরেক ক্ষতিগ্রস্থ মোঃ খোরশেদ জানান, ঘরের চাউলের ড্রামটাও বাইর করতে পারি নাই। সব নিয়া গেলো নদীতে। হাসাইল বানারী ইউপি সদস্য ইব্রাহিম ঢালী জানান, যে ভাঙন দেখা দিছি যদি দ্রুত ভাঙন রক্ষায় কাজ না করে এ এলাকার হাজার হাজার মানুষের ঘরবাড়ি বিলিন হইবে। আমি এলাকাবাসীর পক্ষা প্রধানমন্ত্রীর নিকট দ্রুত ভাঙন রক্ষা ব্যবস্থা গ্রহনের দাবি জানাই। এবিষয়ে হাসাইল বানারী ইউপি চেয়রম্যান আনোয়ার হোসেন হাওলাদার জানান, এমন হঠাৎ ভাঙন। কিছু বুঝে উঠার আগেই এলাকার লোকজনের সব বিলীন হয়ে যায়। পরিবারগুলো এখন বড় অসহায়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি তাৎক্ষনিক জানিয়েছি। এদিকে এলাকাবাসীর আক্ষেপ এমন দুঃখের সময়ে সরকারের প্রশাসনের কেউ তাদের পাশে আসেনি। টঙ্গীবাড়ী উপজেলা নির্বাহী অফিসার নাহিদা পারভীন বিকাল ৫ টার দিকে জানান, ১৫ মিনিট আগে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করা হয়েছে। ঘটনাস্থলে যাওয়া ব্যাপারে ইউএনও বলেন, প্রতিনিধি পাঠানো হয়েছে। দ্বিতীয় দফায় কোভিডে আক্রান্ত স্থানীয় সংসদ সদস্য অধ্যাপক সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে জরুরি সাহায্য দেয়ার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অসুস্থতার কারণে ভাঙ্গন কাবলিত এলাকায় যাওয়া না গেলেও ভাঙ্গনরোধে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারেও তিনি পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছেন। সাগুফতা ইয়াসমিন এমিলি বলেন, এরই মধ্যে পদ্মা তীরে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণে ৪৪৬ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন হয়েছে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের পাশপাশি ভাঙন কবলিত বাকী অংশকেও স্থায়ী প্রকল্পের আওতায়া আনার প্রচেষ্টা চলছে বলে তিনি জানান।
×