ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা দক্ষিণ সিটি ॥ দুর্নীতির অভিযোগ থাকার পরও চুক্তি বাড়ানোর তদবির

প্রকাশিত: ২০:৩৯, ৩০ জুলাই ২০২১

ঢাকা দক্ষিণ সিটি ॥ দুর্নীতির অভিযোগ থাকার পরও চুক্তি বাড়ানোর তদবির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সম্প্রতি ঘুষ গ্রহণ, রাজস্ব আদায়ে অনিয়ম, সরকারি টাকা আত্মসাৎ, বদলি–বাণিজ্যসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অন্তত ১৫ কর্মকর্তার ব্যক্তিগত তথ্য চেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এদের মধ্যে অন্যতম ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সিস্টেম এনালিস্ট আবু তৈয়ব রোকন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাইদ খোকনের দুর্নীতির কাজে ঘনিষ্ঠ ও সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অবৈধভাবে নিয়োগ ও দুর্নীতির অভিযোগ থাকার পরও পূর্ণ মেয়াদ শেষে এখন আবারও চুক্তি বাড়ানোর তদবির করছেন তিনি । জানা যায়, রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে সরাসরি ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সাথে যুক্ত ছিলেন এই আবু তৈয়ব রোকন। ২০১৩ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত সিস্টেম এনালিস্ট হিসেবে কাজ করে আইসিটি মন্ত্রণালয়ে। তারপর ২০১৫ সালে ডেপুটেশনে আসে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে । তখনকার মেয়র সাইদ খোকন তাকে তখন চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়। তারপর থেকে দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে দোকান বরাদ্দসহ সাইদ খোকনের দুর্নীতির সহযোগি হিসেবে প্যানেলে যোগ দেয় আবু তৈয়ব রোকন। সেই প্যানেলে চাকুরীচ্যুত প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী সরদার, রাজস্ব কর্মকর্তা শাহজাহান আলী, কর কর্মকর্তা (চলতি দায়িত্ব) আলীম আল রাজি, চাকরিচ্যুত সাবেক প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো. আসাদুজ্জামানের সাথে ছিলেন, সিস্টেম এনালিস্ট মো. আবু তৈয়ব রোকন, প্রোগ্রামার নুর আলম ও আইসিটি সেলের মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার সুভাশীষ ভৌমিক। দুর্নীতির এসব সহযোগিসহ ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের ‘ক্যান্সার’ বলে খ্যাত রাজস্ব বিভাগসহ কয়েকটি বিভাগের ২১ জন কর্মকর্তা-প্রকৌশলীর অনিয়ম-দুর্নীতিসহ অবৈধ সম্পদ অর্জনের একাধিক অভিযোগের অনুসন্ধান করছে দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদক। এজন্য কমিশনের পক্ষ থেকে একজন সহকারী পরিচালককে অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেয়া হয়েছে। ২১ কর্মকর্তা-প্রকৌশলীর মধ্যে ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) ১৫জন রয়েছেন। বাকী ৬জন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি)। ইতোমধ্যে দুদকের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তা পৃথক তিনটি চিঠির মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের যাবতীয় তথ্য-উপাত্তসহ অনিয়ম-দুর্নীতির রেকর্ডপত্র চেয়ে পৃথকভাবে দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে চিঠি দিয়েছে। নিজের কাজ বাদ দিয়ে তখনকার প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা ইউসুফ আলী সর্দারের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে তারা দোকান বরাদ্দ, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরশেনের অধীনে বিভিন্ন মার্কেট- ফুলবাড়িয়া-১, ফুলবাড়িয়া-২ (এবিসিব্লক), ঢাকা ট্রেড সেন্টার, সুন্দরবন স্কয়ার মার্কেট, গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার, বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স, আহসান মঞ্জিল সুপার মার্কেট, যাত্রাবাড়ি কাঁচাবাজার, কাপ্তান বাজার কমপ্লেক্স (১, ২, ৩), চানখারপুল মার্কেটসহ বিভিন্ন মার্কেটসমূহের নকশা বা ডিজাইন ডিজিটালি পরিবর্তন, অনুমোদিত প্রস্তাবিত দোকানের সংখ্যা ইচ্ছামতো বাড়ানো-কমানোর রেকর্ড সংরক্ষণ করতো সিস্টেম এনালিস্ট আবু তৈয়ব রোকন ও তার সহযোগি হিসেবে কাজ করা প্রোগ্রামার নুর আলম ও আইসিটি সেলের মেইনটেন্যান্স ইঞ্জিনিয়ার সুভাশীষ ভৌমিক। গত এছাড়াও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে আইসিটি সেলে কাজ করার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন জনের কাছ থেকে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ রয়েছে সিস্টেম এনালিস্ট আবু তৈয়ব রোকনের বিরুদ্ধে। গত ১২ জুন সিস্টেম এনালিস্ট আবু তৈয়ব রোকনের চুক্তিভিত্তিক মেয়াদ শেষ হয়। এরপর থেকে নতুন করে চাকরী নবায়ন করতে তিনি বোর্ডের কারও স্বাক্ষর না নিয়েই, সরাসরি দক্ষিণের মেয়রের কাছে নিয়ে গেলে তিনি তা নাকচ করে দিয়ে নিয়ম মানার নির্দেশ দেন। তারপরও থেমে নেই, আবু তৈয়ব রোকন। তদবির করছেন বিভিন্ন মহলে। অভিযোগের বিষয়ে সিস্টেম এনালিস্ট আবু তৈয়ব রোকনের ফোন দিলে, তাকে পাওয়া যায়নি।
×