ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

শিল্পকারখানা খুলে দেয়ার অনুরোধ উদ্যোক্তা ও মালিকদের

প্রকাশিত: ২৩:৩০, ৩০ জুলাই ২০২১

শিল্পকারখানা খুলে দেয়ার অনুরোধ উদ্যোক্তা ও মালিকদের

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ চলমান কঠোর লকডাউনের মধ্যে পোশাক শিল্পসহ সব ধরনের কারখানা খুলে দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন দেশের উদ্যোক্তা-শিল্পমালিকরা। তাদের মতে, কারখানা বন্ধ থাকায় পণ্য সরবরাহ চেইন ভেঙ্গে পড়ার উপক্রম হয়েছে। এছাড়া লকডাউনের মধ্যে কারখানা বন্ধ রাখা হলে রফতানি খাতের আন্তর্জাতিক বাজার হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। এ অবস্থায় দ্রæত কারখানা খুলে দেয়া প্রয়োজন। বৃহস্পতিবার ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিনের নেতৃত্বে বৃহৎ চারটি বাণিজ্য সংগঠন বিজিএমইএ, বিকেএমইএ, বিটিএমইএ ও ঢাকা চেম্বার নেতারা মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের সঙ্গে এক বৈঠকে এ অনুরোধ জানান। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকেও কারখানা খুলে দেয়ার অনুরোধ জানিয়ে ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে একটি আবেদন দেয়া হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ব্যবসায়ীরা কারখানা খুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। তাদের দাবি দাওয়ার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে সরকার। সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে এ বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এছাড়া প্রধানমন্ত্রীকে লেখা আবেদনটি ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। আশা করছি, এ বিষয়ে দ্রæত সরকারের অবস্থান জানিয়ে দেয়া হবে। এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, আমরা আমাদের কনসার্নটা বলেছি, ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ থাকলে কী প্রবলেম হচ্ছে সেটা। কারণ সরবরাহ চেইনটা ভেঙ্গে যাচ্ছে। পোর্টে জটের কথা আপনার সবাই জানেন। আন্তর্জাতিক বাজার হারানোর শঙ্কা আছে আমাদের। সর্বশেষ, আমাদের স্থানীয় কারখানাগুলোতে সরবরাহ চেইনে সমস্যা হচ্ছে। এফবিসিসিআই সভাপতি বলেন, সরকারের কাছে কোভিডজনিত বিধিনিষেধের আওতায় সকল প্রকার শিল্পকারখানা বন্ধ রাখায় অর্থনৈতিক কার্যক্রমের প্রাণশক্তি উৎপাদন কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে সাপ্লাই চেইন (সরবরাহ ব্যবস্থা) সম্পূর্ণভাবে বিঘিœত হওয়ার উপক্রম। এতে উৎপাদন থেকে ভোক্তা পর্যন্ত প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত সকলেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। আগামীতে পণ্য-সামগ্রী সঠিকভাবে সরবরাহ ও বাজারজাত না হলে পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাবে। এতে স্বল্প আয়ের ক্রেতারা ভোগান্তির শিকার হবেন। পাশাপাশি রফতানি খাতের উৎপাদন ব্যবস্থা বন্ধ থাকলে সময়মতো পরবর্তী রফতানি অর্ডার অনুযায়ী পণ্য সরবরাহ দেয়া সম্ভব হবে না। এতে রফতানি অর্ডার বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তিনি বলেন, ক্ষুদ্র ও ছোট কারখানাসমূহ বন্ধ রাখায় উদ্যোক্তাগণ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। কারখানাসমূহ পুনরায় চালু রাখা অসম্ভব হয়ে পড়তে পারে। এ অবস্থায় রফতানি ও উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এ্যাসোসিয়েশনসমূহ ও চেম্বারসমূহ শিল্পকারখানার উৎপাদন কার্যক্রম সচল রাখার বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য এফবিসিসিআইয়ের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে। খাদ্য, চামড়া, ওষুধ শিল্পকে খুলে দেয়া হলেও সেখানেও ‘সাপ্লাই চেইনের সঙ্কট’ তৈরি হয়েছে বলে দাবি করেন এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন। তিনি বলেন, ফুড ইন্ডাস্ট্রির র‌্যাপিংয়ের দরকার। কার্টনের দরকার। এমন অবস্থায় ইন্ডাস্ট্রি বন্ধ রাখা যায় না। সরকারের তরফ থেকে কোন আশ্বাস দেয়া হয়েছে কিনা জানতে চাইলে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কাছে মন্ত্রিপরিষদ সচিবের মাধ্যমে এই অনুরোধটা আমরা করেছি। তিনি বলেছেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন। কথা বলে খুব তাড়াতাড়ি সিদ্ধান্তটা দেবেন। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি, সংক্রমণ, মৃত্যু সবকিছু মাথায় নিয়ে সরকারের কাছে অনুরোধ জানানো হয়েছে। সরকার এটা বিবেচনা করবে বলে আমরা আশা করি। পোশাক শিল্প শুধু না, সমস্ত শিল্পপ্রতিষ্ঠান পক্ষে আমরা এসেছি। সব শিল্পের সঙ্গে অনেক কিছু ইনভলভড। সে কারণে আমরা এটা আবারও অনুরোধ করেছি। যেন এটাকে লকডাউনের বাইরে রাখা হয় যেন বিষয়টা বিবেচনা করা হয়। কোন নির্ধারিত দিন থেকে কারখানা খুলে দেয়ার দাবি জানানো হয়েছে কিনা- এই প্রশ্নে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, কোন নির্দিষ্ট দিন নয়, যত তাড়াতাড়া সম্ভব। যেহেতু ২৩ তারিখ থেকে লকডাউনে সব কিছু বন্ধ আছে, ঈদের আগে অলমোস্ট ১৮-১৯ তারিখ থেকে সবকিছু বন্ধ হয়ে গেছে, সবকিছু অনেকদিন বন্ধ থাকার কারণে সবকিছুরই সাপ্লাই চেইনে একটা শর্টেজ হয়। আমাদের এক্সপোর্ট যেটা আছে, তার সঙ্গে সঙ্গে লোকাল এবং পোর্টেও অনেক ইমপোর্টেড মাল আসে। জাহাজগুলো আনলোড করা... মালগুলো পোর্টে রাখার জায়গা থাকছে না। সে কারণে যদি ফ্যাক্টরিগুলো, শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো না খোলে, পোর্ট থেকে কন্টেনারে মাল রিলিজ না করলে একটা জটিলতার দিকে চলে যাচ্ছে। বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন- বিকেএমইএ সভাপতি এ কে এম সেলিম ওসমান, এক্সপোর্টার এ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী, ডিসিসিআই সভাপতি রিজওয়ান রহমান, এফবিসিসিআইর সাবেক সহসভাপতি মোঃ সিদ্দিকুর রহমান ও বিটিএমএ ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ফজলুল হকসহ অন্যান্য ব্যবসায়ী নেতা। উল্লেখ্য, করোনা সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় চামড়া, খাদ্য ও ওষুধ ছাড়া এবারই দেশের সব কারখানা বন্ধ রাখা হয়েছে। ইতোমধ্যে কঠোর বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে কারখানা খোলা রাখায় গাজীপুরে একটি প্লাস্টিক কারখানাকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। এছাড়া মহামারী নিয়ন্ত্রণের লকডাউনের মধ্যে কোন শিল্প কারখানা খুললে আইনী ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, আমাদের সংক্রমণ কমানোর জন্য ব্রেক প্রয়োজন। ব্রেকটার জন্য এটাই উপযুক্ত কৌশল, সেটি হচ্ছে বিধিনিষেধ।
×