ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

করোনার দুই ডোজ টিকা বাধ্যতামূলক

ওমরাহ হজ কঠিন শর্তের বেড়াজালে

প্রকাশিত: ২৩:২৭, ৩০ জুলাই ২০২১

ওমরাহ হজ কঠিন শর্তের বেড়াজালে

আজাদ সুলায়মান ॥ কঠিন ও জটিল শর্তের বেড়াজালে পড়েছে ওমরাহ হজ। বিশ্বব্যাপী করোনা তাণ্ডবের দরুন গত দুই বছর ধরে সৌদিতে অবস্থানরতদের নিয়ে সীমিত আয়োজনে হজ অনুষ্ঠিত হলেও ওমরাহ ছিল বন্ধ। বাংলাদেশও এ বিধিনিষেধের আওতায় ওমরাহ করার সুযোগ পায়নি। এ অবস্থায় সৌদি আরব গত সোমবার সিদ্বান্ত নেয়- ওমরাহ চালু করার। সম্ভাব্য তারিখও নির্ধারণ করেছে। আগামী ১ মহররম বা ১০ আগস্ট থেকেই ওমরাহ করার সুযোগ দেয়া হবে। তবে এবার বাংলাদেশকে এ সুযোগ দেয়া হলেও বিশ্বের প্রভাবশালী কটি দেশকে এ সুযোগের বাইরে রাখা হয়েছে। মহামারী শুরু হওয়ার পর দীর্ঘ প্রায় ৮ মাস ওমরাহ কার্যক্রম বন্ধ ছিল। পরে অক্টোবর ২০২০-এ সৌদি নাগরিক ও বাসিন্দারা ওমরাহ পালনের অনুমতি পেয়েছিলেন। কিন্তু বিশ্বের কয়েকটি দেশে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ঢেউ ছড়িয়ে পড়ায় সংক্রমণ এড়াতে তা স্থগিত হয়ে যায়। উল্লেখ্য, করোনা মহামারীর আগে হজ এবং ওমরাহ পালনের জন্য প্রতি বছর সারা বিশ্ব থেকে লাখ লাখ মুসল্লি সৌদি আরব ভ্রমণ করতেন। সর্বশেষ ২০১৯ সালে এক কোটি ৯০ লাখ মানুষ ওমরাহ পালন করেছিলেন। ওমরাহ ও হজ হচ্ছে সৌদি অর্থনীতির মূল নিয়ামক শক্তি। এ দফায় ১৩টি দেশ ছাড়া বাংলাদেশসহ অনেক দেশের জন্য ওমরার অনুমোদন দিয়েছে সৌদি সরকার। তবে ওমরাহ পালনের জন্য জুড়ে দেয়া হয়েছে একগুচ্ছ কঠিন ও জটিল শর্ত। আর ১৩টি দেশ এ সব শর্ত মানতে রাজি হলেও ওমরাহ করার সুযোগ পাবে না। দেশগুলো হলো- ভারত, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, আর্জেন্টিনা, ব্রাজিল, মিসর, ইথিওপিয়া, ইন্দোনেশিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, তুরস্ক, ভিয়েতনাম, আরব আমিরাত ও লেবানন। এর আগে এ নিষেধাজ্ঞা ছিল ৯ দেশের ওপর। এবারের নিষেধাজ্ঞায় যোগ করা হয়- আরও ৪ দেশ- আফগানিস্তান, ইথিওপিয়া, ভিয়েতনাম ও আরব আমিরাত। অবশ্য কঠিন এক শর্ত মেনে এ দেশগুলোর মুসলিমরাও সুযোগ পাবেন। যদি কোন মুসল্লি­ ওমরাহ করতে চান- তবে তৃতীয কোন দেশে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইন শেষেই সৌদি যাওয়ার সুযোগ পাবেন। এদিকে বাংলাদেশসহ অন্য দেশগুলোকেও মানতে হবে বেশ কিছু শর্ত। যার কিছু পূরণ করা খুব জটিল হবে। যেমন চীন দেশের তৈরি কোন কোম্পানির টিকা আগে নেয়া থাকলেও আবারও তাকে নতুন করে অন্য কোম্পানির টিকার পূর্ণ ডোজ নিতে হবে। তবেই তাকে সুযোগ দেয়া হবে। অর্থাৎ যারা ওমরাহ পালনে ইচ্ছুক- তাদের সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে করোনাভাইরাসের সম্পূর্ণ ডোজ টিকা নিতে হবে। সেই টিকা হতে হবে- ফাইজার, মডার্না, এ্যাস্ট্রাজেনেকা অথবা জনসন এ্যান্ড জনসনের। এসব টিকার দুটি ডোজ গ্রহণ করা ছাড়া সৌদি আরবে প্রবেশ করা যাবে না। এ শর্ত প্রকাশের আগে ইতোমধ্যে যা আগেই চীনের তৈরি সিনোফার্মের টিকার দুটি ডোজ টিকা নিয়েছেন কিংবা উল্লেখিত টিকা ছাড়া অন্য কোন টিকা নিয়েছেন- তাদেরকেও নতুন করে টিকা নিতে হবে অন্য কোম্পানির। সেগুলো হলো- ফাইজার, মডার্না, এ্যাস্ট্রাজেনেকা অথবা জনসন এ্যান্ড জনসন। তার মানে কেউ যদি গত এ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের আগেই চীনের সিনোফার্ম বা সিনোভ্যাক্সের টিকা নিয়েই থাকেন তাহলে ওমরাহ করতে হলে আবারও তাকে মাত্র দুমাসের মধ্যেই নিতে হবে ওই চারটির যে কোন একটি কোম্পানির পূর্ণ ডোজ। এটা কত বাস্তবসম্মত সে নিয়ে টিকা বিশেষজ্ঞরা সন্দিহান। এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাব সভাপতি আলহাজ শাহদাত হোসেন তসলিম বলেন, এটা আমার বলার এখতিয়ার নেই। স্বাস্থ্য অধিদফতর ব্যাখ্যা বা বক্তব্য দিতে পারবে। তবে আমার মতামত হচ্ছে-চীনের টিকা তো বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা অনুমোদিত। তাহলে চীনের টিকাগ্রহীতাদের ওমরাহ পালনে অনুমতি দিতে বাধা কোথায়। এদিকে সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ বিষয়ক ‘হারামাইন শারিফাইন’ নামক অফিসিয়াল পেজে প্রকাশিত তথ্যাবলীতে দেখা যায়, টিকার শর্তটিই বেশ জটিল। টিকার বাইরে অন্য শর্তাবলী হচ্ছে-নিজ নিজ দেশ থেকে ভিসা নেয়ার পর ওমরাহ করতে ইচ্ছুক মুসল্লিরা সরাসরি ফ্লাইটে সৌদি আরবে প্রবেশ করতে পারবেন। জানা গেছে, এবার ওমরাহ পালনের জন্য ১৮ বছর বা বেশি বয়সীরাই সুযোগ পাবেন। এর নিচে কেউ ওমরাহ যেতে পারবে না। সৌদি আরবের হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয় থেকে অনুমোদন পাওয়া (৫০০ সংস্থা) ওমরাহ এজেন্সির মাধ্যমেই কেবল ওমরাহ পালনে ইচ্ছুকদের সৌদি আরবে আসতে হবে। হজ অপারেটরদের মতে- এ শর্তে অনেকেই ওমরাহ পালনের সুযোগ পাবেন না। যে দম্পতির ৩/৪ বছরের শিশু রয়েছে তারা ইচ্ছে করলেও তাদেরকে সঙ্গে নিতে পারবেন না। তাদের ওমরাহ পালন করতে হলে প্রিয় শিশুদেরকে দেশে ফেলে রেখেই যেতে হবে সৌদি আরব। এ সম্পর্কে হাব সভাপতি মনে করেন, সৌদি আরব যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেটা অবশ্যই সবার জন্যই ইতিবাচক। এই করোনা তাণ্ডবের মাঝেও যে কিছু বিধিনিষেধ মেনেই ওমরাহ করার সুযোগ দেয়া হয়েছে তাতে সৌদি আরব তো বটেই ,বাংলাদেশসহ সব দেশই উপকৃত হবে। এতে অন্তত অর্থনীতি গতিশীল হবে কিছুটা হলেও। এগুলো ছাড়াও অন্য শর্তাবলীগুলো হচ্ছে- প্রত্যেক মুসল্লিকে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। যেমন-মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য নির্দেশিকা মেনে চলা। সঙ্গে রাখতে হবে স্বাস্থ্য রিপোর্ট। অর্থাৎ করোনাভাইরাস সংক্রান্ত সব ধরনের সাবধানতা এবং নিয়ম-কানুন কঠোরভাবে মেনেই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে। এসব শর্ত মেনেই গত দুই বছর ধরে সীমিত পরিসরে হজ আয়োজন করে সৌদি সরকার।
×