ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ৩০ জুলাই ২০২১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ ডেঙ্গুটাও বেড়ে গেল। আগেই জানা ছিল বর্ষায় বাড়বে এডিস মশা। আর এ মশা বাড়লে বাড়বে ডেঙ্গু বা চিকুনগুনিয়ার মতো রোগও। কিন্তু প্রাক প্রস্তুতি যা নেয়ার কথা, সেটি আর নেয়া সম্ভব হয়নি। ফলে শহর ঢাকায় উদ্বেগজন হারে বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী। বৃহস্পতিবার জুলাই মাসের একটি চিত্র তুলে ধরেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এতে দেখা যাচ্ছে, এখন পর্যন্ত ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৯২০ জনের। ৯৯ শতাংশ রোগীই ঢাকার। গত ২৪ ঘণ্টার হিসাবে বলা হয়েছে নতুন করে ১৯৪ জন আক্রান্ত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৮১ জনই ঢাকার। রাজধানীর বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৬১৮ জন। একটু পেছনে ফিরে তাকালে দেখা যাচ্ছে, এ সংখ্যা গত বছরে জুলাইয়ের তুলনায় অনেক বেশি। তার চেয়ে বড় কথা, সংখ্যাটি বেড়েই চলেছে। বলা চলে, এসব তথ্য সামনে আসতে থাকায় আগের তুলনায় তৎপরতা বাড়িয়েছে দুই সিটি কর্পোরেশন। উভয় মেয়রই এডিস মশা নিধনে মাঠে নেমেছেন। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে বেড়াচ্ছেন তারা। মশা নিধন ও নগরবাসীর মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছেন। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১০ অঞ্চলের ৫৪ ওয়ার্ডে একযোগে চলছে চিরুনি অভিযান। ২৭ জুলাই শুরু হওয়া অভিযান চলবে ৭ আগস্ট পর্যন্ত। দক্ষিণ সিটিতেও চলছে অনুরূপ কর্মসূচী। তবে একা সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে যে ডেঙ্গু মোকাবেলা সম্ভব নয়, তা-ও স্বীকার করতে হবে। এ জন্য নগরবাসীকেও দায় নিতে হবে। দায়িত্ব যা, পালন করতে হবে। দুই মেয়র বারবারই এ দায়িত্বের কথা স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন। উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলামের একটি আহ্বান, বলা যায়, বেশ আলোচনায় এসেছে। নগরবাসীকে লজ্জা ভুলে প্রতি শনিবার ১০টা ১০ মিনিটে নিজ নিজ বাসাবাড়ি পরিষ্কার করার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। একই সময়ে এ কাজ নিয়মিতভাবে করলে তা একসময় অভ্যাসে পরিণত হবে। এ চিন্তা থেকেই নতুন ক্যাম্পেইন শুরু করেছেন মেয়র। সুনির্দিষ্ট করে বলেছেন, ফুলের টব অব্যবহৃত টায়ার ডাবের খোসা ভাঙ্গা পাত্র ইত্যাদিতে পানি জমে থাকে। জমা পানি তিনদিনে একদিন ফেলে দিন। নিজের ঘরের বারান্দা ছাদ আশপাশ পরিষ্কার রাখুন। মেয়রদের নিয়ে সমালোচনা অনেক হয়। ডেঙ্গু ইস্যুতেও হচ্ছে। হবে। কিন্তু শুধু সমালোচনা করে আর কি পার পাওয়া যাবে? নাকি সমালোচনার পাশাপাশি নাগরিক দায়িত্বও পালন করতে হবে? জরুরী প্রশ্ন। আসুন নিজেকেই নিজে এ প্রশ্ন করে উত্তর খোঁজার চেষ্টা করি। করোনা ॥ ডেঙ্গুর মৌসুমে করোনা সংক্রমণও থেমে নেই। প্রতিদিনই বাড়ছে আক্রান্তের সংখ্যা। মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে। কারণ অনেক থাকতে পারে, তবে দৃশ্যমান একটি কারণ- সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাব। সরকার ও প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিরা ঈদের আগে অনুনয় করে বলেছিলেন যে, যেখানে আছেন সেখানে থেকেই ঈদ উদ্যাপন করুন। কে শুনে কার কথা? যে যেভাবে পেরেছেন ঢাকা ছেড়েছেন। একইভাবে ফিরেছেন। ফিরছেন এখনও। অনেকে কঠোর বিধিনিষেধ অমান্য করছেন একেবারেই কোন কারণ ছাড়া। এভাবে নিজের বিপদ ডেকে আনছেন। অন্যেরও। এখন তাই মহাদুর্যোগের মুখে পড়েছে রাজধানী। প্রায় প্রতিদিনই আগের দিনের সংক্রমণ ও মৃত্যুর রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট যখন পুরোদমে সক্রিয় হয়েছিল তখন শ্মশানে বা কবরস্থানে লাশ রাখার জায়গা পাওয়া যায়নি। আমাদের ঘনবসতিপূর্ণ এ শহরে কী হবে? ভাবতেই বুক ধক্ করে ওঠে। পাশাপাশি নিম্ন আয়ের খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষগুলোর কথাও একটু ভাবা উচিত। তাদের হাতে কোন কাজ নেই। পেটে ভাত নেই। এ মানুষগুলোকে তো বাঁচাতে হবে। কিন্তু ত্রাণ কোথায়? করোনার প্রথম ধাপে বহু মানবিক মানুষ ও সংগঠন নানা সহায়তা নিয়ে এগিয়ে এসেছিলেন। এবার তেমন কাউকে পাওয়া যাচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে মানবিক বিপর্যয়ও ঘটতে পারে। তাই সুষম চিন্তা করে এগোতে হবে। এ ক্ষেত্রেও সরকারের পাশাপাশি এগিয়ে আসতে হবে সাধারণ নাগরিকদের। ভাঙ্গা হচ্ছে বছিলা সেতু ॥ ইয়া বড় সেতু নির্মাণ করা হয়ে গেল। তার পর জানা গেল এটি যথেষ্ট উঁচু নয়। নৌযান চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি করছে এবং অতঃপর সেতুটি ভেঙ্গে ফেলার ঘোষণা এসেছে। কী কাণ্ড! হ্যাঁ, বছিলা সেতুর কথা বলছি। বুধবার জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) বৈঠকে পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলম জানিয়েছেন, ভরা বর্ষায় কার্গো জাহাজগুলো বসিলা ব্রিজের নিচে দিয়ে যেতে পারে না। ব্রিজটি আরও উঁচু করতে হবে। এ কারণেই ভাঙ্গার পরিকল্পনা। সেতুটি ভেঙ্গে ফেলা হবে। একই সেতু তৃতীয় বুড়িগঙ্গা সেতু নামে পরিচিত। এটি মোহাম্মদপুরের সঙ্গে কেরানীগঞ্জকে যুক্ত করেছে। বেশিদিন আগের কথা নয়, ২০০৯ সালের ২৯ ডিসে¤ম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এর উদ্বোধন করেন। তারও আগে প্রায় ৮৪ কোটি ৯ লাখ টাকা ব্যয়ে ৭০৮ মিটার দৈর্ঘ্যরে এ সেতু নির্মাণ করা হয়। সেতু দাঁড়িয়ে যাওয়ার পর জানা যায়, এর নিচ দিয়ে কার্গো চলাচল করতে পারছে না। নির্মাণের আগে একেবারে প্রাথমিক গবেষণাতেই এ তথ্য উঠে আসার কথা। আসেনি। ভাবা যায়? অগত্যা ‘সরকারী মাল/গঙ্গা মে ঢাল।’ ঢালার আয়োজন শুরু হচ্ছে। না, এমন ঘটনা একটি নয়। রাজধানীর উড়াল সেতু নির্মাণের বেলায়ও বড় ভুল চিহ্নিত হয়েছে। তাই নির্মাণ শুরুর আগেই ভুল শুদ্ধ জ্ঞান কাজে লাগানো উচিত।
×