ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অল্পের জন্য স্বপ্নভঙ্গ দিয়ার

প্রকাশিত: ২৩:০০, ৩০ জুলাই ২০২১

অল্পের জন্য স্বপ্নভঙ্গ দিয়ার

জাহিদুল আলম জয় ॥ বিশ্বের বৃহত্তম ক্রীড়া আসর অলিম্পিক গেমসে অভিষেকেই বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রমীলা আরচার দিয়া সিদ্দিকী। মাত্র ১৭ বছর বয়সী এই কন্যা বিশ্ব র?্যাঙ্কিংয়ে ১২৪ ধাপ এগিয়ে থাকা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে দুর্দান্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। কিন্তু আফসোস দিয়া তথা বাংলাদেশের। দুর্দান্ত খেলার পরও ভাগ্যনির্ধারণী টাইব্রেকারে মাত্র ১ পয়েন্টের ব্যবধানে হেরে অলিম্পিক থেকে বিদায় নিতে হয়েছে নীলফামারীর এই প্রতিশ্রæতিশীল আরচারকে। বৃহস্পতিবার জাপানের টোকিও’র ইউমেনোশিমা পার্ক আরচারি ফিল্ডে নারীদের রিকার্ভ এককের এলিমিনেশন রাউন্ডে দিয়া যেভাবে হেরেছেন তাতে হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হয়েছে বাংলাদেশের ক্রীড়ামোদীদের। প্রথমবারের মতো অলিম্পিকে একক ইভেন্টে খেলতে নামা দিয়া প্রবল প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে সেয়ানে সেয়ানে লড়াই করেন। কিন্তু শেষটা হয়েছে চোখের জলে। হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শেষ হাসি হেসেছেন বেলারুশের দিজিওমিনস্কায়া কারিনা। অর্থাৎ নারী আরচারির রিকার্ভ একক ইভেন্টের এলিমিনেশন রাউন্ডে (শেষ ৩২) কারিনার কাছে টাইব্রেকারে ৬-৫ সেট পয়েন্টে হেরে বিদায় নিয়েছেন দিয়া। এর ফলে টোকিও’র আসরে বাংলাদেশের আরচারদের পথচলা শেষ হয়েছে। গত মঙ্গলবার রিকার্ভ পুরুষ এককের শেষ ষোলো থেকে মাত্র ১ পয়েন্টের জন্য বিদায় নেন দেশসেরা আরচার রোমান সানা। এবার দিয়াকেও ১ পয়েন্টের আফসোসে পুড়তে হয়েছে। এর আগে রিকার্ভ মিশ্র দ্বৈতে দিয়া সিদ্দিকীকে সঙ্গে নিয়ে রোমান সানা পার হতে পারেননি শেষ ষোলোর গÐি। শেষ ৩২ এ জয় পেলেও প্রিকোয়ার্টার ফাইনালে দক্ষিণ কোরিয়ার জুটির কাছে রোমান-দিয়া হেরে যান ৬-০ সেট পয়েন্টে। কাগজে-কলমে দিয়ার চেয়ে অনেক এগিয়ে কারিনা। মেয়েদের রিকার্ভের এককে বিশ্বর‌্যাঙ্কিংয়ে ৩১তম স্থানে কারিনা। সেখানে দিয়ার অবস্থান ১৫৫তম। তারপরও দিয়া যেভাবে বুক চিতিয়ে লড়াই করেছেন সেটা সর্বমহলে প্রশংসিত হয়েছে। ক্রীড়া বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে সাধারণ ক্রীড়াপ্রেমীরা বলছেন, আগামীতে আন্তর্জাতিক আসরগুলোতে বাংলাদেশের মুখ উজ্জ্বল করবেন দিয়া সিদ্দিকী। সাফায়েত হোসেন নামের একজন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘দিয়ার খেলায় আমরা মুদ্ধ। এত অল্প বয়সে বিশ্বের সবচেয়ে বড় আসরে সে যেভাবে খেলেছে তাতে তার ভবিষ্যত উজ্জ্বল। আশা করব তাকে নিয়ে সংশ্লিষ্টরা সুদূরপ্রসীরা পরিকল্পনা করবেন’। দুই বছর আগে ইউরোপিয়ান গেমসে নারীদের দলগত রিকার্ভে বেলারুশের হয়ে রুপা জয় করেন দিজিওমিনস্কায়া কারিনা। ওই বছরেই বিশ্ব সামরিক গেমসে একই ইভেন্টে সোনার পদকের স্বাদ পান ২৬ বছর বয়সী এই আরচার। সেই তুলনায় সবদিক থেকে পিছিয়ে ছিলেন দিয়া। এরপরও তার পারফর্মেন্স নিঃসন্দেহে কৃতিত্বের দাবি রাখে। দিয়া এখন পর্যন্ত একটাই আন্তর্জাতিক পদক জিতেছেন। চলতি বছরের মে মাসে সুইজারল্যান্ডে রিকার্ভ মিশ্র ইভেন্টে রোমানের সঙ্গে জুটি গড়ে জিতেছিলেন রুপার পদক। সবদিক থেকে পিছিয়ে থাকা সেই দিয়াই প্রথম সেটে কারিনাকে কাঁপিয়ে দেন। বাংলাদেশী টিএনএজার জয় পান ২৩-২২ পয়েন্টে। পরের সেটে দিয়া হেরে যান ২৬-২৫ ব্যবধানে। তৃতীয় সেটটি ২৫-২৫ ব্যবধানে শেষ হওয়ায় পয়েন্ট ভাগাভাগি করেন দু’জন। পরের সেটে ২৭-২৫ ব্যবধানে জিতে এগিয়ে যান বেলারুশকন্যা। হাল ছেড়ে না দিয়ে প্রবল পরাক্রমে ঘুরে দাঁড়িয়ে পঞ্চম সেটটি একই ব্যবধানে জিতে নেন বাংলাদেশী কন্যা। এর ফলে পঞ্চম সেট শেষে দু’জনের সেট পয়েন্ট দাঁড়ায় সমান ৫ করে। যে কারণে ম্যাচ গড়ায় ভাগ্য নির্ধারণী শূট-অফে (টাইব্রেকার)। যেখানে একমাত্র শটে কারিনা মারেন ১০। কিন্তু দিয়া যে তীর ছুড়েন তা থেকে আসে ৯ পয়েন্ট। রোমানের মতো সরাসরি টোকিও অলিম্পিকে খেলার সুযোগ পাননি দিয়া। একেবারে শেষ মুহূর্তে আন্তর্জাতিক আরচারি ফেডারেশনের বিশেষ সুযোগে ওয়াইল্ড কার্ড পেয়ে টোকিও যান তিনি। হারলেও দিয়ার প্রশংসায় পঞ্চমুখ বাংলাদেশের জার্মান কোচ মার্টিন ফ্রেডরিক, ‘কিছুক্ষণের জন্য দিয়ার মন খারাপ ছিল। পরক্ষণে বুঝেছে সে তার কাজ অসাধারণভাবে সম্পন্ন করেছে। আমিও তাকে বুঝিয়েছি সে দুর্দান্ত লড়াই করেছে। শুধু আমি নই, সবাই তার প্রশংসা করছে। ফলে হতাশ হওয়ার কিছু নেই।’ ফ্রেডরিক আরও বলেন, ‘রোমান ও দিয়া দু’জনেই ভাল করেছে। আরও অনুশীলন ও সুযোগ পেলে তারা আরও ভাল করবে। বাংলাদেশে তাদের উত্তরসূরিও আছে।’ দিয়ার হারে টোকিও অলিম্পিকে বাংলাদেশের ছয় ক্রীড়াবিদের তিনজনই বিদায় নিলেন। সবার আগে বিদায় নিয়েছিলেন শূটার আবদুল্লাহ হেল বাকী। এরপর রোমান ও দিয়া। এখন খেলা বাকি আছে সাঁতারু আরিফুল ইসলাম ও জুনাইনা আহমেদ এবং স্প্রিন্টার জহির রায়হানের। এদিকে শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে স্বাগতিক জাপানকে টপকে আবারও পদক তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে এশিয়ার আরেক গর্বের প্রতীক চীন। গতকাল গেমসের ষষ্ঠদিন শেষে সর্বোচ্চ ১৭ স্বর্ণ, ৭ রৌপ্য ও ৯ ব্রোঞ্জপদকসহ মোট ৩১টি পদক জিতেছে ২০০৮ বেজিং আসরের সেরা হওয়া দেশটি। এর আগে গেমসের প্রথম দুইদিনও তলিকার এক নম্বরে ছিল চীন। কিন্তু তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চমদিন অর্থাৎ টানা তিনদিন শীর্ষস্থান দখল করে স্বাগতিক জাপান। অবশেষে আরেকবার আয়োজকদের পেছনে ফেলে এক নম্বরে উঠে এসেছে চীন। দুইয়ে থাকা জাপানের ভাণ্ডারে জমা হয়েছে ১৫ স্বর্ণ, ৪ রৌপ্য ও ৬ ব্রোঞ্জপদক। তাদের মোট পদক ২৫টি। নিদারুণ হতাশ করে চলেছে যুক্তরাষ্ট্র। গেমসের ইতিহাসের সেরা সাফল্যের দেশটি এখন পর্যন্ত শীর্ষে উঠতে পারেনি।
×