স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী ॥ রাজশাহীতে করোনার ভ্যাকসিন গ্রহণে আগ্রহ বেড়েছে মানুষের। দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে করোনার ভ্যাকসিন নিচ্ছেন পেশাজীবীদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষ। এখন পর্যন্ত রাজশাহীর ৯টি উপজেলাসহ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় টিকা গ্রহণে জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেছেন ৪ লাখ ৩ হাজার ২৭০ জন। টিকা প্রদান শুরুর পর থেকে রাজশাহী নগর ও জেলায় টিকা নিয়েছেন ৩ লাখ ৪৯ হাজার ২৫০ জন। যার মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ২ লাখ ৩৫ হাজার ২৯৬ জন আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ১ লাখ ২৩ হাজার ৯৫৪ জন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যারা করোনা টিকা গ্রহণ করছেন তাদের মাঝে করোনা সংক্রমণের পাশাপাশি এই রোগে মৃত্যু ঝুঁকি তুলনামূলক কম। করোনা আক্রান্ত হলেও টিকা নেয়াদের মাঝে মৃত্যুর খবর এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।
এদিকে পূর্ব ঘোষণা অনুসারে গত ২৬ জুলাই থেকে রাজশাহী নগরীর ৩০টি ওয়ার্ডে একযোগে করোনা টিকার জন্য অনলাইন রেজিস্ট্রেশন ও টিকা প্রদান কার্যক্রম শুরুর কথা থাকলেও সরকারী সিদ্ধান্তের কারণে তা সম্ভব হয়নি। তবে ৭ আগস্টের পর থেকে ক্যাম্পেনের মাধ্যমে পুরো দেশে সমন্বিতভাবে একযোগে এই কার্যক্রম শুরু করা হবে। সেই ধারায় যুক্ত হবে রাজশাহী নগরের সব ওয়ার্ড।
রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডাঃ শামীম ইয়াজদানী জানান, হাসপাতালে ভর্তি করোনা রোগীদের মধ্যে কেউই ভ্যাকসিন নেয়নি। হাসপাতালের সকল চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের ভ্যাকসিনের আওতায় আনা হয়েছে। ভ্যাকসিন নেয়ায় ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মাঝে করোনা সংক্রমণ দেখা যাচ্ছে না। অথচ তারা সর্বক্ষণ করোনা রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিয়ে চলেছেন। এ থেকেই প্রমাণ মেলে করোনা প্রতিরোধে হিসেবে ভ্যাকসিন কার্যকর ভ‚মিকা রাখছে।
রাজশাহী জেলা সিভিল সার্জন ডাঃ কাইয়ুম তালুকদার জানান, করোনা টিকার জন্য ৯টি উপজেলায় অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেছেন মোট ২ লাখ ৭৬ হাজার ২৭০ জন। আর প্রথম ডোজ টিকা নিয়েছেন ১ লাখ ৬৫ হাজার ৯৫৫ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৮১ হাজার ৪১১ জন। সিভিল সার্জন জানান, পর্যাপ্ত টিকা মজুদ রয়েছে। মানুষের মাঝে সচেতনতা বৃদ্ধি পাওয়ায় টিকা গ্রহীতার সংখ্যা বেড়েছে। টিকা নিয়ে কুসংস্কার বা অপপ্রচারে মানুষ আর কান দেয় না, দিবেও না।
রাসিকের স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান ডাঃ আঞ্জুমান আরা বেগম জানান, টিকার জন্য রাসিক এলাকায় অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করেছেন ১ লাখ ২৭ হাজার মানুষ। যাদের মধ্যে প্রথম ডোজ নিয়েছেন ৬৯ হাজার ৩৪১ জন এবং দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছেন ৪২ হাজার ৫৪৩ জন।
ডাঃ আঞ্জুমান আরা আরও জানান, রাসিক এলাকার সাধারণ মানুষের জন্য রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে করোনা টিকা প্রদানের বুথ করা হয়েছে। মানুষের মাঝে টিকার চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বুথের সংখ্যা বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন রাসিক মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। গত ২৬ জুলাই থেকে রাসিকের প্রতিটি ওয়ার্ডে নির্ধারিত পয়েন্টে টিকা প্রদানের পাশাপাশি টিকার জন্য অনলাইনে রেজিস্ট্রেশন করে দেয়ার ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নেয়া হয়। তবে সরকারী সিদ্ধান্তের কারণে তা যথা সময়ে শুরু করা সম্ভব হয়নি। তবে রাসিকের স্বাস্থ্য বিভাগ প্রস্তুত আছে, এই সিদ্ধান্ত কার্যকর করতে বলার সঙ্গে সঙ্গে কার্যক্রম শুরু করা হবে।
রাজশাহী বিভাগীয় স্বাস্থ্যের পরিচালক ডাঃ হাবিবুল হাসান তালুকদার বলেন, ভ্যাকসিনও পর্যাপ্ত রয়েছে। কিন্তু জাতীয় একটি পরিকল্পনা হচ্ছে যেখানে সিটি কর্পোরেশনের পাশাপাশি প্রতিটি ইউনিয়নের ওয়ার্ড পর্যায়ে ভ্যাকসিনেশন কার্যক্রম চালু করা হবে। আমাদের কেন্দ্রের এই কার্যক্রমের সঙ্গে সমন্বয় রাখতে হবে। আগামী ৭-১২ আগস্ট পর্যন্ত পুরো দেশে এ নিয়ে ক্যাম্পেনও হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
