ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

পায়ের কাছে ফুটে থাকা গোলাপি ঘাসফুল

প্রকাশিত: ২৩:৩৪, ২৯ জুলাই ২০২১

পায়ের কাছে ফুটে থাকা গোলাপি ঘাসফুল

মোরসালিন মিজান ॥ ঘাসের ওপর দিয়ে হাঁটছেন? একটু প্লিজ সতর্ক হয়ে পা ফেলুন। কারণ এখন সেখানে অনিন্দ্য ফুল ফুটে আছে! হ্যাঁ, ঘাসফুলের কথা বলছি। বর্ষার ফুল। বর্ষার বলতে, ভরা বর্ষায় ফোটে। প্রতিবারের মতোই প্রতীক্ষা করে ছিলাম প্রিয় ফুলের জন্য। আষাঢ় এভাবেই গেল। শ্রাবণে এসে দেখা মিলল গোলাপি ঘাসফুলের! বুধবার রাজধানীর মনিপুরী পাড়ার একটি বাসার সামনে এ ফুল দেখে মনে হচ্ছিল, এর জন্য প্রতীক্ষা করাই যায়। ছোট্ট বাগানে নানা জাতের ফুল। কোনটি ফুটছে। কোনটি ঝরে পড়ছে। উঁচু গাছের ফুল ভূমিভাগের যে জায়টায় ঝরে পড়ছে সেখানেই কিনা ফুটে আছে গোলাপি ঘাসফুল। টানা বৃষ্টিতে সদ্য ফোটা পাপড়ি দারুণ সতেজ দেখাচ্ছিল। হাঁটু গেড়ে বসে ফুলের গায়ে হাত বোলাব, ঠিক তখন কোত্থেকে একটা দমকা হাওয়া এসে লাগল। ওমনি চঞ্চল হয়ে উঠল গাছ। লম্বা সবুজ পাতা আর ফুলেরা একসঙ্গে দুলতে শুরু করল। বাগানটি যার যত্ন ভালবাসায় সমৃদ্ধ হয়েছে তার নাম ফারিয়া হাসিন। তিনি বলছিলেন, অন্য গাছের বেশ যতœআত্মি করতে হয়। ঘাসফুলের বেলায় অত দরকার হয় না। তার পরও এত সুন্দর ফুল দেয়। একে প্রকৃতির দান হিসেবে গ্রহণ করেন বলে জানান তিনি। অবশ্য শুধু অযত্নে ফোটা নয়, ঘাসফুলকে ‘ভুঁইফোড়ও’ বলা হয়। তাই বলে ফুলের আবেদন এতটুকু কমে না। বরং বাড়ে। এ পর্যায়ে বলি, যেটিকে এতক্ষণ ঘাসফুল বলছি সেটি রেইন লিলি নামেও পরিচিত। বর্ষায় হয় বলেই এমন নামকরণ। একই ফুল রেইন ফ্লাওয়ার, ফেয়ারি লিলি, জেফাইর লিলি, ম্যাজিক লিলি, আটামাসকো লিলি নামে পরিচিত। বোটানিক্যাল নাম জেফাইরান্থেসিস রোজ। ইংরেজী নামগুলোর বাইরে বাংলাদেশে এটি ঘাসফুল নামে অধিক পরিচিত। ঘাসফুল বা রেইন লিলি আমারিলিডাসি পরিবারের সদস্য। আদিনিবাস দক্ষিণ আমেরিকা। বাংলাদেশেও আছে বহু বছর ধরে। মজার ব্যাপার হলো ফুলটি সন্ধ্যায় নিজেকে কিছুটা গুটিয়ে নেয়। দিনের আলোয় স্বরূপে ফেরে। এ ফুলের রং হয় তিনটি। সাদা, হলুদ ও গোলাপি। সাদা ফুলের বৈজ্ঞানিক নাম জেফাইরান্থেসিস ক্যানাডিডা। হলুদ ফুলটি জেফাইরান্থেসিস সিট্রিনা। আমাদের দেশে বেশি দেখা যায় গোলাপি ঘাসফুল বা রোজি রেইন লিলি। চিনতে সুবিধা হবে, যদি বলি, এ ফুল কবরের উপরিভাগে বিশেষ দেখা যায়। শ্বেত পাথরে বাঁধানো কবরের মাঝখানে শূন্য মাটিতে লাগিয়ে দেয়া হয় এই ঘাস। ঘন সবুজ ঘাসে ঢাকা পড়ে বিবর্ণ মাটি। সবুজ সেই কার্পেটে ক্ষুদ্র কিন্তু দারুণ রঙিন ফুল ফুটে। খেয়াল করেছেন কখনও? বনানী কবরস্থানে বেশি চোখে পড়ে। মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানেও কম বেশি দেখা যায়। তাই বলে ফুলটি শুধু সমাধির সৌন্দর্য পবিত্রতা আর ভাবগাম্ভীর্য রক্ষা করে, এমনটি ভাবা যাবে না। বাগানের সৌন্দর্যও বহুগুণে বাড়িয়ে দেয়। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ফুল। একসঙ্গে ঘন হয়ে ফুটে। সবুজের মাঝে মাথা তুলে থাকা রঙিন ফুল সৌন্দর্যপ্রেমীদের নজর কারবেই। এ গাছের উচ্চতা মাত্র ১৫-২০ সেমি। ফলে পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় একটু নিচে তাকালে চোখে পড়ে। পায়ের কাছে থাকলেও, ঘাসফুল বহুবর্ষজীবী। সহজে হারিয়ে যায় না। তাই বলে, শুরুতে যেটি বললাম, প্লিজ, পায়ের মারাবেন না অন্তত।
×