ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

কক্সবাজারে ফের পাহাড় ধস ঢলে একই পরিবারের ৫ জনসহ মৃত্যু ১২

প্রকাশিত: ২৩:২৩, ২৯ জুলাই ২০২১

কক্সবাজারে ফের পাহাড় ধস ঢলে একই পরিবারের ৫ জনসহ মৃত্যু ১২

এইচএম এরশাদ, কক্সবাজার ॥ কক্সবাজারে আবারও পাহাড় ধসে মাটি চাপায় এবং ঢলের পানিতে ভেসে ১২ জনের মৃত্যু ঘটেছে। এরমধ্যে টেকনাফে মারা গেছে একই পরিবারের পাঁচজন। প্রাপ্ত তথ্যে প্রকাশ, গত দুদিনে কক্সবাজারে পাহাড় ধস ও পানিতে ভেসে রোহিঙ্গাসহ ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহত হয়েছে প্রায় ২০ জন। মঙ্গলবার রাতে ও বুধবার ভোর রাতে টেকনাফের হ্নীলা, মহেশখালী ও উখিয়ার রাজাপালং মাইল্যারকুল, মাছকারিয়া এবং পার্শ্ববর্তী পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুমের শীলপাড়ায় পৃথক এসব ঘটনা ঘটেছে। বুধবার সকালে জেলা প্রশাসনের পক্ষে নিহত পরিবারের স্বজনদের অর্থ সহায়তা ও ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। জেলার কুতুবদিয়া, মহেশখালী, উখিয়া, টেকনাফ ও চকরিয়ার নিম্নঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। জানা যায়, টেকনাফের হ্নীলা পানখালি ভিলেজার পাড়ায় পাহাড় ধসে একই পরিবারের ৫ জন নিহত হয়েছে। নিহতরা হচ্ছে- কৃষক ছৈয়দ আলমের ছেলেমেয়ে যথাক্রমে আব্দু শুক্কুর (১৮), জোবায়ের (১৬), আব্দুল লতিফ (১৪), কহিনুর আকতার (১৩) ও জাহেনুর বেগম (১১)। পাহাড় ধসে মহেশখালীতে নিহত ব্যক্তি আলী হোসেন (১২০) হোয়ানক রাজুয়ার ঘোনার মৃত রফিক উদ্দিনের পুত্র। উখিয়ায় মাছকারিয়া খালের পানিতে ভেসে মৃত্যুবরণকারী আলী আকবর (৩৮) স্থানীয় হাবিবুর রহমানের পুত্র। উখিয়ার মাইল্যারকুল খালে নিহত কিশোর মোঃ রুবেল (১৮) স্থানীয় কেরামত আলীর পুত্র। পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়ির উত্তর ঘুমধুম শীলপাড়ায় বৃষ্টির পানিতে ডুবে নিহত কিশোর আশীষ বড়ুয়া (১৭) শীলপাড়ার সুবাস বড়ুয়ার পুত্র। উখিয়া উপজেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, টানা বৃষ্টির কারণে ১২০ গ্রাম প্লাবিত, ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দীসহ ৫০ লক্ষাধিক টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। ঢলের পানিতে মাছ ধরতে গিয়ে ঈদগাঁওয়ে নিখোঁজ তিন জনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। রামু ফায়ার সার্ভিস ও চট্টগ্রাম থেকে আসা ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি দল দীর্ঘ প্রচেষ্টা চালিয়ে বুধবার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে মৃতদেহগুলো উদ্ধার করে। বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টায় বাস স্টেশনের পূর্ব পাশে দরগাহ এলাকায় ঢলের পানিতে মাছ ধরতে যান একই গ্রামের মোহাম্মদ শাহাজাহানের দুই ছেলে মোহাম্মদ ফারুক (২৬) ও দেলোয়ার হোসেন (১৫) এবং আবছার কামালের ছেলে মোহাম্মদ মোরশেদ (১৪)। টানা বর্ষণে ও পাহাড়ী ঢলের পানিতে তখন স্রোতের টানে তারা তলিয়ে যায়। ওই সময় স্থানীয়রা তাদের উদ্ধারে তৎপরতা চালায় এবং ফায়ার সার্ভিসকে খবর দেয়। টেকনাফ থেকে সংবাদদাতা জানান, হ্নীলা পানখালিতে পাহাড় ধসের ঘটনায় নিহত কৃষক ছৈয়দ আলমের পরিবারে ৫ জন নিহত হয়েছে। প্রতিরাতের ন্যায় মঙ্গলবারও পরিবারের ৮ সদস্য নিজ বাড়িতে ঘুমায়। গভীর রাতে ভারি বৃষ্টির কারণে পাহাড় ভেঙ্গে বাড়িটির ওপর ধসে পড়ে। এতে ৩ জন বের হতে পারলেও ৫ সদস্য মাটির নিচে চাপা পড়ে ঘটনাস্থলে মারা যায়। খবর পেয়ে স্থানীয়রা মাটি খুঁড়ে ৫ জনকে উদ্ধার করেছে। তবে কাউকে জীবিত পাওয়া যায়নি। উখিয়া থেকে সংবাদদাতা জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাতে পাহাড়ী ঢলের পানিতে ভেসে দুই ব্যক্তি মারা গেছে। রাতে বাড়ি ফেরার পথে তারা মাছকারিয়া ও মাইল্যারকুল খাল পার হতে চেষ্টা করেছিল। রাতভর সবখানে খোঁজাখুঁজির পর বুধবার সকালে তাদের মরদেহ উদ্ধার করেছে স্বজনরা। প্রবল বৃষ্টিতে পাহাড়ী ঢলে উখিয়ার রাজাপালং ইউপির মাছকারিয়া ও মাইল্যারকুল খালে ভেসে যায় রুবেল ও আলী আকবর নামে দুই ব্যক্তি। তাদের মরদেহ উদ্ধার করে বুধবার দুপুরে স্থানীয় কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। মঙ্গলবার পাহাড় ধসে পাঁচ রোহিঙ্গাসহ সাত জনের মৃত্যু ঘটেছে। বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মোঃ কামরুল ইসলাম, জেলা প্রশাসক মোঃ মামুনুর রশিদ, ইউএনও মোঃ নিজাম উদ্দিনসহ সরকারী কর্মকর্তাগণ বালুখালী ক্যাম্পে পাহাড় ধসে নিহত রোহিঙ্গাসহ ২০ রোহিঙ্গা পরিবারকে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করেন। মহেশখালী থেকে সংবাদদাতা জানান, হোয়ানক রাজুয়ার ঘোনায় পাহাড় ধসে আলী হোসেন নামে এক বৃদ্ধের মৃত্যু ঘটেছে। এ সময় মাটি চাপায় ৩টি গরু ও ছাগল মারা গেছে। বুধবার ভোররাতে এ ঘটনা ঘটে। নিহতের পুত্র নুরুল আমিন বলেন, টানা বৃষ্টি ও পাহাড় ধসে বাড়িতে মাটি ঢুকে পড়ে। এতে অন্য সদস্যরা বের হতে পারলেও ঘরে আটকে যায় বৃদ্ধ পিতা আলী হোসেন। পরে পাহাড়ের মাটি চাপায় ঘটনাস্থলে তার মৃত্যু হয়। নুরুল আমিনের ছেলে আলমগীরের (১৪) পা ভেঙ্গে গেছে।
×