ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

দালালদের দৌরাত্ম্য কমেছে

ঘরে বসেই পাওয়া যাচ্ছে ই-পাসপোর্ট সেবা

প্রকাশিত: ২৩:২৫, ২৮ জুলাই ২০২১

ঘরে বসেই পাওয়া যাচ্ছে ই-পাসপোর্ট সেবা

আজাদ সুলায়মান ॥ চলমান লকডাউনেও সীমিত আকারে পাসপোর্টের কার্যক্রম চালু রাখা হয়েছে। সীমিত আকারে সেবা অব্যাহত রাখায় বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের সেবায় মিলছে ই-পাসপোর্ট ও এমআরপি। ঘরে বসেই গ্রাহকরা পাচ্ছেন ই-পাসপোর্ট সেবা। তবে তা শুধু অতীব জরুরী ক্যাটাগরিতেই মিলছে। মেশিন রিডেবল পাসপোর্টের জন্য অনলাইনে এবং সরাসরি- উভয়ভাবেই আবেদন করা গেলেও ই-পাসপোর্টের আবেদন করা যাবে শুধু অনলাইনেই। শুধু ঘরে বসেই পাওয়া যাচ্ছে ই-পাসপোর্টের সব ধরনের সেবা। এদিকে পাসপোর্ট অফিসে আগের মতো সেই দালালদের দৌরাত্ম্য অনেকাংশেই কমে এসেছে বলে সরজমিনে দেখা যায়। আগে গেটের বাইরে দালালদের সংঘবদ্ধ ভিড় দেখা যেত। এখন তাদের দেখা যায় না। বরং উল্টো অফিসের সামনে তিন ডজন দালালের ছবি দিয়ে তাদের দেখামাত্রই ধরিয়ে দেয়ার নির্দেশ। জানা গেছে, অতীব জরুরী ক্যাটাগরিতে পাসপোর্টের আবেদন গ্রহণ করা হচ্ছে। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ ভিআইপি, সামরিক বাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের এ সেবা দেয়া হচ্ছে। সাধারণদের আপাতত অন্য সব পাসপোর্ট আবেদন জমা নেয়া হচ্ছে না। এভাবে আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত কার্যক্রম চালাবে অধিদফতর। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অধিদফতরের মহাপরিচালক ও মুখপাত্র মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আইয়ুব চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন- বর্তমানে ঢাকা থেকে এ পর্যন্ত প্রায় দেড় লাখ ই-পাসপোর্ট ইস্যু হয়েছে। গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে দেশের সব পাসপোর্ট অফিসে ই-পাসপোর্ট দেয়া হচ্ছে। বর্তমানে আমরা ই-পাসপোর্ট এবং এমআরপি উভয়ই দিচ্ছি। যারা যেটা চাচ্ছেন তারা সেটাই পাচ্ছেন। আমরা দ্রæততম সময়ের মধ্যে পাসপোর্ট দেয়ার চেষ্টা করছি। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে অনেকের পাসপোর্ট পেতে দেরি হচ্ছে। এর অবশ্য কারণও আছে। অনেক সময় পুলিশি প্রতিবেদনের কারণে পাসপোর্ট দিতে দেরি হয়। আবার অনেকে নিজের নামের সঙ্গে বিএসসি, পিএসসিসহ নানা পদবি জুড়ে দেন। এ কারণে সফটওয়ারে সেই আবেদনগুলো পড়ে থাকে। এছাড়াও অনেকের নামের সঙ্গে জাতীয় পরিচয়পত্র ও জন্মনিবন্ধনে দেয়া নামের মিল না থাকায় অনেক সময় পাসপোর্ট পাওয়া যায় না। তিনি আরও বলেন, লকডাউনে শুধু জরুরী ভিত্তিতে ফি জমা দেয়া আবেদনগুলো গ্রহণ করা হচ্ছে। পাশাপাশি পাসপোর্ট ডেলিভারির কাজও চলছে। বিধিনিষেধ সংক্রান্ত পরবর্তী নির্দেশনা পেলে আগের মতো পুরোদমে সব ধরনের পাসপোর্টের আবেদন করা হবে। অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ের সব শাখার দাফতরিক কার্যক্রম সীমিত পরিসরে চলমান রয়েছে। এছাড়াও অধিদফতরের আগারগাঁওয়ের পার্সোনালাইজেশন সেন্টারে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কার্যক্রম চালু থাকবে। উত্তরার পাসপোর্ট পার্সোনালাইজেশন কমপ্লেক্স, ই-পাসপোর্ট প্রিন্টিং ও ব্যাসিক ক্লিয়ারেন্স শাখার কার্যক্রম স্বাস্থ্যবিধি মেনে চালু থাকবে। পাশাপাশি সব বিভাগীয় ও আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে পাসপোর্টের বিতরণ কার্যক্রম চলমান থাকবে। জানা গেছে, ই-পাসপোর্ট আবেদন প্রক্রিয়া বেশ জটিল। অনেক হিসাব-নিকাশ করে আবেদন পূরণ করতে হয়। সামান্য ভুল-ত্রæটির দরুন আটকে যেতে পারে পাসপোর্ট তৈরির কাজ। এ বিষয়ে সবচেয়ে জরুরী করণীয় হচ্ছেন আপনি কীভাবে পেমেন্ট করতে চান সেটা উল্লেখ করা। যদি অনলাইন ভিসা কার্ড বা বিকাশ বন্ধ থাকে তাহলে অফলাইনেই করতে হবে। সব তথ্য ঠিকমতো দেয়ার পর সাবমিট করা লাগে। সাবমিটের পর ই-মেইলে একটা কনফারমেশন মেইল আসবে। আবেদন ডাউনলোড করতে হয়। তারপর করতে হয় শিডিউল সিলেকশন। আবেদন পর শিডিউল সিলেকশন করা লাগে। নিজের মতো করে কোন খালি ¯øট-এ এ্যাপয়েন্টমেন্ট নেয়া যায়। তারপর নির্ধারিত যে কোন ব্যাংকে গিয়ে টাকা পরিশোধ করে দিলেই হবে। অনুমোদিত ব্যাংকগুলো হচ্ছে- ঢাকা ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, ট্রাস্ট ব্যাংক ও ব্যাংক এশিয়া। উল্লেখ্য, ব্যাংকেও আপনার নাম চাইবে। পাসপোর্ট বা এনআইডিতে দেয়া হুবহু নাম দিতে হবে। ব্যত্যয় ঘটানো যাবে না নামের। কিছু কিছু ক্ষেত্রে এনআইডি এবং আবেদনের কপি দেখতে চায়। তেমনটির জন্য সঙ্গে করে এক কপি নিয়ে যেতে হয়। টাকা জমা দেয়ার পর রিসিট যতœ করে রাখতে হবে। তারপরের ধাপ হচ্ছে- পাসপোর্ট আবেদন জমা এবং এ্যাপয়েন্টমেন্ট নিচের ডকুমেন্টগুলো সঙ্গে করে নিয়ে যাওয়া। যেমন- পাসপোর্ট ফর্মের প্রিন্ট করা কপি, এ্যাপয়েন্টমন্ট বা অর্ডার ¯িøপ, এনআইডির মূল এবং ফটোকপি, বিদ্যুত, গ্যাস, পানির বিলের ফটোকপি, শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে স্টুডেন্ট আইডি কার্ডের ফটোকপি, ব্যবসায়ীদের জন্য ট্রেড লাইসেন্স, চাকরিজীবীদের জন্য অফিসের আউডি কার্ডের কপি এবং আনুষঙ্গিক কাগজপত্র, বিবাহিতদের জন্য কাবিননামার দলিল। আর ছবি তোলার ক্ষেত্রে সাদা বা হাল্কা রঙের জামা না পরাই ভাল। গ্রাহকের টাইম সিডিউল যখনই থাকুক, আগে গেলে আগে ভিত্তিতে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন হবে। সর্বশেষ গ্রাহককে যেতে হবে আগারগাঁওয়ের পাসপোর্ট অফিসের ১০৩ ও ৩০৮ নম্বর রুমে। এখানে সব চেক করে একটা সিল এবং সিরিয়াল লিখে দেবে। ৩০৮ এ দেয়া সিরিয়াল অনুযায়ী চেক করা হবে। অনলাইন আবেদন সাবমিটে কোন ভুল হয়ে থাকলে এখানে বলে দেবেন। এখানকার ৪০৩ নম্বর কক্ষ পুরুষ, ৪০৪/৪০৫ নম্বর কক্ষ নারী ও শিশুদের বায়োমেট্রিক করানো হয়। ৪০১ নম্বর কক্ষ থেকে সিল নেয়ার পর এই কক্ষে আপনার ডকুমেন্ট রি-চেক করা হয়। ডকুমেন্ট স্ক্যান করা হয়। কোন সংশোধন থাকলে সংশোধন করতে হবে। দুই হাতের ১০ আঙ্গুলের ছাপ, চোখ স্ক্যান, ডিজিটাল স্বাক্ষর নেয়া হয় এখানেই। কাজ শেষ হলে ডেলিভারি ¯িøপ দিয়ে দেবে। এরপর লাগবে পুলিশ ভ্যারিফিকেশন। এভাবেই সম্পন্ন্ করতে হয় ই-পাসপোর্ট প্রক্রিয়া। এদিকে আগারগাঁও অফিস সরজমিনে পরিদর্শন করে দেখা যায়- অনেকেরই অভিযোগ-আবেদনের পর সঠিক সময়ে পাসপোর্ট হাতে মিলছে না। সাধারণ আবেদনের ক্ষেত্রে ২১ কার্যদিবসের মধ্যে পাসপোর্ট হাতে পাওয়ার কথা। কিন্তু অনেক সময় দুই মাসের বেশি সময় পার হলেও সেই পাসপোর্ট হাতে আসে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রমও হয়। ডেলিভারির নির্দিষ্ট তারিখের আগেই হাতে পৌঁছে যায় পাসপোর্ট। এ বিলম্বের জন্য কি শুধু পাসপোর্ট অধিদফতর দায়ী নাকি আবেদনকারীরও দায় থাকে। কয়েকজন অভিযোগ করেছে- ফোন না করে ভেরিফিকেশন সম্পর্কে কিছু জানা যায় না। ইব্রাহিম নামের একজন বলেন- প্রায় মাস তিনেক হলেও আবেদন করে এখনও পাসপোর্ট অনুমোদিত হয়নি। ভেরিফিকেশন শেষ হওয়ার পরেও এখনও পাসপোর্ট হাতে পাইনি। তবে গ্রাহকদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে- আগের এমআরপি থাকলে নির্ধারিত সময়ের আগেই পাওয়া যাচ্ছে ই-পাসপোর্ট। নাম প্রকাশে একজন কর্মকর্তা বলেন-সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হচ্ছে পুলিশ ভেরিফিকেশন। প্রতিটি পাসপোর্ট অনুমোদন পাওয়ার পূর্বশর্ত হচ্ছে পুলিশ ভেরিফিকেশনের ইতিবাচক তদন্ত প্রতিবেদন। পুলিশ প্রতিবেদন পেতে দেরি হওয়ার কারণে বর্তমানে ই-পাসপোর্ট ইস্যু করতে কিছুটা সময় লাগে। একটি সাধারণ পাসপোর্টের আবেদনের ৭ দিনের মধ্যে পুলিশ ভেরিফিকেশন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মাঝে মধ্যে প্রতিবেদন দিতে মাসখানেকের বেশি সময় লেগে যায়।
×