ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফিলিপিন্সের স্বপ্নপূরণের সারথি দিয়াজ

প্রকাশিত: ২৩:১৩, ২৮ জুলাই ২০২১

ফিলিপিন্সের স্বপ্নপূরণের সারথি দিয়াজ

জাহিদুল আলম জয় ॥ শুরু থেকেই টোকিও অলিম্পিক দারুণভাবে জমে উঠেছে। বিশেষ করে মঙ্গলবার চতুর্থদিনে বেশ কয়েকটি ইভেন্টে গৌরবময় রেকর্ড হয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম শীর্ষ নাম হিদিলিন দিয়াজ। ৩০ বছর বয়সী এই এ্যাথলেট নিজ দেশ ফিলিপিন্সকে প্রথমবারের মতো বিশ্বের বৃহত্তম গেমসের স্বর্ণপদক উপহার দিয়েছেন। অলিম্পিকের আগের তিন আসরে দিয়াজ ফিরেছিলেন শূন্য হাতে। কিন্তু অদম্য মানসিকতা আর দেশপ্রেমে উজ্জীবিত হয়ে এবার টোকিওতে বাজিমাত করেছেন। দিয়াজের হাত ধরে ফিলিপিন্স পেয়েছে অধরা অলিম্পিক স্বর্ণের স্বাদ। গতকাল ভারোত্তোলনে মেয়েদের ৫৫ কেজি ওজন শ্রেণীতে স্বপ্নের সোনার পদক জয় করেন দিয়াজ। গৌরবময় কীর্তি গড়ার পথে দু’টি অলিম্পিক রেকর্ডও গড়েছেন তিনি। দিয়াজ দুই ক্যাটাগরি (স্ন্যাচ ও ক্লিন এ্যান্ড জার্ক) মিলিয়ে তোলেন ২২৪ কেজি। এর মধ্যে ক্লিন এ্যান্ড জার্কে তোলেন ১২৭ কেজি। আর ¯œ্যাচে ৯৭ কেজি। এর ফলে দুটিতেই হয়েছে সর্বোচ্চ তোলার অলিম্পিক রেকর্ড। ক্লিন এ্যান্ড জার্কে ১২৬ কেজি তুলে দিয়াজের ইতিহাস গড়ার পথে বাধা হয়েছিলেন চীনের লিয়াও কিউয়ান। কিন্তু ১ কেজি বেশি তুলে ঠিকই ইতিহাসের পাতায় নাম লিখিয়েছেন ফিলিপিন্সের স্বর্ণকন্যা। মোট ২২৩ কেজি ওজন তুলে এই ইভেন্টে রুপা জয় করেছেন লিয়াও। আর ব্রোঞ্জপদক জিতেছেন কাজাখস্তানের জুলফিয়া চিনশানলো। অলিম্পিকে এর আগে ফিলিপিন্স ১০টি পদক পেলেও এর মধ্যে একটিও স্বর্ণ ছিল না। এবার প্রথম সেই স্বাদ দিয়েছেন দিয়াজ। শুধু তাই নয়, দেশটির প্রথম নারী হিসেবে ২০১৬ ব্রাজিলের রিও অলিম্পিকেও পদক জিতেছিলেন তিনি। সেবার ভারোত্তোলনের ৫৩ কেজি ওজন শ্রেণীতে রুপার পদক জিতেছিলেন। অনেক সাধনার পর এবার টোকিও থেকে দেশকে প্রথম সোনা এনে দিয়েছেন দিয়াজ। কিন্তু এই পথটা মোটেও সহজ ছিল না। কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে অসাধ্য সাধন করেছেন। তাইতো পুরস্কারের মঞ্চে চোখের জল আটকে রাখতে পারেনি, ‘প্রথমে আমি বিশ্বাসই করতে পারিনি। অনেকক্ষণ ঘোরের মধ্যে ছিলাম। ভাবছিলাম সত্যিই কি আমি স্বর্ণপদক জিতেছি! সত্যিকার অর্থে এটা আমার জীবনের সবচেয়ে সেরা অর্জন। দেশের মানুষকে প্রথমবার অলিম্পিক স্বর্ণপদক উপহার দিতে পেরেছি। এরচেয়ে আনন্দের আর কিছু হতে পারে না’। ২৭ জুলাই ২০২১ তারিখটা কখনই ভুলতে পারবে না বারমুডার মানুষ। মাত্র ৬৩ হাজার জনগণ দেশটির। সেই দেশটিই ‘গ্রেটেস্ট শো অন আর্থের’ ইতিহাসে নিজেদের প্রথম সোনা জিতেছে। এটিই অলিম্পিকে সবচেয়ে কম জনসংখ্যার দেশের একমাত্র সোনা জয়ের রেকর্ড। মঙ্গলবার মেয়েদের ট্রায়াথলনে বারমুডাকে ইতিহাস গড়া সোনার পদক উপহার দিয়েছেন ফ্লোরা ডাফি। সাঁতার, সাইক্লিং ও দৌড় মিলিয়ে হওয়া ট্রায়াথলনে ১ ঘণ্টা ৫৫.৩৬ সেকেন্ড সময় নিয়ে সবার সেরা হন তিনি। গ্রেট ব্রিটেনের জর্জিয়া টেইলর-ব্রাউন ১ ঘণ্টা ৫৬.৫০ সেকেন্ড সময় নিয়ে রৌপ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের কেটি জ্যাফার্স ১ ঘণ্টা ৫৭.০৩ সেকেন্ড সময় নিয়ে জয় করেন ব্রোঞ্জপদক। সোনা তো বটেই, ডাফির কৃতিত্বে শেষ হয়েছে অলিম্পিকে পদক জয়ে বারমুডার ৪৫ বছরের অপেক্ষা। এর আগে দেশটিকে প্রথম পদক এনে দিয়েছিলেন ক্লারেন্স হিল। সেটা ছিল ১৯৭৬ সালের মন্ট্রিল অলিম্পিকে পুরুষদের হেভিওয়েট বিভাগে ব্রোঞ্জপদক। এবার ৩৩ বছর বয়সী ফ্লোরা ডাফি দেশকে এনে দিয়েছেন প্রথম সোনা। স্বপ্নপূরণের পর তিনি বলেন, ‘আমি রোমাঞ্চিত। আমার সোনা জয়ের স্বপ্ন পূরণ করেছি। একইসঙ্গে বারমুডাকেও প্রথম সোনা এনে দিতে পেরেছি। এটা অনেক বড় অর্জন আর প্রশান্তির’। এদিকে অলিম্পিকের ব্যক্তিগত ইভেন্টে প্রথম বাংলাদেশী এ্যাথলেট হিসেবে জয়ের রেকর্ড গড়েও মিশন শেষ করতে হয়েছে তারকা আরচার রোমান সানাকে। দেশের ইতিহাসে প্রথম আরচার হিসেবে সরাসরি অলিম্পিকে খেলেন তিনি। বিশ্বের বৃহত্তম ক্রীড়ামঞ্চে পা রেখে গড়েন আরেক ইতিহাস। রুদ্ধশ্বাস লড়াই শেষে গ্রেট ব্রিটেনের টম হলকে ৭-৩ সেট পয়েন্টে হারিয়ে রোমান উঠে এসেছিলেন শেষ ষোলোতে। কিন্তু এখানেই পথচলা শেষ হয়ে যায় রিকার্ভ পুরুষ এককের র‌্যাঙ্কিংয়ে ২৫তম স্থানে থাকা রোমানের। ইউমেনোশিমা ফিল্ডে মঙ্গলবার দ্বিতীয় রাউন্ডে রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ের পর কানাডার প্রতিপক্ষ ক্রিসপিন ডুয়েনাসের কাছে ৬-৪ সেট পয়েন্টে হেরে যান বাংলাদেশী তারকা। অল্পের জন্য সুযোগ হাতছাড়া হওয়ায় হতাশ রোমান। তবে আগামীর পানে তাকিয়ে আছেন তিনি, ‘আমি আসলেই কিছুটা হতাশ। জয়ের জন্য দরকার ছিল ১০ পয়েন্ট। ম্যাচটা জয়ের খুবই ভাল সুযোগ ছিল আমার। এখন আমার লক্ষ্য ২০২৮ সালের অলিম্পিকে স্বর্ণপদক জয় করা। এ কারণে ২০২৪ সালের অলিম্পিকেও খেলব। সেখানেও সর্বোচ্চটাই দিতে চাই’। গেমসের চতুর্থদিন শেষেও রূপকথার সাফল্য অব্যাহত রেখেছে স্বাগতিক জাপান। সর্বোচ্চ ১০ স্বর্ণ, ৩ রৌপ্য ও ৫ ব্রোঞ্জপদকসহ মোট ১৮টি পদক জিতে টানা দ্বিতীয়দিন শীর্ষে অবস্থান করছে দেশটি। ৯ স্বর্ণ এবং ৮টি করে রৌপ্য ও ব্রোঞ্জসহ মোট ২৫টি পদক জিতে দুইয়ে আছে যুক্তরাষ্ট্র। আর ৯ স্বর্ণ, ৫ রৌপ্য ও ৭ ব্রোঞ্জসহ মোট ২১টি পদক জিতে তৃতীয় স্থানে অবস্থান করছে চীন।
×