ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ভার্চুয়াল সভায় ফখরুল

আমাদের আশাবাদী হতে হবে, জনগণকে সংগঠিত করতে হবে

প্রকাশিত: ২৩:২৮, ২৭ জুলাই ২০২১

আমাদের আশাবাদী হতে হবে, জনগণকে সংগঠিত করতে হবে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দেশের রাজনীতি এখন আমলাদের হাতে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিএনপির প্রয়াত সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খানের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আবদুল আউয়াল খান ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘স্মৃতিতে অম্লান’ শীর্ষক এই ভার্চুয়াল স্মরণসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এই মন্তব্য করেন। এদিকে কখনও করোনার টিকা নেবেন না বলে আগাম ঘোষণা দিয়েও শেষ পর্যন্ত টিকা নিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। মির্জা ফখরুল বলেন, আমলারা এখন সব কিছু দখল করে নিয়েছে। দেশে এখন রাজনীতি নেই। রাজনীতিবিদরা রাজনীতি থেকে দূরে সরে যেতে বাধ্য হয়েছে। সরকার কার উপরে টিকে আছে কেউ জানে না। জনগণের সঙ্গে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। এখন রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ হয় রাজনীতির বাইরে থাকা কিছু শক্তিশালী মহলের মাধ্যমে। কিছু শক্তিশালী দেশ, শক্তিশালী রাষ্ট্র অথবা কিছু শক্তিশালী শক্তি রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকারের অপরিকল্পিত লকডাউনে জনজীবন বিপন্ন। এই ভয়াবহ বৈশ্বিক মহামারী করোনাভাইরাসের সময়ে সরকার দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে ভেঙ্গে দিয়েছে। সরকারের উদাসীনতা, তাদের অযোগ্যতা, ব্যর্থতা ও দুর্নীতি আজকে দেশকে এবং দেশের মানুষের জীবন জীবিকাকে বিপন্ন করে ফেলেছে। হাসপাতালগুলোতে বেড নেই, অক্সিজেন নেই, আইসিইউ বেড নেই এবং ওষুধ নেই। মানুষের করোনা হবে চিকিৎসা পাবে না, ভুল চিকিৎসা হবে, গরিব মানুষ চিকিৎসার অভাবে রাস্তায় পড়ে থাকবে এটা মেনে নেয়া যায় না। ফখরুল বলেন, আমরা বিএনপির পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব দিয়েছিলাম প্রান্তিক মানুষকে যেন তিন মাসের জন্য এককালীন ১৫ হাজার করে টাকা অনুদান হিসেবে যেন দেয়া হয়। সরকার আমাদের কোন কথাই শুনেনি। পত্রিকায় খবর হয়েছে, তারা ২৮ হাজার কোটি টাকা প্রণোদনা দিয়েছে তার শতকরা ৮৬ ভাগই ভুয়া। দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে ফখরুল বলেন, এই সরকারকে যদি না সরানো যায় তাহলে ১৯৭১ সালে আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের যে মূল লক্ষ্য ছিল সেই লক্ষ্য পুরোপুরিভাবে ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই সারাদেশের মানুষের দায়িত্ব এই সরকারকে সরিয়ে দেশে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনা এবং বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে মুক্ত করা। বিএনপির দায়িত্বটা বেশি তাই বিএনপিকেই এর নেতৃত্ব নিতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের কখনও হতাশ হওয়া যাবে না, হতাশা ও ব্যর্থতা নিয়ে এগুনো যাবে না। আমাদেরকে অবশ্যই আশাবাদী হতে হবে, জনগণকে সংগঠিত করতে হবে। ফখরুল বলেন, এখনকার যে পৃথিবী, এখনকার যে রাজনীতি এই রাজনীতিটা সম্পূর্ণ ভিন্ন। একটা নষ্ট সময়, একটা ভয়ঙ্কর সময়, যে সময়টা রাজনীতিকে সঠিক খাতে প্রবাহিত করে না, যে সময়টা মানুষকে রাজনীতিতে সঠিকভাবে সংগঠিত হওয়ার সুযোগ দেয় না। যে রাজনীতি শুধু নষ্টের দিকে যায়, খারাপের দিকে যায়, যে রাজনীতি মানুষকে খারাপ করে তোলে এই রাজনীতির সময় কিন্তু এখন চলছে। শুধু বাংলাদেশে নয়, সমগ্র বিশ্বেই এই একটা নষ্ট সময় চলছে। যে নষ্ট সময়টাতে রাজনীতিবিদদের ভাল থাকা, রাজনীতিবিদদের সঠিক রাস্তায় যাওয়া, রাজনীতিবিদদের সঠিকভাবে রাজনীতিকে নির্মাণ করা অত্যন্ত কঠিন কাজ। সব চেয়ে বড় জিনিস হচ্ছে যে, রাজনীতিবিদরা এখন রাজনীতিতে নেই। ফখরুল বলেন, বিএনপিকে অনেকবার ভাঙ্গার চেষ্টা হয়েছে, অনেকবার বিএনপিকে ধ্বংস করে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। কিন্তু বিএনপিকে কখনই ভেঙ্গে ফেলতে পারেনি। কারণ একটাই আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যে দর্শন দিয়ে গেছেন সেটা জনগণের অন্তরের সঙ্গে একাত্ম হয়ে গেছে। আবদুল আউয়াল খান ফাউন্ডেশনের প্রধান উপদেষ্টা সাবেক বিএনপি নেতা মনিরুল হক চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও ফাউন্ডেশনের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ সেলিম ভুঁইয়ার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত ভার্চুয়াল স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, মোহাম্মদ শাহজাহান, শামসুজ্জামান দুদু, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, দলের সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, প্রয়াত আবদুল আউয়াল খানের ছেলে আসাদুজ্জামান খান প্রমুখ। করোনার টিকা নিলেন রিজভী : অবশেষে করোনা ভাইরাসের টিকা নিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। সোমবার দুপুর পৌনে ১টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে (বিএসএমএমইউ) গিয়ে তিনি টিকা নেন। রিজভীর ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান, রুহুল কবির রিজভী মডার্নার টিকা নিয়েছেন। ‘মরি বাঁচি টিকা নেব না’ এক সময় এমন কথা বলে এখন আবার টিকা নিলেন কেন? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রিজভী কথা ঘুরিয়ে বলেন, আমি কথা দিয়ে ছিলাম ভারতে উৎপাদিত এ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা নেব না। সেই কথা রেখেছি। আমি ভারতে উৎপাদিত টিকা নেইনি, নিয়েছি আমেরিকার তৈরি মডার্নার টিকা। উল্লেখ্য, ১৫ মার্চ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে রিজভী বলেছিলেন, ‘মরি আর বাঁচি আমার শরীরে করোনার টিকা প্রবেশ করতে দেব না।’ টিকা নেবো না বলার একদিন পর ১৬ মার্চ করোনাক্রান্ত হন রুহুল কবির রিজভী। একদিন বাসায় চিকিৎসার পর ১৭ মার্চ তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১ এপ্রিল শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে এবং অক্সিজেন লেভেল কমে গেলে তাকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। স্কয়ার হাসপাতালে প্রায় দুই মাস চিকিৎসা নেয়ার পর তার শারীরিক অবস্থার উন্নতি হলে হাসপাতাল থেকে রিলিজ দেয়া হয়। এরপর থেকে তিনি বাসায় অবস্থান করছেন।
×