ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাগতিক জাপানের স্বর্ণালি সাফল্য

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ২৭ জুলাই ২০২১

স্বাগতিক জাপানের স্বর্ণালি সাফল্য

জাহিদুল আলম জয় ॥ অদৃশ্য শত্রু করোনা ভীতি থাকলেও অলিম্পিক জ্বরে ভুগছে এখন জাপানের টোকিও। সর্বত্রই এ মুহূর্তে বিরাজ করছে উৎসবের আবহ। যেখানেই দৃষ্টি দেয়া হচ্ছে সেখানেই ভেসে উঠছে অলিম্পিকের চিত্র। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ক্রীড়াযজ্ঞের কারণে টোকিও’র রাস্তাঘাট, অলি-গলি, বাড়ির ছাদে সবখানেই অলিম্পিক ব্যানার, জাপানের পতাকাসহ রং বেরংয়ের বাহারি সাজসজ্জার সমাহার ঘটেছে। অবশ্য বিপরীত চিত্রও আছে। গেমস বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করতেও দেখা যাচ্ছে। এমন অবস্থার মধ্যে স্বাগতিকের সুবিধা নিয়ে গেমসে চমক দেখিয়ে চলেছে স্বাগতিক জাপান। আর দুইদিন পর প্রত্যাশিত সাফল্য পেতে শুরু করেছে অলিম্পিকের ইতিহাসের সেরা সাফল্যের দেশ যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার গেমসের তৃতীয়দিনে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত প্রথমবারের মতো পদক তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে জাপান। সর্বোচ্চ ৮টি স্বর্ণ, ২ রুপা ও ৩ ব্রোঞ্জসহ টোকিও গেমসের আয়োজকদের মোট পদক ১৩টি। আগেরদিন ৫ স্বর্ণ জিতে দুইয়ে ছিল জাপানিজরা। মোট পদকে এগিয়ে থাকলেও স্বর্ণপদক কম পাওয়ায় দ্বিতীয় স্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্র। ৭ স্বর্ণ, ৩ রুপা ও ৪ ব্রোঞ্জপদকসহ মোট ১৪টি পদক জিতেছেন মার্কিন এ্যাথলেটরা। দ্বিতীয়দিনে ৪টি স্বর্ণপদক জিতে তিন নম্বরে ছিল বিশ্বের মোড়ল রাষ্ট্রটি। প্রথম দুইদিন শীর্ষে থাকা চীন তৃতীয়দিনে তিন নম্বরে নেমে এসেছে। ৬ স্বর্ণ, ৫ রুপা ও ৭ ব্রোঞ্জসহ চাইনিজদের মোট পদক ১৮টি। মোট পদকে যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের চেয়ে এগিয়ে থাকলেও স্বর্ণ কম হওয়ায় তিনে অবস্থান করছে ২০০৮ বেজিং অলিম্পিকে সেরা হওয়া চীন। দ্বিতীয়দিনে তাদের পদক ছিল ১১টি। তৃতীয় দিনে আরও সাতটি পদক জিতলেও এরমধ্যে একটিও স্বর্ণপদক নেই। এ কারণেই এক নম্বর থেকে একলাফে তিনে নেমে যেতে হয়েছে চীনকে। ৪ স্বর্ণ, ৫ রুপা ও ৩ ব্রোঞ্জসহ মোট ১২টি পদক জিতে চতুর্থ স্থানে আছে রাশিয়ান অলিম্পিক কমিটি এ্যাথলেটিক্স দল। ৩টি করে স্বর্ণ ও রৌপ্য এবং ১টি ব্রোঞ্জসহ ৭ টি পদক নিয়ে পাঁচ নম্বরে গ্রেট ব্রিটেন। ৩ স্বর্ণ ও ৪ ব্রোঞ্জসহ ৭ পদক নিয়ে ছয়ে দক্ষিণ কোরিয়া। ২টি স্বর্ণসহ ৬ পদক নিয়ে সাতে অস্ট্রেলিয়া এবং ২টি স্বর্ণপদক জিতে আট নম্বরে অবস্থান করছে কসোভো। যথাক্রমে নয় ও দশে থাকা ইতালি ও ফ্রান্সের ঝুলিতে জমা পড়েছে ১টি করে স্বর্ণ। ক্রীড়াবিশ্বের সর্ববৃহৎ এ মিলনমেলায় এবার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই হবে মূলত জাপান, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে। প্রথম তিনদিনের চিত্রে এটাই প্রতীয়মান হয়েছে। জাপান তাদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে। এবার ঘরের মাঠের সুবিধা নিয়ে দেশটি সেরা সাফল্যের স্বপ্ন বুনছে। যে প্রমাণ দেখাতে শুরু করেছেন স্বাগতিক এ্যাথলেটরা। দেশটির ছোট-বড় সব এ্যাথলেটই দেশের জন্য জীবন বাজি রেখে লড়াই করছেন। মাত্র ১৩ বছর বয়সী কিশোরী মোমিজি নিশিয়া এর মধ্যে শীর্ষ নাম। গতকাল তিনি নিজ দেশকে স্বর্ণপদক উপহার দিয়ে বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়েছেন। এর ফলে অলিম্পিকে জাপানের সবচেয়ে কম বয়সী স্বর্ণজয়ী হিসেবে রেকর্ড গড়েছেন মোমিজি। অলিম্পিকের ইতিহাসেও সবচেয়ে কম বয়সী সোনাজয়ীদের তালিকায় স্থান করে নিয়েছেন। অলিম্পিকে এই প্রথম স্কেটবোর্ডিং ইভেন্ট যুক্ত হয়েছে। আরিয়াক পার্কে এই ইভেন্টে মেয়েদের স্ট্রিট ফাইনালে ১৫.২৬ পয়েন্ট পেয়ে সবার সেরা হয়েছেন মোমিজি। ১৪.৬৪ পয়েন্ট নিয়ে রুপা জিতেছেন রাইসা লিলে। মজার বিষয় হচ্ছে, ব্রাজিলের এই এ্যাথলেটের বয়সও মাত্র ১৩ বছর। ব্রোঞ্জ পাওয়া জাপানের ফুনা নাকাইয়ামার বয়স ১৬ বছর। অলিম্পিক মানেই যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র আধিপত্য। ২০১৬ ব্রাজিলের রিও ডি জেনেইরো আসরেও এর ব্যতয় ঘটেনি। বরাবরের মতো সেবারও শ্রেষ্ঠত্ব নিয়েই দেশে ফেরেন মার্কিন ক্রীড়াবিদরা। সেবার যুক্তরাষ্ট্র রাজত্ব ধরে রাখলেও ভরাডুবি হয়েছিল এশিয়ার দেশ চীনের। আগের তিন অলিম্পিকের সাফল্য রিওতে দেখাতে পারেননি চীনা এ্যাথলেটরা। এবার টোকিওতে তাই ভাল করতে মরিয়া চীনারা। ২০১২ লন্ডন অলিম্পিকে জেতা ৪৬ স্বর্ণ ২০১৬ রিও আসরেও অটুট রাখে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ব্রাজিলে রুপা ও ব্রোঞ্জ জয় করে আগের চেয়ে বেশি। সবমিলিয়ে পাঁচ বছর আগে ১২১ পদক জিতে তালিকায় অন্যদের চেয়ে যোজন যোজন এগিয়ে থেকে শ্রেষ্ঠত্ব নিজেদের কজ্বায় রাখে মার্কিনীরা। এর আগে লন্ডন অলিম্পিকে মোট ১০৩টি পদক জিতেছিল তারা। এবার টোকিওতে আগের সাফল্যের পুনরাবৃত্তি ছাড়া আর কিছুই ভাবছে না যুক্তরাষ্ট্র। দিন গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে সে স্বাক্ষরই রাখতে শুরু করেছেন মার্কিন এ্যাথলেটরা।
×