ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জিম্বাবুইয়েতে টাইগারদের স্মরণীয় সাফল্য

প্রকাশিত: ২৩:০৯, ২৭ জুলাই ২০২১

জিম্বাবুইয়েতে টাইগারদের স্মরণীয় সাফল্য

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ জিম্বাবুইয়েতে স্মরণীয় এক সফর শেষ করল বাংলাদেশ। মুমিনুল হকের নেতৃত্বে একমাত্র টেস্টে ২২০ রানের বিশাল জয়ে শুরু হয়েছিল সাফল্যের যাত্রা। সাদা পোশাকের ক্রিকেট থেকে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের হঠাৎ অবসর ও তার অপরাজিত ১৫০ রানের মন মাতানো ইনিংস, মেহেদী হাসান মিরাজ, লিটন দাস, নাজমুল হোসেন শান্তদের স্বমহিমায় জ্বলে ওঠা ছিল আলোচনায়। এরপর তামিম ইকবালের দল ওয়ানডেতে স্বাগতিকদের হোয়াইটওয়াশ করে ৩-০ ব্যবধানে। দীর্ঘ ১২ বছর পর বিদেশের মাটিতে আসে এমন সাফল্য। সর্বশেষ মাহমুদুল্লাহর অধীনে তিন ম্যাচের টি২০ সিরিজে জয় ২-১ ব্যবধানে। যেখানে টেস্ট, ওয়ানডের পর নিজেদের শততম টি২০টিকেও স্মরণীয় করে রাখে টাইগাররা। তামিম, মুশফিকুর রহিম, লিটনদের অনুপস্থিতিতে সিরিজটা রাঙিয়ে তোলেন সৌম্য সরকার, শামিম হোসেনরা। বাংলাদেশের জন্য তিন ফরমেটের ক্রিকেটেই বিদেশের মাটি থেকে ট্রফি নিয়ে ফেরার ঘটনা এই প্রথম। ২০১৯-২০২০ প্রথম আইসিসি ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপে জয়হীন বাংলাদেশ এমনকি ঘরের মাঠেও হেরেছিল আফগানিস্তানের কাছে। ড্র করতে পারে একটি মাত্র টেস্ট। হোক না দুর্বল প্রতিপক্ষ, জিম্বাবুয়েতে টেস্ট দিয়ে শুরুটা কেমন হয় সেটি নিয়ে ছিল সংশয়। কিন্তু হারারে স্পোর্টস ক্লাব মাঠে টস জিতে ব্যাটিং নেয়া মুমিনুলবাহিনী তুলে নেয় দাপুটে এক জয়। আলোচিত অবসরে অপরাজিত ১৫০ রানের দারুণ ইনিংসটির জন্য ম্যাচসেরা হন মাহমুদুল্লাহ। দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি হাঁকান সাদমান ইসলাম (১১৫*) ও নাজমুল ইসলাম শান্ত (১১৭*)। টেস্ট এবং টি২০’র তুলনায় ওয়ানডেতে বরাবরই সমীহ জাগানিয়া দল বাংলাদেশ। এশিয়া কাপের ফাইনাল, বিশ্বকাপের কোয়ার্টার কিংবা চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল- পঞ্চাশ ওভারের ক্রিকেটে আছে মনে রাখার মতো সব অর্জন। তবে দ্বিপক্ষীয় সিরিজে সাফল্যের বেশিরভাগই দেশের মাটিতে। বিদেশে হতাশার সেই ছবিতে এবার কিছুটা রঙের আভা হয়ে এসেছে জিম্বাবুয়ে-বধ। হারারেতে তিন ওয়ানডের সিরিজে স্বাগতিকদের ৩-০ ব্যবধানে ‘হোয়াইটওয়াশ’ করে টাইগাররা। প্রথম ওয়ানডেতে জয় রেকর্ড ১৫৫ রানে, ৩ উইকেটের জয় পাওয়া দ্বিতীয় ম্যাচে তবু কিছুটা ফাইট দিয়েছিল জিম্বাবুইয়ে, কিন্তু শেষটিতে ৫ উইকেটের জয়ের পথে দীর্ঘ একযুগে বিদেশের মাটিতে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করে তামিমবাহিনী। নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে এ পর্যন্ত ৭৭টি দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলে বাংলাদেশের জয় ২৭টিতে। এরমধ্যে ২২টিই এসেছে ঘরের মাঠে। চলতি জিম্বাবুইয়ে সফর নিয়ে বিদেশে ৩৫ সিরিজের বিপরীতে জয় ৬টিতে। যেখানে প্রতিপক্ষকে হোয়াইটওয়াশ করার মাত্র তৃতীয় ঘটনা এটি। ২০০৬ সালে নাইরোবিতে স্টিভ টিকোলের কেনিয়াকে ৩-০তে হারিয়েছিল খালেদ মাসুদ পাইলটের বাংলাদেশ। আর সর্বশেষ ২০০৯ সালে ফ্লয়েড রেইফারের ওয়েস্ট ইন্ডিজকেও সমান ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে সাকিব আল হাসানের দল। এবার তামিমের হাত ধরে এলো স্মরণীয় সেই সাফল্য। দেশ-বিদেশ মিলিয়ে এ নিয়ে জিম্বাবুইয়েকে টানা পাঁচটি সিরিজে ‘হোয়াইটওয়াশ’ করল টাইগাররা। তবে ব্যাটে-বলে দুর্দান্ত নৈপুণ্যে এবারও নায়ক সেই সাকিব তুলে নিয়েছেন সিরিজসেরার পুরস্কার। ৯৭ বলে ১১২ রানের অনবদ্য ইনিংস উপহার দিয়ে তৃতীয় ম্যাচে ম্যাচসেরা হয়েছেন অধিনায়ক তামিম। সিরিজ থেকে পূর্ণ ৩০ পয়েন্ট তুলে নিয়ে আইসিসি ওয়ানডে বিশ্বকাপ সুপার লীগের দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ। টি২০তে ২-১এ সিরিজ জয়ের সাফল্য আরও বড় অর্জন। কারণ এই ফরমেটে অতীত পারফর্মেন্স ভাল নয়। তার ওপর আগেই দেশে ফিরে আসেন তামিম ও মুশফিকের মতো তারকা। ইনজুরিতে পড়েন লিটন দাশ ও মুস্তাফিজুর রহমান। প্রথম টি২০তে জিম্বাবুইয়েকে ১৫২ রানে থামিয়ে টাইগাররা সেটি টপকে যায় ৮ উইকেট ও ৭ বল হাতে রেখে। ৪৫ বলে ৫০ রানের কার্যকর ইনিংস খেলে ম্যাচসেরা হন সৌম্য সরকার। অস্ট্রেলিয়া, পাকিস্তানের পর তিন সংস্করণের ক্রিকেটে শততম ম্যাচ জয়ে রাঙিয়ে রাখে বাংলাদেশ। তবে দ্বিতীয় ম্যাচে ২৩ রানে হেরে যায় মাহমুদুল্লাহর দল। শেষ টি২০ ম্যাচটা হয়ে ওঠে সিরিজ নির্ধারণী। যেখানে ৫ উইকেটে ১৯৩ রান তুলে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছিল স্বাগতিকরা। কিন্তু সৌম্য (৪৯ বলে ৬৮), সাকিব (১৩ বলে ২৫), মাহমুদুল্লাহ (২৮ বলে ৩৪) ও তরুণ শামিম হোসেনের (১৫ বলে অপরাজিত ৩১) দারুণ ব্যাটিংয়ে ৫ উইকেট হারিয়ে ৪ বল হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। বোলিংয়ে ২ উইকেট নেয়ার পর দুরন্ত ব্যাটিংয়ে ম্যাচ ও সিরিজসেরার পুরস্কার তুলে নেয়া সৌম্য বলেন, ‘অনুভ‚তি ভাল যে, ম্যান অব দ্য সিরিজ হয়েছি। ভাল খেলেছি এটা সবথেকে বড় কথা।’ শুরুতে ওপেন করার কথা না থাকলেও লিটনের ইনজুরিতে সেটি করতে হয়েছে, ‘পজিশন নিয়ে ওইরকম চিন্তা করি নাই। চিন্তা করেছিলাম যখন সুযোগ পাব তখন নিজের বেস্টটা দিতে চেয়েছি।’ ব্যাটসম্যান সৌম্য দুই ম্যাচে ৩ উইকেট নিয়ে বোলিংয়েও চমক দেখিয়েছেন, ফিল্ডিংও ছিল নজরকাড়া, ‘ফিল্ডিং-বোলিং তো সবসময় করা হয়। তবে হয়তো এত ভালভাবে ভাল পজিশনে বোলিংয়ের সুযোগ পাওয়া হয় নাই। ফিল্ডিংয়ে সবসময় চেষ্টা করি নিজের বেস্টটা দেয়ার জন্য’ বলেন টি২০তে সিরিজয়ের নায়ক।
×