ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কা ॥ ফেরির মাস্টার ও সুকানি দায়ী

প্রকাশিত: ২২:৩৬, ২৬ জুলাই ২০২১

পদ্মা সেতুর পিলারে ধাক্কা ॥ ফেরির মাস্টার ও সুকানি দায়ী

স্টাফ রিপোর্টার, মুন্সীগঞ্জ ॥ পদ্মা সেতুর পিলারে রো-রো ফেরি শাহজালালের ধাক্কা লাগার ঘটনায় ফেরির দুই চালকের (মাস্টার ও সুকানি) অসতর্কতায় পদ্মা সেতুর পিলারে আঘাত করে ফেরি শাহজালাল। তিন পৃষ্ঠার প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিআইডব্লিউটিসির তদন্ত কমিটি। বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যান সৈয়দ মোঃ তাজুল ইসলাম তদন্তের প্রতিবেদন প্রাপ্তির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, রবিবার দুপুরে কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। দুর্ঘটনার জন্য ফেরির দুই চালককে দায়ী করা হয়েছে। শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বাংলাবাজার ঘাট থেকে ৩৩টি যানবাহন নিয়ে শিমুলিয়া ঘাটে আসার পথে রো-রো ফেরি শাহজালাল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পদ্মা সেতুর ১৭ নম্বর পিলারে আঘাত করে। এ সময় ফেরিতে থাকা যাত্রীরা ছিটকে একে অপরের ওপর পড়ে আহত হন। কমপক্ষে ২০ জন যাত্রী এ সময় মারাত্মক আহত হন। ওইদিনই বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) এসএম আশিকুজ্জামানকে প্রধান করে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে তিনদিনের মধ্যে কমিটিকে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। শুক্রবারই কমিটির সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন ও ফেরিতে কর্মরত ছয়জনের বক্তব্য নেন। শনিবার খসড়া প্রতিবেদন তৈরি করেন। রবিবার প্রতিবেদন জমা দেয় কমিটি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, তেল খরচ কমাতে সংক্ষিপ্ত পথে চলতে গিয়ে পদ্মা সেতুতে আঘাত করে রো-রো ফেরি শাহজালাল। স্রোতের অনুকূলে কম গতিতে চালাতে (২৫০ আরপিএম) গিয়ে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর ১৭ নম্বর পিলারে ধাক্কা দেয় ফেরিটি। অথচ স্রোতের বিপরীতে কিছুটা ওপরের দিকে চালিয়ে পদ্মা সেতুর ১২ ও ১৩ নম্বর পিলারের ফাঁক দিয়ে নদী পাড়ি দিলে এ দুর্ঘটনা এড়াতে পারতেন ফেরির চালক। সে ক্ষেত্রে পথটি দীর্ঘ হতো এবং গতিও বাড়াতে হতো। এতে তেল খরচ হতো বেশি। তাদের উদ্দেশ্য ছিল তেল বাঁচিয়ে তা বাইরে বিক্রি করে দেয়া। ফেরির আঘাতে সেতুর ১৭ নম্বর পিলারের পাইল ক্যাপে কিছুটা স্ক্যাচ পড়েছে। আর কোন ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। তবে ফেরিটির বড় ধরনের ক্ষতি হয়েছে। ডকইয়ার্ডে নিয়ে মেরামতের আগে এটি চলাচল করতে পারবে না। এদিকে, এ ঘটনা ধামাচাপা দিতে কৌশল নেন ফেরির দুই চালক ও অন্য স্টাফরা। সেতুতে আঘাত দেয়ার আগে স্টিয়ারিং কাজ করছিল না বলে তদন্ত কমিটির সদস্যদের কাছে দাবি করেন তারা। যদিও তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণে স্টিয়ারিং ভাল পাওয়া গেছে। তবে তারা ধীরগতিতে চালানোর কথা স্বীকার করেছেন। শাহজালাল ফেরির চালক (মাস্টার) আব্দুর রহমান খানসহ চারজনকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মাদারীপুর সিভিল সার্জনের তত্ত্বাবধানে বরখাস্ত হওয়া ইনল্যান্ড মাস্টার অফিসারের ডোপ টেস্ট ও শারীরিক পরীক্ষা করা হয়েছে। তিনি মাদকাসক্ত নয় বলে সূত্র জানিয়েছে। চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির প্রধান এসএম আশিকুজ্জামান জানান, মূল তদন্ত প্রতিবেদন তিন পৃষ্ঠার। কমিটি মূল বিষয় তুলে আনার চেষ্টা করেছে। কমিটির অন্য সদস্যগণ মনে করেন সঠিক ঘটনা তারা রিপোর্টে তুলে আনতে পেরেছেন। কারণ ফেরি চালনায় একটু সতর্কতায় বড় ধরনের দুর্ঘটনার কারণ হতে পারে। তাই বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরা হয়েছে।
×