ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কামরাঙ্গীরচরে স্ত্রী মেয়েকে হত্যার পর স্বামীর আত্মহত্যার চেষ্টা

প্রকাশিত: ২৩:৪০, ২৫ জুলাই ২০২১

কামরাঙ্গীরচরে স্ত্রী মেয়েকে হত্যার পর স্বামীর আত্মহত্যার চেষ্টা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর কামরাঙ্গীরচরে স্ত্রী ফুলবাসি চন্দ্র দাস (৩৪) ও মেয়ে সুমি চন্দ্র দাসকে (১২) হত্যা করে স্বামী মুকুন্দ চন্দ্র দাস ওরফে কালু (৩৬) আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। পুলিশ জানায়, ঘটনার পর পুলিশ নিহতের স্বামী মুকুন্দ ও তার বড় মেয়ে ঝুমা চন্দ্র দাসকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে স্ত্রী ও কন্যাকে শ্বাসরোধে হত্যা করে মুুকুন্দ। পরে পোকামাকড়ের ওষুধ খেয়ে মুকুন্দ আত্মহত্যার চেষ্টা চালিয়েছে। এদিকে ঘটনার পর পুলিশের সঙ্গে সিআইডি ক্রাইম সিন ইউনিটের সদস্যরা ঘটনাস্থল থেকে আলামত সংগ্রহ করছেন। নিহত দুজনের গলায় জখমের চিহ্ন ছিল। পাশাপাশি ঘর থেকে ছারপোকা মারার ওষুধ পাওয়া গেছে। লালবাগ জোনের উপপুলিশ কমিশনার (ডিসি) জসীম উদ্দীন জানান, মা-মেয়ে মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে। এ ঘটনার পর নিহতের স্বামী মুকুন্দ চন্দ্র দাসকে হেফাজতে নেয়া হবে তবে তিনি অসুস্থ। তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ধারণা করা হচ্ছে মুকুন্দ এ ঘটনার হোতা। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে ঘটনার মূল রহস্য বেরিয়ে আসবে। তাদের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলায়। ১০ বছর ধরে পরিবারটি নয়াগাঁও এলাকার তিন নম্বর গলিতে বসবাস করছে। কামরাঙ্গীরচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান জানান, তারা নয়াগাঁও এলাকার একটি বাসায় ভাড়া থাকেন। একটি কক্ষেই পরিবারের সবাই থাকেন। শুক্রবার রাতে বাবা ও তার বড় মেয়ে ঝুমা দাস নিচে ঘুমিয়েছিলেন। রাত ২টার দিকে বাবাকে খাটের ওপর উঠতে দেখেন। চারটার দিকে ঝুমা দাস ঘুম থেকে উঠে দেখেন, তার বাবা মেঝেতে বসে আছেন। মা এবং বোনের নিথর দেহ বিছানায় পড়ে আছে। ওসি জানান, ঘটনাস্থলে একটি রশি পাওয়া গেছে। দুজনের মরদেহের গলায় দাগ পাওয়া গেছে। এটি হত্যা নাকি আত্মহত্যা। তা নিয়ে তদন্ত হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, পরিবারটিতে অর্থনৈতিক টানাপোড়েন ছিল। এ নিয়ে পারিবারিক কলহও ছিল। পরে দুজনের লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠানো হয়েছে। তাদের লাশের ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেলে আসল ঘটনা জানা যাবে। তদন্ত চলছে। অপরদিকে কামারাঙ্গীরচর থানার পরিদর্শক তদন্ত মোস্তফা আনোয়ার জানান, শনিবার ভোরে এলাকাবাসীর কাছ থেকে খবর পেয়ে নয়াগাঁও তিন নম্বর গলির একটি টিনশেড রুম থেকে ফুলবাসি চন্দ্র দাস ও তার মেয়ে সুমি চন্দ্র দাসের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। তাদের গলায় জখমের চিহ্ন রয়েছে। পরিদর্শক তদন্ত জানান, নিহত ফুলবাসির স্বামী মুকুন্দ চন্দ্র ভ্যানগাড়িতে সবজি বিক্রি এবং মাঝে মাঝে তিনি ঠেলাগাড়িও চালাতেন। পরিবারটি টিনশেড ঘরের ওই কক্ষে থাকতেন। ঘটনার পর নিহতের স্বামী মুকুন্দ চন্দ্র ও তার বড় মেয়ে ঝুমাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। নিহতের বড় মেয়ের বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা মোস্তফা আনোয়ার জানান, শুক্রবার রাতে তার মা ও ছোট বোন সুমি খাটের ওপর ঘুমিয়েছিলেন। তিনি ও তার বাবা ঘরের মেঝেতে ঘুমিয়েছিলেন। কিন্তু রাত ২টার দিকে বাবা মুকুন্দ চন্দ্র দাস নিচ থেকে খাটের ওপর যান। ভোর ৪টার দিকে ঘুম ভেঙ্গে তিনি তার মা ও ছোট বোনের লাশ দেখতে পান। এক পর্যায়ে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে ঝুমা জানায়, মুখে পলিথিন পেঁচিয়ে মা ও বোনকে তার বাবা হত্যা করেছে। এমন বক্তব্য দিচ্ছে আটককৃত নিহতের বড় মেয়ে ঝুমা। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। কেন এই ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আশা করছি জানা যাবে বলে জানান কামারাঙ্গীরচর থানার পরিদর্শক তদন্ত মোস্তফা আনোয়ার। এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরে কামরাঙ্গীরচর নয়াগাঁও এলাকায় বসবাস করে আসছে। মুকুন্দ ভ্যানে করে সবজি বিক্রি করেন। মাঝে মধ্যেই পারিবারিক নানা বিষয়ে নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া হতো। তাদের ধারণা এটি হত্যাকাণ্ড। আর আসল নায়ক মুকুন্দই।
×