ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পূর্ণিমার ভর তিথিতে পানির উচ্চতা ও চাপ বৃদ্ধি

জোয়ারে উপক‚লের ফসলি জমি ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত

প্রকাশিত: ২৩:৩৯, ২৫ জুলাই ২০২১

জোয়ারে উপক‚লের ফসলি জমি ও বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত

মোয়াজ্জেমুল হক/এইচএম এরশাদ ॥ ভর পূর্ণিমা চলছে। সাগর রয়েছে উত্তাল। এ অবস্থায় তিনদিন ধরে চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার বাঁশখালী ও কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, মহেশখালীতে জোয়ারের পানির উচ্চতা ও চাপ বৃদ্ধি পেয়ে লোকালয় ও ফসলি মাঠে ঢুকছে আর নামছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে উপকূলীয় এলাকার বহুসংখ্যক বাড়িঘরও। অপরদিকে, দুদিন ধরে হালকা ও মাঝারি ধরনের বর্ষণ অব্যাহত। সাগরে লঘুচাপের কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। দ্বীপ উপজেলা কুতুবদিয়ার অবস্থা বেশ নাজুক। দ্বীপের পশ্চিমাংশে কোথাও কোথাও অস্তিত্ববিহীন বেড়িবাঁধ, আবার কোথাও অর্ধসমাপ্ত। এ অবস্থায় কয়েক ফুট উচ্চতার জোয়ারের পানি ফসলি জমি ও লোকালয়ে প্রবেশ করে একাকার হয়ে গেছে। শুধু তাই নয়, লোনাজলে তলিয়ে আছে কুতুবদিয়ায় স্থাপিত দেশের একমাত্র বায়ুবিদ্যুত কেন্দ্রটিও। প্রায়শ জোয়ারের পানির আঘাতে এটি রীতিমত হুমকির মুখে রয়েছে। কক্সবাজারের টেকনাফ মেরিন সড়কে জেলা পরিষদের পরিত্যক্ত ঘোষিত একটি বাংলো ধসে পড়েছে। গত শুক্র ও শনিবার টানা বর্ষণে সাগরের ঢেউ আরও উত্তাল হয়ে আছে। দ্বীপ কুতুবদিয়ায় আলী আকবর ডেইল গ্রামের বিধ্বস্ত বেড়িবাঁধ হয়ে সামুদ্রিক জোয়ারের পানিতে ফের সয়লাব হয়ে গেছে বায়ুবিদ্যুত কেন্দ্রসহ কিরণপাড়া, কাজীরপাড়া, তেলিপাড়া, হায়দারপাড়া ও উত্তর ধূরুং কাইছারপাড়া। আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, ওই লঘুচাপের কারণে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বেড়েছে। উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত লঘুচাপটি বর্তমানে উত্তর-পশ্চিম বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন উত্তর উড়িশ্যা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূলে সুস্পষ্ট লঘুচাপরূপে অবস্থান করছে। দেশের সকল সমুদ্রবন্দরে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে। কুতুবদিয়ায় পূর্ণিমার প্রভাবে স্বাভাবিকের চেয়ে বেড়ে যাওয়া জোয়ারের পানিতে তলিয়ে গেছে আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রাম। শনিবার সকাল ১১টায় ঝড়োবৃষ্টির সঙ্গে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩ থেকে ৪ ফুট উচ্চতায় প্রবাহিত হয়েছে। এতে ভাঙ্গা বেড়িবাঁধের একাধিক পয়েন্ট দিয়ে সাগরের লোনা পানি লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে। জোয়ারের পানি ঢুকেছে দ্বীপের একমাত্র বায়ুবিদ্যুত এলাকা তাবালের চরসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার বেশকিছু পয়েন্ট দিয়ে। এতে তলিয়ে গেছে লবণের মাঠসহ ১০টি পাড়া। তলিয়ে যাওয়া বাড়িঘরের মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নেয়ার জন্য উপজেলা প্রশাসন থেকে বলা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কুতুবদিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ নুরের জামান চৌধুরী। জানা যায়, আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের কাহারপাড়া, কিরণপাড়া, কাজীপাড়া, টেকপাড়া, তেলিপাড়া, সাগরপাড়া, নাছিয়ারপাড়া, হকদারপাড়া, হায়দারপাড়া, পÐিতপাড়া ও বায়ুবিদ্যুত কেন্দ্র বেশি প্লাবিত হয়েছে। অথৈ লোনাজলে তলিয়েছে বেশ কিছু বাড়িঘর। দুর্গত এলাকার ৩০ পরিবার টেকপাড়া সরকাতী প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুতুব আউলিয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান নিয়েছে। পূর্ণিমার প্রভাব লঘুচাপ ও ৩ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত থাকায় সমুদ্রে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিলীন বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে শনিবার দুপুর ১১টার দিকে ওসব গ্রামে ঢুকে পড়েছে সাগরের পানি। এতে ঘরবাড়িসহ দ্বীপের বিভিন্ন জায়গায় রোপা আউশ ধানের চাষাবাদ, রাস্তাঘাট ও পুকুর লোনা পানিতে সয়লাব হয়ে পড়ে। এ ছাড়া উত্তর ধুরুং কাইছারপাড়া এলাকায়ও জোয়ারের পানি ঢুকেছে। স্থানীয় জসিম কোম্পানি তার ফিশিংবোট ঢুকাতে গিয়ে বেড়িবাঁধের ওপর দিয়ে পানি ওভারটপ প্রতিরোধে দেয়া জিও টেক্সটাইল টিউব কেটে গেছে। এতে সহজে সামুদ্রিক জেয়ারের পানি ঢুকছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেন। এ ছাড়া বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় বরাদ্দে নির্মাণাধীন বেড়িবাঁধ নির্মাণ-সংস্কারকাজ ধীরগতির কারণে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছে দ্বীপের প্রায় দু’লাখ বাসিন্দা। আলী আকবার ডেইল এলাকার বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বেড়িবাঁধ না থাকাতে পূর্ণিমার জোয়ারে পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৩-৪ ফুট বেশি উঁচু হয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এতে সাগরের পানি ঢুকে বসতভিটা ও পুকুর তলিয়ে যায়। অসংখ্য পুকুরের মাছ পানিতে ভেসে গেছে। আলী আকবার ডেইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নুরুচ্ছফা জানান, সকাল থেকে বৃষ্টি ও বাতাসের তীব্রতা বেড়েছে। তার ওপর ভরা পূর্ণিমার কারণে স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে সাগরের পানির উচ্চতা কয়েক ফুট বেড়েছে। বেড়িবাঁধ না থাকাতে বায়ুবিদ্যুত কেন্দ্র, কাহারপাড়া, কিরণপাড়া, কাজীপাড়া, টেকপাড়া, তেলিপাড়া, সাগরপাড়া, নাছিয়ারপাড়া, হকদারপাড়া, হায়দারপাড়া, পন্ডিতপাড়া গ্রামের বেড়িবাঁধের বিভিন্ন অংশ দিয়ে পানি ঢুকে পড়ে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে। মানুষের ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ভর পূর্ণিমায় আজও লোনা পানি ঢুকবে বলে জানান তিনি। জানা গেছে, কুতুবদিয়ায় টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণের জন্য ৯৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান দ্রæত কাজ চালিয়ে নিচ্ছে। তবে দু’দিনের টানা বৃষ্টি, লঘুচাপ ও পূর্ণিমার জোয়ারের পানি একসঙ্গে হওয়ায় সাগর উত্তাল হয়ে পড়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রকে ৩নং সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলেছে স্থানীয় আবহাওয়া অফিস। এদিকে, চট্টগ্রাম মহানগরীর আগ্রাবাদ, হালিশহরের বিস্তীর্ণ এলাকায় জোয়ারের পানি ঢুকেছে। এতে আবাসিক ও বাণিজ্যিক এলাকার পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘিœত হয়েছে। বৈশি^ক উষ্ণতাজনিত কারণ ও ¯øুইচগেট প্রতিষ্ঠা সম্পন্ন না হওয়ার কারণে জোয়ারের পানি প্রবেশ রোধ করা যাচ্ছে না। এরই ফলশ্রæতিতে পূর্ণিমার এই ভর তিথিতে উচ্চমাত্রার জোয়ারের পানি সহজেই বিভিন্ন এলাকায় প্রবেশ করে সয়লাব হয়ে গেছে। এমনিতেই বর্ষা মৌসুমে চট্টগ্রামে প্রতিবছর জলজটে নাজুক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এরসঙ্গে যোগ হচ্ছে বৈশি^ক উষ্ণতার নেতিবাচক প্রভাব। নগরীর আগ্রাবাদ ও হালিশহজুড়ে জোয়ারের পানি প্রায়শ প্রবেশ করে। তবে পূর্ণিমার তিথিতে এর মাত্রা অধিকতর পর্যায়ে চলে যায়। ফলে সেখানকার জনজীবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে আছে।
×