ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কঠোর বিধিনিষেধে ফাঁকা ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক

প্রকাশিত: ২৩:৩৬, ২৫ জুলাই ২০২১

কঠোর বিধিনিষেধে ফাঁকা ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক

জনকণ্ঠ ডেস্ক ॥ লকডাউনের দ্বিতীয় দিন শনিবার ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক ছিল ফাঁকা। সড়কে দেখা গেছে কিছু মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস ও ব্যক্তিগত যানবাহন। ঢাকার কেরানীগঞ্জে লকডাউন বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থানে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে। কঠোর বিধিনিষেধে রাজশাহী নগরীতে বিরাজ করে নিস্তব্ধতা। শহরের প্রধান প্রধান সড়কে হাতেগোনা দু’/একটি রিক্সা, মোটরসাইকেল ও জরুরী সেবার গাড়ি দেখা যায়। নওগাঁয় বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে মাঠে সক্রিয় প্রশাসন। বরিশালে বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে কাজ করছে সেনাবাহিনী। তবে গাইবান্ধায় যানবাহনের চাপ দেখা গেছে। অনেকের মুখেই মাস্ক ছিল না। এদিকে পিরোজপুরে লকডাউন অমান্য করে সড়কে আসা অটোরিক্সা চালকদের জরিমানা না করে খাদ্য সহায়তা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়েছেন ইউএনও। ঝিনাইদহে লকডাউন বাস্তবায়নে কাজ করছে সেনাবাহিনী ও পুলিশ। ঝালকাঠিতে লকডাউন মানছে না সাধারণ মানুষ। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতাদের। সরকার ঘোষিত বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিন শনিবার অনেকটাই ফাঁকা ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়ক। এ সড়কে হঠাৎ দু’/একটি দূরপাল্লার বাস চলাচল করতে দেখা গেলেও রীতিমতো চলছে গণপরিবহনে নিয়োজিত থ্রি হুইলার। চলছে পণ্য পরিবহন, ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, প্রাইভেটকার আর ব্যক্তিগত যানবাহন। তবে দেখা যায়নি পিকআপে যাত্রী পরিবহন। শনিবার কঠোর বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিন ঢাকা-টাঙ্গাইল ও বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের আশেকপুর বাইপাসে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ চিত্র দেখা গেছে। এ সময় দেখা গেছে, উত্তরবঙ্গ থেকে যাত্রী নিয়ে ঢাকার দিকে যাচ্ছে শ্যামলী পরিবহনের একটি এসিবাস আর টাঙ্গাইলে প্রবেশ করছে মহেড়া পুলিশ ট্রেনিং সেন্টারের একটি যাত্রীবাহী বাস। এছাড়াও মহাসড়ক হয়ে থ্রি হুইলারে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন উপজেলাসহ চন্দ্রা পর্যন্ত চলাচল করছেন যাত্রীরা। মহাসড়কে অপেক্ষারত নজরুল নামের এক পোশাক শ্রমিক জানান, ঈদের ছুটিতে বাড়ি আসছিলাম। কাজ করি গাজীপুরের একটি পোশাক কারখানায়। বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। শনিবার রাত থেকেই ডিউটি। রাস্তায় বাস নেই, থ্রি হুইলারগুলোও ১শ’ টাকার ভাড়া চাচ্ছে ২শ’ টাকা। স্থানীয় ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সোনা মিয়া বলেন, মহাসড়কে ভোর থেকে মাত্র চার-পাঁচটি বাস দেখেছি। তবে বাসগুলোতে যাত্রী ছিল কিনা, সেটি দেখিনি। শুক্রবার যেভাবে বাস চলছে, আজকে সেটি দেখা যাচ্ছে না। আশেকপুর বাইপাসে দায়িত্বরত টাঙ্গাইল সদর মডেল থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক মোসলেম উদ্দিন বলেন, সকাল ৮টা থেকে ডিউটি করছি। মহাসড়কে যানবাহন চলাচল খুবই কম। এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানান, মহাসড়ক প্রায় ফাঁকা। এ সড়কে পণ্য পরিবহনে নিয়োজিত আর কিছু ব্যক্তিগত যানবাহন ছাড়া তেমন একটা যানবাহনের চাপ নেই। দূরপালার বাস নেই। এরপরও কোন বাস মহাসড়কে দেখলেই মামলা দেয়া হচ্ছে। রাজশাহী ॥ করোনা সংক্রমণ রোধে ঈদের পর রাজশাহীতেও চলছে ‘কঠোর বিধিনিষেধ’। বিধিনিষেধের দ্বিতীয় দিনেও রাজশাহী নগরীতে বিরাজ করছে নিস্তব্ধতা। প্রধান সড়কগুলোতে হাতেগোনা দু’/একটি রিক্সা, মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার এবং জরুরী সেবার গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। কাঁচাবাজার ও মুদি দোকান ছাড়া শহরের সব মার্কেটের দোকানপাট বন্ধ রয়েছে। বন্ধ রয়েছে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল। লকডাউন বাস্তবায়নে তৎপর থাকতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে। শনিবার নগরীর কোর্টবাজার, শহীদ এএইচএম কামারুজ্জামান চত্বর, শিরোইল বাস টার্মিনাল, রেলওয়ে স্টেশন, সাহেববাজার, নিউমার্কেট, তালাইমারী নিউ মার্কেটসহ নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলো ঘুরে দেখা যায়, রাস্তাঘাট একেবারেই ফাঁকা। দু’একজন মানুষ মোড়গুলোতে ঘোরাঘুরি করছে। নির্দেশনার আওতাধীন সকল দোকানপাট বন্ধ রাখতে দেখা গেছে। নগরীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নিয়েছেন। তারা পথচারীদের সচেতন করে মাইকিং করছেন। যারা রাস্তায় বের হচ্ছেন তাদের প্রত্যেককেই পুলিশের জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। জরুরী প্রয়োজন প্রমাণে ব্যর্থ হলে ফিরিয়ে দেয়া হচ্ছে। এছাড়া যারা জরুরী প্রয়োজনে বের হচ্ছেন তাদের দ্রæত কাজ শেষ করে ঘরে ফেরার নির্দেশনাও দেয়া হচ্ছে। যারা জরুরী প্রয়োজনে বাইরে বের হয়েছেন তারা প্রত্যেকেই মাস্ক ব্যবহার করছেন। নগরীর ভেতরের সরু রাস্তাগুলো দিয়ে যাতায়াতকারী অটোরিক্সায় অনেককেই গাদাগাদি করে যাত্রী পরিবহন করতে দেখা গেছে। এছাড়া এসব চালক যাত্রীদের থেকে পাঁচ থেকে দশগুণ ভাড়া আদায় করছেন। নগরীর কাজলা এলাকার বাসিন্দা সায়রা বেগম কাশিয়াডাঙ্গা এলাকায় মেয়ের বাসায় কোরবানির মাংস দিতে এসেছিলেন। শনিবার সকলবেলা যাওয়ার পথে গাড়ি না পেয়ে বিপাকে পড়েন। অন্যান্য স্বাভাবিক সময়ের ত্রিশ টাকার ভাড়া চাওয়া হয় ১৫০ টাকা। বাধ্য হয়ে ১২০ টাকায় রিক্সা নিয়ে গন্তব্যে রওনা দেন তিনি। চালকরা বলছেন, নগরীর প্রায় প্রতিটি মোড়ে মোড়ে পুলিশের অবস্থান। লকডাউনের দ্বিতীয় দিন অটোরিক্সাও চলতে দিচ্ছে না। তাদের সামনে পড়লেই জরিমানা অথবা বাতাস ছেড়ে দিচ্ছে। লকডাউনের প্রথমদিনে দূরপাল্লার কোন পরিবহনও ছেড়ে যেতে কিংবা প্রবেশ করতে দেখা যায়নি। তবে প্রাইভেট পরিবহনে প্রবাসীদের ও জরুরী প্রয়োজনে যানবাহন চলতে দেখা গেছে। এছাড়া নগরীর কাঁচাবাজারগুলোতে জনসমাগম কিছুটা বেশি দেখা গেছে। শনিবার সকাল থেকেই নগরীজুড়ে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশের টহল দেখা গেছে। নগরীজুড়ে রাজশাহী জেলা প্রশাসনের চারটি ও ৯টি উপজেলায় ১৮টি ভ্রাম্যমাণ টিম কাজ করছে। নগরীর প্রবেশপথগুলোতেও পুলিশের বাড়তি নজরদারি দেখা গেছে। নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টের দায়িত্বপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যরা জানান, আগের মতোই নগরীর প্রবেশপথে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। জরুরী প্রয়োজন ছাড়া কোন পরিবহন নগরীতে প্রবেশ অথবা বাইরে যেতে দেয়া হচ্ছে না। রাজশাহী সড়ক পরিবহন গ্রæপের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মতিউল হক জানান, সরকারী নির্দেশনা অনুযায়ী শুক্রবার থেকে দূরপাল্লার পরিবহন বন্ধ রয়েছে। লকডাউন চলাকালীন বন্ধই থাকবে। আর ঈদের আগে পরিবহনে স্বাস্থ্যবিধি কিংবা বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়ে কোন অভিযোগ পাওয়া যায়নি। কেরানীগঞ্জ ॥ করোনা সংক্রমণ রোধে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ ও লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে কেরানীগঞ্জে কঠোর অবস্থানে রয়েছে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছে উপজেলা প্রশাসন। লকডাউন বাস্তবায়নে সহায়তা করছে সেনাবাহিনী ও বিজিবি। এছাড়াও ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে বিভিন্ন স্থানে চেকপোস্ট বসিয়ে তদারকি করা হচ্ছে। সরজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বুড়িগঙ্গা প্রথম সেতু পোস্তগোলা সেতু, বাবুবাজার সেতু ও বসিলা সেতুতে ঢাকা জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। এক্ষেত্রে রাজধানী ঢাকায় প্রবেশ ও ঢাকা থেকে বের হওয়ার ব্যাপারে তদারকি করছে তারা। জরুরী সেবা ছাড়া অন্য সকল পরিবহন আটকে দিচ্ছে তারা। অন্যদিকে লকডাউন বাস্তবায়নে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযানে সহায়তা করছে সেনাবাহিনী ও বিজিবি। লকডাউন ও স্বাস্থ্যবিধি না মানায় শনিবার দুপুর পর্যন্ত ২১ জনকে অর্থদÐ করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। কেরানীগঞ্জ মডেল থানা সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সানজিদা পারভিন বলেন, স্বাস্থ্যবিধি ও লকডাউন না মানায় ২১ জনকে বিভিন্ন পরিমাণে অর্থদÐ দেয়া হয়েছে এবং এ অভিযান দিনব্যাপী চলমান থাকবে। নওগাঁ ॥ করোনা প্রতিরোধে সারাদেশের ন্যায় নওগাঁতেও চলছে সরকার ঘোষিত ১৪দিনের কঠোর বিধিনিষেধ। এই বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে নওগাঁয় মাঠে নেমেছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও বিজিবি। কঠোর বিধিনিষেধ সফল করতে জেলা প্রশাসনের ৩৪টি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। ব্যাটারি চালিত অটোচার্জার, চার্জারভ্যান সীমিত পরিমাণ চলাচল করতে দেখা গেছে। এছাড়া যারা অযথা রাস্তাঘাটে চলাচল করছে তাদের পুলিশী নানান জেরার মুখে পড়তে হচ্ছে। বন্ধ আছে সকল ধরনের দোকানপাট, শপিংমল ও বিপণি বিতান। করোনাভাইরাসের শুরু থেকে রবিবার পর্যন্ত নওগাঁয় এ পর্যন্ত আক্রান্ত হয়ে ১১৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন। মোট আক্রান্ত হয়েছে ৫ হাজার ৬শ’ ২৬ জন। তবে গত ১সপ্তাহ নওগাঁতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা অনেকটাই কমেছে। চলমান কঠোর বিধিনিষেধ যদি সকলে সঠিকভাবে মেনে চলে তাহলে নওগাঁতে করোনাভাইরাস আর মহামারী আকারে দেখা দেবে না বলে আশা করছে স্বাস্থ্য বিভাগ। ঈদ-উল-আজহা উপলক্ষে ৮দিন লকডাউন শিথিলের পর করোনা সংক্রমণ রোধে ২৩ জুলাই (শুক্রবার) সকাল ৬টা থেকে শুরু হয়েছে দুই সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধ (লকডাউন)। বরিশাল ॥ লকডাউন সফল করতে বরিশাল-ঢাকা মহাসড়কের নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনাল এলাকায় শনিবার সকালে সেনাবাহিনী ও বরিশাল মেট্রোপলিটন ট্রাফিক বিভাগের সদস্যরা ছিল তৎপর। তারা বিভিন্ন যানবাহন, মোটরসাইকেল ও রিক্সায় অতিরিক্ত যাত্রী থাকলে তা নামিয়ে দিয়েছেন। তারা টার্মিনাল এলাকায় বিভিন্ন পণ্যবাহী যানবাহন ও মোটরসাইকেল নিয়ে বের হওয়ার কারণ জানতে চায়। এসময় বেশ কিছু মোটরসাইকেলে লাগানো ভুয়া স্টিকার উঠিয়ে ফেলা হয়। বিভাগীয় শহরের ন্যায় জেলা প্রশাসনের নির্দেশনায় জেলার প্রবেশদ্বার গৌরনদীতেও কঠোর অবস্থানে রয়েছে উপজেলা প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। তারই ধারাবাহিকতায় শনিবার দুপুরে গৌরনদী বন্দর ও বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিপীণ চন্দ্র বিশ^াসের পরিচালনাধীন ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযানে স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করায় চারটি মামলায় এক হাজার নয় শ’ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। গাইবান্ধা ॥ দ্বিতীয় ধাপের কঠোর লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে গাইবান্ধায় সরকারী-বেসরকারী অফিস, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও কিছু কিছু এলাকায় অল্পকিছু দোকান খোলা ছিল। বিশেষ করে সান্দারপট্টি, স্টেশন রোড, কলেজ রোডসহ শহরতলি এলাকাগুলোতে কিছু কিছু ব্যবসা প্রতিষ্ঠান খোলা ছিল। এছাড়া শহরের রাস্তায় ছিল যানবাহনের চাপ। মোটরসাইকেল, রিক্সাসহ ছোট ছোট যানবাহন চলাচল করতে দেখা গেছে। এমনকি ব্যাটারি চালিত ও সিএনজি চলতে দেখা গেছে। উন্মুক্ত স্থানে কাঁচাবাজার বসানোর কথা থাকলেও তা পালন করা হচ্ছে না। শহরের পুরাতন বাজারে আগের মতোই যথারীতি ভিড় করে লোকজনকে কেনাকাটা করতে দেখা গেছে। শহরে লোকজনের চলাচল ছিল কম। তাদের অধিকাংশের মুখেই মাস্ক ছিল না। লকডাউন কার্যকরে পুলিশের পাশাপাশি সেনাবাহিনী সদস্যদের টহল দিতে দেখা গেছে। এছাড়া উপজেলা সদরগুলোতে যথারীতি লকডাউন পালিত হয়েছে। যানবাহন ও লোক চলাচল ছিল সীমিত। পিরোজপুর ॥ পিরোজপুরে লকডাউন অমান্য করে অটোরিক্সা নিয়ে সড়কে আসা চালকদের জরিমানার বদলে খাদ্য সহায়তা দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। শনিবার পিরোজপুর পৌরসভার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে এ খাদ্য সহায়তা দিলেন সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ বশির আহম্মেদ। ইউএনও’র এমন উদ্যোগকে অটোচালকসহ স্থানীয়দের মধ্যে বেশ প্রভাব ফেলছে। জানা গেছে, লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে পিরোজপুরের সদর উপজেলার পৌর এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় কিছু অটোরিক্সা চালক ও রিক্সাচালককে গাড়ি চালাতে দেখা যায়। ওসব অটো গাড়ি চালকদের গাড়ি চালাতে বন্ধ রাখার জন্য ও লকডাউনের আদেশ মেনে চলতে উৎসাহিত করতে প্রচার করা হয়। আর এ জন্য ওই অটো চালকদের প্রত্যেকের কাছে খাদ্য সামগ্রী দিয়ে বাড়ি থেকে বেড় হতে নিষেধ করা হয়। ওই দিন সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ বশির আহম্মেদের নেতৃত্বে পৌর এলাকার পাড়েরহাট রোড, রানীপুর, বাসস্ট্যান্ডসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে প্রায় শতাধিক অটো চালককে এ খাদ্য সহায়তা প্রদান করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনুপ দাস। এ সময় প্রতিজনকে ১০ কেজি করে চাল, এক কেজি করে ডাল, আলু, পিঁয়াজ, তেল, লবণ প্রদান করেন। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ বশির আহম্মেদ বলেন, অটোরিক্সা চালকরা পেটের টানে বের হয়েছে। তাই তাদের প্রথমেই জরিমানা করলে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই তাদের বিষয়টি মানবিকভাবে চিন্তা করে তাদের জরিমানা না করে লকডাউন কার্যকর করতে উৎসাহিত করাসহ তাদের এক সপ্তাহের খাদ্য সামগ্রী দিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে। এ সময় খাদ্য সহায়তা পাওয়া অটোচালক উপজেলার ভাইজোড়া গ্রামের আব্দুল জাফর শেখ জানান, অটো রিক্সা চালালে করোনা সংক্রমিত হওয়ার ভয় থাকে। কিন্তু পেটের টানে অটোরিক্সা চালাতে রাস্তায় নামি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগে খাদ্য সহায়তা প্রদানে অন্তত আমি রাস্তায় নামা থেকে বিরত থাকব। ঝালকাঠি ॥ ঝালকাঠিতে পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবিসহ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কড়া নজরদারি এবং জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্টের সাজাও সড়কে মানুষের উপস্থিতি ঠেকানো যাচ্ছে না। সাধারণ মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা যেমন নেই তেমন নেই মাক্স পরার আগ্রহ। মার্কেট ও দোকানপাট বন্ধ থাকলেও নানা অজুহাতে কারণে-অকারণে রাস্তায় বেরিয়ে আসছে তারা। শনিবার সকাল থেকে জেলার বিভিন্ন স্থানে ১৫ টি মোবাইলকোর্টের মাধ্যেমে ৬৮ জনকে ২৩ হাজার ৮৫০ টাকা জরিমানা করা হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নেজারত ডেপুটি কালেক্টর (এনডিসি) আহমেদ হাছান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ঝিনাইদহ ॥ ঝিনাইদহে কঠোর লকডাউনের ২য় দিন শনিবার মাঠে ছিল সেনাবাহিনী ও পুলিশ। সকালে শহরের হামদহ স্ট্যান্ড, পোস্ট অফিস মোড়, মুজিব চত্বরসহ শহরের বিভিন্ন মোড়ে মোড়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশের পক্ষ থেকে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। শহরে চলাচলকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। বিনা কারণে আসা ব্যক্তিদের বাড়িতে ফেরত পাঠানো আর স্বাস্থ্যবিধি মানতে নানা পরামর্শ দেয়া হয় চেকপোস্ট থেকে। অন্যদিকে নানা অজুহাতে রাস্তায় বের হচ্ছে মানুষ। ইজিবাইক, রিক্সা, মোটরসাইকেলযোগে সড়ক মহাসড়কে চলাচল করতে দেখা গেছে। টঙ্গী ॥ লকডাউন অম্যান্য করে কারখানা চালু রাখায় ৭০ হাজার টাকা জরিমানা করে একটি কারখানা বন্ধ করে দিয়েছে গাজীপুর জেলা প্রশাসনের ভ্রাম্যমাণ আদালত। শনিবার টঙ্গীর টিএ্যান্ডটি বাজারে এ ওয়ান পলিমার লিমিটেড নামের প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদন কারখানাটিতে শ্রমিকদের দিয়ে পণ্য উৎপাদন কার্যক্রম চলার সময় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। গাজীপুর জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তামান্না রহমান জ্যোতি জনকণ্ঠকে জানান, করোনার লকডাউনে সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে এ ওয়ান পলিমার কারখানাটি তাদের পণ্য উৎপাদন কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছিল। বিষয়টি জানতে পেরে কারখানায় গিয়ে এর সত্যতা পাওয়া যায়। সরকারী নির্দেশনা অমান্য করে কারখানা খোলা রাখায় ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে তাদের ৭০ হাজার টাকা জরিমানা আদায় এবং কারখানা বন্ধ করে শ্রমিকদের বাড়ি চলে যেতে বলা হয়। এ সময় এ ওয়ান পলিমার লিমিটেডের মানব সম্পদ বিভাগের কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম জরিমানার ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করেন। মুন্সীগঞ্জ ॥ সিরাজদিখানেই বসানো হয়েছে ১২ চেকপোস্ট। দক্ষিণ বঙ্গের ২১ জেলার প্রবেশদ্বার শিমুলিয়া হয়ে রাজধানীতে প্রবেশ এবং বের হওয়া ঠেকানোসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টে এই চেকপোস্ট বসিয়ে পথচারীদের চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলায় ভ্রাম্যমাণ আদালতে এই উপজেলায় ১৯ জনকে ১৮ হাজার ৮শ’ টাকা জরিমানা করেছে।
×